post

প্রিয় নবীর আহারনীতি

এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

হযরত মুহাম্মাদ সা. সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও আল্লাহর নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ রাসূল। তিনি ছিলেন শেষ নবী। বিশ্ব মানবের ইতিহাসে মহানবী সা.-এর স্থান সবার উপরে। তাঁর তাকওয়া, অনুপম ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রমাধুর্য আমাদের সকলের জন্য অনুসরণযোগ্য। রাসূল সা. ছিলেন আল্লাহর নবী। একই সঙ্গে একজন মানুষ। এই উভয় পরিচয়ে তিনি সত্য ও সুন্দরকে ভালোবেসেছেন। তাঁর দৈনন্দিন জীবন আচরণ, অভ্যাসের মধ্যে আমরা চরিত্র গঠনের অনেক উপাদান খুঁজে পাই। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ মানবতার অনুসরণযোগ্য। রাসূল সা. তথা সুন্নতের অনুসরণ উম্মতের অবশ্য কর্তব্য। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের।’ (সূরা তাগাবুন : ১২) ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ করো আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা হাশর : ৭) ‘হে নবী! মানুষকে বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার অনুসরণ করো।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১) রাসূল সা. তাঁর প্রিয় উম্মতের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য জীবনের প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দান করেছেন। তার প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ মানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। চলার পথের শ্রেষ্ঠ পাথেয়। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে মানুষের জীবনে বয়ে আনবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। রাসূল সা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের অসুস্থতার অন্যতম কারণটি হলো নির্ধারিত পরিমাণের অধিক খাওয়া বা ভুল উপায়ে খাওয়া। রাসূল সা. কিভাবে খাবার খেতেন, খাবার গ্রহণে তার কী পদ্ধতি ছিল, কোন কোন খাবার তাঁর পছন্দীয় ছিল ও কোন কোন খাবার তিনি অপছন্দ করতেন সে সম্পর্কে নি¤েœ প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলো।

খাদ্য গ্রহণে রাসূল সা.-এর সুন্নাহ

১. খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা রাসূল সা. খাবার গ্রহণের আগে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। তার সঙ্গীদেরও বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসূল সা. বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি-৫১৬৭, তিরমিজি-১৯১৩) ২. বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ।’ (আবু দাউদ-৩৭৬৭, তিরমিজি-১৮৫৮)

৩. হাত ধুয়ে শুরু ও শেষ করা খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়া আবশ্যক। না হয় বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। রাসূল সা. খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূল সা. খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)

৪. খানার সময় তিন ভাবে বসা যায় ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে। (মুসলিম-২০৪৪) খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। (শরহুস্ সুন্নাহ-৩৫৭৭) গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাজে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। (আবু দাউদ-৩৭৭৩)

৫. দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. পায়াবিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। কাতাদা রা.কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কিসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের ওপর।’ (বুখারি-৫৩৮৬)

৬. ডান হাত দিয়ে খাওয়া রাসূলুল্লাহ সা. ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। তিনি বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (বুখারি-৫৩৭৬; মুসলিম-২০২২)

৭. খাদ্য নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে খাবে। নবী কারীম সা. বলেছেন, হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও। আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।’ (বুখারি-৪৯৫৮)

৮. খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া যদি খাবারের কোন লোকমা পড়ে যায় তবে উঠিয়ে খাওয়া, যদি ময়লা লাগে ধুয়ে ময়লা মুক্ত করে খেতে হবে। কারণ এটিই সুন্নত এবং এর মাধ্যমেই রাসূলুল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যদি তোমাদের কারো খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তার থেকে ময়লা দূর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না।’ (মুসলিম-৩৭৯৪)

৯. হাত চেটে খাওয়া রাসূলুল্লাহ সা. খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে (ধোয়া) না।’ (বুখারি-৫২৪৫)

১০. আঙুল চেটে খাওয়া আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ-১৯১৪)

১১. হেলান দিয়ে না খাওয়া রাসূলুল্লাহ সা. কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবার খেলে পেট বড় হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। আবু হুজাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না।’ (বুখারি-৫১৯০, তিরমিজি-১৯৮৬)

১২. খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা শত চেষ্টা সত্ত্বেও খাবারে দোষ-ত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করা নিতান্ত বেমানান। রাসূলুল্লাহ সা. কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন, আর অপছন্দ হলে খেতেন না।’ (বুখারি-৫১৯৮; ইবনে মাজাহ-৩৩৮২)

১৩. খাবারে ফুঁ না দেওয়া খাবার ও পানীয়তে ফুঁ দেওয়ার কারণে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সা. খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। কোনো কিছু পান করার সময়ও তিনি ফুঁ দিতেন না। (ইবনে মাজাহ-৩৪১৩)

১৪. খাবার স্বাভাবিক ঠাণ্ডা হওয়ার পর খাওয়া খুব গরম খাবার খাওয়া যাবে না, বরং খাবার খুব গরম হলে তা স্বাভাবিক ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উরওয়া রাহ. বর্ণনা করেন, (খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর রা.-এর বড় কন্যা) আসমা রা. যখন ছারীদ (এক ধরনের খাবার) প্রস্তুত করতেন তখন ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত তা খেতেন না এবং বলতেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি, তা (খাবার ঠাণ্ডা করে খাওয়া) অধিক বরকতের কারণ।’ (মুসনাদে আহমাদ-২৬৯৫৮; ইবনে হিব্বান-৫২০৭) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, খাবারের ভাপ না যাওয়া পর্যন্ত তা খাওয়া উচিত নয়।’ (সুনানে কুবরা, বায়হাকী-১৪৬৩১)

১৫. উপস্থিত যা থাকে তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করা খাওয়ার সময় ঘরে যা আছে তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। জাবের রা. থেকে বর্ণিত। একবার নবীজি সা. (রুটি খাওয়ার জন্য) তরকারি চাইলেন। ঘর থেকে জানানো হল, তরকারি হিসেবে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তখন নবীজি বললেন, সেটাই পেশ কর। নবীজি সিরকা দিয়ে রুটি খাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি, সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি!’ (মুসলিম-২০৫২)

১৬. খাবার নষ্ট না করা আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালবাসেন না। খাবার আল্লাহর অনেক বড় নিআমত। এ নিআমত কেউ নষ্ট করুক বা অপচয় করুক, এটা আল্লাহ চান না। তাই আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা খাও এবং পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আ‘রাফ : ৩১) নবীজি সা. বলেছেন, ‘বনি আদম যা কিছু পূর্ণ করে এর মধ্যে পেট পরিপূর্ণ করা সবচেয়ে নিন্দনীয়। খাবার এতটুকু খাওয়াই যথেষ্ট, যতটুকু খেলে মাজা সোজা করে দাঁড়ানো যায়। এর চেয়ে বেশি যদি খেতে হয় তাহলে, পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবারের জন্য। একভাগ পানীয়ের জন্য। একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা।’ (তিরমিজি-২৩৮০)

১৭. এক সাথে কয়েকটি মুখে না দেয়া আঙুর আমার খুব পছন্দ। কারো বাসায় মেহমান হিসেবে খাচ্ছি। আমার সাথে আরো মেহমান আছেন। তো আমি চিন্তা করলাম, অনেক মানুষ, যদি একটা একটা করে খাই তাহলে আমি নিজে বেশি খেতে পারব না, তার আগেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং দুইটা-তিনটা এক সাথে মুখে দেওয়া শুরু করলাম। এ কাজটি ঠিক নয়। এটা অভদ্রতা। নবীজি এটা পছন্দ করতেন না। সুতরাং আমরা এটা করব না। জাবালা ইবনে সুহাইম রাহ. বলেন, এক দুর্ভিক্ষের সময় ইবনুয যুবায়ের রা. আমাদেরকে খেজুর খাওয়াচ্ছিলেন। আমরা খাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। (তিনি হয়ত দেখেছেন কেউ দুই-তিনটি খেজুর একবারে মুখে দিচ্ছে।) তখন তিনি বললেন, একসাথে কয়েকটি মুখে দিও না। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. একসাথে কয়েকটি মুখে দিতে নিষেধ করেছেন। হ্যাঁ, যদি অন্যদের অনুমতি নিয়ে নেওয়া হয় তাহলে ভিন্ন কথা। (মুসলিম-২০৪৫)

১৮. খাওয়া অবস্থায় কেউ এলে তাকে দস্তরখানে দাওয়াত দেওয়া নবীজি সা. খাওয়ার সময় যদি কেউ আসত তাকে তিনি সাথে খাওয়ার দাওয়াত দিতেন। ‘একবার নবীজি খানা খাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি এল। নবীজি তাকে বললেন, এসো, আমার সাথে খাও।’ (ইবনে মাজাহ-৩২৯৯)

১৯. কেউ খেতে বললে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লৌকিকতা করা ঠিক নয় পেটে ক্ষুধা আছে। খাওয়ার চাহিদা আছে। এমন সময় কেউ খেতে বলল। লৌকিকতা করে না করা ঠিক নয়। আসমা বিনতে ইয়াযীদ রা. বলেন, একবার নবীজির সামনে খাবার আনা হল। তিনি আমাদের খেতে বললেন। আমরা বললাম, না! আমাদের খাওয়ার চাহিদা নেই। তখন নবীজি সা. বললেন, ‘ক্ষুধা আর মিথ্যা একসাথ করো না অর্থাৎ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ‘চাহিদা নেই’ বলা মিথ্যার শামিল। সুতরাং এটা কর না।’ (ইবনে মাজাহ-৩২৯৮)

২০. খানার মজলিসে ডান দিক দিয়ে খানা পরিবেশন করতে হবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল। রাসূল সা. পান করলেন। রাসূলের ডান দিকে একটি ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রাসূল সা. ছেলেটিকে বললেন, তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে দেওয়ার অনুমতি দিবে? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহর শপথ! আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সা. (পানপাত্র) ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন। ( বুখারি-২৪১৫)

২১. আহারের আয়োজনকারীর জন্য মেহমানের দু‘আ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছেন তাতে তাদের জন্য বরকত দিন এবং তাদের গুনাহ মাফ করুন, আর তাদের প্রতি দয়া করুন।’ (মুসলিম- ৩/১৬১৫, ২০৪২)

২২. খাবার খাওয়া শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে ওঠা। (ইবনে মাজাহ-৩২৯৫) ২৩. খাবার খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। (তিরমিজি-১৪৬৪) ২৪. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা। (বুখারি-৫৪৫৫) ২৫. খাবার খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ খাবার খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। (বুখারি-৫৩৭৬)

২৬. খাবারের শেষে দু‘আ পড়া আল্লাহ তা‘আলা খাবারের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ করেন। এ দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। খাবার গ্রহণ শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। খাবার শেষে রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন ও দু‘আ পড়তেন। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনো এই দু‘আ পড়তেন : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি-৫৪৫৮)

রাসূল সা. যেভাবে পান করতেন

১. ডান হাতে পান করা রাসূলুল্লাহ সা. ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। তিনি বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (বুখারি-৫৩৭৬; মুসলিম-২০২২) ২. বসে পান করা। (মুসলিম-২০২৫) ৩. পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ্ বলা। (তিরমিজি-২/১৬৭) ৪. পান করার পূর্বে পানি দেখে পান করা। (মুসলিম-১৬০৯) ৫. ৩ নিঃশ্বাসে পান করা নবীজি তিন শ্বাসে পান করতেন। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. যখন পান করতেন তিন শ্বাসে পান করতেন। তিনি বলতেন, এভাবে পান করলে কষ্ট কম হয় এবং তা পিপাসা নিবারণে অধিক কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত (পন্থা)। (সুনানে আবু দাউদ-৩৭২৭) ৬. পান করার সময় পাত্রে শ্বাস না ফেলা পাত্রে শ্বাস ফেলাটা ক্ষতিকর। আমরা জানি, আমাদের শ্বাসের সাথে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পাত্রে শ্বাস ফেললে কার্বন ডাই-অক্সাইড পানির সাথে মিশে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই পান করার সময় শ্বাস ফেলতে হলে মুখ থেকে পানপাত্র সরিয়ে তারপর শ্বাস ফেলব। নবীজি সা. বলেছেন, ‘কেউ যখন পান করে, সে যেন (পান) পাত্রে শ্বাস না ফেলে।’ (বুখারি-১৫৩; মুসলিম-২৬৭) ৭. বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা সাধারণত আমরা জগ বা কলস থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পান করি। কিন্তু কখনো কখনো আমরা সরাসরি পানির জগ বা কলসে মুখ লাগিয়ে পান করা শুরু করে দিই। এতে করে জগ একটু বেশি উঁচু হলেই আমার মুখের ধারণক্ষমতা থেকে বেশি পানি বের হয়ে আসে এবং নাকে পানি উঠে যায় বা মুখ ভরে পানি গড়িয়ে পড়ে। জামা ভিজে যায়। এটি ঠিক নয়। বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করব না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি সা. মশকে (চামড়ার তৈরি পানির পাত্র) মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি-৫৬২৮) ৮. পান করা শেষে কমপক্ষে আলহামদুলিল্লাহ্ বলা পানাহারের শেষে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর প্রশংসা করবে। ‘সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল্লাহ বলা।’ (মুসলিম-২৭৩৪) রাসূলুল্লাহ সা. পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক। ১০. আল্লাহ্ কাউকে দুধ পান করালে সে যেন বলে : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়াযিদনা মিনহু- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা থেকে আরও বেশি দিন।’ (তিরমিজি-৫/৫০৬)

মহানবী সা. যেসব খাবার পছন্দ করতেন

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব প্রিয় নবী হজরত সা. যেসব খাবার গ্রহণ করেছেন, তা ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। নিম্নে সংক্ষেপে রাসূলুল্লাহ সা.-এর কিছু খাবারের আলোচনা বিধৃত হলো। পনির : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে কিছু পনির উপস্থাপন করা হয়। রাসূলুল্লাহ সা. বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু আহার করেন। (আবু দাউদ-৩৮১৯) মিঠাই ও মধু : হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন। (বুখারি-৫১১৫; মুসলিম-২৬৯৫) বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ মাখন : হজরত ইবনাই বিসর আল মুসলিমাইন রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, ‘একবার আমাদের ঘরে রাসূলুল্লাহ সা. আগমন করেন। আমরা তাঁর সম্মুখে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করি। তিনি মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।’ (তিরমিজি-১৮৪৩) ঘি মাখা রুটি : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন...। (ইবনে মাজাহ-৩৩৪০) দুধ : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দু‘টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি-৩১৬৪, তিরমিজি-২১৩) খেজুর : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ-৩৮৩০) অন্য হাদিসে আছে, প্রিয় নবী সা. বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই।’ এমনকি প্রিয় নবী সা. সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিশমিশ : ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম) সিরকা : হজরত জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তাঁরা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী সা.-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। তারপর বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ হজরত জাবের রা. বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি।’ (মুসলিম-২০৫১) সারিদ : ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অত্যন্ত প্রিয় ছিল।’ (আবু দাউদ-৩৭৮৩) সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। আর হায়স হলো মাখন, ঘি ও খেজুর দিয়ে যৌথভাবে বানানো খাবার। তরমুজ ও শসা : হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তাজা) খেজুর খেতেন। (বুখারি-৫১৩৪, তিরমিজি-১৮৪৪) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মুসলিম-৩৮০৬) খাসির পায়া : হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসূলুল্লাহ সা. কুরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’ (বুখারি-৫১২২) খরগোশের গোশত : হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, মাররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে পাকড়াও করতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তবে আমি ধাওয়া করে এর নাগাল পাই এবং ধরে হজরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মারওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে পাঠান। রাসূলুল্লাহ সা. সেগুলো ভক্ষণ করেন।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ সা. কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন। (বুখারি-২৪৩৩) মোরগ : হজরত জাহদাম রা. থেকে বর্ণিত, একদিন আবু মুসা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। হজরত আবু মুসা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো তোমার? লোকটি বলল, মোরগকে আমি বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমার অপছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না। হজরত আবু মুসা তাকে বললেন, ‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে। (বুখারি : ৫১৯৮, ৪৬৬২) লাউ : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসূলুল্লাহ সা.কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী সা.-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ সা.-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সা. প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম-২০৬১; বুখারি-৫০৬৪) জলপাই : রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (ইবনে মাজাহ-১০০৩, তিরমিজি-১৮৫১) সামুদ্রিক মাছ : মহানবী সা. সাগরের মাছ পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা.-এর একটি দীর্ঘ হাদীস আছে। হাদীসটি বুখারি (৪৩৬১) ও মুসলিম (১৯৩৫) শরীফে বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. মরুভূমির এক প্রকার পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ইত্যাদি পছন্দ করতেন।

রাসূলুল্লাহ সা. যে সকল খাবার অপছন্দ করতেন

কোন কোন খাবার রাসূলুল্লাহ সা. খেতেন না বা অপছন্দ করতেন তা আমাদের জানা দরকার। রাসূলুল্লাহ সা. ৩টি খাবার খেতে একদমই পছন্দ করতেন না।

১. অত্যন্ত গরম খাবার যে খাবার রান্না করার পর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করা হয়, সে খাবার রাসূলুল্লাহ সা. খেতে একদমই পছন্দ করতেন না। রান্না করার পর খাবারটা তক্ত, দগ্ধ গরম থাকে। আর এই গরম খাবার মুখে দেওয়ার পর মুখ পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই গরম খাবার আমাদের পেটে গেলে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হবার সম্ভাবনা থাকে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, খাবারের ভাপ না যাওয়া পর্যন্ত তা খাওয়া উচিত নয়। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী-১৪৬৩১)

২. বাসি খাবার বাসি কোনো খাবার খাওয়াও রাসূলুল্লাহ সা. পছন্দ করতেন না। কারণ রাতের অবশিষ্ট খাবার থেকে গেলে, আর সেটা সকালে খেলে পেটে নানা সমস্যা হতে পারে। তবে একেবারে পচাঁ নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন খাবার খাওয়া যাবে। ৩. গন্ধযুক্ত খাবার গরম খাবার, বাসি খাবার এর মতই যে খাবারে গন্ধ আছে সে খাবারও রাসূলুল্লাহ সা. পছন্দ করতেন না। যেমন : মসলা জাতীয় জিনিস পেঁয়াজ, রসুন। আবু আইয়ুব রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট কোনো খাদ্য নিয়ে আসলে তিনি সামান্য খেতেন আর বাকিটুকু আমার নিকট প্রেরণ করতেন। একদা তিনি এমন কিছু খাবার প্রেরণ করলেন যা হতে তিনি কিছুই আহার করেনি। কেননা তাতে রসুন ছিল। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, এটা কি নিষিদ্ধ? তিনি বললেন, না। তবে গন্ধের কারণে ওটা আমার কাছে অপছন্দনীয়। তিনি বললেন, তাহলে আমিও তা পছন্দ করবো না, যা আপনি পছন্দ করেননি। (মুসলিম-৫২২১) আবু সা’ঈদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. একটি পেয়াজের ক্ষেতে গেলেন। সাথে তাঁর সাহাবীগণও ছিলেন। কিছু সংখ্যক সাহাবী ঐ ক্ষেতের পেঁয়াজ খেলেন এবং অবশিষ্ট সাহাবী খেলেন না। এরপর আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে গেলাম। কিন্তু যারা পেঁয়াজ খাননি তিনি তাদেরকে প্রথমে কাছে ডেকে নিলেন। আর অন্যদেরকে যারা পেঁয়াজ খেয়েছিল পেঁয়াজের গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত কাছে ডাকলেন না। (মুসলিম-১১৪৪) তবে একটি জিনিস জেনে রাখা ভালো যে, পেঁয়াজ বা রসুন কোনটাই হারাম নয়, কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খেলে মুখে গন্ধ সৃষ্টি হয়। ইতিহাসে পাওয়া যায়, একবার হযরত ওমর রা.-এর শাসনামলে সিরিয়া থেকে একটি চিকিৎসক দল মদিনা শরীফে শুভেচ্ছা সফরে আসে। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী এ চিকিৎসকরা মুসলিম সমাজের নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মনস্থ করলেন। কিন্তু ঘোষণা সত্ত্বেও আশানুরূপ রোগী চিকিৎসা নিতে এলো না। ক’দিন পর চিকিৎসক দলের সদস্যরা বিস্মিত হয়ে মদিনার এক রাখালকে প্রশ্ন করলেন, বিনা পয়সায় উন্নত চিকিৎসাসেবা পেয়েও তোমরা কেন আমাদের শিবিরে আসছ না? তখন রাখাল তরুণটি যে উত্তর দিয়েছিল তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সে বলেছিল, ‘আমরা মদিনাবাসী সাধারণত কোনো রোগ-ব্যাধির শিকার হই না। কারণ, আমরা আমাদের প্রিয় নবী সা.-এর শিক্ষার ওপর আমল করি।’ এক সময় মুসলিমরা ছিল পৃথিবীর সেরা জাতি। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে সময়ে আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা. সুন্নাহ আঁকড়ে ধরেছিলাম, সে সময়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সম্মানিত করেছেন। আর যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজেছি, রাসূল সা.-এর সুন্নাহর চেয়ে অন্য কিছুকে শ্রেষ্ঠ ভেবেছি, তখন পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছি। আমরা যদি রাসূল সা.-এর সুন্নতগুলো জীবনে আঁকড়ে ধরতে পারি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় রাসূল সা.-এর খাদ্যাভ্যাসসহ তাঁর জীবনের প্রতিটি সুন্নত পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির