post

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দা’য়ী ইসমাইল হানিয়া

মুহাম্মদ নূরে আলম

২৪ জুলাই ২০২৪

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ও ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শহীদ ইসমাইল হানিয়া। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের জন্য ইসমাইল হানিয়া ছিলেন একজন অন্যতম অগ্রনায়ক। তিনি একাধারে হাফেজে কুরআন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দা’য়ী, সমাজসংস্কারক, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সফল প্রধানমন্ত্রী, শহীদি কাফেলা হামাসের প্রিয় রাহবার এবং মজলুম জননেতা। বিশ্ববিজয়ী বীর ও অগণিত মানুষের প্রিয় এ রাহবারকে হারিয়ে আমরা গভীরভাবে শোকাহত! আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন এবং গাজার মজলুম জনগণের মুক্তি সংগ্রামের এই অবিসংবাদিত নেতা তাঁর জীবনে যে বিশাল দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন।

গত ৩১ জুলাই বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে নিহত হন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। ৩০ জুলাই মঙ্গলবার ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর তাঁকে হত্যা করা হয়। ইসমাইল হানিয়া যে বাসভবনে ছিলেন সেখানে তিনি ও তাঁর এক দেহরক্ষী নিহত হন। হামাস এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল হামাসের অন্য কট্টরপন্থি নেতাদের তুলনায় হানিয়াকে মধ্যপন্থি বলে মনে করতেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিলেন হানিয়া। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আলোচনা থমকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতার, চীন, জর্ডান ও লেবানন এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। এদিকে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ইরান সমর্থিত দুই বাহিনীর দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনা ও হুমকির মধ্য পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ইসমাইল হানিয়া ওই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। (সূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ, বিবিসি, আল-আরাবিয়া  এবং আল-হাদথ।) 

তবে ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে সৌদি সংবাদ সংস্থা আল-আরাবিয়া এবং আল-হাদথ। কিছু সূত্রের বরাতে আল হাদথ নিশ্চিত করেছে যে, ইসমাইল হানিয়াহ এবং তার সঙ্গী ওয়াসিম আবু শাবানকে লক্ষ্য করেই বাসভবনটিতে হামলা চালানো হয়। এমনকি তারা যেখানে বিশ্রাম নেন সেই স্থান লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়।

যেভাবে মোসাদ এজেন্টরা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান রাজনৈতিক দল হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করতে ইরানি এজেন্ট ভাড়া করেছিল অবৈধ দখলদার ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবে এখনও ইসরাইল হানিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তবে একজন ইসরাইল এবং দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইল এই হামলার পেছনে ছিল। ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হানিয়ার মৃত্যুর প্রায় দুঘণ্টা আগে ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা রিচার্ড গোল্ডবার্গ এই হামলার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ইসরাইলি বিমানবাহিনী আজ রাতে তার হামলার পরিসর বাড়াতে পারে। হামাস নেতার হত্যার খবর প্রকাশ হওয়ার পর গোল্ডবার্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করেন। ইসরাইলের আগে ইরানে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আপনি (ইসরাইল) যদি পারমাণবিক সাইটের পাশে রাডারে আঘাত করতে পারেন, তাহলে আপনি তেহরানের একটি বাড়িতেও আঘাত হানতে পারেন। আয়াতুল্লাহ উন্মুক্ত। মোসাদের সদস্যরাই তেহরানে হানিয়ার অস্থায়ী বাসভবনের তিনটি কামরায় বোমা পেতে রেখেছিলেন। এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ। সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন অনুসারে, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা আরও মাস কয়েক আগেই করা হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তখন হানিয়া রাইসির জানাজায় যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেসময়েই তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল মোসাদের।

ইরানের দুই কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ইব্রাহিম রাইসির জানাজায় ব্যাপক ভিড় থাকায় সেসময় হানিয়াকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। এর বদলে পরবর্তীতে যখন হানিয়া তেহরান সফর করবেন এবং কোথায় অবস্থান করতে পারেন, সেই তথ্য নিশ্চিত হয়েই ভবনটির তিনটি কামরায় বোমা পেতে রেখে আসেন মোসাদের এজেন্টরা। ইসমাইল হানিয়া যে ভবনে ছিলেন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বোমা রাখার জন্য মোসাদের এজেন্টরা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় তারা তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। বোমা সেট করে আসার পরপরই মোসাদ এজেন্টরা ইরান ছেড়ে চলে যান। ওই কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, মোসাদের অধিকাংশ সদস্য ইরান ছাড়লেও বেশ কয়েকজন রয়েই যান। এর মধ্যেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে যান হানিয়া। সেসময় রয়ে যাওয়া মোসাদের মধ্য থেকেই কয়েকজন হয়তো বাইরে থেকে হানিয়ার বাসভবনে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তাতে হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী মারা যান।

হানিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা এখন নিশ্চিত যে মোসাদ ইরানের ইসলামী রেভ্যুলেশনারী গার্ড কর্পসের ‘আনসার আল-মাহদি সুরক্ষা ইউনিট’ থেকে এজেন্ট ভাড়া করেছিল। এই ইউনিটিই ইরানে দেশি-বিদেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। আইআরজিসির একটি সূত্র বলেছে, এ ঘটনা কেন্দ্র করে আইআরজিসিতে একে অপরকে দোষ দেওয়ার খেলা শুরু হয়েছে। আইআরজিসি কমান্ডার ইসমাইল কানি নিজ বাহিনী থেকে সদস্যদের বহিষ্কার ও গ্রেফতার করছেন। এমনকি কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। (সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ)

ইসলামীক রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি)-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইরে থেকে  ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি কোন জায়গা থেকে ছোঁড়া হয়েছিল এখনো স্পষ্ট নয়। স্কাই নিউজ আরাবিয়া জানিয়েছে, ইরানি সূত্রের ভিত্তিতে হানিয়া যে ভবনে ছিল তার কাছের একটি ভবন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন। ফাইটার জেট বা সামরিক ড্রোন থেকেও ‘এরিয়াল প্রজেক্টাইল’ উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ ধরনের হামলার জন্য সামরিক বিমানগুলোকে সাধারণত প্রতিবেশী দেশগুলোর আকাশসীমা ব্যবহার করতে হবে। তবে অনুমোদন ছাড়া অন্য দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করা এবং সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। ইসফাহানের ৮তম কৌশলগত বিমানঘাঁটিতে ইসরাইল এপ্রিলে হামলা চালায়। তখন এক আমেরিকান কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছিলেন, ইসরাইল বিমান ইরানের সীমানার বাইরে থেকে একটি রাডার সাইটকে লক্ষ্য করে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা অবশ্য এই সামরিক ঘাঁটিতে শত্রুর ড্রোন আক্রমণকে দায়ী করেছেন।

ইসরাইলি চ্যানেল ১৪-এর সামরিক সংবাদদাতা হ্যালেল বিটন রোজেনের মতে, হামলাটি একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে করা হয়নি। তবে তার কাছাকাছি আরেকটি অস্ত্র দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। ইসরাইলের অতীতের কার্যক্রম যাচাই করে বলা যায়, দেশটির ইরানের মাটিতে ড্রোন হামলা চালানোর ইতিহাস রয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে, ইসফাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্সে ড্রোন হামলা এবং শহরের একটি যুদ্ধাস্ত্র কেন্দ্রে বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইল দায়ী। ইরানি কর্মকর্তারা এই হামলাকে একটি ব্যর্থ হামলা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এতে অল্প ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জ্যাকসন ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং সাবেক ব্রিটিশ প্যারাট্রুপার মেজর অ্যান্ড্র ফক্সও ইরান ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশকে বলেছেন, ইরানের বাইরে থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হতে পারে। তার মতে, কাস্পিয়ান সাগর তেহরানের নিকটবর্তী হওয়ায় এই অপারেশনের জন্য একটি উপযুক্ত বিকল্প ছিল। ফক্স তার অভিজ্ঞতা থেকে বলে, এই  জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুনির্দিষ্ট লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভূমিতে থাকা একজন সেনা লেজার পয়েন্টারটি দিয়ে ঠিক সেই পয়েন্ট লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি সেই বিন্দু বরাবরই যাবে। বিশেষজ্ঞ আরও উল্লেখ করেছেন, ইসরাইলের এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো ওয়ারহেডের গতি এবং ওজন থেকে গতিশক্তি ব্যবহার করার জন্য নকশা করা হয়েছে। একজন ইসরাইলি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক রনেন সলোমন বাকু তেল আবিবের নৈকট্য এবং ইরানের সঙ্গে আজারবাইজানের সীমান্তের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বের কারণে আক্রমণের জন্য আজারবাইজানীয় আকাশসীমা ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি।

ইসমাইল হানিয়ার জীবন ও সংগ্রাম

ইসমাইল হানিয়া হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের একজন শ্রেষ্ঠ দা’য়ী। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতে হামাসের প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনর্র্নিবাচিত হয়েছিলেন ইসমাইল হানিয়া। এর মধ্য দিয়ে হামাস ও ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনিদের চোখে ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক, অপরদিকে পশ্চিমাদের চোখে ছিলেন সন্ত্রাসী। হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৪৮ সালে অবৈধ দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হলে, সে সময় সন্ত্রাসী ইহুদীদের বর্বর হামলার মুখে ইসমাইল হানিয়ার পরিবার ফিলিস্তিনের আল মাজদাল আসকালান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ফিলিস্তিনের আসকালান শহরই এখন দক্ষিণ ইসরাইলের আশকেলন। ইসমাইল হানিয়ার পরিবার আর তাদের পৈত্রিক ভূমিতে ফিরে যেতে পারেননি। ১৯৬২ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই হিসেবে তার জন্মের ১৫ বছর আগে অবৈধ দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম। ইসমাইল হানিয়ার পুরো নাম ‘ইসমাইল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া’ বা Ismail Abdel Salam Ahmed Haniyeh.  ইসমাইল হানিয়া গাজার আল-আজহার ইনস্টিটিউটে তার মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে হানিয়া গাজা ইসলামীক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন। প্রথম ইন্তিফাদার সময় হানিয়াকে বেশ কয়েকবার আটক করে কারাদণ্ড দিয়েছে ইসরাইল। ১৯৮৪ সালে ছাত্র থাকাকালীন ইসলামী ছাত্র ব্লকে যোগদান করেন হানিয়া। ১৯৮৫ সালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ইসলামীক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন। ১৯৮৭ সালে গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হলে তিনি এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ইসরাইল বিরোধী জনপ্রিয় নেতা এবং হামাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি ১৯৮৮ সালে ছয় মাস ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং ১৯৮৯ সালের শুরু থেকে আরও তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৯৩ সালে পিএলও ইসরাইলের সাথে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর করার পর, হানিয়া গাজায় ফিরে এসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও নির্বাসনে থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। তিনি ২০০১ সালে হামাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। ২০০৬ সালে নির্বাচনে হামাসের বিপুল জয়লাভের পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসের নেতৃত্বের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফিলিস্তিনি অথরিটি-PA-কে সাহায্য বন্ধ করে দেয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস তাকে বরখাস্ত করলেও গাজার জনগণ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দেন। ২০০৭ সালে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। হামাস নেতারা ২০১৭ সালে ১৫ সদস্যের পলিটব্যুরোর প্রধান হিসেবে তাকে নির্বাচিত করার আগ পর্যন্ত হানিয়া গাজার ডি ফ্যাক্টো নেতা ছিলেন (২০০৭-২০১৭)। তখন তিনি খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  তাকে ২০১৮ সালে ‘বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে  চিহ্নিত করে। তিনি ২০১৯ সালে গাজা ছেড়ে কাতারে একটি অফিস স্থাপন করেন। হানিয়া ২০২১ সালে আবারও হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন।

ফিলিস্তিনি লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক হুসাম আন দাজানি বলেন, গাজার রাজনীতিতে ভারসাম্য এনেছেন হানিয়া। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ, যিনি শান্তি, ঐক্য ও স্থিতিশীলতা সমর্থন করেন এবং তাঁর স্বপ্ন ছিল ১৯৬৭ সালের মানচিত্রের আলোকে ইসরাইলের দখলদার মুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় নেতা ইসমাইল হানিয়ার উত্থান ও গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ ভালো চোখে দেখেনি পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাঁকে ও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়। এর মধ্যেই হানিয়ার হাত ধরে ইসরাইলের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘাতে জড়ায় হামাস। দূরত্ব বাড়ে পশ্চিমাদের সঙ্গেও। তবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রভাব রয়ে যায়। সংগঠনে প্রভাব বাড়ে হানিয়ার। ২০১৩ সালের এপ্রিলে হানিয়া হামাসের উপপ্রধান হন। এরপর হামাসের প্রধান হিসেবে ইসমাইল হানিয়া ২০১৭ সালের ৬ মে খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হানিয়াকে ‘বিশেষ ট্যাগযুক্ত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা দেন। 

ইসমাইল হানিয়াকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হানিয়াকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলোর পেছনে যেমন ইসরাইল জড়িত, তেমনি জড়িত ফাতাহ। ব্যক্তিগত জীবনে হানিয়া ১৩ সন্তানের জনক। তাঁর পরিবার ২০০৯ সাল পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলের আল শাতি শরণার্থীশিবিরে ছিল। এরপর গাজার রিমাল এলাকায় জমি কিনে থিতু হয় হানিয়া পরিবার। তবে ইসমাইল হানিয়া কখন কোথায় থাকেন, সেটার সুষ্পষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। মনে করা হয়, নিরাপত্তার জন্য তিনি তাঁর অবস্থানের কথা আগাম জানান না। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ২০০৬ সালে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ইরানে গিয়েছিলেন। ওই সময় ইসরাইল সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কখনোই দখলদার ইহুদী সরকারকে স্বীকৃতি দেবো না। মুসলমানদের প্রথম কিবলা জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদদাস মুক্ত করার আগপর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব। 

১৯৮৭ সালে যখন ইসলামপন্থী দল হামাস গঠিত হয়; তখন ইসমাইল হানিয়া তার কনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। গোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আহমাদ ইয়াসিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ইয়াসিনের সাথে সম্পর্কের কারণে হামাসে তার খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৮ সালে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলি বাহিনী ইসমাইল হানিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রথম ইন্তিফাদায় (ইসরাইলি অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রথম গণবিদ্রোহ) অংশগ্রহণের জন্য ছয় মাসের জন্য কারারুদ্ধ হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ১৯৯২ সালে ইসরাইল তাঁকে আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরো ৪০০ জন ইসলামপন্থীর সাথে দক্ষিণ লেবাননে নির্বাসন না দেওয়া পর্যন্ত কারাগারেই বন্দী ছিলেন। তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে, এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। এক বছর পর অসলো চুক্তি হলে ১৯৯৩ সালে ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। হামাসে ইসমাইল হানিয়া ১৯৯৭ সালে যখন ইয়াসিনের ব্যক্তিগত সচিব হন তখন নেতৃত্বের শেকড় গড়ে ওঠে। ইয়াসিনের বাকি জীবনের জন্য তিনি আধ্যাত্মিক নেতার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ছিলেন। 

ইসমাইল হানিয়ার সাফল্য 

জেল কিংবা একাধিক হামলায় হানিয়াকে দমানো সম্ভব হয়নি। অনেকের মতে, তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দূত। দেশি-বিদেশি বাধার মুখেও এক দশকের বেশি সময় গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন তিনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন হামাসের সশস্ত্র বাহিনী। হামাসের রাজনৈতিক শাখার ভিত্তি মজবুত করেছেন। ইরান, তুরস্ক, লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো মিত্রদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। গাজায় স্বঘোষিত সরকার চালাচ্ছেন হানিয়া। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর সরকারের স্বীকৃতি ছিল না। 

গাজার রাজনীতি বিশ্লেষক ইবরাহিম মাধৌন বলেছিলেন, “আগামী দিনগুলোয় হানিয়াকে মিশর, কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করতে হবে।’’ হানিয়ার মৃত্যুর পর আল কাসাস ব্রিগ্রেড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়ার রক্ত আজ গাজার শিশু, নারী, যুবক ও প্রবীণদের রক্তে এবং আমাদের জনগণ ও যোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এটা স্পষ্ট করে যে হামাস ও এর নেতারা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, একেবারেই জনগণের পাশাপাশি। ইসমাইল হানিয়ার মূল্যবান রক্ত কিছুতেই বৃথা যাবে না, বরং আলোকিত করবে মুক্তির পথ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ। গাজা, পশ্চিম তীর এবং এর সীমানার মধ্যে, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যোদ্ধারা যেখানেই পৌঁছাবে, সেখানেই শত্রুরা তাদের রক্ত দিয়ে এ আগ্রাসনের মূল্য দেবে। ইসমাইল হানিয়া গাজার জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে অসংখ্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করে জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন। গাজার জনগণের জন্য পার্ক নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, নতুন নতুন আবাসন স্থাপন, বেকার সমস্যা সমাধান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, ট্যানেল নির্মাণ, ফ্রি রুটি ও স্যুপের দোকান স্থাপন, অসংখ্য মসজিদ, মক্তব, স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেন হানিয়ার সরকার।  

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা ইসমাইল হানিয়াকে বিশ্ব সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালের বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক শাখার সঙ্গে হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসরাইলের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তাবক। (আল-জাজিরা ও বিবিসি) 

হানিয়ার মৃত্যুর জন্য ইসরাইলকে ‘সম্পূর্ণ দায়ী’ করেছে ওআইসি

গত সপ্তাহে ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে সংস্থাটি। গত ৩১ জুলাই রাজধানী তেহরানে নিজ বাসভবনে এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। একই হামলায় তার একজন দেহরক্ষীও নিহত হন। এখন পর্যন্ত ওই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাস ইসরাইলকেই দায়ী করেছে। তবে ইসরাইল এখন পর্যন্ত এই হামলার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ওআইসির সদস্য দেশ ৫৭টি। স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) সৌদি আরবে সংস্থাটির একটি অসাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই জঘন্য হামলার জন্য অবৈধ দখলদার ইসরাইল সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তারা এভাবে হামলা চালিয়ে হানিয়াকে হত্যা করে ইরানের সার্বভৌমত্বের ‌‘গুরুতর লঙ্ঘন’ করেছে। এদিকে হানিয়াকে হত্যায় ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে ইরান ও দেশটির মিত্ররা। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে আলোচনায় বসার কথাও জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, এ বিষয়ে আলোচনা করতে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বর্তমানে ওআইসির নেতৃত্ব দিচ্ছে গাম্বিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু টাঙ্গারা বলেছেন, হানিয়ার ‘জঘন্য’ হত্যাকাণ্ড এবং গাজায় চলমান যুদ্ধ একটি আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মাটিতে একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এটা ওই অঞ্চলকে বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সৌদি উপকূলীয় শহর জেদ্দায় ওআইসির বৈঠকের আহ্বান জানায় ইরান এবং ফিলিস্তিন। এই সংস্থাটি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ওই বৈঠকের আয়োজক দেশ সৌদি আরব আরও বলেছে যে, হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানের সার্বভৌমত্বের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করা হয়েছে। সৌদির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-খেরেজি বলেছেন, তার দেশ ‘যে-কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বা যে-কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।

কাতারে চিরনিদ্রায় শায়িত ইসমাইল হানিয়া

কাতারে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। শুক্রবার (২ আগস্ট) কাতারের সবচেয়ে বড় মসজিদ ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের জানাজা শেষে লুসাইল রয়্যাল কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হামাসের এসব নেতা ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দোহা বিমানবন্দরের টার্মাকে হানিয়াকে বহনকারী কফিন গ্রহণ করতে আসেন। ইসমাইল হানিয়ার জানাজায় হামাসের উচ্চপদস্থ নেতারা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন খালিদ মিশালও, যাকে হানিয়ার উত্তরসূরী বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

হানিয়ার পর হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার

গাজায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে তেহরানে ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হলে এই ঘোষণা আসে।

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইরান প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। গত ৩১ জুলাই হানিয়ার ওপর হামলার পরও ইসরাইল কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সিনওয়ারকে হামাসের নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছে হামাস। তবে তার বর্তমান অবস্থান থেকে তিনি কতটা কার্যকরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা এখনো অস্পষ্ট।

১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করা সিনওয়ারকে হামাসের সবচেয়ে অনমনীয় নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে বারবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন এবং পরের বছরই ইসরাইলি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দীর্ঘ ২৩ বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০১১ সালে এক বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান সিনওয়ার। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি হামাসের শীর্ষ পদে ফিরে আসেন এবং ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের গাজা শাখার প্রধান হন এবং ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনওয়ার বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের কাছে থাকা অবলম্বন দিয়েই লড়াই করছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে। সিনওয়ার আরও বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও জনসমর্থনভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, গোটা বিশ্ব, মুক্ত মানুষেরা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার শক্তির (ইসরাইল) অপরাধ ও নৃশংসতা বন্ধ করবে। দুঃখজনকভাবে, বিশ্ব নীরব দাঁড়িয়ে দেখেছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির