পদ্মা সেতু : বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ
মেহেদী হাসান সিকদার#
পদ্মা বহুমুখী সেতু। নির্মাণ শুরুর পর থেকেই বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ। নির্মাণ শুরুর পর থেকেই দফায় দফায় বাড়ছে এ ব্যয়। আগের বরাদ্দের চেয়ে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে সেতু বিভাগ। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদকাল ২ বছর বাড়ানোর কথাও বলেছে বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা বিভাগটি। স¤প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে নতুন এ প্রস্তাব পাঠায় সেতু বিভাগ। এ হিসাবে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৭ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের একনেক সভায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সময় মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ আবারো ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হলো। প্রস্তাবনা অনুসারে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। নতুন বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
মূল কাজ শুরুর আগেই যে যে খাতে ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়েছে সেতু বিভাগ তা হলো মূল সেতু নির্মাণে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি, নদীশাসনে ৪ হাজার ৩২০ কোটি, সংযোগসড়ক নির্মাণে ৬৩৭ কোটি এবং পদ্মা নদীর মাওয়া অংশে ভাঙন ঠেকাতে ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর জন্য বাড়তি বরাদ্দ অনুমোদন দিতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আর ব্যয় বাড়ানো কিংবা প্রকল্প সংশোধন করা হবে না বলেও পরিকল্পনা কমিশনে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ১৬০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখনো এই অর্থের সংস্থান হয়নি। সরকার চীনা অর্থায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে।
রেল চলাচলে অনিশ্চয়তা
অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় শুরু থেকেই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চীন সরকারের কাছে রেললাইন নির্মাণে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চীনেরই কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রæপের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই কোম্পানিটি টঙ্গী-ভৈরববাজার পথে নতুন একটি রেললাইন নির্মাণের কাজ করছে। পদ্মার দুই পাড়ে ১৬০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৭৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্ম্যাককে দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও রেলপথ ঠিক করে জমি চিহ্নিতও করা হয়েছে।
সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যয় বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মূল সেতু ও নদী শাসন ব্যয়। এ দুই প্যাকেজে নিয়োজিত ঠিকাদারি দুই চীনা প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বেশি দর প্রস্তাব করে। এর মধ্যে মূল সেতুতে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৯৬১ কোটি ও নদীশাসনে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। চুক্তির আওতায় ১২০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এর বাইরে আরও ৩০ কোটি ডলার জরুরি সহায়তা দেয়ার মৌখিক প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল সংস্থাটি। এ ছাড়া জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এ প্রকল্পে অর্থায়নের কথা ছিল। কিন্তু গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। পরে দুর্নীতিতে জড়িতদের সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়াসহ কয়েকটি শর্তে এ প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বহুল কাক্সিক্ষত সেতুটি সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয় সরকার।
লেখক : সাংবাদিক
আপনার মন্তব্য লিখুন