পরিকল্পনা গ্রহণ ও সময় ব্যবস্থাপনা সংগঠন পরিচালনার প্রাণস্বরূপ। সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন সময়ের যথার্থ ব্যবহার ও সুন্দর পরিকল্পনার। পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ পালনীয় কর্মপন্থার মানসিক প্রতিচ্ছবি। পরিকল্পনা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সময়ের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করে। If we fail with right scheme, we will take the wrong succeed. (যদি আমরা পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমরা ব্যর্থ হওয়ার পরিকল্পনাই গ্রহণ করলাম) পরিকল্পনাবিহীন কাজ মানেই উদ্দেশ্যবিহীন কাজ। পরিকল্পনা হলো যেকোনো কাজের দরজা। To plan master is to plan the gateway to learning. পরিকল্পনা যেকোনো কাজের অর্ধেক। Well plan is half done. লক্ষ্য বা টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সময় ব্যবস্থাপনার সুন্দর পরিকল্পনা। আবরাহাম লিঙ্কন বলেন, "If we could first know where we are, and whither we are tending, we could better judge what to do, and how to do it.”
পরিকল্পনার সংজ্ঞা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাস্তবতাকে সামনে রেখে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অগ্রিম কাজের তালিকা প্রণয়নকে পরিকল্পনা বলে। পরিকল্পনা মানেই ধাপে ধাপে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। Planning is deciding in advance what to do, how to do it, when to do it and who is to do it. Planning is a trap to capture the future. মোট কথা পরিকল্পনা মানে- Six Ws এবং how এর উত্তর খুঁজে বের করা। যেমন- Why must it be done? What action is necessary? Where will it take place? When will it take place? Who will do it? How it will be done?
মনে রাখতে হবে। পরিকল্পনা হলো- Planning is an intellectually demanding process. উন্নতমানের বুদ্ধিদীপ্ত প্রক্রিয়া বিবেচনাপ্রসূত কর্মপন্থা নির্ধারণ উদ্দেশ্য, ঘটনা ও হিসেবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
পরিকল্পনার গুরুত্ব সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আসে না। কী ব্যক্তিজীবনে, কী সমাজে, কী ব্যবসায়ে, কী রাষ্ট্রীয় কাজে? সর্বক্ষেত্রেই পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।
◊ পরিকল্পনা দিকনির্দেশনা দেয় ◊ পরিকল্পনা মিতব্যয়িতা অর্জনে সহায়তা করে ◊ পরিকল্পনা পরিবর্তিত অবস্থার মোকাবিলা করে ◊ পরিকল্পনা মান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ◊ সংগঠনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ◊ সমন্বয়ে সাহায্য করে ◊ নানাবিধ সমস্যার সমাধান ◊ দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রীভূতীকরণ ◊ সীমিত জনশক্তির সঠিক ব্যবহার ◊ গতিশীল নেতৃত্ব ◊ দক্ষতা বৃদ্ধি
পরিকল্পনার বিভিন্ন স্তর পরিকল্পনা প্রণয়নে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যেমন- ভিশন (Vision): স্বপ্ন (Ambition), কেন প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে, কী করতে চায়? মিশন (Mission): প্রতিটি সংগঠিত দলভিত্তিক কাজের একটি মিশন থাকে। ভিশনে পৌঁছার জন্য বর্তমানে যা করণীয় তাই মিশন। উদ্দেশ্য (Objectives): উদ্দেশ্য হলো কোন কাজের চূড়ান্তরূপ। একটি সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য থাকে এবং সে উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্য প্রতিটি বিভাগেরই আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য থাকে। কৌশল (Strategy): কৌশল হলো, লক্ষ্য অর্জনের উপায়। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশেষ বিশেষ অবস্থা বিবেচনা করে কখন কোন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হয়। এটি হচ্ছে Sense of priorities-লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কী কী করতে হবে। নীতি (Principle)) বা পলিসি (Policy)): নীতি বা পলিসি হলো একটি সাধারণ বিবরণ যা কোনো কিছু করার বা না করার নির্দেশনা দেয়। পলিসি লিখিত অথবা অলিখিত উভয়ই হতে পারে। বিধি (Rules): বিধিও এক ধরনের পরিকল্পনা। এটা হচ্ছে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কার্যক্রম নেয়া হবে তা নির্ধারণ করা। কার্যপ্রণালী (Work System):): কার্যপ্রণালীও পরিকল্পনা। কারণ এটি ভবিষ্যতে কাজ সম্পাদনের জন্য উত্তম প্রণালী ঠিক করে দেয়। বাজেট (Budget): পরিকল্পনা যখন সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয় তখন তা হয়ে যায় বাজেট।
পৃথিবী সৃষ্টির পরিকল্পনা আল্লাহ তাআ’লা সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। তিনি সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ব চরাচর সৃষ্টি করেছেন এবং পরিকল্পনা মাফিক ধ্বংস করবেন। পবিত্র কুরআনে আছে- সমগ্র আসমান ও জমিন আল্লাহ তাআলা ছয় দিনে ছয় পর্যায়ে সৃষ্টি করেছেন এবং আসমানসমূহকে স্তরে স্তরে সুসজ্জিত করেছেন। তিনি সৌরজগৎকে যথাস্থানে স্থাপন করেছেন, দুনিয়ার ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্থানে স্থানে নদী-নালা, সাগর, পাহাড়-পর্বত ও বনভূমি স্থাপন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলাই রাত, দিন, সূর্য ও চাঁদকে পয়দা করেছেন, (এদের) প্রত্যেকেই (মহাকালের) কক্ষপথে সাঁতার কেটে যাচ্ছে। এসব কিছুই সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফসল। পরিকল্পনামাফিক আসমান ও জমিনের নীলনকশা তৈরি করে এগুলোকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সহজেই বুঝায় যায় যে, প্রতিটি বস্তুই পরিকল্পনা মোতাবেক তৈরি, যার ফলে প্রকৃতির কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অবকাশ নেই।
পরিকল্পনা গ্রহণে লক্ষণীয় দিক
SWOT-এর বাস্তবায়ন S = Strength (শক্তি) W = Weakness (দুর্বলতা) O = Opportunity (সুযোগ) T = Threat (হুমকি)
SMART -পরিকল্পনা গ্রহণে লক্ষণীয় দিক: S = Set the goal or Specific (লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা) M = Measurable (অনুমান বা পরিমাপ করা) A = Attainable or achievable (অর্জনযোগ্য) R = Resourceable or Reliable (সম্পদ বা বিশ্বস্ততা) T = Time bond or Time frame (সময় নির্দিষ্ট)
পরিকল্পনার গুণগত বৈশিষ্ট্য ◊ সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ◊ সহজবোধ্য ও সহজসাধ্য ◊ কার্যাবলি বিশ্লেষণ ও শ্রেণি বিভাগ ◊ সমন্বয় ও যোগসূত্র ◊ নিরবিচ্ছন্নতা ◊ নমনীয়তা ◊ ভুল-ত্রুটিশূন্যতা ◊ সমতা ◊ সম্পদসমূহের পূর্ণ সদ্ব্যবহার ◊ মিতব্যয়িতা ◊ ব্যাপকতা ◊ যথার্থতা ◊ বাস্তবতা ◊ ভবিষ্যৎমুখিতা ◊ সৃজনশীলতা ◊ গ্রহণযোগ্যতা
পরিকল্পনা গ্রহণের সময় যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে : ◊ জনশক্তির অবস্থা ◊ অর্থনৈতিক অবস্থা ◊ বিরোধী শক্তির তৎপরতা ◊ পরিবেশ বিচার ◊ সময়সীমা নির্ধারণ
সাংগঠনিক দিক থেকে পরিকল্পনা দুই ধরনের : ◊ জনশক্তির পরিকল্পনা ◊ কাজের পরিকল্পনা
জনশক্তির পরিকল্পনা দুই ধরনের বায়োডাটা সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে- ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা খ. মেধাভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস গ. সামাজিক অবস্থা ঘ. সাংগঠনিক যোগ্যতা মান অনুযায়ী ভাগ করে দেয়া ক. A - Group খ. B- Group গ. C- Group ঘ. D- Group
কাজের পরিকল্পনা - আজ/এ সপ্তাহে/এ মাসে/এ বছরে কী কী কাজ করবো। অতঃপর গুরুত্বানুসারে শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে। যেমন- Grade – A: Most important work (আজই করা দরকার এবং আমাকেই করতে হবে) Grade – B: Very important work (আজই করা দরকার তবে অন্যের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে) Grade – C: Important work (আগামীকাল করলেও চলবে) Grade – D: Less important work (কম গুরুত্বপূর্ণ, করলে কল্যাণ আছে না করলে ক্ষতি নেই) উদাহরণ: Most important work এবং Very important work আপনি পরীক্ষার্থী, সকাল ১০টায় পরীক্ষা, ওদিকে মা অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে নিতে হবে- এক্ষেত্রে আপনি কী করবেন?
এম.বি.ও পদ্ধতিতে পরিকল্পনা- Management by objectives (MBO) বা উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা। এম.বি.ও পরিকল্পনার ৪টি পর্যায়। ক. প্রস্তুতি গ্রহণ খ. সিদ্ধান্ত গ্রহণ গ. যোগাযোগ স্থাপন বা জানানো ঘ. নিয়ন্ত্রণ
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা: ◊ পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারা ◊ অর্থনৈতিক সমস্যা ◊ দায়িত্বশীলদের সীমাবদ্ধতা ◊ গতানুগতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ◊ ত্বরিত ফল লাভের চিন্তা করা ◊ সমস্যা সম্ভাবনার আলোকে পরিকল্পনা গ্রহণ না করা ◊ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব ◊ দাওয়াতি কাজে জনশক্তির অংশগ্রহণ কম ◊ যে যে বিষয়ে যোগ্য তাকে সে বিষয়ে কাজে না লাগানো
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফর্মুলা মনে রাখা প্রয়োজন: 3P = Purpose, Process, Product 3R = Read, Reflection, Reformed 3H = Head to understand, Heart to accept, Hand to act 7S = Strategy, Structure, System, Style, Staff, Skill, Sharevalues POSDCORB =Planning, Organizing, Staffing, Directing, Coordinating, Reporting, Budgeting
পিটারস ও রবার্ট এইচ. ওয়াটারম্যানের মতানুসারে যে সব মৌলিক বৈশিষ্ট্য একটি সংগঠনের শ্রেষ্ঠত্ব দিতে পারে তা হলো: ◊ সঠিক সময়ে কার্য সম্পাদন; ◊ কর্মীদের একেবারে কাছে অবস্থান; ◊ উদ্যোগ গ্রহণ ও কর্ম স্বাধীনতার উন্নয়ন সাধন; ◊ কর্মীদের উৎসাহ দানের মাধ্যমে সর্বাধিক ফলাফল অর্জন; ◊ দক্ষতা অর্জনে বাস্তব পদ্ধতি গ্রহণ; ◊ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে কার্য সম্পাদন; ◊ সহজ সাংগঠনিক কাঠামো ব্যবহার করা এবং ◊ কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ উভয়েরই সমন্বিত উন্নয়ন সাধন।
নেতৃত্বের মানোন্নয়নে করণীয়
পড়তে হবে: নেতৃত্বের মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অধ্যয়ন। Leaders are readers অর্থাৎ নেতা মাত্রই শিক্ষার্থী। ভালো নেতা হতে হলে পড়ালেখা করতে হয়। নেতারা বিশেষ কিছু পড়াশোনা করে বা নেতা হতে হলে বিশেষ কিছু পড়তে হয়। আরেকটি কথা আছে, 'We become what we read'. আমরা যা পড়ি তাই হই। পর্যবেক্ষণ করতে হবে: নেতৃত্বের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশপাশে, বাসা বাড়িতে, অফিস আদালতে যাদের ভালো নেতা মনে হয়, তাদের ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাদের শব্দচয়ন ও বডি ল্যাংগুয়েজসহ সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শুনতে হবে: নেতৃত্ব বিষয়ক বক্তব্য বা অন্য কোনো বক্তব্য যাই হোক না কেন, অফলাইনে বা অনলাইনে (ভিডিও বা অডিও) নিয়মিত লেকচার শুনতে হবে। হাতে কলমে শিখতে হবে: হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেতৃত্ব উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে হাতে কলমে শিখতে হবে- ◊ কিভাবে লক্ষ্য স্থির করতে হয়? ◊ কিভাবে পরিকল্পনা করতে হয়? ◊ কিভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয়? ◊ কিভাবে উৎসাহিত করতে হয়? ◊ কিভাবে সৃজনশীলতা জাগিয়ে তুলতে হয়? ◊ কিভাবে বৈঠক করতে হয়? ইত্যাদি।
নেতৃত্ব উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা নেতৃত্বের উন্নয়ন হলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে নেতৃত্বের উনড়বয়নের জ্ঞান দান করা হয়। নিচে নেতৃত্ব উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ◊ পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো। ◊ দক্ষতা বৃদ্ধি। ◊ সেকেলে ব্যবস্থাপনা পরিহার। ◊ বহুমুখী জ্ঞান। ◊ সম্পদের ব্যবহার। ◊ নতুন কার্যপদ্ধতির প্রবর্তন। ◊ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন।
কার্যকর বৈশ্বিক মানের নেতা হওয়ার জন্য প্রয়োজন একজন কর্মোদ্দীপনাময় এবং কার্যকর বৈশ্বিক মানের নেতা হওয়ার জন্য মূলত ৩টি জিনিসের প্রয়োজন। প্রথমত: নিজেকে জানা, ভেতরের গুণাবলিকে বিকশিত করা এবং সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। দ্বিতীয়ত: লক্ষ্য বাস্তবায়নে অন্যদেরকে প্রভাবিত করা এবং তাদেরকে সংগঠনের লক্ষ্য সম্বন্ধে উপলব্ধি করানো। তৃতীয়ত: মূল্যায়ন এবং নিরন্তরভাবে শেখার চেষ্টা করা। ◊ এই বিষয়গুলো বাস্তবায়নে ১০টি পদক্ষেপ নিতে হবে, যা একই সঙ্গে বৈশ্বিক নেতা হওয়ার পথেও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ◊ কী করছি এবং কেন করছি এবং কাজগুলো কিভাবে সংগঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত, সেই ব্যাপারে খুব স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ◊ নেতৃত্ব উপলব্ধি করা এবং তা পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগুলোকে জানতে হবে। ◊ যখন আপনি একটি দলের ভেতরে বিভিন্ন মানসিকতার ও সাংস্কৃতিক চেতনার এবং বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের সাথে কাজ করতে যাবেন, তখন নিজের ব্যবহারকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তাও জানতে হবে। ◊ সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ◊ সময় ও স্থানকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের পন্থা জানতে হবে। ◊ বড় দৃশ্যপটে ভাবতে হবে। সেই সাথে কিভাবে বিশ্বায়ন আপনাকে প্রভাবিত করছে সেই সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। ◊ যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। ◊ অন্যদেরকেও উন্নত করতে হবে। ◊ আত্মপর্যালোচনা করতে হবে এবং আপনার ব্যাপারে অন্যদের মূল্যায়নকে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে। ◊ নিরন্তর শেখার চর্চা থাকতে হবে, যাতে কাজটি করার জন্য নিজেকে ফিট রাখা সম্ভব হয়।
নেতৃেত্বর শিক্ষা নবী-রাসূলগণ ও খোলাফায়ে রাশেদিনের নেতৃত্ব গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য আদর্শ স্বরূপ। তাদের নেতৃত্বের শিক্ষাসমূহ নিম্নরূপ- ◊ ক্ষমা করা, ◊ জ্ঞানার্জন, ◊ স্থিরচিত্ত থাকা, ◊ সিদ্ধান্তে অটল থাকা, ◊ উদ্দীপ্তকরণ ও উৎসাহ প্রদান, ◊ আদেশসর্বস্ব না হয়ে নিজ হাতে কাজ করা, ◊ সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করা, ◊ সুদূরপ্রসারী চিন্তা করা, ◊ সূক্ষ্মদর্শী হওয়া, ◊ অন্যকে মোটিভেট করার যোগ্যতা অর্জন করা, ◊ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া, ◊ রহমদিল হওয়া, ◊ অন্যের কল্যাণ কামনা করা।
দায়িত্ব বণ্টন ‘কার এটা করা উচিত?’ সিদ্ধান্ত সুসম্পন্ন করার জন্যই কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। দায়িত্ব নামোল্লেখপূর্বক বা যে করবে তার পদবি উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট করে দিতে হবে যাতে কোনো দ্ব্যর্থতা না থাকে এবং জবাবদিহিতা অন্যের ওপর না বর্তায়। যদি কোনো কাজের জন্য প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়, তাহলে কাজটি সফল হবে না। কারণ, প্রত্যেকেই মনে করবে কেউ একজন কাজটি করবে।
বাদশা এবং তার মধুর দিঘী একজন বাদশা মধু পছন্দ করতেন। জনগণ তাকে কত ভালোবাসে তিনি তা পরীক্ষা করতে চাইলেন। তিনি একটি শূন্য ব্যারেল শহরের কেন্দ্রে রেখে দিয়ে বললেন, যারা তাকে ভালোবাসে তারা যেন এই ব্যারেলের ভেতর এক কাপ করে খাঁটি মধু রেখে দেয়। একজন ভাবল, যেহেতু অন্য সকলে মধু রাখতে যাচ্ছে সেহেতু সে পানি রাখলে দোষ কী? এক ব্যারেল মধুতে এক কাপ পানি কিছুই না। পরে রাজা যখন ব্যারেল খুললেন তখন দেখতে পেলেন শুধুই পানি। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে, প্রত্যেকে একই ধারণা পোষণ করেছে। এ গল্প শিক্ষা দেয় যে, দায়িত্ব হলো ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্যরা করবে এটা ভেবে নিজেকে কখনোই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত নয়। রাসূল (সা) এ কথাটি এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই একজন রাখাল অর্থাৎ দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই স্ব-স্ব দায়িত্বের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সুনানে আত তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, সহিহ আল বুখারি এবং সহিহ মুসলিম)
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে ৬টি গ্যাপ যেকোনো কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণত ৬টি গ্যাপ পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে The 8th Habit: From effectiveness to greatness গ্রন্থে Stephen R Covey- ◊ স্পষ্টতা (Clarity): মানুষ সুনির্দিষ্টভাবে জানে না যে, তাদের দল বা সংগঠনের লক্ষ্য বা অগ্রাধিকারসমূহ কী কী। ◊ অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি (Commitment): মানুষ বর্ণিত লক্ষ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করে না। ◊ ভাষান্তর (Translation): মানুষ জানে না যে, তাদের দল বা সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের কী করা উচিত। ◊ ক্ষমতায়ন (Enabling): নিজেদের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য মানুষের কাছে যথাযথ অবকাঠামো, ব্যবস্থা বা স্বাধীনতা নেই। ◊ সামষ্টিকশক্তি (Synergy): মানুষ একসাথে ভালোভাবে অগ্রসর হয় না বা কাজ করে না। ◊ জবাবদিহিতা (Accountability): মানুষ সব সময় পরস্পরকে দায়ী করে না।
ডভিস এম জর্নি (২০১৪) দ্বারা ব্যাখ্যা করা নেতৃত্বের আরও ১০টি প্রধান নীতি নিচে আলোচনা করা হয়েছে: ◊ পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করুন। ◊ আত্মোন্নতির সময় নিজের নিজের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতাগুলির প্রশংসা করুন। ◊ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন। ◊ উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব। ◊ নিশ্চিত করুন যে আপনার অনুসারীরা আপনার গুরুত্ব এবং অভিপ্রায় জানে, তারপর মিশন সিদ্ধির জন্য তাদের নেতৃত্ব দেন। ◊ আপনার সৈন্যদের ভালো করে জানুন এবং তাদের ভালো গুণের প্রশংসা করুন। ◊ সময়মতো সিদ্ধান্ত নিন ◊ আপনার কর্মীদের একটি দল হিসাবে প্রশিক্ষণ দিন এবং দক্ষতানুসারে কাজ দিন।
টিএ-ডিএ পদ্ধতি (TA-DA Formula) এই পদ্ধতি যে কাউকে আসনড়ব সমস্যা মোকাবিলায় সতর্ক হতে সাহায্য করবে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, এই পদ্ধতি ব্যবহার খুবই কার্যকর। গভীর মনোনিবেশ (Think): আগেই বলেছি যথাসময়ে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিন্তা করতে হবে- কোন উদ্যোগ প্রধান উদ্দেশ্য লাভে সহায়ক? কেন এই কাজটি করতে চাই? এই কাজ করার মাধ্যমে আমি কোন ধরনের উপকার পেতে পারি? এই কাজ না করার ফলে কোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে? এই কাজ করতে কত সময় লাগতে পারে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে গভীর চিন্তা করা হলে, সিদ্ধান্তের পর অনেক কম ঝুঁকি থাকবে। প্রয়োজনে অনেক সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। পরামর্শ করুন (Ask): আপনার কাজের বিষয়ে জ্ঞান আছে এমন একজন আপনার প্রিয় মানুষ বা পরামর্শকের কাছ থেকে উপরোল্লিখিত প্রশ্নগুলোর বিষয়ে পরামর্শ করুন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ওই পরামর্শদাতা যেন চিন্তাশীল হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনার কাজটি যত গুরুত্বপূর্ণ হবে, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ততখানি সময় গ্রহণ করুন। এর অর্থ এই নয় যে, আপনি খুব গভীরে প্রবেশ করছেন, বরং সময় নেয়ার মাধ্যমে ওই বিষয়ে অনেক তথ্য নিচ্ছেন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decide): সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ডাবল স্পাইরাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। এর অর্থ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় ফলাফল কেমন হতে পারে তার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। একটা বিষয় আমরা সবাই জানি, সিদ্ধান্ত গ্রহণই হচ্ছে মূল কাজের অর্ধেক। সিদ্ধান্তের পর কাজে নেমে পড়ুন (Act): অনেক গভীর মনোনিবেশ দ্বারা তথ্য বিশ্লেষণ এবং সর্বপোরি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর কাজে নেমে পড়ুন। এটি হলো টিএ-ডিএ পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক মানুষ আছে সিদ্ধান্তের পর ঝাঁপিয়ে পড়ার বিপরীতে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে। আপনাকে অবশ্যই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সময় ব্যবস্থাপনা বিখ্যাত দার্শনিক আশরাফ আলী থানবী (রহ) বলেছেন, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এ তিন কালের সমষ্টিই হলো কাল বা সময়। বিশশ্বনবী (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- আদম সন্তানেরা সময়কে গালি দিয়ে আমাকে আঘাত করে; অথচ আমিই সময় আমার হাতেই আছে সবকিছু। (আল বুখারি- ৪৮২৬)। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক চিন্তাবিদ, ড. ইউসুফ কারযাবী সময়ের তিনটি বৈশিষ্ট্য বলেছেন- ১. সময় অস্থায়ী, ২. সময় কখনো ফিরে আসে না, ৩. সময় মহামূল্যবান বস্তু। তিনি আরও বলেন, Time is more expensive than money, gold, diamond or pearls. নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন- ‘আমি অস্ট্রিয়ানদের পরাজিত করতে পেরেছিলাম তার প্রধান কারণ, তারা পাঁচ মিনিট সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারেনি বলে।’ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কিন বলেছেন- ‘যা তুমি আজ করতে পারো তা কখনো কালকের জন্য ফেলে রাখবে না, কারণ বর্তমানের একটি দিন ভবিষ্যতের দু’টি দিনের সমান।’ আল্লামা সুয়ুতি রহ: ‘জামউল জাওয়ামে’ নামক গ্রন্থে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সা) এরশাদ করেন, “প্রতিনিয়ত সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘দিন’ এই বলে ঘোষণা করতে থাকে যে, যদি কেউ কোনো ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে যেন সে তা করে নেয়। কেননা আমি কিন্তু আর ফিরে আসবো না। আমি ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, রাজা-প্রজা সকলের জন্য সমান। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় ব্যবহার করতে শিখিনি। তবে আমার সঙ্গে যে সদ্ব্যবহার করবে সে কখনও বঞ্চিত হবে না।” তাই বলা যায়, "Don't waste time, go ahead. You will become success." কর্মপরিকল্পনা এবং সাফল্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময় ব্যবস্থাপনা। আপনাকে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনা জানতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এর জন্য যা করতে হবে : ক. আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন। খ. প্রতিটি কাজে এখন আপনি গড়ে কত সময় ব্যয় করছেন তা নিরূপণ/ঠিক করুন। গ. প্রতিটি কাজে গড়ে কতটুকু সময় প্রয়োজন তা বের করুন। ঘ. প্রতিটি কাজে গড়ে আপনি কতটুকু সময় অতিরিক্ত ব্যয় করেন তা বের করুন। ঙ. এখন সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করবেন?
কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা। আমাদের দেশে এ বিষয়টিকে খুব কম গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যদি চাপ কমাতে না পারেন, তবে তা আপনার সফলতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। চাপ কমানো ও ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের যা করতে হবে : ◊ নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা ◊ নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলা ◊ সবকিছু সহজে গ্রহণ করা ◊ মাথা ঠাণ্ডা রাখা ◊ সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা ◊ নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখা
সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব প্রকৃতপক্ষে সময় আমাদের নয়। সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য। রাসূল (সা) আমাদের বলেছেন, “দু’জন ফেরেস্তার নিম্নরূপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাতও আসে না; হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার করো। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসব না।” হাদিসে আছে “যে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলো যার আজকের দিন গতকালের চেয়ে উত্তম হলো না।” আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) এর অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না। (শামায়েল তিরমিজি : ৩৩৯) সময় ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র হচ্ছে সময়ের প্রকৃতি ও গুরুত্ব অনুধাবন করা। জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে হলে তাই সময়ের মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক। এক বছরে ১২ মাস, ৫২ সপ্তাহ, ৩৬৫ দিন। সে হিসাবে ৩৬৫ দিন সমান ৮৭৬০ ঘণ্টা, ৫২৫৬০০ মিনিট, ৩১৫৩৬০০০ সেকেন্ড- কে কিভাবে জীবনের সময়গুলো ব্যয় করেছে হাশরের মাঠে আল্লাহ কাঠগড়ায় তার হিসাব আদায় করে ছাড়বেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ৬ মাস। যদি আমি বা আপনি এই বয়স পাই তাহলে হবে ৬২৬৭৩৬ ঘণ্টা। আমাদের হিসাবটা এইভাবে ব্যয় করা যেতে পারে : আমাদের জীবন = ৬২৬৭৩৬ ঘণ্টা। ◊ শৈশবের অপরিপক্বতায় কেটে যায়- ৫ বছর ◊ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনে কেটে যায়- ২৫ বছর ◊ চাকরি বা পেশাগত দায়িত্ব পালনে কেটে যায়- ৩০ বছর ◊ বার্ধক্যের দুর্বলতায় চলে যায়- ১১ বছর।
ইসলামে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ইসলাম সময় ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। প্রথমেইত চলুন আমরা আল কুরআনের একটি ছোট্ট সূরা আল আসরের কাছে যাই, ‘সময়ের কসম। মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করতে থেকেছে, একে অন্যকে হক কাজ ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ আল্লাহ তায়ালা সময়ের কসম করে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা: বলেছেন, “মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন দিবসে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। তার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, কিভাবে তা ব্যয় হয়েছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে বলা হবে, কেমন করে সে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে? সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন হবে, এই সম্পদ সে অর্জন করল কোত্থেকে? আর কিভাবেই বা তা খরচ করেছে? তার যে জ্ঞান ছিল, তা দিয়ে সে কী করেছে?” সময় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিজেকে এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে মানুষকে যে সময়ের গতিতে আবদ্ধ সেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। বিখ্যাত বই The Effective Executive-এর লেখক পিটার ড্রাকার সময় ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেছেন। সেই অধ্যায়টি হলো ‘নিজের সময়কে জানুন’। ১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন। ২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন। ৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন। ইসলাম প্রাত্যহিক জীবনে আমাদেরকে যে নির্দেশনা দিয়েছে: ১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন: রাসূল সা: পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের ওপর অগ্রাধিকার বা গুরুত্ব দেয়ার জন্য বলেছেন; ‘বৃদ্ধকাল আসার আগে যৌবনের, অসুস্থতার আগে সুস্থতার, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার, ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবসরের ও মৃত্যু আসার আগে জীবনের।’ ২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন। ‘সেই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা বাজে কাজ থেকে বিরত থেকেছে।’ (সূরা মুমিনুন : ১ ও ৩) এখানে ফালাহ মানে সাফল্য ও সমৃদ্ধি। এটি ক্ষতি, ঘাটতি, লোকসান ও ব্যর্থতার বিপরীত অর্থবোধক শব্দ। সূরা ফুরকানে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে বলা হয়েছে, ‘যখন তারা এমন কোনো জায়গা দিয়ে পথ চলে যেখানে বাজে কথা ও কাজের মহড়া চলে, তখন তারা ভদ্রভাবে জায়গা অতিক্রম করে চলে যায়। ৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন। এলোমেলো অগোছালো কাজ দশটা করার চেয়ে একটি কাজ সুচারুরূপে পালন ভালো। ইসলাম যেই কাজটিকে ইহসান এবং এর কর্মীকে মুহসিন নামে আখ্যায়িত করেছে।
সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল বা দিকনির্দেশনা: মানুষের হাতে সময় অত্যন্ত সীমিত। সময় থেকে সময় নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ। নিয়মিত রুটিন করে সময় বরাদ্দ রাখুন এবং সে মোতাবেক চর্চা করুন কাজে কোনো অসুবিধা হবে না ইনশাআল্লাহ। সময় নির্ধারণ করে কাজ করলে কাজ সঠিক, সুন্দর হয়। সময় নির্ধারণ সম্পর্কে M. K Gandhi বলেন, "Time is life, life is time. Balance between life and time can help one reach the highest apex of success." তাইতো বলা হয়েছে- "Lost time can never be found again." প্রবাদ আছে- "A Stitch is time saves nine." নিম্নের সময় ব্যবস্থাপনার কতগুলো কৌশল বা দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোকপাত করা চেষ্টা করা হলো : ◊ সময় নির্ধারণ করুন ◊ কাজের সিরিয়াল তৈরি করা ◊ সময় থেকে লেখালেখির সময় বের করুন ◊ গুছিয়ে কাজ করুন ◊ দৈনন্দিন পঞ্জিকা ব্যবহার করুন ◊ অভিধানের ব্যবহার শুরু করুন ◊ সব কিছু করার সময় বের করুন ◊ কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা ◊ গুরুত্ব অনুযায়ী কখন কোন কাজটি নেয়া ◊ বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে কাজে স্থির থাকা। ◊ কৌশল ঠিক করা ◊ কাজের অগ্রগতি মিলিয়ে দেখা।
পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনা লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার। পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে পরিচলানা কখনই সম্ভব না। পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনা অনন্য এক দুর্লভ ঐশ্বর্য। ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে এর মূল্য অপরিসীম। সময় যে মূল্যবান সম্পদ এর উক্তি দিতে গিয়ে বরার্ট ব্রাউনিং বলেন, “একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া।” মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো নিজ জীবন, আর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো সময়। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) যথার্থই বলেছেন, "Time is like a sword: if you don’t cut it, it will cut you." অর্থাৎ, সময় হলো তলোয়ারের মত, যদি তুমি তা দিয়ে না কাটো তাহলে সে তোমাকে কেটে ফেলবে। H. Stanely Judd বলেন,"A good plan is like a road map: it shows the final destination and usually the best way to get there.””
লেখক : বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন