বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস
মতিউর রহমান আকন্দ
০৫ ডিসেম্বর ২০১৬
[ পূর্ব প্রকাশের পর ]
বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি
ভারতে মুসলমানদের সাথে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময় সকলেই হিন্দুদের পক্ষাবলম্বন করে। মুসলমানদের ব্যথায় ব্যথিত হওয়ার ও সমবেদনা জানানোর মত কেউ ছিল না। একমাত্র চিত্তরঞ্জন দাস মুসলমানদের প্রতি কিছুটা সমব্যথী হন। চিত্তরঞ্জন দাস ইংরেজদের মোকাবেলা করার যে কৌশল অবলম্বন করেন তাতে মুসলমানদের সহযোগিতা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সি আর দাস মুসলমানদের সহযোগিতা কামনা করেন। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে স্বরাজ্য পার্টি বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। স্বরাজ্য পার্টি থেকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুসলমান মুসলিম আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরিস্থিতি ছিল এমন যে, আইন সভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান প্রতিনিধিদের সাহায্য না পেলে কোনো প্রগতিমূলক কাজ করাই সম্ভব হচ্ছিল না। চিত্তরঞ্জন দাস এটা বুঝতে পেরে মুসলমানদের সন্তুষ্ট করে তাদের সাহায্য সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়ার আশায় ১৯২৩ সালে সিরাজগঞ্জ প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মিলনীতে তার বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম চুক্তি সম্পাদন করেন। (ভারত কি করে ভাগ হলো : বিমলানন্দ শাসনামল, পৃ: ৩৫)
‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামক এই চুক্তি সম্পাদনে চিত্তরঞ্জন দাসকে সাহায্য করেছিলেন স্যার আব্দুর রহিম, মৌলভী আব্দুল করিম, মৌলভী মজিবুর রহমান, মওলানা আকরম খাঁ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং জে এম সেনগুপ্ত, শরৎ বসু, জে এম দাস গুপ্ত, ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় প্রমুখ হিন্দু নেতৃবৃন্দ। (অখন্ড বাংলা স্বপ্ন : আহসানুল্লাহ, পৃ: ১০৬, ১০৭)
১৯২৩ সালের আইন পরিষদ নির্বাচনের পর বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়। ১৯২৪ সালে কলকাতা করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মেয়র নির্বাচিত হন। আর সোহরাওয়ার্দী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সহযোগিতার একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ চুক্তিটি প্রভাবশালী হিন্দু মহলের প্রচণ্ড বৈরিতার সম্মুখীন হয়। গান্ধীবাদী ডক্টর প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ প্রকাশ্য বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘মুসলমানদের নিকট আত্মসমর্পণ করে করে আমরা তাদের একটার পর একটা দাবি বাড়িয়ে তুলতেই সাহায্য করছি।’ (ভারত কি করে ভাগ হলো : বিমলানন্দ শাসনামল, পৃ: ৩৫)
চিত্তরঞ্জন দাস হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে যে ভূমিকা পালন করছিলেন তা স্বস্তি ও শান্তির সৃষ্টি করে। প্রভাবশালী হিন্দু মহলে বৈরিতা অগ্রাহ্য করে তিনি তার ভূমিকা অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু এ ধারা বেশি দিন চালু থাকেনি। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন চিত্তরঞ্জন দাস মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার কিছু সংখ্যক শিষ্য তার এই ঘোষণাটিকে বাতিল করে দেন। ফল হলো এই যে, বাংলার মুসলমানরা কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ালো এবং দেশ বিভাগের প্রথম বীজ বপন করা হলো। (ওহফরধ ডরহং ঋৎববফড়স, চধমব-২১)
গয়া কংগ্রেসে হিন্দু-মুসলমানের সর্বভারতীয় চুক্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয় কংগ্রেস। কিন্তু তারা তা পালন করেনি। গয়া কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন চিত্তরঞ্জন দাস। কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুসারেই তিনি ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ করেন। এ প্যাক্টকে সর্বভারতীয় রূপ দেয়া কংগ্রেসের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তা না করে বেঙ্গল প্যাক্টকেই তারা হত্যা করল। এতে মুসলমানরা কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ায়। মুসলমানদের সরে দাঁড়ানোর ফলে যে অবিশ্বাস ও অনৈক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা ভারত বিভক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য দাবি
মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে অবিশ্বাস ক্রমেই দানা বেঁধে উঠতে থাকে। গান্ধীর ইসলামবিরোধী বক্তব্য মুসলমানদেরকে হতাশ করে। মুসলমানদের ওপর হিন্দুদের হামলা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। কোন অবস্থাতেই সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। মুসলমানদেরকে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা চলছিল অব্যাহতভাবে। কোন কোন মুসলিম নেতা উপলব্ধি করতে থাকেন হিন্দু-মুসলমানদের আর একত্রে থাকা সম্ভব নয়। কেউ কেউ মুসলমানদের জন্য আলাদা অঞ্চলের চিন্তা-ভাবনা করেন। বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তির মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম একসাথে থেকে ভারতকে স্বাধীন করার যে আন্দোলন পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছিল বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি বাতিলের দ্বারা হিন্দু-মুসলিমের সে ঐক্য শুধু ভেঙে যায়নি দাঙ্গা-হাঙ্গামার এক নতুন পরিবেশ তৈরি হয়। হিন্দু মহাসভা এবং আর্য সমাজীরা গোটা ভারত থেকে মুসলিম খেদাও আন্দোলন শুরু করে। হিন্দু ‘সংগঠন আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় মুসলমানদেরকে হয় হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হতে হবে নতুবা তাদেরকে ভারত ত্যাগ করতে হবে। মুসলমানদের ওপর আঘাতের প্রচণ্ডতা এমন ছিল যে, তাদেরকে বলা হয় কোরআনকে ঐশী গ্রন্থ মানা যাবে না। মুহাম্মদ (সা:)-কে নবী বলে স্বীকার করা যাবে না। মুসলমানী উৎসব-অনুষ্ঠান ত্যাগ করে হিন্দু উৎসব পালন করতে হবে। আরবি ভাষার পরিবর্তে হিন্দি ভাষায় উপাসনা করতে হবে। নবী করিম (সা)-কে কটাক্ষ করে ‘রঙ্গিলা রসূল’ নামে পুস্তক প্রকাশ করে মুসলমানদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
অব্যাহত উত্তেজনা ও উসকানির ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার গতিবেগ প্রশমিত না হয়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য স্বতন্ত্র এলাকার আলোচনা চলতে থাকে। ১৯২৭ সালে মওলানা হযরত মোহানী ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্যের দাবি সংবলিত একটি প্রস্তাব সংবাদপত্রে বিবৃতির মাধ্যমে পেশ করেন। এটাই পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম পথের দিশারি।
সর্বদলীয় সম্মেলন
মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় কম্পমান গোটা দেশ। নানাভাবে হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছিল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বরাবরই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতি জোর দিয়ে আসছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মওলানা মুহাম্মদ আলী, মি. মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান, মিসেস সারোজিনী নাইডো, রাজা গোপালাচারিয়া, ডা: আনসারী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন কিন্তু দাঙ্গা প্রতিরোধের কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে ১৯২৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিতব্য কংগ্রেস অধিবেশনের প্রাক্কালে এক সর্বদলীয় সম্মেলন আহূত হয়। ভারতের নেতৃস্থানীয় হিন্দু, মুসলমান ও শিখ সম্মেলনে যোগদান করেন। কংগ্রেসের বিদায়ী সভাপতি ডা: মুখতার আহমদ আনসারী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। কিন্তু উগ্রপন্থী হিন্দুদের হঠকারিতায় সম্মেলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়। কিন্তু সম্মেলনের হিন্দু এবং শিখ নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। মুসলমানদের পক্ষ থেকে বৃহত্তর উদারতার বিনিময়ে সামান্য উদারতা প্রদর্শনের জন্য মি. মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র পুনঃপুন আবেদন ব্যর্থ হয়। ফলে সর্বদলীয় সম্মেলন কোনো সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকেই চরম ব্যর্থতার সাথে শেষ হয়।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর
ঐতিহাসিক চৌদ্দ দফা
মি. মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেসের একজন অতি উৎসাহী ও একনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তার রচিত ‘টুয়ার্ড ফ্রিডম’ গ্রন্থে জিন্নাহকে ‘হিন্দু-মুসলিম মিলনের দূত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। জিন্নাহ হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালান। ঐক্যের খাতিরে জিন্নাহ মুসলিম লীগকে অনেক ত্যাগ স্বীকারে রাজি করিয়েছিলেন। কিন্তু তার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি বার বার বোঝাতে চেষ্টা করেন ভারতের উন্নতি, অগ্রগতি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপর নির্ভরশীল। একজন মুসলমান হিসেবে নয়, একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি স্বাধীনতার জন্য হিন্দু-মুসলমানদের একসাথে এগিয়ে যাবার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তার সকল আবেদন অরণ্যরোদনে পরিণত হলো। তিনি কংগ্রেসের হিন্দু সদস্যদের আচরণ এবং মুসলমানদের প্রতি তাদের বৈরী নীতিতে অত্যন্ত ব্যথিত হন।
১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে কংগ্রেসের সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিন্তু ১৯২৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলনের পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশ্যে কংগ্রেসের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকেন। এ সম্মেলনে হিন্দু ও শিখদের বিদ্বেষাত্মক মনোভাব লক্ষ করে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। তার পর পরই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম কন্ফারেন্সে তিনি তাঁর চৌদ্দ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। এ চৌদ্দ দফার বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বোম্বাই থেকে সিন্ধুকে পৃথক করে সিন্ধুপ্রদেশ গঠন, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশে শাসন সংস্কার প্রবর্তন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোর আইন পরিষদে জনসংখ্যার অনুপাতে আসন বন্টন এবং দেশের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি নির্বাচনে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন প্রবর্তন। তখন থেকে মি. জিন্নাহ্ (পরবর্তীকালে কায়েদে আজম) কংগ্রেস বিরোধিতায় হয়ে পড়েন সোচ্চার। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মি. র্যামজে ম্যাকডোনাল্ডের সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদে (ঈড়সসঁহধষ অধিৎফ) ‘চৌদ্দ দফার’ অধিকাংশ দফা স্বীকৃতি লাভ করে। জিন্নাহ যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন তা তার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও ঐক্যচিন্তার জ্বলন্ত নিদর্শন। এ চৌদ্দ দফার বাইরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ উড়িষ্যা এবং আসাম দু’টি পৃথক প্রদেশের মর্যাদা লাভ করে।
জিন্নাহর ঐতিহাসিক চৌদ্দ দফা হলো
১. ভবিষ্যৎ সংবিধান হবে ফেডারেল ধরনের যাতে বাকি ক্ষমতাগুলো থাকবে প্রদেশের ওপর ন্যস্ত।
২. সকল প্রদেশকেই একই ধরনের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতে হবে।
৩. দেশের সকল আইনসভা ও অন্যান্য নির্বাচিত সংস্থা একটি নির্দিষ্ট নীতির ওপর গঠিত হবে যেখানে প্রত্যেক প্রদেশের সংখ্যালঘুরা যথেষ্ট ও কার্যকর প্রতিনিধিত্ব লাভ করবে। কোন প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে সংখ্যালঘিষ্ঠ, এমনকি সমান স্তরে নিয়ে আসা যাবে না।
৪. কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশের কম হবে না।
৫. ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব প্রদানের জন্য বর্তমানে পৃথক নির্বাচনের যে ব্যবস্থা আছে সেরূপ চলবে, তবে শর্ত থাকবে যে, যেকোনো সম্প্রদায় যেকোনো সময় পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা ত্যাগ করে যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে।
৬. যদি কোন অঞ্চলকে পুনর্বিন্যাস করার প্রয়োজন হয় তাহলে বর্তমানে পাঞ্জাব, বাংলা ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুণœ করা যাবে না।
৭. সকল সম্প্রদায়কেই পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা অর্থাৎ ধর্মবিশ্বাস, উপাসনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, প্রচার, সংগঠন এবং শিক্ষার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার দিতে হবে।
৮. যদি কোন আইনসভা বা নির্বাচিত সংস্থার বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের তিন-চতুর্থাংশ প্রতিনিধি আপত্তি উত্থাপন করে এই যুক্তিতে যে সেখানে উত্থাপিত কোনো বিল, প্রস্তাব বা তার অংশ-বিশেষ সেই সম্প্রদায়ের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী তাহলে সেই বিল, প্রস্তাব বা তার অংশ সেই আইনসভা বা নির্বাচিত সংস্থায় পাস করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে এ ধরনের একটা পদ্ধতি বের করা যেতে পারে যেটা এ ধরনের বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর।
৯. বোম্বাইকে সিন্ধু প্রেসিডেন্সি থেকে আলাদা করতে হবে।
১০. অন্যান্য প্রদেশের ন্যায় একই ধরনের সংস্কার বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে চালাতে হবে।
১১. সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে এবং স্থানীয় স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলমানরা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত সমান সুযোগ পায়।
১২. মুসলমানদের সংস্কৃতি রক্ষার যথেষ্ট বিধান সংবিধানে রাখতে হবে, এই সাথে মুসলমানদের ভাষা, শিক্ষা, ধর্মীয়, ব্যক্তিগত, আইন, মুসলমানদের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষণ এবং স্বশাসিত সংস্থাগুলো যে অনুদান প্রদান করে সেখানে মুসলমানদের ন্যায্য অংশেরও নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
১৩. কোন কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাই অন্তত এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান মন্ত্রী না নিয়ে গঠন করা যাবে না।
১৪. যেসব রাজ্য নিয়ে ভারতীয় ফেডারেশন গঠিত হবে সেইসব রাজ্যের সম্মতি না নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনসভা সংবিধানের কোনরূপ পরিবর্তন করতে পারবে না।
সাইমন কমিশন ও নেহরু রিপোর্ট
ভারতশাসন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণের উদ্দেশ্যে অথবা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দাবিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৮ সালে ভারতে একটি রয়েল কমিশন প্রেরণ করেন। এ কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্যার জন সাইমন। এ কমিশনে লেবার দলের এমপি ক্লেমেন্ট এটলিসহ বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। ১৯১৯ সালের প্রণীত ভারতীয় আইনের মেয়াদ বাড়াতে সাংবিধানিক সংস্কার করার উদ্দেশ্যে সাইমন কমিশন এসেছিল। তাদের ওই উদ্দেশ্যের আড়ালে যে মূল উদ্দেশ্য ছিল সেটি হলো এখানকার ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক তৎপরতাকে কিভাবে স্থবির করে দেয়া যায় সে বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করা। কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য নেয়া হয়নি বলে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এ কমিশন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কমিশনের সদস্যগণ বোম্বাইয়ে অবতরণ করলে তাঁদেরকে কৃষ্ণ পতাকা দেখানো হয়। সাত সদস্যবিশিষ্ট ওই শক্তিশালী কমিশন যেখানেই সফর করে সেখানেই বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। তারা যেখানেই গেছেন সেখানেই কালো পতাকা উড়ানো হয়, হরতাল ডাকা হয়। হাজার হাজার মানুষ কমিশনকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য রাস্তায় মেনে আসে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাইমন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন ‘জালিয়ান-ওয়ালাবাগ ছিল শারীরিক হত্যাকাণ্ড এবং সাইমন কমিশন হলো আত্মার হত্যাকাণ্ড।’ বিক্ষুব্ধ জনতা ‘সাইমন গোব্যাক!’ শ্লোগান দিয়ে তাদের বিরোধিতা করে। সাইমন কমিশন লন্ডনে একটি গোলটেবিল বৈঠকের সুপারিশ পেশ করে।
সাইমন কমিশন ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে একপক্ষীয় নীতিতে যেভাবে এগোচ্ছিল তা কংগ্রেসকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে সরাসরি উসকানি দেয়। কংগ্রেস ব্রিটিশ ভাবধারার সংবিধানের বদলে ভারতীয় ভাবধারার সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। মুসলমান, হিন্দু, শিখ, উদারপন্থী ও সমাজবাদী দল- সব শ্রেণীর প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির ইনচার্জ করা হয় মতিলাল নেহরুকে এবং জওহরলালকে সেক্রেটারি। বেশ কয়েক মাস ধরে নিজেদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক ও মতানৈক্যের পথ পাড়ি দিয়ে এই কমিটি একটি রিপোর্ট তৈরি করে। যেটা নেহরু রিপোর্ট নামে পরিচিত। এই রিপোর্টের বেশির ভাগ বিষয়াদি জওহরলালের নয়, মতিলালের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল। এ ডকুমেন্টে যে সিদ্ধান্ত টানা হয়েছিল তা মাদ্রাজে নেহরুর ঘোষিত স্বাধীনতা প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করে। অপর দিকে মতিলাল ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের অধীনে থেকে স্বায়ত্তশাসনের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটাকেই এ ডকুমেন্টে সমর্থন করা হয়। অর্থাৎ ডকুমেন্টে যা প্রস্তাব করা হলো তা মতিলালের রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষে গেলেও জওহরের সরাসরি বিপক্ষে চলে যায়। এ রাজনৈতিক মতপার্থক্য নেহরু-মতিলালের পারিবারিক মানসিক দ্বন্দ্বে পরিণত হয়।
কমিশনের রিপোর্টে পৃথক নির্বাচন প্রথা বাতিল করে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের যৌথ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমানদের জন্য কোন আসন সংরক্ষণ রাখা হয়নি। নেহরু রিপোর্টে মুসলমানদের সব দাবি দাওয়া অগ্রাহ্য করা হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, নেহরু রিপোর্ট ‘হিন্দু রিপোর্ট’ ছাড়া আর কিছু নয়। নেহরু রিপোর্টের উল্লেখযোগ্য দিক হলো :
* এ রিপোর্টে বিল অব রাইটস বা নাগরিক অধিকারকে স্বীকার করে নেয়া হয়।
* জনগণকে সকল সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
* রিপোর্টে বলা হয় যে, এ রাষ্ট্রে কোনো রাষ্ট্রধর্ম থাকবে না এবং নাগরিক হিসেবে নারী ও পুরুষের অধিকার হবে সমান।
* সরকার হবে ফেডারেল পদ্ধতির। অবশিষ্ট ক্ষমতা থাকবে প্রদেশগুলোর হাতে।
* সুপ্রিম কোর্ট গঠন এবং ভাষার ভিত্তিতে প্রদেশগুলোকে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
* রিপোর্টে বলা হয়, কোনো সম্প্রদায় বা সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে না।
* কমনওয়েলথের ভাষা হবে হিন্দুস্তানি যা নাগরী অথবা উর্দু হরফে লেখা যাবে। তবে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে।
কংগ্রেসের দিল্লি মেনিফেস্টো
কংগ্রেস সবসময়ই ভারতের রাজনীতিকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশী ছিল। মুসলমানদের প্রতি নমনীয়তার পরিবর্তে তারা কঠোরতা অবলম্বন করে। যদিও কংগ্রেসের মধ্যে বহু মুসলমান ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেক যোগ্য ব্যক্তি ও খ্যাতনামা এবং জনপ্রিয় মুসলমান নেতাও ছিলেন। তবুও মুসলমানদের প্রতি কংগ্রেসের বিদ্বেষ রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ‘মুসলিম লীগকে’ সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলমানদের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে প্রণয়ন করা হয় নেহরু রিপোর্ট। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে কংগ্রেস আন্দোলনের ছক অঙ্কন করে।
কংগ্রেস ‘নেহরু রিপোর্ট’ মেনে নেয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে ১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। কংগ্রেসের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগে ভারতের বড় লাট লর্ড আরউইন ঘোষণা করেন সাইমন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনার জন্য লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেস গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের শর্ত হিসেবে চারটি বিষয় উত্থাপন করে:
এক. গোলটেবিলকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের অর্থাৎ ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের সংবিধান রচনার ক্ষমতা দিতে হবে।
দুই. গোলটেবিলের অধিকাংশ সদস্য হতে হবে কংগ্রেসের মনোনীত প্রতিনিধি।
তিন. সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।
চার. সাময়িক কালের জন্য ডোমিনিয়ন সরকারের কাঠামোয় একটি সরকার গঠন করতে হবে।
কংগ্রেসের এ দাবির নাম দেয়া হলো ‘দিল্লি মেনিফেস্টো’। কংগ্রেসের এ মেনিফেস্টো ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করেনি।
লাহোর সম্মেলন ও
ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা
আলটিমেটাম যেদিন শেষ সেদিন অর্থাৎ ১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর লাহোরে কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লাহোরের রাভী নদীর তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে সম্মেলনের তাঁবু ফেলা হয়। কংগ্রেসের তিন লাখ নেতাকর্মী ও প্রতিনিধি সেখানে টানা ছয় দিন অবস্থান করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হওয়ায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার কর্মী ও সমর্থক লাহোর সম্মেলনে যোগদান করে।
উদ্বোধনী সেশনে নেহরুকে স্থানীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী বলদের টানা রথে উঠিয়ে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তাতে চড়তে রাজি হননি। তিনি কোন দেহরক্ষী ছাড়াই পায়ে হেঁটে একা সম্মেলনস্থলে যেতে চান। আয়োজকরা তাতে আপত্তি জানান। অবশেষে তিনি একটি আরবীয় ঘোড়ায় চড়ে যেতে সম্মত হন। লাহোরের রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার মানুষ হর্ষধ্বনি করে ও পতাকা উড়িয়ে তাকে স্বাগত জানায়। নেহরুকে দেখার জন্য বাড়ির ছাদ, রাস্তার দু’পাশ, মাঠ ও ময়দান লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। জনগণের এ উদ্দীপনা দেখে মি. গান্ধী নেহরুর প্রশংসা করতে গিয়ে বললেন, ‘ভয়হীন, বিদ্বেষহীন।’ (সূত্র : ইন্দিরা-ক্যাথরিন ফ্রাঙ্ক)
উদ্বোধনী অধিবেশনে মতিলাল পুত্র জওহরলালকে নিজ হাতে কংগ্রেস প্রেসিডেন্সির ম্যান্টল পরিয়ে দেন। এ সময় তিনি একটি ফার্সি কবিতার লাইন আবৃত্তি করেন : ‘হারছে কি পির্দ নাতাবন্দ, পেসার তামাম কুন্দাদ’ (পিতা যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ পুত্র তা করে দেখায়)। এ সম্মেলনে পিতার উত্তরসূরি হিসেবে পুত্র জওহরলাল নেহরু কংগ্রেসের সভাপতি হন।
নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে নেহরু এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ হলো ব্রিটিশ আধিপত্যবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদ থেকে ভারতবর্ষের নিঃশর্ত মুক্তি। এ ছাড়া স্বাধীনতার আর কোন অর্থ নেই। কংগ্রেসের সভায় চূড়ান্ত পর্বে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ আন্দোলনের প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি ছিল:
“আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবীর যে কোন মানুষের মতো ভারতীয়দেরও নিজেদের শ্রমের ঘামে ফলানো ফসল আর সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ করার অধিকার আছে। স্বাধীনতা চাওয়ার অধিকার আছে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, যদি কোন সরকার জনগণের এ অধিকার হরণ এবং তাদের নিপীড়ন করে তাহলে ওই সরকারের পরিবর্তন অথবা বিলুপ্ত করার অধিকারও তাদের রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার শুধু স্বাধীনতার স্বাদ থেকে ভারতীয়দের বঞ্চিতই করেনি এরা জনগণকে সার্বিকভাবে নিষ্পেষণ করেছে। তারা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে ভারতকে পঙ্গু করে ফেলেছে। এ কারণে আমরা বিশ্বাস করি, ভারতকে অবশ্যই ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে এবং ‘পূর্ণ স্বরাজ’ বা সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে...” (সূত্র : জওহরলাল নেহরুর বক্তব্য সংকলন পৃষ্ঠা : ৬১২)
লাহোরের প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত ‘পূর্ণ স্বরাজ’ প্রস্তাবটি উপস্থিত প্রতিনিধিগণ পাঠ করে শপথ নেন। মি. গান্ধী পুনরায় পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব দেন। ৩১ শে ডিসেম্বর মধ্য রাতের পর পুরাতন বর্ষ শেষে নব বর্ষারম্ভের মুহূর্তে অর্থাৎ সরকারকে বেঁধে দেয়া আলটিমেটামের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্রই এ প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। রাভী নদীর তীরে বর্তমান ইকবাল পার্কে রাতেই স্বাধীনতার তিনরঙা পতাকা উড়িয়ে দেয়া হলো। ‘বিপ্লব জিন্দাবাদ!’- স্লোগানে নদীর তীর ঘেঁষা লোকালয় প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। এ সময় স্বাধীনতার অঙ্গীকার পাঠ করা হয়। অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল তাৎক্ষণিক কর বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা। প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন আছে কি না তা সমবেত জনতার কাছে জানতে চাওয়া হয়। জনতা হাত তুলে প্রস্তাবের প্রতি তাদের সমর্থন দেয়। প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন ও ভারতীয় জনগণের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ১৭২ জন প্রতিনিধি পদত্যাগ করেন।
লাহোর সম্মেলন জওহরলাল নেহরুর হৃদয়পটে চিরস্থায়ীভাবে অঙ্কিত হয়ে যায়। তিনি তার ‘টুওয়ার্ড ফ্রিডম’- বইয়ে লিখেন:
“লাহোর কংগ্রেসের স্মৃতি আমার চিত্তপটে উজ্জ্বলরূপে অঙ্কিত রহিয়াছে। ইহা স্বাভাবিক। এখানে আমিই নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছিলাম এবং সাময়িকভাবে রঙ্গমঞ্চের কেন্দ্রস্থল আমিই অধিকার করিয়াছিলাম। ঐ কর্মব্যস্ত দিন কয়েকটির অপূর্ব ভাবোন্মাদনা মাঝে মাঝে মনে পড়ে। লাহোরের অধিবাসীরা আমার অভ্যর্থনার জন্য যে বিপুল আয়োজন করিয়াছিলেন তাহার সমারোহ, আন্তরিকতা ও আনন্দোচ্ছ্বাস আমি জীবনে ভুলিব না। আমি জানি আমার ব্যক্তিত্বের জন্য নহে, একটি আদর্শের প্রতীককে লক্ষ্য করিয়াই এই উৎসাহের উন্মাদনা; তথাপি ক্ষণকালের জন্য অগণিত নর-নারীর দৃষ্টিতে ও হৃদয়ে সেই প্রতীকরূপে গৃহীত হওয়া ব্যক্তির পক্ষেও কম কথা নহে। আমার মন আনন্দে আত্মহারা হইয়াছিল।”
মূলত লাহোর সম্মেলন ভারতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
(চলবে)
আপনার মন্তব্য লিখুন