নিরাশা নয় আশায় বাঁধি বুক
হেলাল আনওয়ার
১৪ অক্টোবর ২০১৭
‘বহু যুগ ধরে বেঁচেছিস তোরা
এবার মৃত্যু সাধনা কর
যে হাতে তোরা করিস মোনাজাত
সে হাতে এবার অস্ত্র ধর’
নানা সঙ্কটের মাঝে পৃথিবী বয়ে চলে, এ কথা বহু পুরনো। কিন্তু কখনো কেউ যেন এ পৃথিবীকে পরাভূত করতে পারেনি। শত বৈরিতার মাঝেও আজো পৃথিবী তার শির উঁচু করে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কতো ঝড়-ঝঞ্ঝা, কতো অবিচার-অত্যাচার, জাতিগত জিঘাংসা, শ্রেণীগত দ্বন্দ্ব পিশাচের কতো অনিষ্টতা, অভিজাত শ্রেণীদের ধৃষ্টতা, শাসক ও ক্ষমতাবানদের সীমালংঘন এসব যেন এই পৃথিবীর নিত্যকার ঘটনা। আর এর জন্য দায়ী কেবল এই মানুষই। কেননা, পৃথিবীতো বোধহীন, বাকহীন, অনুভূতিহীন সৃষ্টি। কিন্তু মানুষতো আর সে রকম নয়।
মানুষ তাই নিরাশার মাঝে আশার স্বপ্ন, হতাশার মাঝে সান্ত্বনা, বিপদ-আপদের মাঝে নিরাপত্তা, কষ্টের মাঝে সুখ স্পৃহা, বেদনার বিরহের মাঝে হাসি আনন্দ খুঁজে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আসছে। যার ফলে ইতিহাস, দর্শন, সামাজিক, রাজনৈতিক সদা পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট এসব কিছুই মানবজীবনের জন্য অবিবার্য অনুষঙ্গ।
আবার জাতিগত হীনমন্যতাকে বুকে ধারণ ও লালন করে পরস্পরকে হিং¯্র হায়েনার মতো আক্রমণ করা এটা নতুন কিছু নয়। তবু সব কিছুকে ক্রমান্বয়ে উপেক্ষা করে এই মানুষ আবার ফিরে পেয়েছে শান্তির অমিয় ধারা। আবার শান্ত পৃথিবীকে বার বার লিপ্সার চোখে অশান্ত করার ইতিহাসও কম নয়। সেই সব উত্তপ্ত জিঘাংসার বারুদের মাঝেই মানুষ খুঁজে নিয়েছে নিরাপদ আশ্রয় নিষ্কণ্টক আবাস।
বর্তমান বিশ্ব ঠিক তেমনই বড় অস্থির, বড় অশান্ত। চারদিকে কেবল হত্যা, জুলুম, নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অর্থনৈতিক কৌলীন্যতা, আধিপত্য বিস্তারের উদগ্র বাসনা এসব যেন পৃথিবীকে ক্রমশ কলুষিত করে তুলছে। যার পরিণতি দৈবিক বা ঐশ্বরিকভাবে যেমন ভোগ করতে হচ্ছে তেমনই ক্ষমতাধরদের নির্মমতা অকাতরে সহ্য করে যেতে হচ্ছে। আর এর কুপ্রভাব যার সিংহ ভাগ বর্তায় দুর্বলতম জনগোষ্ঠীর ওপর। জানি দুর্বলের ওপর সবলদের অত্যাচার, অবিচার এবং নির্যাতন এটা নতুন কোনো বিষয় না। এটা সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ অবধি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। হয়তো কখনো বেশি আবার কখনো একটু কম।
এই অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশের কঠিন শিকার বর্তমান বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী। বিশ্ব মানচিত্রে মুসলিম জাতি যেন শেকড়হীন। বহু অন্যায় এবং অপরাধ মাথায় নিয়ে এরা জন্মগ্রহণ করে থাকে।
মূলত কথা সেটা নয়। মূল বিষয় হলো সকল কর্তৃত্ববাদী, জড়বাদী ও নাস্তিকতার বিরুদ্ধে ইসলামের নির্দেশে মুসলিম জাতি সোচ্চার। এটাই হলো মুসলমানদের মূল অন্যায় বা অপরাধ। পৃথিবীর কোনো অপশক্তিকে পাত্তা না দিয়ে এক আল্লাহর শক্তিকে বিশ্বাস করা এটাই তাদের অপরাধ। দুনিয়ার কোনো মাতব্বরের কাছে মাথা নত না করার ধৃষ্টতা জগৎ পূজ্যদের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ। তাই তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে মুসলমানদের ওপর একের পর এক অত্যাচারমূলক অবিচার করেই চলেছে।
বিশ্ব মুসলমানদের ওপর এই অবিচার, নির্যাতন এবং নিগ্রহতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এমনকি এর মাত্রা এত চরমে পৌঁছে গেছে যা চিন্তারও অতীত। কিন্তু কেন এই দুর্দশা, কেন এই নিম্ন গামিতা?
ক) মুসলমানদের পারস্পরিক অনৈক্যতা হয়তো মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ বলে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন। সাথে সাথে এটাও ঠিক যে মুসলমানদের অজ্ঞতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। যার ফলে ক্রমশ মুসলমানরা শক্তিহীন হয়ে পড়ছে এবং এর সবটুকু সুযোগ সুবিধা শত্রু পক্ষ গ্রহণ করছে।
খ) আল্লাহর প্রতি মুসলমানদের আস্থাহীনতা এই অত্যাচারের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। যে মুসলমানের ঈমানী শক্তির কাছে বড় বড় শক্তি পরাস্ত হতো সেই ঈমানী শক্তি যখন অনুপস্থিত তখন অন্যরা সে সুযোগ একশ ভাগ কাজে লাগাতে দ্বিধা করে না।
গ) আত্মকলহ মুসলমানদের মৌলিক শক্তিকে খর্ব করে দিচ্ছে। মুসলমান ভাই ভাই। এক মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য আয়নাস্বরূপ। মুসলমান জাতি একটি দেহের অংশ। এই কথাগুলো মূলত উপেক্ষা করে চলছে। যার ফলে মুসলমান যেন আজ তাদের নিজস্ব অবস্থান হারিয়ে ফেলছে।
ঘ) মুসলিম জাতি লালসায় মত্ত হয়ে আছে। ‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু’- এ কথা যেন আজ বেমালুম তারা ভুলে গেছে। যার ফলে অন্যের ঘেরা টোপ গ্রহণ করে নিজেরা নিজেদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও দ্বিধা করে না।
এই ক্রান্তিকালের একমাত্র ভরসা আল্লাহর গায়েবি সাহায্য। তার অপার করুণায় মুসলমানরা ফিরে পেতে পারে তাদের নিজস্ব ইতিহাস এবং হারানো ঐতিহ্য।
আজ বড় আফসোস, নিজেদের অনৈক্যের কারণে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, অথচ এ সম্পর্কে আজো আমরা বেখেয়াল। সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র সকলে সমানভাবে। কবি ফররুখ আহমদ সম্ভবত এর বাস্তবতা উপলব্ধি করে লিখেছেন-
আমাদের ভুলে দরিয়া কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়েছে তাদের সেতারা শশী।
দুই.
চারপাশে ধোঁয়াশা। প্রদীপ্ত সূর্যের আলো আজ দৃষ্টিসীমার বাইরে। ভাঙনের মাঝে দিশেহারা সমগ্র জাতি। মুসলিম মিল্লাতের চোখে হতাশা দুরাশা। থেমে গেছে ভোরের পাপিয়ার গান। মুসলমানদের বুকে কেবল মৃত্যুযন্ত্রণা। দু’চোখে কেবল অশনির সঙ্কেত। মাথার ওপরে মৃত্যু হুলিয়া।
এই বিভীষিকাময় অহিনকুল সময়ে কেউ আর সান্ত্বনার আঁচল উড়িয়ে এগিয়ে আসে না। কোথায় ঈসা খাঁ, তিতুমীর, বখতিয়ার? কোথায় খান জাহান, শাহজালাল, শাহপরাণ, কোথায় হাসানুল বান্না, মাদানী, সাইয়্যেদ কুতুব, কোথায় শহীদ আবদুল মালেক যাদের বীরত্বে এ বিশ্ব আবার ফিরে পাবে সঠিক পথ। দিকশূন্য মুসলিমজাতি করুণার পাত্র না হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কে পারে মুসলিম জাতির হতাশা দূর করে দুচোখ ভরে জ্বালিয়ে দেবে আশার আলো।
আজ উৎকণ্ঠায়, হতাশার অনলে মুসলিম জাতি দিশেহারা। কিন্তু কেন এই দুরবস্থা? কেন এই হতাশা? কেন নিরাশা? মুসলিম জাতি হয়তো আল কুরআনকে উপেক্ষা করেছে। উপেক্ষা করেছে কুরআনে বর্ণিত নবী-রাসূলগণের জীবনী। কিভাবে মহান রাব¦ুল আলামিন ঈমানদারদের সাহায্য করেছেন? কোন অবস্থায় তারা আল্লাহর সাহায্য পেয়ে বিজিত হয়েছে?
মুসলমান অন্যের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এটা ঠিকই। আবার আক্রান্তদেরকে মহান রব তার অনুগ্রহে হেফাজাতও করেছেন। নবী-রাসূলগণও কাফিরদের হাত থেকে রক্ষা পাননি। এমনকি তারা বলতে বাধ্য হয়েছেন- কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য?
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শক্তভাবে তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন- নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য সন্নিকটে। অতএব ধৈর্যহারা বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই সময়ে সীমালংঘনকারীদের পক্ষ থেকে অত্যাচার এবং নির্যাতনের মাত্রা এত চরমে পৌঁছে গেল যেন এর রেশ টেনে ধরার মতো শক্তি পৃথিবীর আর কারো ছিল না। কিন্তু একথা সত্য যে মানুষের শক্তি না থাকলেও মহান রবের শক্তি তখনো তারা বুঝতে পারেনি। এ জন্যে মুমিনগণ কখনো হতাশ হতেন না।
বর্তমান সময়ের এই নাজুক অবস্থায় অনেকেরই বলতে শুনি মুসলমানদের আর কোনো উপায় নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নির্যাতন ভোগ করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই এ থেকে পরিত্রাণের জন্য। এই হতাশাব্যঞ্জক কথার সাথে আমি একমত নই। এমনকি এ কথা যারা বলেন তাদের ঈমানী শক্তি নিয়েও আমার প্রশ্ন জাগে। মূলত তারা কি জানে না (?) সকল শক্তির ঊর্ধ্বের শক্তি হলেন মহান আল্লাহ! তিনি ইচ্ছে করলে সব কিছুই অনায়াসে করতে পারেন। তার নিকট দুনিয়ার super power তুচ্ছ এবং নগণ্য। তিনি মানুষকে শক্তিশালী করেন আবার চাইলে শক্তিহীন করেন। তিনি কাউকে বাদশাহি দান করেন আবার ছিনিয়ে নেন।
এসবের প্রতি যদি কারোর অটল বিশ্বাস থাকে তাহলে তার জন্য হতাশার কী আছে? নিরাশ হওয়ারও কোনো কারণ থাকতে পারে না। বরং সর্বদা সে সাহসী মানুষের মতো এগিয়ে যাবে এবং আল্লাহর সাহায্যের জন্য প্রত্যাশা করবেন। কেননা, নবী-রাসূলসহ আল্লাহপ্রেমিক মানুষেরা তাই করে থাকেন। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমাদের ভয় নেই, নেই কোন দুশ্চিন্তা, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৯)
যুগে যুগে নবী-রাসূলগণও বর্তমান সময়ের ধরে আরো বেশি সঙ্কটের মোকাবিলা করেছেন। সে অবস্থায় তাদের ভূমিকা কেমন ছিলো তা অনুধাবন করতে পারলে মুসলমানগণ সঙ্কটকালে হতাশায় নুয়ে পড়বে না ।
আমরা জানি, নবী-রাসূলগণ সাধারণ মানুষের মতো নন। তাঁরা নিঃসন্দেহে অতিমানব। মহান রবের সাথে তাদের যে সম্পর্ক তা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। তবুও তারা নিরাশ না হয়ে ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে এক আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশা করেছেন।
হযরত মূসা (আ) ও ফেরাউনের ঘটনার দিকে একবার দৃষ্টি ফেলালে আমরা বিষয়টি সহজভাবে বুঝতে পারব। প্রবল প্রতাপশালী ফেরাউন যে নিজেকে দাম্ভিকভরে বলেছিলো- আমিই জগতের সবচেয়ে বড় খোদা। তার প্রবল শক্তির কাছে হযরত মূসা ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন একেবারেই তুচ্ছ, একেবারেই নগণ্য। তা সত্ত্বেও আল্লাহর নির্দেশ মতো ফেরাউনের দরবারে যেয়ে তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হে মূসা এবং হারুন! তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে যাও নিশ্চয় সে বিদ্রোহী। (সূরা ত্বাহা : ৪৩)
সে আল্লাহর প্রেরিত নবীর ওপর চড়াও হলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরাউনকে বুঝাবার চেষ্টা করলনে এভাবে- অর্থাৎ আমার দেয়া পবিত্র রিজিক খাও এবং তা খেয়ে বিদ্রোহী হয়ো না। তা না-হলে তোমাদের ওপর গজব নাজিল হবে। আর যার ওপর আমার গজব পড়ে তার পতন হবেই। (সূরা ত্বাহা : ৮১)
হযরত মূসা (আ) ভালো করেই জানতেন এই দাম্ভিক ফেরাউন কী করতে পারে। আবার এও জানতেন ফেরাউনের শক্তি আল্লাহর শক্তির কাছে কিছুই না। ফেরাউন তাকে যেমন ক্ষতি করতে পারে ঠিক আবার আল্লাহও তাকে রক্ষা করবেন এটাও তেমন ঠিক। এই ঈমানী শক্তি হজরত মূসাকে আরো সাহসী করে তোলে।
ফেরাউন হযরত মূসার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো এবং তাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। হজরত মূসাকে সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য মহান রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিলেন। হযরত মূসা যখন পিছু হটলেন তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে হয়তো তিনি ফেরাউন কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে শাহাদৎ বরণ করবেন।
তখনো ফেরাউন জানতে পারিনি ঘটনাটি কী হতে চলেছে। হযরত মূসা (আ) এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। আর ফেরাউনও তাকে তাড়াতে থাকে। এক সময় নীল নদের কিনার পর্যন্ত এসে পৌঁছালে আর তার সামনে যাওয়ার কোনো পথ থাকলো না। পেছনে তাকিয়ে দেখছেন ফেরাউনের লোকেরা তার দিকে ধেয়ে আসছে।
আল্লাহ হযরত মূসাকে সান্ত্বনা দিয়া বললেন- অর্থাৎ আমি মূসার প্রতি ওহি করলাম, আপন লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর, ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মতো হয়ে গেল। (সূরা শুয়ারা : ৬৩)
সাথে সাথে মহান রব কিভাবে মূসাকে রক্ষা করবেন এবং ওয়াদা অনুযায়ী ফেরাউনকে শাস্তি দেবেন তার নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে বলেন- আমি মূসা ও তার সাথীদেরকে উদ্ধার করলাম। তারপর অপর দলটিকে নিমজ্জিত করলাম। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুুমিন নয়। তোমার প্রতিপালক তো পরম পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (সূরা শুয়ারা : ৬৫-৬৮)
এই ছিলো মহান রবের পক্ষ থেকে একজন দাম্ভিক কাফিরের শাস্তি। যে এত দাম্ভিক হয়ে খোদায়ী দাবি করলো। অথচ এই কাফির তার অন্তিম কালে, বিপদমূহর্তে নিজেকে কতো অসহায় বলে ভাবলো তা একবার দেখে নিই। মহান রাব্বুল আলামিন তার সেই আকুতি এভাবে তুলে ধরেছেন- আমি বিশ্বাস করলাম বনি ইসরাইল যাতে বিশ্বাস করে, নিশ্চয় তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। (সূরা ইউনুস : ৯০)
ঠিক এভাবেই হযরত ইবরাহিম (আ)-এর দিকে আমরা লক্ষ্য করতে পারি। অহঙ্কারী বাদশা নমরুদ তাকে মূর্তি ভাঙাসহ পৌত্তলিকতাকে অস্বীকার করায় তাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। এটা ছিল হযরত ইবরাহিমের জন্য সত্যিই অগ্নিপরীক্ষা। তবু তিনি এ নিয়ে বিন্দুমাত্রও বিচলিত হলেন না। বরং তার বিশ্বাস ছিলো, নিশ্চয় মহান রব তার সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। বাদশাহ নমরুদ আর তার সাথী কাফেরদের রক্তচক্ষু এমন ছিলো- অর্থাৎ তারা বললো, ইবরাহিমকে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের নেতাদের সাহায্য কর যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের প্রতি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইবরাহিমের ক্ষতি সাধন করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আম্বিয়া : ৬৮-৭০)
হযরত ইবরাহিমের চরম ধৈর্য এবং ঈমানী পরীক্ষার পর মহান রাব্বুল আলামিন হযরত ইবরাহিমকে নিরাপত্তা দিলেন। আর তাদেরকে অধিক ক্ষতির ভেতর নিমজ্জিত করলেন। সে ক্ষতি মূলত ছিলো তাদের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ক্ষুদ্র কীট মশা প্রেরণ করলেন তাদের ধ্বংসের জন্য। সবাইকে শিক্ষা দিলেন উত্তমভাবে। পরিশেষে একটি খোঁড়া মশার মাধ্যমে অহঙ্কারী নমরুদের জীবন সংহার হয়, যা ছিলো অত্যন্ত নিকৃষ্টতম মৃত্যু।
হযরত নূহ (আ) এর ঘটনাও আমরা কম জানি না। তার জাতির অবাধ্যতার কারণে তিনি আল্লাহর নিকট বদ দোয়া করেছিলেন। তিনি জানতেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এই অধম জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
অতঃপর আল্লাহ তার অপর শক্তি দিয়ে চুলা থেকে পানি উদগিরণ করিয়ে ধ্বংস করার নিমিত্তে হযরত নূহ (আ)কে কিস্তি নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করেন। তারপর যথাসময়ে চুলা থেকে পানি বেরিয়ে আসতে লাগলো। এবং একে একে সবকিছু প্লাবনের মাধ্যমে তলিয়ে দিলেন। আর যারা ঈমানদার নূহ (আ)-এর কিস্তিতে আরোহণ করেছিলেন তারা রক্ষা পেলেন।
এভাবে মহান রব তার প্রিয় নবী হযরত নূহ (আ)কে রক্ষা করলেন।
হযরত ঈসা (আ)-এর দিকে যদি আমরা দৃষ্টি ফেরাই তাহলেও জানতে পারবো কিভাবে কাফিরের সকল ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করে তার প্রিয় রাসূল ঈসাকে রক্ষা করলেন। যে সমস্ত কাফির তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। শুধু তাই নয় তারা হযরত ঈসাকে সেই সাথে তার প্রিয়তম মাকে নানা কটু কথা আর জঘন্য অপরাধ রটনা করতে থাকে। মহান রাব্বুল আলামিন এসব অপরাধ ও রটনাকে উড়িয়ে দিয়ে ঘোষণা করলেন- আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হলো আদমের দৃষ্টান্তের মত, তাকে বলেছিলেন হও আর হয়ে গেল। (সূরা আলে ইমরান : ৫৯)
সূরা বাকারায় মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন- অর্থাৎ তারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি অতি পবিত্র। বরং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহরই। সবকিছু তার একান্ত অনুগত। আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। এর ফলে তিনি যখন কোনো কিছু করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন তার জন্য শুধু বলেন ‘হও’ আর তা হয়ে যায়। (সূরা বাকারা : ১১৬-১১৭)
অনেক ঘটনা পরম্পরায় কাফিররা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো যে হযরত ঈসাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। এ কথা শোনার পরও হযরত ঈসা (আ) বিচলিত না হয়ে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন- স্মরণ করো, যখন আল্লাহ বললেন- হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি এবং যারা কুফরি করেছে তাদের মধ্য থেকে তোমাকে পবিত্র করেছি। আর তোমার অনুসারীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের ওপর প্রাধান্য দিচ্ছি। অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটেছে আমি তা মীমাংসা করে দিব। (সূরা আল ইমরান : ৫৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর মনোনীত বান্দাদেরকে এভাবে হেফাজত করে থাকেন। এবং কাফিরদের সকল ষড়যন্ত্রকে ধুলায় মিশিয়ে দেন। তিনি বলেন- এবং তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, আল্লাহও তাদের বিরুদ্ধে কৌশল করেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহর কৌশল অতি উত্তম। (সূরা আলে ইমরান : ৫৪)
ইবনে জারির ওহব ইবন মুনাববিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, ঈসা (আ) সতেরোজন হাওয়ারিসহ এক ঘরে প্রবেশ করেন। এ অবস্থায় তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। যখন তারা দেখে ইয়াহুদিরা ঘরের ভেতর প্রবেশ করেছে তখন আল্লাহ তাদের সকলের চেহারাকে ঈসা (আ)-এর মত করে দেন। এ দেখে বনি ইসরাইলরা বললো, তোমরা সবাই জাদু করে আমাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছ। হয় আসল ঈসাকে আমাদের নিকট বের করে দাও, নচেৎ তোমাদের সবাইকে হত্যা করবো। তখন ঈসা (আ) সাথীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ, যে নিজের প্রাণের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করবে? এক ব্যক্তি বললেন আমি রাজি। এরপর সে ব্যক্তি বনি ইসরাইলের সামনে এসে বললেন, আমি ঈসা। বস্তুত ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ ঈসা (আ)-এর আকৃতি দান করেছিলেন। তখন তারা তাকে ধরে হত্যা এবং ক্রশবিদ্ধ করলো। (আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃ: ১৮২-১৮৩)
এভাবেই আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ)-কে রক্ষা করেছেন।
রাসূল (সা)-এর জন্মের মাত্র চল্লিশ দিন আগের ঘটনা। জাহেলি যুগ চলছে। এ সময় আরবের অবস্থা ছিলো খুবই শোচনীয় এবং নাজুক। এ সময় আর এক অহঙ্কারী বাদশাহ। নাম তার আবরাহা। যে খানায়ে কাবাকে ধ্বংস করার জন্য বিশাল হস্তীবাহিনীসহ নিজেই এসেছিল।
তখন কাবাঘর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মোত্তালিব। এই অহঙ্কারী বাদশাহর মোকাবিলা করার মত যথেষ্ট শক্তি তাঁর ছিল না। তাই কাবাঘরের গেলাফে হাত রেখে অসহায়ের মতো করে মহান রবের কাছে আকুতি জানালেন-
হে প্রভু তোমার ঘর খানায়ে কাবা ধ্বংসের জন্য বাদশাহ আবরাহা তার হস্তীবাহিনীসহ এগিয়ে আসছে। হে প্রভু তোমার ঘর তুমিই রক্ষা করো।
মহান রব তার দোয়াকে কবুল করলেন এবং বাদশাহ আবরাহা এবং তার হস্তীবাহিনীকে ধ্বংস করে দিলেন। এভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ঘর খানায়ে কাবাকে রক্ষা করলেন। মহান রাব্বুল আলামিন সূরা ফিলে বলেন- অর্থাৎ তুমি কি দেখনাই তোমার প্রভু হস্তীবাহিনীর সাথে কি আচরণ করেছিলেন? তিনি কি তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেননি? এবং আসমান থেকে আবাবিল পাখি দ্বারা কঙ্কর নিক্ষেপণে তারা চর্বিত চর্বণের মতো হয়ে গিয়েছিলো। (সূরা ফিল)
এভাবে মহান রব তার ঘর খানায়ে কাবাকে রক্ষা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আর আবদুল মোত্তালিবের মতো হানিফ গোত্রের লোকদের বিজয়ের সাফল্য দান করেছেন।
বর্তমান বিশ্ব বড় অস্থির। চার দিকে হত্যা জুলুম মহামারীতে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে ইসলাম আর মুসলমানদের অবস্থা যেন আরো শোচনীয়। অন্য জাতিতে ভ্রাতৃত্ব এবং মেলবন্ধন থাকলেও মুসলিম জাতির অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং আত্মকলহ এমন চরমে উঠেছে যা বর্ণনাতীত। মুসলমি জাতি আজ অন্যের দ্বারা প্রলুব্ধ। যার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, সব কিছু থেকে পিছিয়ে পড়ছে। আর অসহায়ের মতো শুধু অন্যের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, যা কারোরই কাম্য নয়।
আজ বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। সাধুবেশী শয়তান দ্বারা আক্রান্ত ভালো মানুষেরা। নির্যাতন নিষ্পেষণ, হত্যা, গুম, জেল-জুলুম এ যেন আল্লাহওয়ালা লোকদের অনিবার্য পাওনা। কী অবাক! কুরআন-হাদিসের পরিপন্থী কর্মে লিপ্ত থেকে দ্বীনকে হেফাজতকারী হিসেবে প্রমাণ করতে এক শ্রেণীর মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টা হতবাক করে দেয়। আর সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চারপাশে গড়ে তুলছে নাস্তিক্যবাদের কঠিন বলয়। এর ফলে একদিকে ঈমানদারদের হৃদয়ে হতাশা বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।
আমার এতসব আলোচনার পেছনে যে উদ্দেশ্য লুকিয়ে তা হলো- হতাশাগ্রস্ত ঈমানদারদের সামনে নবী -রাসূলদের জীবনের কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা। যাতে করে তারা হতাশ না হয়ে আশার মিনারে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে জানাতে পারে মুসলমান হতাশ হওয়ার মত জাতি নয়। মুসলমান কখনো মাথা নিচু করতে জানে না। কারণ, মুসলমানগণ জানে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত ইবরাহিমকে অগ্নিকুন্ড থেকে রক্ষা করতে পারেন, যিনি হযরত মূসাকে রক্ষা করতে পারেন, যিনি নূহ ও ঈসাকে রক্ষা করতে পারেন, যিনি কাবা ঘরকে রক্ষা করতে পারেন। নিশ্চয় তিনি এ নির্যাতিত মুসলমানদেরকেও নিশ্চিত রক্ষা করবেন।
শুধু রক্ষা করবেন তাই নয়, যিনি ফেরাউনের মতো দাম্ভিক বাদশাকে নমরুদের মতো অহঙ্কারীকে, বাদশা আবরাহাকে, কারুন, হামানকে, আবু জাহেল, ওতবা শায়বাকে, চরম শিক্ষা দিতে পারেন। তিনি এ যুগের দাজ্জাল অনুসারীদেরকেও শিক্ষা দিতে পারেন।
যিনি নদীর ভেতর দিয়ে স্পষ্ট রাস্তা তৈরি করে হযরত মুসা (আ)কে রক্ষা করতে পারেন। তিনি বর্তমান সময়ে ঈমানদারদের রক্ষা করা তার জন্য দুরূহ নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ফেরাউনের লোকদিগকে ডুবিয়ে দিয়েছি অথচ তোমরা দেখেছিলে। (সূরা বাকারা : ৫০)
তিনি হযরত নূহকে এবং হযরত ঈসা (আ)কে সকল ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত থেকে হেফাজত করেছেন। আবরাহারার শক্তিকে যিনি পরাভূত করে খানায়ে কাবাকে রক্ষা করেছেন। সেই আল্লাহ যিনি ফেরাউনকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন এবং একটি ক্ষুদ্র কীটের সাহায্যে নমরুদকে ধবংস করেছেন, যিনি ছোট্ট পাখি দিয়ে আবরাহা ও তার হস্তীবাহিনীকে ধুলাবালির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন তিনি রাব্বুল আলামিন। তিনিই সর্ব শক্তিমান এবং আকাশ জমিন আর এর মাঝের সব কিছুর স্রষ্টা।
উপসংহার
আজ গোটা বিশ্বের মুসলিম মিল্লাত এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। হত্যা জুলুম নির্যাতন অধিকার হরণ পারস্পরিক হিংসার দাবানলে আক্রান্ত। তাদের চোখে মুখে হতাশা। অন্ধকারের মাঝে যেন তারা খেয়া হারিয়ে ফেলেছে। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, বসনিয়া, লিবিয়া, মিশরসহ গোটা বিশ্বের মুসলমান আজ বড়ই দুর্দিনের মুখোমুখি। এই সময় কে আছে তাদের পাশে দাঁড়াবার। কে আছে সান্ত্বনার সোপান নিয়ে এগিয়ে আসবে? আরো অবাক হতে হয় যখন দেখি এ সবুজ বাংলায় মুসলমানদের অপরিণামদর্শী ইসলামপ্রীতি। মূলত যারা ইসলামকে ভালোবাসেন, ইসলামের ধারক ও বাহক, ইসলাম যাদের হাতে নিরাপদ তাদের প্রতি অবিচারমূলক নির্যাতন আর নিষ্পেষণের স্টিম রোলার চলছে। নির্বিচারে হত্যা, জেল, জুলুম, আর গুমের মত ভয়ঙ্কর অপসংস্কৃতির নিরলস প্রচেষ্টা চলছে। এ যেন চেঙ্গিসের মৃত্যুপুরী। হালাকুর নির্মমতা, হিটলারের হঠকারিতা, বুশের মত হত্যা নেশা, সাদ্দামের মত ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা এ যেন সবুজ বাংলার পরে এক চরম অশনির সঙ্কেত।
এ অবস্থায় মুসলিম জাতির চোখে মুখে হতাশা, দুরাশা, আর নিরাশা। প্রকৃত মুমিন যারা তারা অবশ্যই এ থেকে ভিন্ন। যারা নবী-রাসূলদের জীবন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা অবশ্যই এই দুঃসময়কে তাদের হৃদয়ে স্থান দেবেন না। কেননা তারা জানেন, যে আল্লাহ ফেরাউন, নমরুদ, কারুন, হামান, আবু জাহেল, ওতবা, শায়বার মোকাবিলায় সাহায্য করে ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় সুনিশ্চিত করেছিলেন, আজো সেই আল্লাহর সাহায্য নিয়েই মুসলিম জাতি এগিয়ে যাবে এবং বিজিত হবে।
পাহাড়সম বাধাকে অতিক্রম করে যে মুসলিম জাতি জীবনস্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আকাক্সক্ষায় জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শৌর্য-বীর্যে, সম্পদ ও সম্মানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতির শিরোপা অর্জন করেছিল। সেই জাতির চোখে মুখে হতাশা আর নিরাশার ছবি বড়ই বেমানান। কারণ, মহান রাব্বালু আলামিন অবশ্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
আজ যখন ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালারগণ অকুতোভয়ে তাকবির ধ্বনিতে ফাঁসির মঞ্চে যায় তখনও মুসলমান কেন একেবারে নীরব? কিসের তাদের ভয়? কিসে এতো সংশয়? তারা যদি ভাবেন যে, জীবন ও মৃত্যুর মালিক রাজাধিরাজ আল্লাহ তবে এ সময়ে হতাশার কী আছে? সুতরাং হতাশা নয়, বাঁচলে গাজী হয়ে বাঁচতে হবে আর মরলে শহীদ হবে এ প্রত্যয় হৃদয়ে লালন করা আবশ্যক। তা না হলে হতাশার মত দুরারোগ্য ব্যাধি আমাদের সমগ্র জাতিকে আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।
আসুন আমরা আরো একবার বলি-
যদিও বাতাসে ঝরছে মৃত্যুহিম
এখনো যে তার জলে অফুরান আশা
এখনো বা তার স্বপ্ন অপরিসীম।
(সাত সাগরের মাঝি : ফররুখ আহমদ)
আল্লাহ জাতিকে আশায় বুক বাঁধার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : কবি ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন