post

প্রাণভিক্ষা উপাখ্যান

এম এ গালিব

২৬ নভেম্বর ২০১৫
উল্টোপথে চলেছে বাংলাদেশ। এ পথের শেষ কোথায় কে জানে? গণতন্ত্রকামী মানুষ গগনচুম্বী স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন করেছিল প্রিয় এ মাতৃভূমিকে। স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানি শোষণ থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতার অমিয় সুধা পান করবে। কিন্তু প্রায় অর্ধশত বছর পার হলেও এখনো ধরা দেয়নি স্বাধীনতার সুখ পাখিটি। কে জানে কোথায় গেলে পাওয়া যাবে তারে? এখনকার ডিজিটাল গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে এক সময়ের তুখোড় স্বৈরশাসকও লজ্জা পাচ্ছেন। তিনিও কিনা বলেন বর্তমান সরকার আমার চেয়েও বড় স্বৈরাচার। এনালগ আর ডিজিটাল গণতন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট বাংলার মানুষ। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো মানুষও এখন মাসের পর মাস রাস্তায় বসে গণতন্ত্রের জন্য কান্না করেন। দেখার কেউ নেই। বর্তমান সরকার যেন স্বৈরাচারীর সকল সংজ্ঞা ছাপিয়ে গেছে। সর্বশেষ দু’জন মৃত্যুপথযাত্রীর সাথে প্রাণভিক্ষার নাটক সাজিয়ে যে নির্মম রসিকতা করলো তা সত্যিই হৃদয়বিদারক। সভ্যসমাজে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকার এ নাটকটা না করলেও পারতেন। গবৎপু ঢ়বঃরঃরড়হ নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমকর্মীগণ, সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট পরিবারদ্বয়ের সদস্যগণ প্রাণভিক্ষার বিষয় নিয়ে ব্যাপক বাগি¦তন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। গণমাধ্যমকর্মীগণ ও সরকার পক্ষ উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের প্রাণভিক্ষার বিষয়টা প্রমাণ করতে জোর প্রচেষ্টা চালান। অপর দিকে দন্ডিত ব্যক্তিদ্বয়ের পরিবারবর্গ তাদের প্রিয়জনকে চিরবিদায়ের প্রস্তুতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার বিষয়ে মিডিয়ার অপপ্রচারের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে নাকচ করেন। উল্লেখ্য, পরক্ষণেই আবার মিডিয়াকর্মীগণ স্বীকার করেছেন যে, জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষা চাননি বরং বিশেষ চিঠি লিখেছেন। অবশ্য সেই চিঠিটাও কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক পীড়াপীড়িতে লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষ আসলে অসহায়। তারা মূলত ওপর মহলের চাপেই পীড়াপীড়ি করেন এবং বলেন, এটা না হলে তাদের অসুবিধা হবে। একপর্যায়ে তারা এটাও বলেন, আপনাদের যা বক্তব্য আছে তাই লিখে দিন। আর সে কারণে কনসিকুয়েন্স বুঝেও তাদের সুবিধার জন্য একটি চিঠি লেখেন। যেখানে প্রাণভিক্ষার কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না। বরং সংবিধানের ৪৯ ধারা মতে, তার বিরুদ্ধে চলমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত উক্ত ফাঁসির রায় কার্যকর স্থগিত রাখার বিষয় উল্লেখ করেন। আর প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাণভিক্ষার প্রশ্নই আসে না। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গবৎপু ঢ়বঃরঃরড়হ করবে এটা কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আর এই সরকার ক্ষমা প্রদর্শন করবে এটাও কোন পাগল বিশ্বাস করে না। হাম্মাম কাদের চৌধুরী তার বাবাকে বিদায়ী সাক্ষাতের সময় এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, তোমার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি বাবা কোন দিন কারো কাছে মাথা নত করে নাই। আমি শুধু রাষ্ট্রপতিকে বিচারের অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখ করে পুনর্বিচারের দাবি জানিয়েছি। প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে সর্বশেষ সাক্ষাতে শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তার পরিবারের সদস্যদের জানান যে, তিনি কখনোই রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষা চাননি বা চাইবেন না। কারণ কোন মানুষ মানুষকে প্রাণভিক্ষা দিতে পারে না। জীবন-মৃত্যুর মালিক তো কেবলই আল্লাহ তায়ালা। সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন- ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন না। দেশে সকল ধরনের বিচারবহির্ভূত ও বিচারিক হত্যাকান্ড বন্ধ করুন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করুন। দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন। লেখক : কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক, বিআইসিএস

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির