post

দুর্বৃত্তায়িত ছাত্ররাজনীতি এবং লাল কার্ড

মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান

১০ ডিসেম্বর ২০২১

বিজয়ের ৫০তম বর্ষ পেরিয়ে আমরা ৫১-তে পা রেখেছি। বিজয়ের লাল-সবুজ নিশানে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা কতটুকু? এ প্রশ্ন আজ সর্বাগ্রে। রাস্তা, পুল, ফ্লাইওভার আর টানেলের ফাঁক গলে স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ আমাদের জীবনে কী কী সুবিধা আর পরিবর্তন এনেছে? জীবন উন্নয়নের সূচকে আমাদের যাত্রা কি সামনের দিকে না-কি পেছনে? স্বাধীন দেশের স্বাধীন আলোয় আমাদের বেড়ে ওঠা কতটুকু আনন্দ দেয় সে প্রশ্নের উত্তর বেদনার না আনন্দের, তা বলা আপেক্ষিক। স্বাধীন ভূমি, পতাকা আর মানচিত্রের কতটুকু সুফল জাতি হিসেবে আমরা ভোগ করছি? জীবনকে নিয়ে স্বর্গসুখ রচনার অলীক কল্পনা সামগ্রিকভাবে এ জাতির আম-জনতার কখনো ছিলো না, এখনো নেই। রাজনৈতিক অধীনতা, অর্থনৈতিক শোষণ আর সাংস্কৃতিক বিভাজনের বিপরীতে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার যে স্লোগানে ভর করে বিজয়ের মালা এ জাতির গলে জুটেছে মোটা দাগে তার ফলাফল কী? সবুজ ঘাসের গালিচায় এক জ্বলন্ত সূর্য আমাদের শির উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করতে বলে। শিশির বিন্দুর ঝলকানি হৃদয়ে আনন্দের সুরলহরি তুলবে এটাই আমাদের কামনা। আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বিষয়টি আজ বড় প্রশ্নবোধক। স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি রচনায় যারা মূল নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে তারা ছিল ছাত্র। ছাত্রদের সংগ্রামী চেতনা ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন কিংবা নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থান- সব জায়গায় মূল চালিকাশক্তি ছিলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিলো এর কেন্দ্রবিন্দু। অন্যায় অনাচার আর জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই বারুদের অগ্নি উদগিরণ হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান পরিবেশ স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের চেয়ে ভালো ছিল না কি খারাপ...? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বড় বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সতীর্থদের পিটিয়ে হত্যা, হলের সিট ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জীবনপাত, শিক্ষককে লাঞ্ছনা, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির মতো ঘৃণ্য অপকর্ম অনেক বেশি অগ্রসর হয়ে ছাত্ররাজনীতির লেবেল আঁটা অপসংস্কৃতির রাস্তাকে বিকশিত করেছে।

দুই. মানুষ গড়ার আঙিনায় দানবীয় সংস্কৃতির চাষাবাদ মানবীয় বিবেকবোধকে ভোঁতা করে দিচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির ঔজ্জ্বল্য আজ কলুষতায় ভরপুর। ক্ষমতাসীন মহলের ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এক একটি টর্চার সেলে পরিণত করেছে। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা মানে একটি লোভনীয় পদ। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল এককভাবে দেশ পরিচালনা করছে প্রায় ১৩টি বছর ধরে। তাদের ক্ষমতার উষ্ণতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি ছাত্রসংগঠনের দখলি রাজ্যে পরিণত করেছে। সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের বক্তব্য হয় আমাদের বশ্যতা স্বীকার করো নচেৎ আমাদের হাতে নির্মম নির্যাতন ভোগ করো। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জাতি উদযাপন করলো ৫০তম বিজয় দিবস। এ মাসেই খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা অবরুদ্ধ থাকার পর বাসায় এসে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার কাছে একটি অন্যায় আবদার করেছিলো। সম্ভবত তিনি তাদের অন্যায় আবেদনে সাড়া দেয়াটাকে বিবেক বিরুদ্ধ কাজ মনে করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ শিক্ষক মারা যাবার পর শিক্ষার্থীদের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তাতে জানা গেছে যে, লালন শাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচনে ছাত্রলীগের এক নেতাকে নির্বাচনের জন্য তারা তাকে চাপ প্রয়োগ করে। এই বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী মাস্তানরা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে অনবরত চাপ প্রয়োগ করছিলো। ঘটনার দিন দুপুরে ছাত্রলীগ নেতারা ওই শিক্ষকের সাথে অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করে এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। জানা গেছে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর কুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি তার পদ ছেড়ে দেয়ায় বিভিন্ন হল ও সুযোগ-সুবিধার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান। তার নেতৃত্বেই এ জঘন্য কর্মটি সম্পাদন হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছার সাথে সাথে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেন। সাধারণ ছাত্র ও শিক্ষকদের দাবি এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, হত্যাকাণ্ড। তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচার দাবি করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দোষী ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। শিক্ষার্থীরাও সিদ্ধান্ত নেয়, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ ঘটনায় পাঁচ দফা দাবিনামা পেশ করেছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্বস্তও করেছিলেন। এরপর কোনো এক অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সাথে অভিযুক্ত ছাত্রলীগারদের রক্ষার একটি যোগসূত্র খুঁজছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নারকীয় কর্মকাণ্ডের সাথে এ ধরনের ঘটনার মিল পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ নামের সাথে এ সকল নারকীয় ঘটনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসে ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর খুন হয়েছিলো ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। জগন্নাথের সামনে বিশ্বজিৎ হত্যা কিংবা বুয়েটে আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ড এগুলো যেন ছাত্রলীগের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের নারকীয় তাণ্ডবলীলায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে আছে। সেখানকার এক শিক্ষার্থীর মাথার খুলি স্থাপন করতে না পেরে ডাক্তাররা ড্যাশবোর্ডে লিখে রেখেছিলেন ‘সাবধান চাপ দিবেন না, মাথায় হাড় নেই’। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গড়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে লেখা হয়েছে, গেস্টরুম হচ্ছে ছাত্রলীগের নির্যাতন সেল। এ ধরনের গেস্টরুম প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, ছাত্রলীগের অবৈধ দখলদারিত্ব আর পেশিশক্তির কারণে সেখানে হলে উঠতে, পরীক্ষা দিতে এমনকি আইডি কার্ড পেতেও ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই চিত্র দৃশ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডাইনিং নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নকাজের চাঁদাবাজি, টেন্ডারে অংশীদারিত্ব দোকান ও ফুটপাথে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বখরা আদায় ‘ফাও’ খাওয়া যেন একটি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

তিন. সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে স্কুল শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলনে নামে। মূলত এবারে তাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিলো এক শিক্ষার্থীকে জনৈক বাস হেলপারের অরুচিকর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। বাসে যাতায়াতকালে ওই ছাত্রী হাফ ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। ওই ছাত্রী বিষয়টি কলেজে সহপাঠীদের জানালে তারা সড়ক অবরোধ করে এর প্রতিবাদ জানায়। একই সাথে তারা ‘হাফ ভাড়া’ চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই সারা দেশে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। প্রথমে ঢাকাতে আন্দোলন শুরু হলেও তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদের আন্দোলন চলাকালে প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান। বিমানবন্দরের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। গত ২৪ নভেম্বর ’২১ গাড়িচাপায় মারা যায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। ২৯ নভেম্বর ’২১ রাতে রামপুরায় বাসচাপায় মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন। একের পর এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে সেখানেও লাঠিয়ালের ভূমিকায় দেখা গেছে ছাত্রলীগকে। পরে অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে তারা আর এ কাজ করেনি। বিভিন্ন অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। তারা বুঝতে পেরেছে, রাষ্ট্রের মেরামত ব্যতীত এর সুষ্ঠু সমাধান হবে না। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায় আর দুর্নীতি। ৪ ডিসেম্বর ’২১ তারা সড়কে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে। তাদের এ লাল কার্ড ছিলো অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সব সময়ই সোচ্চার ছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এর আগেও রাস্তায় নেমে এসছিল। তারা যা করে দেখাতে পেরেছে অনেক বড় রাজনৈতিক দলও তা পারেনি। তারা মন্ত্রী, এমপি এবং পুলিশের গাড়ি আটকে দিয়েছিল। এবারে আবার তারা রাস্তায় নেমেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা সড়কে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। লাল কার্ড আন্দোলন অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনে এক নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছে। কেননা বিগত বছরগুলোতে সব কিছু কেমন যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। ‘লাল কার্ড’ কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বলেছে, আপনারা জানেন খেলার মাঠে খেলোয়াড়রা ভুল বা অন্যায় করলে, অখেলোয়াড়সুলভ আচরণে রেফারি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। আমাদের আজ বাধ্য হয়ে রেফারির ভূমিকায় নামতে হয়েছে। কারণ সড়ক নিরাপদ নয়। সড়কে নিয়মকানুন মানা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধের যে দাবি ছাত্ররা করছে তার সাথে গোটা দেশের সাধারণ মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেছে; কারণ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার ভুক্তভোগী। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, বেপরোয়া যান চলাচলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অদক্ষ চালক। সড়কে ছাত্ররা বাস-মিনিবাসের ফিটনেস এবং লাইসেন্স পরীক্ষা করে হাতেনাতে প্রমাণ দেখিয়ে দিয়েছে যে সড়কে অরাজকতা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। অবাক করা বিষয় অনেক সরকারি অফিসের গাড়ির ফিটনেস লাইসেন্স নেই। এমনকি পুলিশের গাড়ি চলছে কাগজপত্র ছাড়া। এ যেন আজব এক দেশে বাস করছি আমরা। সড়ক ও সেতু নির্মাণের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট হয় কিন্তু উন্নয়নের নামে কিছু ইট সুরকির আর বিটুমিনের প্রলেপ পড়ে। এসব খাতে যে ব্যাপক লুটপাট হয় সে বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে ছাত্ররা। খোদ রাজধানীর বহু সড়ক বছরের পর বছর খুবই খারাপ অবস্থায় থাকে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদার। এখানে ফ্লাইওভারের দুই পাশ সব সময় বড় বড় গর্ত থাকে। সামান্য বৃষ্টিতে এর যে করুণ অবস্থা হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই টের পায়। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল, ফার্মগেট, ধানমণ্ডির সড়কগুলো নদীতে পরিণত হয়। এ সকল অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের ‘লাল কার্ড’ প্রতিবাদের এক নতুন রূপ দেখিয়েছে।

এ লেখা যখন লিখছি তখন একটি সংবাদ সারা দেশে সম্ভবত নতুন করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। একজন প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অনেক দিন যাবৎই নানা অযাচিত কথা বলে আসছিলেন। তার কথায় কোনো সভ্যতা-ভব্যতার মাপকাঠি ছিলো না। অবশেষে সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আমার এ লেখা যখন পাঠকগণ পড়বেন তখন এ খবর অনেক পুরাতন হয়ে যাবে তাই এ নিয়ে আর বেশি কিছু লিখতে চাই না। আবরার ফাহাদকে যারা হত্যা করেছিলো তারা আজ কারাগারে দিন গুজরান করছে কোনো কঠিন রায় শোনার অপেক্ষায়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে যারা সন্ত্রাস করেছে তাদেরও কারো কারো ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছে। খুবিতে কি হবে আমরা জানি না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় সকল অন্যায়ের এক সময় পরিসমাপ্তি ঘটে। অন্যায়গুলো সমাজে বিস্তার লাভ করে নানান জনের নানান ভূমিকায়। শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদর্শ মানুষ গড়ার আঙিনা। সেখানে এখন যে ক্ষমতা রক্ষার লাঠিয়াল তৈরি হচ্ছে এটার পরিসমাপ্তির জন্য যে আদর্শ ও নৈতিকতার উদ্বোধন দরকার তার অভাব সর্বত্র। সাম্য, ন্যায় এবং মানবিক মর্যাদার জন্য তাই আদর্শ ও নৈতিকতার বিকাশ ও লালন অতি আবশ্যক। নৈতিক ও আদর্শিক রাজনীতির কোলেই লালিত হবে আদর্শভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি। এটা না করতে পারলে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে চূড়ান্ত লাল কার্ড দেখাবে। লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির