post

ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরে নিশ্চল চোখে অশ্রুবান

মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

২৩ মে ২০১৮
ব্যাপক আনন্দ আর উদ্দীপনায় বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে গেল মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আমরা যখন নতুন জামা পরে ঈদগাহে তখনো ফিলিস্তিনের গাজায় আমার মত মুসলিম যুবক তরুণ-তরুণীরা বর্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই সংগ্রামে লিপ্ত। আমরা নানা রঙের জামা পরে ঈদ পালন করেছি আর ইসরালিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে ফিলিস্তিনিদের জামা লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমাদের ঘরে ঘরে কোরমা পোলাও ফিরনি আরা সেমাইয়ের আয়োজনে মৌ মৌ গন্ধে এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে আর ফিলিস্তিনিদের বিধ্বস্ত ঘর আর লাশের সারিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। লড়াই সংগ্রাম আর ক্ষতবিক্ষত জীবনই যেন ফিলিস্তিনিদের নিয়তি। এখনো প্রতিদিন ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরছে। আমরা প্রতিদিন একটি ভালো সময়ের প্রত্যাশায় প্রহর গুনি। আর ফিলিস্তিনিরা প্রহর গুনে রক্তাক্ত লাশ দাফনের। সুদূর থেকে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। ফিলিস্তিনে যখন রক্ত ঝরে আমাদের নিশ্চল চোখে তখন অশ্রুর বান ডাকে। ফিলিস্তিনিদের সাথে আমাদের পারিবারিক কোন সম্পর্ক নেই, নেই কোন আত্মীয়তার বন্ধন। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা আরো গভীর এবং সীসাঢালা প্রাচীরের মতো। সেই সম্পর্ক দ্বীনের ভিত্তিতে। পৃথিবীর সকল মুসলমান এক দেহ এক প্রাণ। দেহের কোন অংশে আঘাত পেলে যেমন গোটা শরীর আহত হয় তেমনি ফিলিস্তিনে রক্তঝরা প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজুরাত : ১০) হজরত আবু সাইদ খুদরি রা: বলেন, নবী সা: বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। (মুসনাদে আহমাদ) হজরত সাহল ইবনে সা’দ সায়েদি নবী সা :-এ হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট, ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমাদ) ফিলিস্তিনিদের ব্যথিত হৃদয় আমাদের আহত করে। ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না আমাদের দারুণভাবে আবেগতাড়িত করে। কালেমার পতাকায় মোড়ানো ফিলিস্তিনের লাশের সারি আমাদের দারুণভাবে আহত করে। দুঃখ হতাশা কান্না আর নিদারুণ যন্ত্রণার মাঝেও ফিলিস্তিনের অকুতোভয় যোদ্ধাদের লড়াই আমাদের প্রাণে নতুন করে উদ্দীপনা সঞ্চার করে। যখন দেখি ফিলিস্তিনের শিশুরা তাদের মা-বাবার হাত ধরে লড়াইয়ের ময়দানে হাজির হয়েছে, কচি হাতে শত্রুর দিকে পাথর নিক্ষেপ করছে তখন মনের ভিতরে জমে থাকা ভয়ভীতি মুহূর্তেই দূর হয়ে সাহসের অগ্নিগোলায় পরিণত হয়। আশ্চর্য হয়ে ভাবি শিশুদেরকে নিয়ে যে বাবা-মায়েরা লড়াইয়ের ময়দানে হাজির হয়েছেন তাদের কলিজাটা কত বড়। তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে ঐ সকল বাবা-মাকে শিক্ষা দিয়েছেন যারা ভয়ের কারণে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকেও ইসলামী আন্দোলনে যেতে বারণ করে। ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত পাখির মতো গুলি করে মুসলিম নাগরিকদের হত্যা করছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী। সেখানে বাদ যাচ্ছে না নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী এমনকি ছোট্ট শিশু-কিশোরও। এত কিছুর মাঝেও ফিলিস্তিনি যুবকরা, শিশুরা, নারী-পুরুষরা দমে যায়নি। ফিলিস্তিনি যে সকল যোদ্ধা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের মাঝে সম্প্রতি যার শাহাদাতের খবর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে, যার অকুতোভয় লড়াই, দীপ্ত সাহস বিশ্ব মুসলমানদের বুকে সাহসের সঞ্চার করেছে তার নাম গাজার দুই পা-বিহীন ফাদি আবু সালাহ। ফাদি আবু সালাহ সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে শাহাদাৎ বরণ করেন। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে সালাহ যখন লড়াই করছিলেন তখন তিনি ছিলেন হুইল চেয়ারে বসা। তার দুটি পা ছিলো না। কারণ ২০০৮ সালে এক লড়াইয়ে বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে তিনি তখনই দু’পা হারিয়েছিলেন। ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে পা হারানো ফাদি আবু সালাহ কিন্তু থেমে থাকেননি। লড়াইয়ের ময়দানে বেরিয়ে গেছেন হুইল চেয়ারে চেপে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম অকুতোভয় সৈনিকের মত চালিয়ে গেছেন। হুইলচেয়ারে বসে হাতে বানানো গুলতি নিয়ে থাকতেন ফাদি আবু সালাহ। দেশমাতৃকার পক্ষে স্লোগান দিতেন তিনি। ইসরাইলি বর্বর বাহিনীর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটের প্রতিরোধে পা-বিহীন ফাদি সাহস সঞ্চার করে লড়ে যেতেন। তার হাতের বানানো গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়তেন। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের ভূমি দিবসে প্রায় ৫০ হাজারের ও বেশি লোক ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে। সেই বিক্ষোভে সকাল থেকে হুইল চেয়ারে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন ফাদি সালাহ। এক পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভে ইসরাইলি বর্বর সেনারা নির্বিচারে গুলি চালালে তিনিও প্রতিরোধ শুরু করেন। হুইল চেয়ারে বসে গুলতি দিয়ে পাথর ছোড়ার তার সে ছবি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু এ লড়াকু সৈনিক শাহাদাত বরণ করে আল্লাহর দরবারে চলে যান। তিনি যখন শাহাদাত বরণ করেন, তখনও তার পাশে পড়ে ছিল হুইল চেয়ার আর হাতে ছিল গুলতি। একজন মানুষ, যার দুই পা না থাকার পরও কিভাবে লড়াই করতে পারেন তা প্রতিটি মুসলিম যুবকের জন্য শিক্ষণীয়। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কিভাবে লড়াই করে যেতে পারেন, তা আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন ফাদি সালাহ। তার শাহাদাতের পর এটি বিশ্বব্যাপী মুসলিম তরুণদের মনে নতুন স্পৃহা উদ্যম জাগ্রত করেছে। শাহাদাতের আগ মুহূর্তেও ফাদি নামের এ তরুণ আমাদেরকে শিখিয়ে গেল দাসত্ব নয়, লড়াইই জীবন। দালালি নয়, প্রতিরোধেই মানুষের মুক্তি। মানুষকে বাঁচতে হবে মর্যাদার সাথে, আত্মপরিচয়ের সাথে, নিজের অধিকার নিজে আদায় করার মাধ্যমে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গুলিতে হতাহতের সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও ফিলিস্তিনি জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে জীবন দিচ্ছেন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অধিকারের ওপর মূল আঘাত শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৮ সালে জোর করে ইহুদিরা জবরদস্তিমূলক অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে যে রক্তপাতের সূচনা হয় তা প্রতিনিয়ত রক্তের স্রোতকে তীব্র করছে। সে সময় আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মুসলমানদের যে বিপর্যয় হয় তার প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের ৭৮% ভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সাত লক্ষ ফিলিস্তিনি মুসলমান পরিণত হয় উদ্বাস্তুতে। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনে সম্পূর্ণরূপে বর্বর ইসরাইলের দখলদারিত্ব কায়েম হয়। দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ইসরাইলিরা সেখানে নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে। ফলে সূচনা হয় ফিলিস্তিনি মুসলমানদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। ফিলিস্তিনিদের সেই সংগ্রাম আজো চলছে। নিজেদের ভূমি রক্ষা অধিকার রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু বিশ্ববিবেক নিশ্চুপ হয়ে ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরার দৃশ্য দেখছে প্রতিনিয়ত। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ফিলিস্তিনিদের রক্ত কখনও বৃথা যাবে না। ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে তারা যে লড়ায়ে অবতীর্ণ হয়েছে অবশ্যই এতে তারা সফল হবে। ফিলিস্তিন একদিন স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তরে মুসলমানরা আজ নিপীড়িত-নির্যাতিত। তাবৎ ইসলামবিদ্বেষী শক্তি একেক জায়গায় একেক অজুহাতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। ফিলিস্তিন, মিয়ানমার, কাশ্মির, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, মিসর আজ সব স্থানে রক্তের হোলিখেলা চলছে। রক্তের এ স্রোত কবে থামবে বিশ্ববাসী তা জানে না। ইসলামবিদ্বেষীরা সকলে একটি জায়গায় একমত, তা হচ্ছে মুসলিম নিধন। আর মুসলমানেরা তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে কোথাও কোথাও দাবার গুঁটিতে পরিণত হয়েছে। আজ মুসলিম হয়েও এক ভাই আরেক ভাইয়ের রক্ত ঝরাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশ ও সংস্থাগুলো তারই তামাশা দেখছে। ওআইসি, আরবলিগ আজ নখ দন্তবিহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। মুসলিম দেশের মধ্যে কোথাও অমুসলমানরা আঘাতপ্রাপ্ত হলে জাতিসংঘসহ ক্ষমতাধর দেশগুলো একজোট হয়ে কড়া প্রতিবাদ করে আর মুসলমি দেশগুলো তার সজাতীয়-সদ্বীনি ভাইদের পাশে দাঁড়াতেও কুণ্ঠাবোধ করছে। এ যেমন চরম লজ্জাজনক, তেমনি হতাশাজনকও বটে। বিশ্বের প্রান্তরে প্রান্তরে মুসলিম দেশগুলোর ওপর জুলুম ও নির্যাতনের যে স্টিমরোলার চলছে তার থেকে বাদ নেই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে এ দেশেও পালিত হয়ে যাওয়া ঈদুল ফিতরে কত পরিবারে যে শোকের মাতম চলেছে তার হিসেব করে কূল পাওয়া কঠিন। শত শত পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে ছিল শোকাহত পরিবেশ। মা তার কলিজার টুকরো সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী করে ঈদের দিনটি পার করেছেন। সন্তান পিতার শোকে ছিল বিহব্বল। কত ঘরে বাবার ফেরার প্রতীক্ষায় সন্তান লাল জামা গায়ে দিয়ে ঈদের দিন অপেক্ষা করেছে তার হিসেব নেই। কোমলমতি শিশুকে ঈদের দিন কত মা তার বাবা ফিরবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কারণ ইসলামবিদ্বেষী-ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আধিপত্যবাদের দোসর শক্তি জোর করে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে এদেশের ইসলামী মনোভাবাপন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর একের পর এক নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। নিজেদের অবৈধ ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে গুম-খুন-হত্যা আর জেল জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে তারা। ইসলামী দলের সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা অভিযোগে মিডিয়া ট্রায়াল করে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির প্রধান দলনেতাকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে অবৈধ সরকার। শুধু মতের ভিন্নতার কারণে এবং ইসলামী মনোভাবাপন্ন নাগরিক হওয়ার কারণে মায়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে সন্তানকে নৃশংস কায়দায় খুন করা হচ্ছে। সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ইসলামপন্থীদের মৌলিক মানবিক অধিকারে এক প্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞাই যেন জারি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর যে অবস্থা, বাংলাদেশেও একই অবস্থার শিকার হতে হচ্ছে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনতাকে। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহকে আজ বিশ্বব্যাপী চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মজলুম মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। বলিষ্ঠ করতে হবে কণ্ঠস্বর। মুসলমানরা নিজেদেরকে ইহুদিবাদী শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিজেরা ইহুদিবাদী শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত না হয়ে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে, দ্বীনি বন্ধনকে, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের নেতৃবৃন্দকে। মুসলিম বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ একতাবদ্ধ হতে পারলে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি পাল্টে দেয়া সম্ভব। ওআইসি, আরবলিগসহ মুসলিম দেশগুলোর সব সংস্থাগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তের এই হোলিখেলা। মুসলিম বিশ্বের পক্ষে একতাবদ্ধ হলেই এটি সম্ভব। কারণ মুসলিম বিশ্বের কাছে এমন কিছু সম্পদ রয়েছে যে সম্পদ আজ ইহুদিবাদী শক্তি, ইসলামবিদ্বেষী শক্তি ব্যবহার করছে। সেই জায়গায় সম্পদগুলোকে যারা কুক্ষিগত করছে, তাদের জায়গা থেকে সেই সম্পদগুলোকে উদ্ধার করতে পারলে, মুসলিমদের সম্পদ মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করতে পারলে, যারা মুসলিমদের সম্পদ ব্যবহার করে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারলে, বর্তমান রক্তাক্ত জুলুমের অবসান করা সম্ভব। সম্প্রতি অতিবাহিত রমজান এবং উদযাপিত হওয়া ঈদুল ফিতর আমাদেরকে যে বার্তা দিয়ে গেছে সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে। রমজান আমাদেরকে ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়, রমজান আমাদেরকে মানব-দরদ শেখায়। ঈদ মুসলমানদেরকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়। ঈদুল ফিতর আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়ে গেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই মুসলিম উম্মাহ নতুনভাবে নতুন উদ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার বন্ধনকে মজবুত করে বর্তমান বিশ্বব্যাপী চলমান জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের হাত থেকে লাখো কোটি নারী-পুরুষ ও শিশুকে রক্ষা করতে পারে। মহান রাব্বুল আলামিনের যে ঘোষণা, সে ঘোষণা কার্যকর করে আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা পরস্পর আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৩) লেখক : এমফিল গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির