ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করেছে অবৈধ দখলদার বর্বর ইসরাইল। বর্তমান শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম সমরকৌশলবিদ হিসেবে মনে করা হয় সিনওয়ারকে। তিনি ছিলেন আমেরিকা ও ইসরাইল এবং ইহুদিদের কাছে জমের মতো আতঙ্ক। তার ভয়ে ইরাইলের সরকারপ্রধান ও সেনাকর্মকর্তারা আতঙ্কিত রাত-দিন পার করত। কারণ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ দায়ী ও শহীদী তামান্না নিয়ে মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়াই করে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গত ১৮ অক্টোবর সৌদির সংবাদমাধ্যম আশরাক আল-আসওয়াত এক প্রতিবেদনে গাজায় হামাসের উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়ার বরাত দিয়ে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শহীদ হওয়ার ঘটনায় ইরান, কাতার, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অসংখ্য দেশ ও সংগঠন শোক প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইলি বর্বরতার। এদিকে গাজার এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যে বাড়িটিতে হত্যা করা হয়েছে, সেটি তাঁরই (বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি)। ১৫ বছর ধরে এই বাড়িতে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। গত মে মাসে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। আশরাফ আবু ত্বহা নামের এই ফিলিস্তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের ইবনে সিনা সড়কে অবস্থিত। সিনওয়ারকে হত্যার ঘটনা নিয়ে ইসরাইল যে ড্রোনে ধারণ করা ফুটেজ প্রকাশ করেছে, তাতে আংশিকভাবে বিধ্বস্ত একটি ভবন দেখা যায়। এটি দেখেই তিনি তাঁর বাড়ি চিনতে পারেন। তিনি হতবাক হয়ে যান।
গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আগের দিন ১৬ অক্টোবর বুধবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফায় নিয়মিত অভিযান চালানোর সময় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। এ সময় নিহত হন হামাসপ্রধান সিনওয়ার। ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত সিনওয়ারের আঙ্গুল কেটে নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয় যে, সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। অবাক করা বিষয় হলো, অভিযানের সময়ও ইসরাইলি সেনারা জানত না, সেখানে সিনওয়ার রয়েছেন; যদিও সিনওয়ার ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ব্যক্তি ছিলেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বীরত্বগাথা জীবন
তাঁর পুরো নাম ইয়াহিয়া ইবরাহিম হাসান সিনওয়ার। গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আবু ইবরাহিম নামে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা-মা আশকেলন থেকে ফিলিস্তিনে এসেছেন। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শুরু হওয়া যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে তারাও বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন এবং ইহুদি সন্ত্রাসীদের নারকীয় তা-ব ও গণহত্যার কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তারা সেখানকার শরণার্থীতে পরিণত হন। ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধের এ সময়কে ‘আল-নাকবা’ (বিপর্যয়) বলে থাকেন। খান ইউনিস সেকেন্ডারি স্কুল ফর বয়েজে পড়াশোনা করেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি ইংরেজি, আরবি ও হিব্রু ভাষায় কথা বলতে পারতেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার যে অসম্ভব সাহসী ছিলেন তা খোদ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই উঠে এসেছে। ইয়াহিয়া সিনওয়ার মৃত্যুর বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘যিনি আমাদের জনগণের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছেন, হাজার হাজার ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করেছে, আমাদের শত শত নাগরিককে হত্যা করেছে, আমাদের শতাধিক নাগরিক এখনও হামাসের হাতে বন্দী। তিনি আমাদের বীর সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন। আমরা যেমনটি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তার সঙ্গে সে হিসাব মেটালাম।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (ইসিএফআর) সিনিয়র পলিসি ফেলো হিউ লোভাট গত বছর বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনার পেছনে ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহম্মদ দেইফ ছিলেন। কারণ এটি একটি সামরিক অপারেশন ছিল। সিনওয়ার সম্ভবত সেই দলের অংশ ছিলেন। তারা মিলে এটি পরিকল্পনা ও প্রভাবিত করেছিলেন।
সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন
কারাগারে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের চারবার সাক্ষাৎকার নেওয়া ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির ফেলো এহুদ ইয়ারি জানান, খান ইউনিসে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি বিশাল আস্তানা ছিল। শরণার্থী শিবিরের দরিদ্র যুবকদের মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এ ইসলামিক গ্রুপটি। পরে স্থানটি হামাসের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সিনওয়ার প্রথমবার ‘ইসলামিক কার্যকলাপের’ জন্য ইসরাইলের হাতে গ্রেফতার হন। পরে ১৯৮৫ সালে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। এসময় তিনি হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
তেল আবিবের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক কোবি মাইকেল বলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও শায়খ আহমেদ ইয়াসিন একে-অপরের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতার সঙ্গে এ সম্পর্ক পরবর্তীতে আন্দোলনে সিনওয়ারকে একটি ‘হ্যালো ইফেক্ট’ দেয়।
১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দুবছর পর ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা ‘আল-মাজদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। আল-মাজদ নৈতিক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য গঠন করা হয়। কোবি মাইকেল এ বিষয়ে বলেন, ‘অবৈধ ভিডিও’ বিক্রি করে এমন দোকানগুলোকে তারা তাদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে তল্লাশি চালাতো। তাছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে কিংবা মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিংবা সহযোগিতা করছে এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বিচারের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া হতো।
কারাগারের দিনগুলো
১৯৮৮ সালে সিনওয়ারের বিরুদ্ধে দুজন ইসরাইলি সেনা সদস্যকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১২ ইসরাইলিকে হত্যার দায়ে ইসরাইল তাকে দোষী সাব্যস্ত করে চারটি যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। সিনওয়ার, ১৯৮৮ থেকে ২০১১ সাল; ২২ বছরেরও বেশি সময় ইসরাইলের কারাগারে কাটিয়েছেন। এর মধ্যে নির্জন কারাবাসের সময়গুলো তাকে আরও আল্লাহ প্রতি অনুগত করে তুলেছিল বলে মনে করা হয়।
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সাথে কারাগারে চারবার সাক্ষাৎ করা ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির ফেলো এহুদ ইয়ারি বলেন, তিনি তার নিজের ভালো ব্যবহার উদারতার শক্তি ব্যবহার করে বন্দীদের মধ্যে নিজেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বন্দীদের মধ্যে নিজেকে একজন মানবিক ও কল্যাণকামী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি বন্দীদের পক্ষে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতেন এবং বন্দীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। কারণ তিনি হিব্রু ভাষায় কথা বলতে পারদর্শী ছিলেন।
কারাগারে থাকাকালীন সিনওয়ার হিব্রু ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি সবসময় ইসরাইলি হিব্রু সংবাদপত্র পড়তেন। আরবি ভাষায় পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও সিনওয়ার হিব্রু ভাষায়ই কথা বলতেন ইসরাইলের কারাগারে থাকাকালীন সময়ে। হামাস ও সিনওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, হিব্রু বলার কারণ সিনওয়ার হিব্রু ভাষায় আরও দক্ষ হতে চেয়েছিলেন। তারা মনে করে, তিনি কারাগারের ওয়ার্ডেনদের চেয়ে আরও শুদ্ধভাবে হিব্রু বলে কারাবন্দী ফিলিস্তিনের নাগরিকদের উপকার করতে চেয়েছিলেন।
ইসরাইলি সরকার একটি মূল্যায়নে কারাগারে থাকা সিনওয়ারকে ‘কারাবন্দীদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা, কর্তৃত্ববাদী, প্রভাবশালী, অস্বাভাবিক সহনশীল, চালাক ও ম্যানিপুলেশনের অধিকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। আর ছোটখাটো জিনিসে সন্তুষ্ট থাকাসহ কারাগারের অন্য বন্দীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় গোপন রাখতে পারতেন সিনওয়ার। ২০১১ সালে এক চুক্তির অংশ হিসেবে সিনওয়ার মুক্তি পান। সে চুক্তি অনুসারে, ইসরাইলের শুধু এক আইডিএফ-এর সেনা সদস্য, গিলাদ শালিতের বিনিময়ে ১০২৭ জন ফিলিস্তিন ও ইসরাইলি আরব বন্দী মুক্তি পায়। শালিত পাঁচ বছর হামাসের বন্দী ছিলেন। হামাসের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের একজন সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ার শালিতকে অপহরণ করেছিলেন। পরবর্তীতে সিনওয়ার আরও অনেক ইসরাইলি সেনা সদস্যকে অপহরণের আহ্বান জানিয়েছিল।
ততক্ষণে, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় তার দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়েছে এবং হামাস নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রতিপক্ষ ইয়াসির আরাফাতের ফাতাহ পার্টির সদস্যদের ওপরে নিজের বিজয় নিশ্চিত করে।
কারাগার থেকে মুক্তির পর হামাসের একজন সম্মানিত দায়িত্বশীল হন সিনওয়ার
ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজায় ফিরে আসার পর তাকে তৎক্ষণাৎ হামাসের একজন নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে অনেক বছর ইসরাইলের কারাগারে থাকায় তিনি এ মর্যাদা পেয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা ও সামরিক কমান্ডার ছিলেন। তিনি বক্তা ছিলেন না। তিনি যখন জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলতেন তখন মনে হতো ‘মব থেকে কেউ কথা বলছেন’। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সিনওয়ার ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের সঙ্গে একটি জোটও গড়েন এবং এর প্রধান মারওয়ান ঈসার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। ২০১৩ সালে, তিনি গাজায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে ২০১৭ সালে এর প্রধান হন।
সিনওয়ারের ছোট ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ারও হামাসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ২০১৪ সালে হামাস তার মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি অনেকবার দাবি করেছেন, তিনি কয়েকবার ইসরাইলের হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বেঁচে গেছেন। এর পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমে এমন রিপোর্ট এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে মোহাম্মদ এখনও বেঁচে আছেন, হামাসের সামরিক শাখায় সক্রিয় এবং গাজার নিচে সুড়ঙ্গের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছেন। এমনকি ৭ অক্টোবরের হামলায়ও তার ভূমিকা থাকতে পারে। সিনওয়ার সংগঠনে নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং হামাসের সদস্যরা জানত তার আদেশ অমান্য করলে তাদেরকে জবাবদিহিতায় পড়তে হবে।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তরের প্রতিবাদে এক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইসরাইল থেকে গাজা উপত্যকাকে আলাদা করে সীমান্ত বেড়া ভেঙে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই বছরই শেষের দিকে পশ্চিম তীরে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) অনুগত ফিলিস্তিনিদের একটি হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে দাবি করেন। তবে তিনি কিছু সময় সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও কাজ করেছিলেন। ইসরাইলের সঙ্গে সাময়িক অস্ত্রবিরতি, বন্দিবিনিময় এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুনর্মিলন সমর্থন করেছিলেন।
আমেরিকা ও ইসরাইলের কাছে সিনওয়ার ছিলেন একজন আতঙ্কের নাম
২০১৫ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিনওয়ারকে ‘বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে। ২০২১ সালের মে-তে ইসরাইলি বিমান হামলাগুলো চালানো হয় সিনওয়ারের বাড়ি এবং দফতরগুলোকে লক্ষ্য করে। ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০২২ সালের এপ্রিলে এক টেলিভিশন ভাষণে জনগণকে যে-কোনো উপায়ে ইসরাইলকে আক্রমণ করার জন্য উৎসাহিত করেন। বিশ্লেষকরা সিনওয়ারকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো ও এর সশস্ত্র শাখা ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মূল ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করেন।
২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর ইসরাইল সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সিনওয়ারকে ‘শয়তানের প্রতিচ্ছবি’ বলে উল্লেখ করেছেন। সিনওয়ার ইরানেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একটি শিয়া দেশের সঙ্গে একটি সুন্নি আরব সংগঠনের সম্পর্ক সুস্পষ্ট নয়। তবে উভয়েরই লক্ষ্য হলো, ইসরাইল রাষ্ট্রকে শেষ করা এবং জেরুজালেমকে ইসরাইলি দখল থেকে ‘মুক্ত’ করা। তারা একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে। ইরান হামাসকে অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। এভাবে হামাসের সামরিক সক্ষমতা তৈরি এবং হাজার হাজার রকেটের একটি অস্ত্রাগার তৈরিতে সাহায্য করে ইরান।
২০২১ সালে সিনওয়ার একটি ভাষণে ইরানের এ সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইরান যদি না থাকত, ইসরাইলকে প্রতিরোধে ফিলিস্তিনের এ সক্ষমতা থাকত না।’ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
খামেনি, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথিদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠন হামাস আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। একইসঙ্গে ইসরাইলবিরোধী বাহিনীর প্রতি ইরানের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সম্প্রতি ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানায়। খবরে বলা হয়, হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহতের ঘটনার দুদিন পর মুখ খুললেন খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ এই নেতা সিনওয়ারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, এরপরও এই সংগঠন তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু সত্ত্বেও হামাস জ্যান্ত আছে এবং থাকবে।
গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার একটি ভিডিও বার্তায় হামাসের কাতারভিত্তিক পলিটব্যুরোর ডেপুটি লিডার খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, ইসরাইল সিনওয়ারকে হত্যার জন্য অনুশোচনা করবে। এ মৃত্যু হামাসকে আরও শক্তিশালী করবে। হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিরা মুক্তি পাবে না। হামাসের সশস্ত্র শাখা এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। হামাসের পাশাপাশি তাদের সহযোগী ইরান-সমর্থিত লেবাননের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথিরা সিনওয়ারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
হামাস এক বিবৃতিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, সিনওয়ারকে হত্যা করায় আর কোনো আলোচনা নয়, কেবল যুদ্ধ বন্ধ করলেই জিম্মি করে রাখা ইসরাইলিরা মুক্তি পাবে। খবর টাইমস অব ইসরাইলের। গাজায় এখনও হামাসের হাতে ১০১ জন জিম্মি রয়েছে। ইসরাইল পুরোপুরি যুদ্ধ শেষ না করা পর্যন্ত এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সব সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত জিম্মিরা মুক্ত পাবে না বলেও জানিয়েছে হামাস। তবে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই আশা করছে যে সিনওয়ারের মৃত্যুর পর এখন জিম্মিদের মুক্তি ত্বরান্বিত হবে।
যেভাবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়
জেলখানায় লিখিত বইয়ে ইয়াহিয়া সিনওয়ার হযরত ওমর (রা)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, আমার হাতে যদি সর্বশেষ বালিও থাকে তবে আমি তা দিয়েই লড়াই করব। সঙ্গী চার যোদ্ধাই শাহাদাত বরণ করলেন। বেঁচে রইলেন শুধু ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এরপর রকেট লঞ্চার থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করা হলো। সিনওয়ার গুরুতর আহত হলেন। সিনওয়ারের ডান হাতের ক্ষতস্থান থেকে তখন রক্ত ঝরছে। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে একটা সোফার উপর বসে ছিলেন বাম হাতে কাঠের একটি টুকরো নিয়ে। ইসরাইলের নজরদারি ড্রোন নিকটে আসলে শরীরের সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করে বাম হাত দিয়ে কাঠের টুকরো তুলে ছুড়ে মেরে প্রমাণ করেছেন তিনি যা বলেছেন, যা লিখেছেন তার ওপরেই ছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। অবশেষে ইসরাইলি স্নাইপারের গুলিতে শাহাদাত বরণ করলেন আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর ইয়াহিয়া ইবরাহিম হাসান সিনওয়ার, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বিদায়ের চূড়ান্ত মুহূর্তেও লড়ে যাওয়া যুগশ্রেষ্ঠ মহাবীর শহীদ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো বীর যোদ্ধার মৃত্যুর বিবরণ কয়েক দশকে পাওয়া দুষ্কর। শহীদ সিনওয়ারকে আহত অবস্থাতেও তারা সামনাসামনি হত্যা করার দুঃসাহস দেখায়নি। কাপুরুষেরা দূর থেকে ট্যাংক দ্বারা শেলিং করে শহীদ করে এই যুগশ্রেষ্ঠ মহাবীরকে। শহীদ সিনওয়ার সাহসের বাতিঘর হিসেবে যুগের পর যুগ আমাদেরকে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন। ইয়াহইয়া সিনওয়ার আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া মহাকাব্যিক লড়াইয়ের সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা। অমর মহানায়ক। মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কেউ কেউ (শাহাদাত বরণ করে) তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে। আবার কেউ কেউ (শাহাদাত বরণের) প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (তাদের সংকল্পে) কোনো পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব, আয়াত-২৩)
হামাস টিকে আছে তাদের আদর্শের জোরে। তাদের টপ লিডাররা একে একে সবাই শহীদ হয়ে গেছে-শাইখ আহমেদ ইয়াসিন, ড. আব্দুল আজিজ আল-রানতিসি, সালাহ শাহাদা, ইয়াহিয়া আয়াশ, সালাহ আল-আরুরি, ইসমাঈল হানিয়া প্রত্যেককে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও হামাসকে নির্মূল করা যায়নি। বরং তারা আরও জনপ্রিয় হয়েছে। আরও শক্তিশালী হয়েছে। কারণ হামাস কখনোই ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল ছিল না। তারা ছিল আদর্শকেন্দ্রিক দল এবং আরব বিশ্বের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দল। যারা জনগণের সাথে মিশে থেকে জনগণের জন্য রাজনীতি করেছে। জনগণের চাহিদার সাথে মিল রেখে, কিন্তু একইসাথে আদর্শকে বিসর্জন না দিয়ে নিজেদেরকে অ্যাডাপ্ট করেছে। হামাসের সাথে মিল রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো শহীদী কাফেলার। যে সংগঠনের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে শত শত কর্মী শহীদ হয়েছে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে ইকামতে দ্বীনের দাওয়াত। সিনওয়ারের মৃত্যুতেও হামাসের সাময়িক ক্ষতি হবে নিশ্চিত; কিন্তু তারা নিশ্চিহ্ন হবে না। নির্মূল হবে না। যতদিন ইসরাইলের অবৈধ অকুপেশন থাকবে এবং যতদিন রেজিস্ট্যান্স সৎ দায়ী ইলাল্লাহ হাতে থাকবে, ততদিন তাদেরকে নির্মূল করা যাবে না। ধারাবাহিকভাবে হামাস নেতাদের শাহাদাতের ঘটনায় কবি আল মাহমুদ এর লেখা আমাদের মিছিল কবিতার কথা বাববার মনে করিয়ে দেয়,
‘‘আমরা তো শাহাদাতের জন্যই
মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
কেউ পাথরে, কেউ তাঁবুর ছায়ায়
কেউ মরুভূমির উষ্মবালু কিংবা সবুজ কোনো ঘাসের দেশে
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি, এর আদি বা অন্ত নেই।’’
গত ৩১ জুলাই তেহরানে নিহত সাবেক রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে সিনওয়ারকে দলটির সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাঁকে হত্যার ইসরাইলি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বেশ কয়েকবার। অবশেষে ১৭ অক্টোবর গাজায় এক ইসরাইলি হামলায় তিনি নিহত হন। এছাড়া ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ সিনওয়ারের অন্তিম মুহূর্তের ড্রোন ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় এই নেতা মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়েছেন। এতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মানসিক দৃঢ়তাই প্রকাশ পেয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ইসরাইলি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ১৮ অক্টোবর শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রদানকারী ডা. চেন কুগেল সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, সিনওয়ারকে প্রথমে ছুরি দিয়ে হাতে আঘাত করা হয়েছিল এবং সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র বা ট্যাংকের শেল বিদ্ধ হয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। হামাস নেতা তখন প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে তার হাতের চারপাশে একটি বৈদ্যুতিক তার দিয়ে বেঁধে রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করেন। কিন্তু ইসরাইলি ন্যাশনাল ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক কুগেল বলেছেন, এটা যথেষ্ট কার্যকরী ছিল না এবং তার হাত ভেঙে গিয়েছিল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ সিনওয়ারের অন্তিম মুহূর্তের ড্রোন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহত হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে সিনওয়ার ওই ড্রোনের দিকে একটি কাঠের টুকরো ছুঁড়ে মারছেন।
শহীদ সিনওয়ারের পর কে হচ্ছেন হামাসপ্রধান
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। এখন সিনওয়ার হত্যাকা-ের পর তার উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। কে হতে পারেন হামাসের পরবর্তী প্রধান এই নিয়ে নানান আলোচনা চলছে। তবে অনেকেই সিনওয়ারের উত্তরসূরি হিসেবে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারকে বিবেচনা করছেন। সিনওয়ারের সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের অন্যতম মুসা আবু মারজুক। হামাসের রাজনৈতিক শাখার এই উপপ্রধান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। হামাসের প্রভাবশালী নেতাদের একজন খালেদ মিশাল। তিনি সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার সাবেক প্রধান। সিনওয়ার হত্যাকা-ের পর হামাসের হাল তিনিও ধরতে পারেন। খালেদ মিশাল আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয় ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে অতীতে তিনি বৈঠক করেছেন। হামাসপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে খালেদ মিশাল কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। কেননা, অতীতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে সুন্নি মুসলিমদের বিদ্রোহে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। যদিও হামাস একটি সুন্নি সংগঠন, তবু শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান তাকে সমর্থন করে থাকে। সিনওয়ারের সহকারী খলিল আল হায়া তার উত্তরসূরি হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী। ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি কায়রোয় অনুষ্ঠিত আলোচনায় হামাসের প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন তিনি।
পরিশেষে ইসমাইল হানিয়া বা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নন; ইসরাইল আগেও হামাসের একাধিক নেতাকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ২০০৪ সালে হত্যা করা হয় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে। এ হত্যাকা-ের কয়েক সপ্তাহ পরই নিহত হন তার উত্তরসূরি আবদেল আজিজ রানতিজি। প্রতিষ্ঠার পর হামাস এভাবে কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হারালেও বারবারই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তারা কীভাবে আবার সংগঠিত হবে, তা নিয়ে কথা বলা কঠিন। কেননা, সিনওয়ারের শাসনাধীনে হামাসের সাংগঠনিক কাঠামোয় কতটা পরিবর্তন এসেছে, সেটি পরিষ্কার নয়। হামাসের দুই শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর সংগঠনে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করেছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। গাজায় হামাসের একক সিদ্ধান্তপ্রণেতা হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সামরিক শাখা ইজ্জাদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন মোহাম্মদ আল-মাসরি। মোহাম্মদ দেইফ নামে বিশেষভাবে পরিচিত এই নেতা গত জুলাইয়ে এক ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। এর আগে গত মার্চে তার সহকারী মারওয়ান ইসা নিহত হন বলে জানায় আইডিএফ। হামাস এ দুই নেতার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। গত জুলাইয়ে ইরানের তেহরানে হামলায় নিহত হন ইসমাইল হানিয়া। তিনি নিহত হওয়ার পর সিনওয়ারই ছিলেন হামাসের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা। হানিয়া হত্যাকান্ডে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে ইরান। তবে এ নিয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্র : ১. আল জাজিরা, আরব নিউজ, মিডলইস্ট আই, আল মানার, বিবিসি, গার্ডিয়ান, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন