ঘোর অমানিশায় যখন পৃথিবীর বুক ছেঁয়ে গিয়েছিল, সত্য-মিথ্যার প্রভেদ ভুলে গিয়ে মানুষ হয়ে গিয়েছিল স্বেচ্ছাচারী, এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিকে করত সেজদা, জুলুমের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সর্বোচ্চ চূড়ায়, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি ছিল এক মামুলি ব্যাপার, নারীদের ছিল না সম্মান, জীবন্ত কন্যাকে স্বহস্তে কবর দিত নিষ্ঠুর বাবা! ঠিক তখনি ঘন অন্ধকারের দেয়াল ভেদ করে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বে দুনিয়ার বুকে উদিত হয়েছিল ন্যায় ও ইনসাফের এক আলোকবর্তিকা- মানবতার মহান বন্ধু, রাহমাতুল্লিল আলামিন, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
জাহিলী যুগে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ লেগেই থাকত। পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয়ে যেত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। একেকটি যুদ্ধ শত বছরেও শেষ হতো না। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত কুরআনের শাশ^ত বাণীর মাধ্যমে অল্প দিনের ব্যবধানে কায়েম করেছিলেন সাম্য, ন্যায় ও ইনসাফের এক সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ। আমাদের জন্য রেখে গেছেন সত্য পথের দিশা আল-কুরআন এবং এক উত্তম আদর্শ। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো কুরআনের সুমহান বাণীকে সকল মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুমহান আদর্শকে সবার সামনে তুলে ধরা। তাহলেই আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারব।
ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে
ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম শহীদ ‘আবরার ফাহাদকে’ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। আবরার ফাহাদ বলেছিলেন, ‘‘আমরা ইলিশের মৌসুমে ভারতকে ইলিশ দেই, আর তারা ইলিশ খেয়ে আমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মারে’’। আবরার ফাহাদের সেই কথা আজ আবার মনে পড়ে গেল। এবারের বন্যা গত একশো বছরের যে-কোনো বন্যার চেয়ে ভয়াবহ। বিশেষ করে কুমিল্লা-ফেনী-নোয়াখালীর মানুষ গত একশো বছরেও এমন বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪টি সীমান্তবর্তী নদী রয়েছে। আর মায়ানমারের সাথে রয়েছে ৩টি। ভারত বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে প্রায় নদীগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের মুখ বন্ধ রেখে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করে আর ভরা মৌসুমে বাঁধের মুখ খুলে দিয়ে এদেশে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি করে। প্রতি বছরই সিলেটে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। বর্ষা এলেই সিলেট অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। কিন্তু এবার ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা তাদের আগ্রাসনেরই প্রমাণ। এভাবে আগ্রাসন চালাতে থাকলে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা উভয় দেশের জন্যই কাম্য নয়।
শুধু কি বন্যা? ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গত পনেরো বছরে সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষ হত্যা করেছে সেটা ভারতীয় আগ্রাসনের আরেক দৃষ্টান্ত। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তো রয়েছেই! তবে আমাদেরকে সবসময় ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।
ছাত্র-জনতার বিজয় : আসুন আগে সমাজটাকে সংস্কার করি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অর্জিত এই বিজয় চিরস্মরণীয় এক ঘটনা। ইতিহাসের পাতায় যা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু এ বিজয়কে এখন পূর্ণতা দেওয়ার সময় এসেছে। দীর্ঘ সময় ধরে একদলীয় শাসনের ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রকে সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। আর এই সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করতে হবে। দল মত নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এ এক অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদেরকে আরো বেশি সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার মধ্য দিয়ে এই দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে হবে। সমাজের প্রতিটি পরতে পরতে অন্যায়-অবিচার রুখে দিতে হবে। সমাজের মজলুম মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ যেন প্রতিষ্ঠা হয় তার জন্য নিরলস কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই বিজয়ের মাধ্যমে সমাজ পুনর্গঠন হয়নি বরং; সমাজ পুনর্গঠন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সমাজ যদি সুন্দর হয় তাহলে রাষ্ট্রও সুন্দর হবে। সমাজ যদি সঠিকভাবে সংস্কার হয় তাহলে রাষ্ট্রও সঠিকভাবে সংস্কার হবে। তাই আসুন আগে সমাজটাকে সংস্কার করি।
আপনার মন্তব্য লিখুন