post

ফয়সাল আমাদের জন্য প্রেরণা

০১ অক্টোবর ২০১২

সাইয়েদা হাসনা বানু

Chhatrasangbadবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সেই ভয়াবহ ২৮ অক্টোবর আমাদের মাঝে আসছে, মনে হলেই অন্তরটা কেঁপে ওঠে। সন্তান হারানোর দৃশ্য এবং ফাহাদকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে, সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটা ভোলার মত নয়, যা অন্তরকে সব সময় ব্যথিত করে, শরীরটা দুর্বল হয়ে যায়। ফয়সালকে হারিয়ে আর স্ব^াভাবিক জীবনে ফিরে আসা ‘মা’ হয়ে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। স্বামীকে হারিয়েছি অসময়ে আবার সন্তানকেও মানুষ মারতে পারবে এটা আমার কল্পনাতীত। সবচেয়ে প্রিয় সন্তানটি ছিল খুবই নরম স্বভাবের, রাগ, গোস্ব^া, হিংসা-বিদ্বেষ কিছুই তার ছিল না। এমন ছেলেকে লগি-বৈঠা দিয়ে জীবনে শেষ করে ফেলা এটা মানুষের কাজ নয়, এরা নরপশু, ওরা কিলার, ওদের মায়ামমতার লেশমাত্র নেই। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে সেদিন মুজাহিদ, শিপন, মাসুম, রফিক, আরও কতজনকে ওরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং শত শত মানুষকে করছে যখম। সেই আওয়ামী হায়েনারা আবার ক্ষমতায় এসেছে। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি আর দেশের অর্থ লুটপাট এটাই ওদের কাজ। ওরা এখন আবার ২০২১ সালের  প্ল্যান-প্রোগ্রাম করছে। আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য একটার বদলে দশটা লাশ ফেলবে। শেখ হাসিনা নিজের সন্তাদেরতো আমেরিকা জিইয়ে রেখেছে। পরের সন্তানদের বেলায় হুমকি একটার বদলে দশটা লাশ। ডাইনিদের তো পরের সন্তানদের মায়া লাগে না। দুর্নীতি সন্ত্রাস আর লুট করে সম্পদের পাহাড় বানানোই ওদের রাজনীতি। এই অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সত্য ও সুন্দরের পথ দেখানোর জন্য আসছে ছাত্রশিবির। এই ছাত্রশিবিরকেই সহ্য করতে পারে না শেখ হাসিনার গোষ্ঠী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাই ওরা বারবার এই শিবির কর্মীদের খতম করে ওদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়। এই দলেরই নিবেদিতপ্রাণ আমার প্রিয় সন্তান আবদুল্লাহ আল-ফয়সাল। স্বভাবে চরিত্রে অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। আল্লাহর পছন্দনীয় সব দিক থেকে সুন্দর বান্দাটিকেই তার কাছে নিয়ে গেলেন। শহীদদের স্বভাবটা এরকমই হয়ে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন ওদেরকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। শহীদ মালেক থেকে শুরু করে যত সন্তান শাহাদাত বরণ করেছে তাদের সবার জন্যই আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমরা ওদের মৃত বলো না ওরা জীবিত, আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত কিন্তু তোমরা অনুধাবন করতে পার না।” আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের প্রিয় সন্তানগুলোকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে ওদের রিজিক দান করেন। সেই ২৮ অক্টোবরের ভয়াবহ দিনে শহীদ মুজাহিদ, শিপন, মামুন, ফয়সাল, রফিক সবাইকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। ওদের কী অপরাধ ছিল! শুধু এটুকু অপরাধ যে, ওরা দ্বীনের পতাকাকে সমুন্নত করতে চেয়েছিল। ওরা অন্যায় দমন এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে ছিল বদ্ধপরিকর। এ জন্য তারা জীবনকে বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেনি। এরপর গত বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ হতে হয় মাসুদ বিন হাবিব ও মুজাহিদকে। আওয়ামী হায়েনারা মানুষের জীবন শেষ করতে কোনো পরওয়া করে না। আমার ছেলে ফাহমিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, এই আন্দোলনের সদস্য। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল। ওর কাছ থেকে মাসুদ বিন হাবিব সম্পর্কে জানলাম। ইংরেজি শেষবর্ষের ছাত্র। অত্যন্ত মেধাবী একজন ছেলে ছিল মাসুদ বিন হাবিব। গান, কৌতুক ইত্যাদিতে অনেক পারদর্শী ছিল। একজন অসাধারণ সন্তানকে হারালো তার বাবা-মা। শহীদদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খাঁটি মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়ে ছিলেন। আমিও এই আন্দোলনের নগণ্য একজন কর্মী। সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের বাধা দানের জন্যই এই সংগঠন। সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা যেই দলটি করবে তাদের অনেক সংগ্রাম করেই এই দলে টিকে থাকতে হয়। তাদেরকে শয়তান ধোঁকায় ফেলতে চায়। মধ্যপন্থী মানুষদের সত্য পথে টিকে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সার্বক্ষণিক সাহায্য এবং আপ্রাণ চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। সত্য পথের সৈনিকদের সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য যেভাবে সংগ্রাম করবে সেভাবে নিজেকেও সত্য পথে টিকিয়ে রাখতে হবে। শত লোভ লালসা সামনে আসবে কিন্তু সেদিকে যাওয়া যাবে না। পূর্বের ইতিহাস অনুসরণ করতে হবে। নবীজি (সা) এবং সাহাবাদের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। আর তা না করলে জিহাদের ময়দানে মৃত্যু বরণ করেও মুনাফিক হিসেবে পরিগণিত হব। আমি এ ব্যাপারে নিজেকেও প্রশ্ন করি, আমাদের হতে হবে সেই রকম মুজাহিদÑ মুজাহিদা, যারা আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আমি খুবই পছন্দ করি, যে পথে আমার প্রাণপ্রিয় সন্তানেরা জীবন দিয়েছেন। সত্যের সৈনিক ওরা, ওরা দ্বীনের মুজাহিদ, সত্য- ন্যায়ের অতন্দ্র প্রহরী। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ তোমাদের এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং আমাদেরকেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই পথের জন্য কবুল করুন। আমিন। লেখক : শহীদ ফয়সালের মা

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির