post

ধেয়ে আসছে ভারতীয় জলবোমা বাংলাদেশের ভয়াবহ ছয় ক্ষতি

২৬ জানুয়ারি ২০১২
মুহা. সাজ্জাদ হোসাইন সমর বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামী দিনের যুদ্ধ হবে পানি নিয়ে । তাহলে ভারত কি বাংলাদেশের সাথে পানি নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিল? ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখ ড্যাম, তিস্তা ব্যারেজ কি পানি নিয়ে যুদ্ধের ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র? টিপাইমুখ নামের গ্রামে বরাক এবং টুইভাই নদের মিলন স্থলের এক হাজার ছয়শত ফুট দূরে বরাক নদে ৫০০ ফুট উঁচু ১৬০০ ফুট দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ভারত সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বস্ত করা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোন ড্যাম করবে না টিপাইমুখে। এখন বলছে টিপাইমুখে ড্যাম হলে কোন ক্ষতি হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মশিউর রহমানও সম্প্রতি ভারত সফর করে  ড. মনমোহন সিং এর সাথে সুর মিলিয়ে বলছেন একই কথা। অথচ বাংলাদেশের সকল আন্তর্জাতিক নদী ও পানি বিশেষজ্ঞগণ এক বাক্যে বলছেন এ ড্যাম হলে বাংলাদেশের জন্য চরম ক্ষতি হবে। এক কথায় বলা যায় এ টিপাইমুখ ড্যাম বাংলাদেশের মানুষের গলা টিপে ধরবে। টিপাইমুখ ড্যাম হলে বাংলাদেশের যে সকল ক্ষতি হবে তা আমরা একনজরে জেনে নিবÑ ১. বলা হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ হলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। একথাটি সঠিক নয় এ কারণে যে, বাঁধ নির্মাণ হলে বর্ষার শুরুতে রিজাভারে পানি ধরে রাখার প্রয়োজন পড়বে ফলে বর্ষার শুরুর দিকে খালে-বিলে পানি থাকবে না। বর্ষার শেষের দিকে রিজারভারের পানি ছাড়া হলে বন্যা দেখা দেবে। তাই বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি অবমুক্তির যে কথাটি বলা হচ্ছে সেটি আসলে ঠিক নয়। এতে শুধুমাত্র বন্যার সময় পরিবর্তন হবে মাত্র। আর বাঁধের কারণে এর উজানে জমা হবে পলি। এর ফলে যে পানি ভাটির দিকে আসবে সেটি আসবে পলিবিহীন আর এটি ব্যাপক পরিমাণ পলি বহন করার ক্ষমতা রাখবে। পাঠকের নিশ্চয়ই জানা আছে ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ২০০ কিঃমিঃ উজানে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচেছ। ফলে বাঁধ পরিয়ে যে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে সেটি বাঁধের ভাটির দিকের ২০০ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিতর পলি জমা করবে। কিন্তু পানির গতি কমে যাওয়ায় পলি বহন করার ক্ষমতা কমে যাবে এবং তা সুরমা এবং কুশিয়ারার বুকে জমা হবে। সেক্ষেত্রে যেটা আগে স্বাভাবিক বর্ষাকালীন প্রবাহ ছিল সেটা বন্যা আকারে দেখা দেবে। ২. বরাক নদের ভারতে প্রবাহিত অংশের দৈর্ঘ্য ৪৯৯ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে দৈর্ঘ্য ৪০৩ কিলোমিটার। সুরমা এবং কুশিয়ারা পাঁচটি প্লাবনভূমি অতিক্রম করেছে যার অববাহিকায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কৃষিভিত্তিক জনবসতি গড়ে উঠেছে। বর্ষার শুরুর দিকে নদীতে যে তলানী প্রবাহ থাকে টিপাইমুখ বাঁধ তা বাংলাদেশে আসতে দেবে না। এছাড়া বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানি আটকে রাখবে। ফলে বর্ষার শুরুতে সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রায় একমাস দেরিতে পানি আসবে। ফলে নদী দু’টি শুকিয়ে থাকবে। তারপর বর্ষা শেষ হলে জলাধারের ধরে রাখা পানিও আস্তে আস্তে ছাড়বে। আগে যেখানে নভেম্বরের দিকে নদীর পানি শুকিয়ে যেত, এখন তা জানুয়ারিতে হবে। ফলে হাওর অঞ্চলের এক ফসলী জমিগুলোতে ধান চাষ করা যাবে না। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোণায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। আর একটি ক্ষতি হবে নদীগুলোর পানির পরিমাণ যখন কমে যাবে তখন সাগরের লোনা পানি ঢুকে পড়বে আমাদের নদী-নালা, খাল-বিলে। ফলে সামগ্রিক উৎপাদন ব্যাহত হবে মারাত্মকভাবে। ৩. ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো থেকে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই প্রকল্প থেকে পানি প্রত্যাহার করবে ভারত। টিপাইমুখ বাঁধের ৯৫ কিলোমিটার ভাটিতে একটি ব্যারেজ নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। এটি ঘটলে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪. বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে রয়েছে বিশাল জলাভূমি এবং অসংখ্য হাওর। এর একটি নিজস্ব ইকোসিস্টেম রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে এখানে বর্ষার সময় পানি বাড়বে, বন্যা হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে এর অনেক এলাকা শুকিয়ে যাবেÑ এর উপর ভিত্তি করেই সেখানকার ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহের সময় এবং পরিমাণের তারতম্য হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ এলাকার বাস্তুসংস্থান এবং জনজীবন, মৎস্য সম্পদ, কৃষিসম্পদ, জলজ প্রণী সবকিছুই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ৫. বাঁধের কারণে ভূমিকম্প হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ। কুঢে ফুড্ডা বাঁধের কারণে সর্বপ্রথম ভূমিকম্প হয় ১৯৩২ সালে নাইজেরিয়ায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঁধের কারণে ভূমিকম্প হয়েছে এর সংখ্যা প্রয় ৭০ এর উপরে। আর এ যাবৎকালের বাঁধের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে তীব্রমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে খোদ ভারতের মহারাষ্ট্রে, কয়লা বাঁধের কারণে। ১৯৬৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ঘটা ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি তার কেন্দ্র থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরেও তীব্র আঘাত হেনেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ভারতের যে এলাকায় টিপাইমুখ ড্যাম রয়েছে তা বিশ্বের ছয়টি ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম। বাঁধের জলাধারে যে বিপুল পরিমাণ পানি জমা করা হয়, বাঁধের ভিত্তিভূমি এবং এর আশে পাশের শিলাস্তরের উপর এই পানি ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। অল্প জায়গায় পানির বিপুল পরিমাণ চাপ পড়ায় ভূমিকম্পের হাইপোসেন্টারে পরিণত হয় সেটি। ৬. এরপর প্রশ্ন আসে বাঁধ ভাঙলে কী হবে? ১৯৯২-৯৪ সালে একটি গবেষণা চালানো হয় ঋঅচ-৬ এর আওতায়। তাতে দেখা যায় বাংলাদেশ ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে বাঁধের পানি কমপক্ষে ৫ মিটার উচ্চতা নিয়ে হাজির হবে। আর ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি তার সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৫ মিটারে পৌঁছবে, যা প্লাবনভূমির উচ্চতার চেয়ে ৮ মিটার বেশি উঁচু। ফলে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে ৮ মিটার পানির নিচে তলিয়ে রাখবে ১০ দিন কিংবা তার চেয়েও বেশি। ফলে প্রাণহানি ঘটবে অগণিত, ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তাই মনে হয় টিপাইমুখ ড্যাম একটি সাক্ষাত জলবোমা। যেটি পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি এর বিরুদ্ধে সময় থাকতে রুখে দাঁড়াব না ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করব। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা মহানগরী পশ্চিম

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির