পলাশীর গাদ্দারদের পরিচিতি ও পরিণতি
১৮ মে ২০১২
ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন। এদিন পলাশীর আম্রকাননে স্বদেশী বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তে বিদেশী বেনিয়াদের হাতে বাংলার স্বাধীনতাসূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের প্রতি বিদ্বেষ ও স্বার্থের লোভে পড়ে হিন্দু বিশ্বাসঘাতকেরা দেশের স্বাধীনতা ইংরেজদের হাতে বিকিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য বাংলার প্রধান সেনাপতি থাকা অবস্থায় মীরজাফরের ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা, জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতাও জাতির জন্য কলঙ্কজনক এবং তা অবশ্যই ক্ষমার অযোগ্য। জাতি মীরজাফরকে কোনোদিন ক্ষমা করেনি এবং করবেও না। কিন্তু ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার মূল নায়ক যে জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মানিকচাঁদ, রাজভল্লভ, নন্দনকুমার, কৃষ্ণভল্লভ, রামনারায়ণ, সেতাবরায় প্রমুখ এ কথা অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। অথচ এসব বিশ্বাসঘাতক এবং এদের অন্যান্য হিন্দু সহযোগীদের যৌথ ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতেই দেশে ঔপনিবেশিক বেনিয়া শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
পলাশী ষড়যন্ত্রে যারা অংশ নিয়েছিল, পরবর্তীকালে তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়েছিল। এদের সকলের ওপরই আল্লাহর লানত পড়েছিল। প্রায় সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল মর্মান্তিকভাবে। পলাশীর শীর্ষস্থানীয় হিন্দু গাদ্দারদের পরিচিতি ও পরিণতি নিম্নরূপ :
১. মহাতপ চাঁদ জগৎশেঠ ও স্বরূপচাঁদ জগৎশেঠ : পলাশীর ষড়যন্ত্রের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল জগৎশেঠ পরিবার; প্রথমত, তারা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং পরে মীরজাফরও অন্যদের এতে যুক্ত করেন। শেঠ পরিবার ছিল অগাধ সম্পত্তির অধিকারী। তারা হুণ্ডির কারবার করতেন। শেঠদিগের গদিতে দৈনিক টার্নওভার ছিল ১০ কোটি টাকা। জমিদার, মহাজন ও অন্যান্য ব্যবসায়ী সকলেই অর্থের জন্য শেঠদিগের নিকট উপস্থিত হতেন। ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ প্রভৃতি বৈদেশিক বণিকগণ তাদের নিকট থেকে টাকা কর্জ নিতেন। শেঠ পরিবারের প্রধান ছিলেন জগৎশেঠ মহাতপ চাঁদ। আলীবর্দী খাঁর শাসনামলেই জগৎশেঠের সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক অতি গভীর ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় আরোহণ করলে এ সম্পর্ক ষড়যন্ত্রে রূপ নেয়। প্রায় প্রতি রাতেই জগৎশেঠের নশীপুরের গদিতে ষড়যন্ত্রকারীদের সভা বসত। পলাশী বিপর্যয়ের পর জগৎশেঠ রাজকোষ লুণ্ঠনে অংশ নেন। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে মীরজাফর নবাবী হারালে মীর কাশিম ক্ষমতায় আসেন। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজদের সাথে স্বাধীনচেতা মীর কাশিমের বিরোধ বাধে। জগৎশেঠ ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করেন এবং জগৎশেঠ মহাতপ চাঁদ মীর কাশিমের বিরুদ্ধে কয়েকটি পত্র ইংরেজদের প্রদান করেন। পত্রগুলো মীর কাশিমের হস্তগত হয়। এ জন্য মীর কাশিম জগৎশেঠ মহাতপ চাঁদ ও তার ভাই স্বরূপচাঁদকে বন্দী করে মুঙ্গের দুর্গে রাখেন। ইংরেজদের সাথে ক্রমেই মীর কাশিমের বিবাদ গুরুতর হয়ে উঠলে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী জগৎশেঠ মহাতপ চাঁদকে মুঙ্গেরের অত্যুচ্চ দুর্গশিখর হতে হাত-পা বেঁধে গঙ্গাগর্ভে নিক্ষেপ করে বিনাশ সাধন করেন। স্বরূপচাঁদও একই প্রক্রিয়ায় ইহজীবনের লীলা সাঙ্গ করতে বাধ্য হন।
২. উমিচাঁদ : উমিচাঁদ ছিলেন অন্যতম বড় ষড়যন্ত্রকারী। কলকাতার দেশীয় বণিকদের মধ্যে উমিচাঁদ ছিলেন সর্বপ্রধান। এ বণিক প্রবরের আসল নাম ছিল আমিন চাঁদ রুঢ়ি। আমিন চাঁদ ছিলেন শিখ। ইংরেজরা তাকে অমি চাঁদ বলত। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে উমিচাঁদ বলেই এ বিশ্বাসঘাতক শিখ সওদাগর পরিচিত হলেন। নবাব আলীবর্দী খানের দয়ায় তিনি কলকাতায় বড় ব্যবসায়ী হতে পেরেছিলেন। আলীবর্দী খানের উদ্দেশ্য ছিল যে উমিচাঁদ কলকাতায় থেকে ইংরেজদের গতিবিধির ওপর নজর রেখে মুর্র্শিদাবাদের দরবারে গোপনে সংবাদ সরবরাহ করবেন। কিন্তু নিমক হারাম এ উমিচাঁদ গোপনে ইংরেজদের সাথেই হাত মিলালেন। উমিচাঁদ ক্লাইভ কর্তৃক প্রতারিত হয়েছিলেন। সিরাজ উৎখাতের পর নবাব পদে ইয়ার লতিফ খান ছিলেন উমিচাঁদের মনোনীত প্রার্থী। কিন্তু যখন অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারী এক্ষেত্রে মীরজাফরের নাম প্রস্তাব করলেন তখন উমিচাঁদ বেঁকে বসলেন এবং বললেন, তোমাদের প্রস্তাব মানতে পারি এক শর্তে, তাহলো যুদ্ধের পর নবাবের রাজকোষের ৫ ভাগ সম্পদ আমাকে দিতে হবে। ক্লাইভ তাতে সম্মত হন বটে কিন্তু যুদ্ধের পর তাকে তা দেয়া হয়নি। যদিও এ বিষয়ে একটি মিথ্যা চুক্তিও হয়েছিল। ওয়াবস রমনী সেজে মীরজাফরের বাড়িতে গিয়ে লাল ও সাদা কাগজে দু’টি চুক্তিতে তার সই করান। লাল কাগজের চুক্তিতে বলা হয়েছে নবাবের কোষাগারের পাঁচ শতাংশ উমিচাঁদের প্রাপ্য হবে। এটি ছিল নিছক প্রতারণামাত্র। যুদ্ধের পর ক্লাইভ সরাসরি বলেন, তোমাকে কিছু দিতে পারব না। এ কথা শুনে উমিচাঁদ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পাগল অবস্থায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতেই এই গাদ্দারের মৃত্যু ঘটে।
৩. রায়দুর্লভ : রায়দুর্লভ ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহর একজন সেনাপতি। পলাশীর যড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। ইংরেজদের তিনি গোপনে সাহায্য করতেন এবং পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ বাহিনীকে নিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই কুখ্যাত রায়দুর্লভই বন্দী মোহন লালকে হত্যা করে, তার সমস্ত ধনসম্পদ আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীকালে বিশ্বাসঘাতক রায়দুর্লভকে তহবিল তসরুপের অপরাধে কারাগারে নিক্ষেপ করে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়, যার ফলে করুণ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।
৪. মানিকচাঁদ : মানিকচাঁদ ছিলেন নবাব সিরাজের অন্যতম সেনাপতি। কলকাতা দখলের পর নবাব তাকে সেখানকার শাসনভার দেন। কিন্তু নবাবের ভেতনভুক কলকাতা প্রশাসক মানিকচাঁদও গাদ্দারি করলেন। উৎকোচ প্রাপ্তির লোভে প্রলুব্ধ হয়ে ইংরেজবাহিনী প্রতিরোধের মিছেমিছি ভান করে পরাজয় স্বীকার করলেন। ফলে ১৭৫৭ সালের ২রা জানুয়ারি ক্লাইভ কলকাতায় বিজয় পতাকা উড়ালেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মানিকচাঁদ গোপনে ইংরেজ কোম্পানির নৌসেনাপতি ওয়াটসন আর পদাতিক বাহিনীর সেনাপতি কর্নেল রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে সুদখোর উমিচাঁদের প্ররোচনায় কলকাতা ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদে পলায়ন করেন। নবাব সিরাজ তাকে কারাদণ্ড দেন। পরে মানিকচাঁদ ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে পলাশীর ষড়যন্ত্রে অংশ নেন। এই গাদ্দারও গঙ্গাগর্ভে ডুবে মারা যান।
৫. রাজভল্লভ : ঢাকার নায়েব নাজিম সরফরাজ খাঁর দেওয়ান ছিলেন মুর্শীদকুলী খানের এককালের মুন্সী যশোবন্ত রায়। সিরাজউদ্দৌলা হত্যা চক্রান্তের অন্যতম নায়ক কুখ্যাত বৈদ্যরাজ রাজভল্লভ ছিলেন এই দেওয়ান যশোবন্ত রায়ের সেরেস্তার পেশকার। পরবর্তীতে নায়েব নাজিম নোয়াজিশ খাঁর দেওয়ান হোসেন কুলী খাঁ নিহত হওয়ার পর রাজভল্লভ সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার দাপটে তিনি জুলুম করে প্রচুর নজরানা আদায় করেন।
নোয়াজিশ খাঁ ও দেওয়ান হোসেন কুলী খাঁ উভয় বেশির ভাগ সময় থাকতেন মুর্শিদাবাদে। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে ধূর্ত রাজভল্লভ প্রচুর ধন সম্পদ সঞ্চয় করার সুযোগ পেলেন। নোয়াজিশ খাঁ ও তার পত্নী ঘষেটি বেগমের সুপারিশে রাজভল্লভ বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খাঁরও স্নেহভাজন ছিলেন।
কিন্তু রাজভল্লভ সিরাজউদ্দৌলার সতর্ক দৃষ্টি এড়াতে পারলেন না। একমাত্র সিরাজের অভিযোগেই রাজভল্লভ মুর্শিদাবাদের দরবারে এসে রাজস্বের হিসাব দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন থেকেই রাজভল্লভ সিরাজের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করতেন। পরবর্তীকালে তিনি পলাশীর ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে সিরাজের ওপর নিষ্ঠুরভাবে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারী রাজভল্লভের মৃত্যু মর্মান্তিকভাবে হয়েছিল। জানা যায়, গাদ্দার রাজভল্লভের কীর্তিনাশ করেই পদ্মা হয় কীর্তিনাশা।
৬. কৃষ্ণভল্লভ : কৃষ্ণভল্লভ ওরফে কৃষ্ণচন্দ্র রাজভল্লভের ছেলে। পিতার দাপটের সুযোগে কৃষ্ণচন্দ্র প্রচুর নজরানা আদায় করেছিলেন। বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খান যখন রোগাক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী তখন বৈদ্যরাজা রাজভল্লভ পুত্র কৃষ্ণচন্দ্রের সাথে যোগসাজশ করে রাজকোষ থেকে লুণ্ঠিত অর্থ ঢাকা থেকে সরিয়ে ফেলতে তৎপর হলেন। গোপনে কাশিমবাজার কুঠিতে এলেন রাজভল্লভ। কুঠিয়াল ওয়াটসকে অনুরোধ করলেন তার পুত্রের জন্য কলকাতায় কোম্পানির কাউন্সিলরদের কাছে একখানি সুপারিশপত্র লিখে দিতে। পত্রের সারমর্ম হলো : ‘কৃষ্ণভলভ ঢাকা থেকে সস্ত্রীক পুরী যাচ্ছে শ্রী শ্রী জগন্নাথজীর মন্দির দর্শনে। যাত্রা পথে তার আশ্রয়ের প্রয়োজন হলে তাকে যেন কলকাতায় আশ্রয় দেয়া হয়।’ ওয়াটস সাহেবের সুপারিশ পত্রখানা নিয়ে কৃষ্ণভল্লভ সস্ত্রীক ধনরতœ বোঝাই করা নৌকাগুলো ভাসিয়ে দিলেন কলকাতা অভিমুুখে। তখন কলকাতায় ইংরেজ কোম্পানির অধ্যক্ষ ছিলেন ড্রেক সাহেব। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি উড়িষ্যার বালেশ্বর বন্দরের কুঠিতে বাস করছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে কলকাতার অন্য কাউন্সিলরগণ ওয়াটসের সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে কৃষ্ণভল্লভকে কলকাতায় আশ্রয় দিলেন। এ ব্যাপারে কৃষ্ণভল্লভকে সাহায্য করেছিলেন কলকাতার অন্যতম কাউন্সিলর কুখ্যাত ঐতিহাসিক হলওয়েল। ক্ষমতা লাভ করেই সিরাজ কলকাতার ইংরেজ অধ্যক্ষকে আদেশনামা পাঠালেন অবিলম্বে দস্যু ঢাকার ধনরত লুণ্ঠনকারী কৃষ্ণভল্লভকে মুর্শিদাবাদ দরবারে পাঠাও। ইংরেজরা তাকে পাঠালেন না। কলকাতায় থেকেই কৃষ্ণভল্লভ নবাবের বিরুদ্ধে সকলকে কুমন্ত্রণা প্রদান করত। কিন্তু ইতিহাসের শাস্তি থেকে রক্ষা পায়নি কৃষ্ণভল্লভ। নতুন করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মীরজাফর কৃষ্ণভল্লভকে তার পিতার সাথে গলায় বালির বস্তা বেঁধে গঙ্গায় নিক্ষেপ করেন। এভাবেই গঙ্গায় সলিল সমাধি ঘটে বিশ্বাসঘাতক পিতা-পুত্রের।
৭. নন্দনকুমার : ব্রাহ্মণ নন্দনকুমার ছিলেন সিরাজ নিযুক্ত হুগলীর ফৌজদার। ক্লাইভ অর্থ উৎকোচ দিয়ে তাকে বশীভূত করেছিলেন। নন্দনকুমারকে উৎকোচ গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন উমিচাঁদ। মুর্শিদাবাদ কাহিনী গ্রন্থে নিখিলচন্দ্র রায় লিখেছেন, নন্দনকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই অন্ধকার দেখে ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, ইংরেজরা সেই সময়ে আমীরচাঁদকে দিয়ে নন্দনকুমারকে ১২ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করেছিলেন। এ প্রবন্ধে ড. মোহর আলী লিখেছেন, ‘ইংরেজদের চন্দননগর আক্রমণের প্রাক্কালে নবাব সিরাজ তাদের প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন কিন্তু বিপুল পরিমাণ ঘুষের বিনিময়ে প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা নন্দনকুমার বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলান। বস্তুত নন্দনকুমার চন্দননগরের প্রবেশপথ থেকে যদি নবাবের সৈন্য সরিয়ে না নিতেন তাহলে ইংরেজরা ফরাসিদেরকে যুদ্ধে হারাতে পারত না। যাইহোক পলাশীর ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার পর মীরজাফর নন্দনকুমারকে স্বীয় দেওয়ান নিযুক্ত করে সব সময় তাকে নিজের কাছে রাখতেন। পরবর্তীতে এ বিশ্বাসঘাতক হন মহারাজা নন্দনকুমার। মীরজাফর দ্বিতীয়বার নবাব হলে নন্দনকুমার হন প্রধানমন্ত্রী। এ বিশ্বাসঘাতক পরবর্তীতে উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছিলেন। দলিল জালকরণ, তহবিল তছরুপ ও অন্যান্য অভিযোগে ইংরেজ আদালতের বিচারে নন্দনকুমার ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে জীবনলীলা সাঙ্গ করেন।
৮. রাজা রামনারায়ণ : পলাশীর ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা। তিনি ছিলেন বিহারের ডেপুটি গভর্নর। পলাশীর ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার পর মীরজাফর নিজ পুত্র মিরনকে উক্ত পদে নিয়োগ দান করলে রামনারায়ণ মিরনের সহকারী রূপে কাজ করেছিলেন। রাজস্বের হিসাব না দেয়া ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নবাব মীর কাশিম তাকে বন্দী করেন এবং তার বাসবভন তল্লাশি করেন। তল্লাশি করে ৭ লাখ টাকা পাওয়া যায়। পরে ইংরেজদের সাহায্যকারী রাজা রামনারায়ণকে গলায় পাথর বেঁধে ভাগিরথীর গর্ভে নিক্ষেপ করা হয়।
৯. সেতাব রায় : পলাশীর অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। ষড়যন্ত্রের পুরস্কারস্বরূপ পরবর্তীতে পাটনার নায়েব নাজিম (ডেপুটি গভর্নর) পদ লাভ করেন। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। ইংরেজদের খুশি করার জন্য সেতাব রায় নাগরিকদের ওপর অত্যাচার করতেন। ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে বন্দী করেন এবং কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।
১০. দুর্লভরায় : দুর্লভরায় সিরাজউদ্দৌলার পতন ষড়যন্ত্রের অন্যতম গাদ্দার। দুর্লভরায় তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য উত্তম পুরস্কারই পেয়েছিলেন। তিনি নবাব মীরজাফর ও মীরনের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত হয়ে কলকাতায় মানবেতর জীবন যাপন করে ইহলীলা শেষ করেন। ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘মীরজাফরের দেশদ্রোহিতার ফলেই যে, বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীন হলো- এ অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। রাজ্য লাভের জন্য, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রভুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তখন আরো অনেকেই করেছিলো।’ এ প্রবন্ধে এই আরো অনেকের তথা ষড়যন্ত্রের মূলনায়কদের মধ্যে অভিজাত হিন্দু ষড়যন্ত্রকারী ১০ জনের পরিচিতি ও পরিণতিই শুধু তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক : ব্যাংকার ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন