post

‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ অশ্লীলতার নতুন প্ল্যাটফর্ম

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন

২৩ নভেম্বর ২০২১

মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা। ডিসেম্বর মাসের একত্রিশ তারিখের দিবাগত রাতকে থার্টিফার্স্ট নাইট বলা হয়। বর্ষবরণের নামে এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের যে কত আয়োজন, তার আর কোনো শেষ নেই। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ মুসলমানও এ আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি, পটকাবাজি, নাচ-গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানি, জেনা-ব্যভিচারসহ কত কিছুই না হচ্ছে এ রাতে। এ সকল কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের অনুসরণ ব্যতীত অন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ আমাদের মধ্যে নি¤েœাক্ত হাদিসের বাস্তব প্রতিফলন পরিপূর্ণভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেন, তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের উম্মাতদের পদে পদে অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আগের উম্মাত বলতে কি ইয়াহুদ ও নাসারা বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন, তবে আর কারা? (বুখারি-৩৪৫৬) অর্থাৎ ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টান যদি দুর্গন্ধযুক্ত, স্যাঁতস্যাঁতে সংকীর্ণ গর্তে প্রবেশ করে তবে মুসলমানও কেবল তাদের অনুকরণার্থে সেই গর্তে প্রবেশ করবে। মোট কথা প্রতিটি কদমে কদমে তাদের অনুসরণ করা হবে। চাই তা যত নিকৃষ্ট কাজই হোক না কেন। অথচ একটি হাদিসে আছে- যে কোন জাতির সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে (কিয়ামতের দিন) সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। (আবু দাউদ-৪০৩৩) কাজেই কেউ ইয়াহুদিদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করলে তার হাশর হবে ইয়াহুদিদের সাথে। কেউ নাসারাদের সাথে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করলে তার হাশর হবে নাসারাদের সাথে।

ইংরেজি সনের বর্তমান রূপ খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে এক উচ্চমানের সভ্যতা ছিল। যার নাম ‘মায়া সভ্যতা’। সংখ্যাতাত্ত্বিক জ্ঞান ও গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে মায়াদের অসাধারণ দক্ষতা ছিল। তারাই প্রথম আবিষ্কার করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন। বলা হয়ে থাকে, নিজেদের গণনার সুবিধার্থে সর্বপ্রথম রোমানরা ক্যালেন্ডার তৈরি করে। তাতে বছরের প্রথম মাস ছিল মারটিয়াস। যা বর্তমানে মার্চ মাস। এটি তাদের যুদ্ধ দেবতার নামানুসারে করা হয়। অতঃপর খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে জুলিয়াস সিজার কয়েক দফা পরিবর্তন ঘটান ক্যালেন্ডারে। তৎকালীন প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় তিনিই প্রথম সেখানে (মায়াদের আবিষ্কৃত সূর্যকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণকাল) ৩৬৫ দিন ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার উদ্ভাবিত ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ বাজারে প্রচলিত থাকে। বহুকাল পরে এই ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন একটি ক্যালেন্ডার চালু হয়। দু’জন জোতির্বিজ্ঞানীর সাহায্যে খ্রিষ্টধর্মের ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি ১৫৭৭ সালে জুলিয়াস প্রবর্তিত প্রচলিত ক্যালেন্ডারটিতে পরিবর্তন আনেন। অবশেষে ১৫৮২ সালে আরেক দফা সংস্কার করে বর্তমান কাঠামোতে দাঁড় করানো হয়। পরিবর্তিত এ ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষের শুরু হয় জানুয়ারি দিয়ে, যা গ্রিকদের আত্মরক্ষার দেবতা ‘জানুস’-এর নামে করা হয়। আমাদের ব্যবহৃত বর্তমান ইংরেজি ক্যালেন্ডারটি ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’। প্রায় সারা বিশ্বে প্রচলিত ইংরেজি ক্যালেন্ডার এখন এটিই। (শরীফা খাতুন, বর্ষবরণ, পৃ. ৬)

এ রাতে সচরাচর যা হয় এ রাতে যা যা করা হয় প্রত্যেকটি কাজই অত্যন্ত জঘন্যতম গুনাহ। যেমন : ষ আতশবাজি, পটকাবাজি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি। এগুলো এক দিক থেকে যেমন মুশরিকদের কাজ তেমনি অন্য ভাইদের জন্য কষ্টের কারণও বটে। এর দ্বারা অন্যদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়। যা স্পষ্ট হারাম। হাদিসে এসেছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘ওমর রা. নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে ব্যক্তি, যার জিহ্বা এবং হাত হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকেন। প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ত্যাগ করেন।’ (বুখারি-১০, আহমাদ-৬৭৬৫) হজরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম একদা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. ইসলামের কোন কাজটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? জবাবে তিনি বললেন, যার হাত ও জিহ্বা হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে (বুখারি-১১, আহমাদ-৬৭৬৫) ষ এ রাতে নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়, যা আল্লাহ তায়ালা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাথমিক অজ্ঞতা যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না; তোমরা সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করবে। হে নবীর পরিবার! আল্লাহ তোমাদের অপবিত্রতা থেকে দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সর্বতোভাবে পবিত্র রাখতে চান।” (সূরা আহযাব : ৩৩) ষ এ রাতে ব্যাপক আকারে নাচ-গান ও বাদ্য বাজানো হয়। একে তো এগুলো এমনিতেই নাজায়েয উপরন্তু দ্বীনদার লোককে শুনতে বাধ্য করা হয় এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়া হয়। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা জেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ (বুখারি-৫৫৯০) হজরত আবু ওমামা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম।’ (মিশকাত-২৭৮০) হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সা. বলেছেন, যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- ১. বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে। ২. উপর থেকে অথবা কোনো জাতির পক্ষ থেকে জুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে। ৩. অনেকের পাপের দরুন আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গজবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। রাসূল সা. গান বাজনার কোন আওয়াজ পেলে কানে হাত দিয়ে সে পথ অতিক্রম করতেন। হজরত নাফে রা. থেকে বর্ণিত। একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রা. বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নাফে তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙুল দুই কান হতে বের করে বললেন, আমি একদা রাসূল সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম (আবু দাউদ-৪৯২৪) ইমাম শাফেয়ী (রহ) বলেছেন- ‘গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হলো আহমক। তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গি সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। (ইগাছাতুল লাহফান-১/১৭৯; কুরতুবী-১৪/৫৫) ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ) বলেন- সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার স্বভাব হলো গান-বাজনা শোনা, ‘সে যখন কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা) শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে। যদি সে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সে হয় বসে বসে তা আদায় করে অথবা মুরগি যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে দ্রুততার সাথে আদায় করে। সে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোনো সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। কুরআনের প্রতি তার কোন রুচি নেই এবং যখন তা পড়া হয় সে এর প্রতি কোন টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না। বরং, সে মুকা (শিস দেয়া) ও তাসদিয়া (তালি দেয়া) শুনে মজা পায়। এগুলো শয়তানি আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সে সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে।’ ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) বলেন- ‘আল্লাহর শত্রু শয়তানের কৌশলসমূহের মধ্যে একটি হল মুকা ও তাসদিয়া, এই ফাঁদ সে ঐ সকল লোকের জন্য পাতে যারা দীনের প্রতি বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, অথবা আন্তরিকতায় নিরাসক্ত। এই গাফেল (মূর্খ) লোকেরা গান-বাজনা শ্রবণ করে এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যা নিষিদ্ধ এবং যার ফলে কুরআনের প্রতি তাদের অন্তর বিমুখ হয়ে যায়। তাদের হৃদয় পাপাচারের প্রতি উদাসীন ও আল্লাহর অবাধ্য। গান-বাজনা (সঙ্গীত) শয়তানের কুরআন এবং ব্যক্তি ও আল্লাহর মাঝের দেয়াল। এটা সমকামিতা ও ব্যভিচারের পথ। যে অন্যায় ভালোবাসার সন্ধান করে ও স্বপ্ন দেখে সে এতে সান্ত¡না খুঁজে পায়। গান-বাজনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে ও একে তাদের চোখে শিল্প হিসেবে দেখিয়ে শয়তান দুর্বলচিত্তের মানুষদের ফাঁদে ফেলে। শয়তান তার অনুসারীদের সঙ্গীতের সৌন্দর্যের মিথ্যা দলিল দেখায়। এই লোকগুলো শয়তানের ওহি গ্রহণ করে এবং ফলস্বরূপ কুরআন ত্যাগ করে।’ ষ এ রাতে মদ পানসহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করা হয়। যা স্পষ্ট হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা এবং বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত থাকবে না? (সূরা মায়েদাহ : ৯০-৯১) হজরত জাবের রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি ইয়ামানের জিশানা অজায়শানু হতে আগমন করে রাসূল সা.কে তাদের ভূমিতে উৎপন্ন যুরাহ (ভুট্টা) থেকে প্রস্তুতকৃত শরাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল যাকে মিযরু বলা হয়ে থাকে। রাসূল সা. বলেছেন- তা কি মাতাল করে (নেশা সৃষ্টিকারী? সে ব্যক্তি বলল: জি হ্যাঁ। তখন রাসূল সা. বললেন: সকল প্রকার মাতালকারী বস্তু হারাম। আর আল্লাহ এ অঙ্গীকার করেছেন যে, যে ব্যক্তি মাতালকারী বস্তু পান করবে তিনি তাকে তিনাতুল খাবাল ভক্ষণ করাবেন। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তিনাতুল খাবাল কী? তিনি বললেন: জাহান্নামিদের ঘাম অথবা জাহান্নামিদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস। (মুসলিম-২০০২) মদ পানকারীর ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- রাসূল সা. বলেছেন: যে ব্যক্তি মদ পান করে মাতাল হয়ে যাবে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবে না। সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (পান করার পর যদি সে তাওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করবেন। অতঃপর সে যদি পুনরায় মদ পান করে মাতাল হয়ে যায় তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবে না। অতঃপর সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর সে যদি চতুর্থ বার মদ পান করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপরে তাকে রাদাগাতুল খাবাল ও তিনাতুল খাবাল পান করানো অপরিহার্য হয়ে যায়। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! রাদাগাতুল খাবাল বা তিনাতুল খাবাল কী? তিনি বললেন: জাহান্নামিদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস। (ইবনু মাজাহ-৩৩৭৭) ষ এ রাতে অনেক যুবক-যুবতী জেনা ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন: “আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা : ৩২) ব্যভিচারের অপরাধের জঘন্যতার কারণে বলা হয়েছে ব্যভিচারকালে ব্যক্তির ঈমান থাকে না। রাসূল সা. বলেন- “কোনো ব্যভিচারী ব্যভিচারের সময়ে মুমিন অবস্থায় থাকে না। কোনো চোর চুরির সময় মুমিন অবস্থায় থাকে না। কোনো মদখোর মদ খাওয়ার সময় মুমিন অবস্থায় থাকে না।” (বুখারি-২৪৭৫) রাসূল সা. আরো বলেন- “কোনো ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়, এরপর তা তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তওবা করে তখন তার ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে।” (আবু দাউদ-৪৬৯০, সুনানে তিরমিজি-২৬২৫)

ব্যভিচার ৭টি জিনিস দিয়ে হয় মন : এখান থেকেই ব্যভিচারের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়। চোখ : চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে পাপ হয় না কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকালে বা প্রথমবার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে ব্যভিচার হয়। জিহ্বা : জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া। কান : এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর/নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমস্যা নেই। হাত : এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোনো বিবাহিত/অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোনো অংশ স্পর্শ বা ধরা হয়। পা : এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেঁটে কাক্সিক্ষত কোনো নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়। গুপ্ত অঙ্গ : এটা দিয়েই শুধু ব্যভিচার হয় মানুষ তা ভাবলেও এটার স্থান সবার পরে। কেননা উপরে ৬টিকে দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাজত করা যাবে। ষ এ রাতে মেয়েরা বিভিন্ন অশালীন ও অশ্লীল কাপড় চোপড় পরিধান করে। যার কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই থাকে। যুবতীরা আঁটসাঁট, অশালীন ও নগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা করে। অথচ এ প্রসঙ্গে নবী সা. বলেন- ঐসব নারী যারা হবে পোশাক পরিহিতা কিন্তু নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধবিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। (মুসলিম-২১২৮) ষ অর্থ অপচয় : এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ অনৈসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা অপচয় ও অপব্যয়ের শামিল। আর ইসলাম অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আত্মীয়-স্বজনকে দিবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্তÍ ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭) ষ দীর্ঘ রাত পর্যন্ত আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকার কারণে ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, মুমিনদের জীবন তো হবে মুহাসাবার (কৃতকর্মের হিসাব গ্রহণের) জীবন। একটি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর হিসাবের তাড়না তাকে বিচলিত করে রাখবে। হায়! আমার মূল্যবান জীবন থেকে একটি বছর চলে গেল। আমি তো আল্লাহ তায়ালার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আখেরাতের তেমন কোনো সামানা জোগাড় করতে পারলাম না। তা না করে জঘন্যতম গোনাহসমূহের দ্বারা আনন্দ উল্লাসে মত্ত হওয়া কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না। এর কোনো নজির না রাসূল সা. থেকে রয়েছে, না সাহাবীদের থেকে, না স্বর্ণযুগের অন্য কারো থেকে। বরং এ ধরনের গুনাহের কর্মকাণ্ডের দ্বারা আনন্দ উদযাপনের মধ্যে ঈমানের জন্য যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

লেখক : প্রভাষক, সিটি মডেল কলেজ, ঢাকা

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির