‘‘গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’’
(সাম্যবাদী : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম)
সেই আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে এদেশের আপামর জনতা। যেখানে নেই কোনো হিন্দু-মুসলিম বিভেদ, নেই কোনো জাতি-ধর্মের পার্থক্য। সামাজিক সহাবস্থান এতই মধুর হয়ে গড়ে উঠছে যেন সবাই এক জাতি, এক পরবিার। আজানের ধ্বনি শুনে মুসলিম যাচ্ছে মসজিদে, প্রার্থনার সময় হয়ে গেছে বলে খ্রিস্টান যাচ্ছে গির্জায়, হিন্দু যাচ্ছে মন্দিরে পুজো দিতে আর বৌদ্ধগণ যাচ্ছে তাদের প্রার্থনাগৃহ প্যাগোডায়। আর এই যে সামাজিক সমতা; সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে নজরুল লিখে গেছেন এক অমর কবিতা- সাম্যবাদী। তাঁর কবিতায় যেন ফুটে উঠেছে সমাজর বাস্তব চিত্রখানি। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সহ্য করতে পারেনি একটি স্বার্থান্বেষি মহল। তারা বারবার চেয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে। কিন্তু এদেশের সচেতন মানুষ বারবার তাদের হীন প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিয়েছে। কিন্তু সমূলে ঊৎপাটন করা সম্ভব হয়নি। তাইতো গত ৫ আগস্ট স্বৈারাচার হাসিনার পতনের পর সে যখন দেশ ছেড়ে পলায়ন করে তখন তার চেলা-চামুণ্ডারা এদেশে বসে সংখ্যালঘু কার্ড খেলার নীলনকশা আঁকতে থাকে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে ছাত্রজনতার এক মহাবিপ্লবকে নসাৎ করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত ‘প্রতিবিপ্লবের’ নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে থাকে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা হিন্দুদের মন্দিরগুলোকে টার্গেট করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা তাদের এই ষড়যন্ত্রকেও রুখে দিয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বর্গরাজ্য
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, বিগত ৫ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর জুলুম হচ্ছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে হইচই করছে। আমি বলব, ভারতের মিডিয়া যে ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে সেগুলো ভিত্তিহীন। তবে, দেশে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায় ক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী জুলুমবাজ এবং গণহত্যাকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। জনগণ ধর্মের বিবেচনায় কারও ক্ষতি সাধন করেনি। বরং গণহত্যাকারীর দোসরদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা যুগে যুগে অনেক দেশে হয়েছে। আমি আবারও বলছি বাংলাদেশ হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। তিনি শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের পর থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সদস্যরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা-জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখল করেছে, উপাসনালয় ধ্বংস করেছে, পক্ষান্তরে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ওপর তার দোষ চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, এখনও রয়েছে। আশা করি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা আর নতুনভাবে বিভ্রান্ত হবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বর্গরাজ্য, কারণ এদেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষই মুসলমান। আমরা পবিত্র কোরআন শরীফ মেনে চলি, অন্যদের ওপর জুলুম করা কোরআন শরীফে নিষেধ আছে। আবারও বলি, বাংলাদেশ হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ভূমি। (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ১৭ আগস্ট ২০২৪)
‘সবাই আমরা একসঙ্গে নামব’
জামায়াতে ইসলামীর নাম-ব্যানার ব্যবহার করে কেউ দুর্বৃত্তপনা করলে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের অনুরোধ করেছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। হামলা ও লুটপাটের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাঁরা যেন সাহস করে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতাদের এ কথাগুলো বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর। তিনি বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে বলছি, বাংলাদেশের কোনো জায়গায় জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যারা কাজ করে, যদি কোথাও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে কোনো অপকর্ম করছে, তাহলে সে একজন দুর্বৃত্ত। কথা দিচ্ছি, আমরা কোনো দুর্বৃত্তকে তো প্রশ্রয় দেবোই না, এ অপকর্মের জন্য আমরা তার পাওনাও বুঝিয়ে দেবো।’
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে জামায়াতের একদল কর্মী। এমন পরিস্থিতিতে আজ সকালে ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতের একদল নেতা ঢাকেশ্বরীতে যান। ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার রায়সহ নেতারা জামায়াতের আমীর ডা. ডা. শফিকুর রহমানকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার রায়, ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক দীপেন চ্যাটার্জি, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ।
জয়ন্ত কুমার রায় জামায়াত নেতাদের সামনে প্রশ্ন তোলেন, যখন সরকার পরিবর্তন হয়, তখন তাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) ওপর অত্যাচার কেন? এ পর্যায়ে জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘নবীজি যখন বিদায় হজে ভাষণ দিয়েছিলেন, কী বলেছিলেন। “তিনিই প্রকৃত মানুষ, যে তোমার পার্শ্ববর্তী মানুষকে রক্ষা করে। সেই হলো প্রকৃত মানুষ, সেই হলো ইমানদার।” কিন্তু আমরা কী দেখতে পাই। এই ছাত্র-জনতার মধ্যে কি আমাদের হিন্দু ভাই-বোনেরা মরে নাই? আমাদের কি কোনো অবদান নাই? তাহলে মন্দির পোড়ে কেন? আমার ব্যবসা লুটপাট হয় কেন? আমার মা-বোনের ইজ্জত যায় কেন? আপনারা বলেন দুর্বৃত্ত, কিন্তু নামটা হয় আপনাদের। সবাই বলে জামায়াতে ইসলামীর কথা।’
তখন পাশে বসা জামায়াতের আমীর বলেন, যত দোষ নন্দ ঘোষ। তখন জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘ওই যে আমীর সাহেব বলেছেন। আমরাও কিন্তু খবর নিই, কে নিছেন না নিছেন। আমরা কেন এখানে সবাই উপস্থিত হয়েছি। আরও আসার কথা। আমি বলেছি, আসার দরকার নেই।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকে উনি যে বক্তব্যটা রাখলেন, ওনার বাড়িও কিন্তু শাহজালাল বাবার দেশে (সিলেটে)। যা বোঝেন ভালো বোঝেন, যা বোঝেন না ভালো বোঝেন না। ডানে যে একজন (ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের) আছেন, তিনি দুই দিন আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। সুতরাং বলার কিছু নেই। আপনারাও বোঝেন আমরাও বুঝি। এই যে উনি বলেছেন দেশে এখন সরকার নেই। কোথায় আছি আমরা। দেশ যাচ্ছে কোন দিকে।’
জামায়াত আমিরের দিকে ইঙ্গিত করে জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘আপনি এসেছেন একটা বার্তা যাবে সারা বাংলাদেশে, বিশ্বে। আমরা সেই বার্তাটাই চাই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আমরাও কিন্তু রাস্তায় নামব। কেন আমাদের ওপর এত অত্যাচার?’
এ সময় জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সবাই আমরা একসঙ্গে নামব।’
আক্ষেপ প্রকাশ করে জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘কী দোষ করেছি আমরা? মনের কথাটা বলতে পারি না। অনেক কথা আছে। শেষ কথা হলো আমরাও মানুষ।’
এ প্রসঙ্গে নিজের বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে সংঘটিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেন জয়ন্ত কুমার। তিনি জানান, গতকাল বুধবার আজমিরীগঞ্জে এক হিন্দু বাড়িতে গিয়ে দেড় লাখ টাকা পণ দাবি করে একজনকে কুপিয়ে আহত করেন এক ব্যক্তি। পরে এলাকার এক ভাইকে জানিয়ে তাঁর লোকদের থামানোর অনুরোধ জানান তিনি।
শফিকুর রহমানের দিকে তাকিয়ে জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘আপনি আছেন, আপনি শীর্ষ পর্যায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। আমরা সেই দিন শুনেছি, সামরিক বাহিনীর প্রধান এখানে কে কে উপস্থিত, প্রথমেই বলেছেন জামায়াতের আমীর। এটা নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছে। সুতরাং বলার কিছু নেই। এই মেসেজ পৌঁছে দেবেন, এই দেশ আপনার, আমার, সবার। আপদে-বিপদে আমরা সবাই পাশাপাশি থাকব।’
এ সময় জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আপনারা আমাদের কাছে যা প্রত্যাশা করেছিলেন, তা পাচ্ছেন কি না।’
‘পাচ্ছি’ বলে জবাব দেন একজন।
এ পর্যায়ে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘তাহলে মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী সাক্ষী হয়ে গেল। আমরা আসলে কাউকে সাক্ষী করার জন্য আসিনি, বাহবা নেওয়ার জন্য, রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য করিনি। মানুষ হিসেবে মানুষের কাজ করার জন্য আমরা এটা করেছি। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাইতে এসেছি বিশেষভাবে এই পরিস্থিতিতে। আপনারা যদি আমাদের কখনো ফিল করেন, এটা হবে আমাদের জন্য আপনাদের উপহার।’
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে দলের কেউ কোনো অপকর্ম করলে সে-ও একজন দুর্বৃত্ত। এ রকম কিছু হলে আপনারা আমাদের নির্দিষ্টভাবে বলবেন এবং তাকে আমরা কী করি, সেটাও জানবেন। আমাদের নামে কে কী বলল, সেটা আমরা কেয়ার করি না। আমরা কেয়ার করি, আমাদের বিবেককে। বিবেক কী সাক্ষ্য দিচ্ছে, আমি সঠিক পথে আছি না বেঠিক পথে। যদি সঠিক পথে থাকি, তাহলে পরিবেশও সাক্ষ্য দেবে, মানুষও সাক্ষ্য দেবে।’
ছাত্র-জনতা-আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক দলগুলোর রাত জেগে মন্দির পাহারা
শ্রীমঙ্গলে মন্দির পাহারায় মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রাত জেগে বিভিন্ন মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় এলাকাবাসীর উদ্যোগেও পাহারার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর এ উজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা প্রতিরোধে এই নিরাপত্তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতের বেলা শহরের জগন্নাথ দেবের আখড়া, ভৈরব মন্দির, সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী, ক্যাথলিক মিশন, শ্রী শ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ী, বারোয়াড়ী কালিবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন, জগদ্বুন্ধু আশ্রম ও মিশন, ইসকন মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরের সামনে পাহারা নিয়েছেন বসেছেন শ্রীমঙ্গলের বরুনা মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তারা মন্দিরের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। পাহারারত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, দেশে সরকার পরিবর্তনের পর এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোতে যাতে হামলা চালাতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্কতামূলক এই ব্যবস্থা নিয়েছি। কোন মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডায় যাতে কোন সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখব। সরেজমিন গতকাল রাত দুইটায় বিভিন্ন মন্দিরের গিয়ে দেখা যায়, হাতে লাঠি নিয়ে মন্দিরগুলোর দাঁড়িয়ে আছেন বরুনা মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তিতে পেলেই তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এদিকে রাতের বেলা বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর টহল টিমও কাজ করছে। রাতে সেনাবাহিনীর গাড়ি শহরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। সার্বজনীন দুর্গাবাড়ীর যুগ্ম সম্পাদক দেবাষীশ সেন গৌতম বলেন, আমাদের মন্দিরে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। রাত জেগে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মন্দির পাহারা দেওয়ায় আমরা নিরাপদ বোধ করছি। এই সাথে এলাকায় ছেলেরাও রাত জেগে নিরাপত্তা দিচ্ছে। দিনের বেলা শহরের জগন্নাথ দেবের আখড়ার সামনের নিরাপত্তা ও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে শহরের সাগরদিঘী সড়কের মারকাজুল কুরআন মাদরাসার ছাত্ররা। শহরের চৌমোহনা চত্বরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সদস্যরা। তাদের সাথে ছিলেন আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটরা। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কাউন্সিলর মীর এম এ সালাম বলেন, শহর ও মন্দিরের নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষায় মারকাজুল কুরআন মাদরাসার ছাত্ররা কাজ করছে। আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ডাক্তার সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেছি। মন্দিরের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সাথে কথা বলেছি। এ উপজেলায় কোনো মন্দিরেই হামলা বা লুটপাট হয়নি বলে আমাদের জানানো হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব পাহারার পাশাপাশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরা আমাদের মন্দির রক্ষার জন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ০৮ আগস্ট ২০২৪)
সুনামগঞ্জে মন্দির পাহারায় মাদ্রাসা ছাত্ররা : সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার মন্দিরের পাহারায় রয়েছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পৌর শহরের ও জেলার প্রতিটি উপজেলায় মন্দিরসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিচ্ছে সচেতন মহলসহ সর্বসাধারণ। মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোথাও কোনো মন্দির বা সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি বা তাদের কাউকে হয়রানি, ভাংচুর ও হামলা করার খবর পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত থেকে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি মন্দির ভাংচুর করা হচ্ছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। এর পর থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় নিয়ে মন্দিরে মন্দিরে অবস্থান শুরু করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল। তাহিরপুর উপজেলার ব্যবসায়ী সাদেক আলী জানান, উপজেলায় ব্যবসায়ীরা ভালভাবেই ব্যবসা করছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বসাধারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ গুজবে কান দেবেন না। গুজব থেকে সবাই সর্তক থাকতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রদল নেতা সাকিব মুন খোকন জানান, উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায় কোনো লোককে হয়রানি করা হচ্ছে না। আর তাদের মন্দিরগুলোও নিরাপদ রয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। আমরা একে অপরের ভাই। কোনো ভাই ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানি হোক আমরা চাই না। সাংবাদিক এ আর জুয়েল জানান, সুনামগঞ্জ সম্প্রীতির শহর। কোনো ধরনের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়রানি বা মন্দির ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি, যা ছড়িয়েছে তা গুজব। আমি শহরের কালী মন্দিরে গিয়ে কাওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মন্দির পাহারায় রয়েছে দেখেছি। (দৈনিক জালালাবাদ : ০৬ আগস্ট ২০২৪)
মন্দির পাহারায় মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা : সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিসসহ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিশেষ করে কয়েকটি মন্দিরের সামনে আচমকা জড়ো হয় কিছু মানুষ। তারা কিছু মন্দিরে ঢিলও ছোড়ে। এরপর থেকেই দেশের মন্দিরগুলোর নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি করছে মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকার মন্দিরগুলো ভাঙচুর থেকে বাঁচাতে মন্দিরের সামনে অবস্থান নেন তারা। মধ্যরাতেও কুমিল্লার বিভিন্ন মন্দিরের সামনে তাদের দেখা যায়। মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন স্বাধীনতার ফাঁকে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্যই এই আন্দোলন। এভাবে আমাদের ভাইদের জান ও মালের রক্ষা করাও স্বাধীনতার অংশ। এটাও আমাদের আন্দোলনকে ধারণ করার অর্থ। এদিকে মন্দির রক্ষার্থে বিভিন্ন স্থানে মাইক, মৌখিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পাহারা বসানোর জন্য আন্দোলনকারীদের বসানোর জন্য বলা হচ্ছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী অভিষেক কর বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরেই আজকের এই মুহূর্ত। যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে আমাদের ভাইয়েরা এত রক্ত দিয়েছে সেই নতুন বাংলাদেশে যেন বৈষম্যটা না থাকে। এখনও কুমিল্লার কোনও মন্দিরে হামলার খবর পাইনি। আমরা বিশ্বাস করি, কুমিল্লার শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতার আনন্দে সবাইকে নিয়ে শান্তিতে বাঁচবেন। অনেক স্থানে শুনেছি, অনেক ছাত্র-শিক্ষক মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। এটা শান্তির লক্ষণ। এটা আমাদের অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কুমিল্লার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। এখানে সুখ আর সমৃদ্ধি আছে। এ দেশের কোনও ভাইয়ের জানমালের ক্ষতি হোক চাই না। তাছাড়া এটা ধর্মের স্পষ্ট বক্তব্য। শান্তির স্বার্থে সারা বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ছাত্ররা পাহারা দিচ্ছে। এটা আমরা দায়িত্ব হিসেবে দেখি। ( আমাদের সময় : ০৬ আগস্ট ২০২৪)
বগুড়ায় হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দির পাহারায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা : বগুড়ার শেরপুরে হিন্দুদের বাসা-বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি রাতে পালা করে এই পাহারা বসিয়েছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ওইসব মন্দির কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন দলটির নেতারা। এ সময় মন্দিরের পুরোহিতদের আশ্বস্ত করা হয়। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী সব সময় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পাশে রয়েছে বলেও জানান। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর মন্দির বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এভাবেই তাদের পাশে দাঁড়ান জামায়াত নেতারা। শহরের শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে ওই মতবিনিময়সভায় শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় উপজেলা শাখা জামায়াতের আমীর মাওলানা দবিবুর রহমান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল হক, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মোস্তাফিজ নাসিম প্রমুখ বক্তব্য দেন। এর আগে শহরের একাধিক মন্দির পরিদর্শন করে ওই মন্দিরে মতবিনিময়সভায় মিলিত হন তাঁরা। সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্দির কমিটির নেতা প্রদীপ কুমার কুণ্ডু, বলয় কর্মকার, রকি ঘোষ, রঞ্জন কুণ্ডু, সনদ কুমার, রকি মোহন্তসহ অনেকে। মতবিনিময়সভায় জামায়াত নেতা মাওলানা দবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। পাশাপাশি আমরা মনে করি, সংখ্যালঘু বলে দেশে কিছু নেই। সবাই দেশের নাগরিক। অধিকারও সমান। তাই জামায়াতের দলীয় নেতাকর্মীদের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুুযায়ী শিবির ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা হিন্দুদের বাসা-বাড়ি ও মন্দিরগুলোতে পাহারা বসিয়েছেন। নির্বিঘ্নে বসবাস ও তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। (কালের কণ্ঠ : ১৭ আগস্ট ২০২৪)
মন্দির পাহারায় জামায়াত-শিবির : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে পালা করে দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন তারা। আলফাডাঙ্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, আলফাডাঙ্গায় ছোট-বড় ৪৭টি মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী মন্দির রয়েছে ২০টি। গত সোমবার থেকে আমরা দল গঠন করে মন্দির পাহারা দিচ্ছি। জামায়াতের লোকজন তাদের সাহায্য করছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। উপজেলায় সব মন্দির অক্ষত রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা জামায়াতের আমীর মাওলানা কামাল হোসেন বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে সারাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দেওয়া হচ্ছে। জামায়াত মনে করে, সংখ্যালঘু বলে দেশে কিছু নেই। সবাই দেশের নাগরিক। এ উপজেলার অনেক মন্দির পরিদর্শন করেছি। তাদের এ আশ্বাস দিচ্ছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে আমরা রয়েছি। হিন্দু-মুসলিম আমরা সবাই ভাই ভাই। এ দেশ আমাদের সবার। আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা বলেন, উপজেলার সব রাজনৈতিক প্রতিনিধির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এ উপজেলার কোনো মন্দিদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। (সমকাল : ০৯ আগস্ট ২২০৪)
রাত জেগে মন্দির-গির্জা পাহারা দিলো আলেমরা : গাজীপুরে মন্দিরসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের নিরাপত্তা বিধান করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির গাজীপুর শাখার সভাপতি এস এম ওয়াহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বাড়ি কিংবা মন্দিরে হামলা রুখতে আমরা পাহারায় বসেছি। দলের প্রধানের নির্দেশে সারা বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহারা দেয়া হচ্ছে। আমরা বাঙালি, সবাই ভাই ভাই। কেন্দ্র থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এই দায়িত্ব পালন করে যাব। ’
মন্দির পাহারারত মোস্তাক আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কোনো ধর্মীয় স্থাপনায় আঘাত চাই না, শান্তি চাই। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের সব মন্দিরের নিরাপত্তা দিচ্ছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।’ (নয়াদিগন্ত : ১১ আগস্ট ২০২৪)
নিখিল চন্দ্র নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন বলেন, ‘মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে সারা রাত। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। কোনো ধর্মীয় সঙ্ঘাত চাই না।’ এ মহতি উদ্যোগের প্রশংসা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই উদ্যোগে খুশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের ঘর পাহারা দিচ্ছে। বিষয়টাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ, নতুন সরকার আসা পর্যন্ত সংখ্যালঘু এলাকা, প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিক। আমরা দেশে মন্দির বা উপাসনালয়ে হামলার তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, এছাড়া কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ¥ীপুর, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, ভোলা ও ঢাকাসহ দেশের একাধিক স্থানের মন্দির ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন মাদরাসা ছাত্ররা। (নয়াদিগন্ত : ১১ আগস্ট ২০২৪)
এখানে তো মাত্র গুটিকয়েক চিত্র তুলে ধরেছি। এরকম শত শত চিত্র ফুটে উঠেছে ০৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকে। বিশ্বমিডিয়ায়ও এসব নিউজ ফলাও করে প্রচার হয়েছে।
মুসলমানরা হিন্দুদের রক্ষা করে : ইতোমধ্যে মুসলিমগণ ও তাদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ ব্যক্তিদের ছবি, হিন্দু মন্দির ও বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হিন্দু জনসংখ্যার একটি জেলা, সেখানকার ছাত্র-জনতা হিন্দু পরিবারগুলোকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন পোশাক ব্যবসায়ী মুন্সি আজিজুল হক আল জাজিরাকে বলেন, তারা এলাকায় যে-কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছেন। “আমরা দেখেছি ভারতীয় মিডিয়া কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরছে, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন” তিনি বলেন, প্রামাণিকও স্বীকার করেছেন যে হিন্দু মন্দির রক্ষা করা হচ্ছে। অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ও সাধারণ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় হিন্দু মন্দির রক্ষা করার খবর স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং দ্য ওয়্যারের মতো আউটলেটগুলোও এটি তুলে নিয়েছে। (আল জাজিরা : ৮ আগস্ট ২০২৪)
পরিশেষে বলতে চাই, এদেশের মুসলমানগণ খুবই ধর্মপরায়ণ। এদেশের মানুষ ভিন্ন ধর্মের কাউকে বিশেষ করে হিন্দুদেরকে কখনো সংখ্যালঘু হিসেবে দেখেনি। এদেশের সাধারণ মানুষ ভিন্ন ধর্মের মানুষকে সবসময় আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারই অংশ হিসেবে ০৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনার পতনের পর যখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়ি-ঘরে হামলা করার পরিকল্পনা করে তখন এদেশের ছাত্র-জনতা রাত জেগে মন্দির-গির্জা ও হিন্দুদের বাড়ি-ঘর পাহারা দেয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সকল নীলনকশা ভেস্তে দেয়। এভাবে এদেশের মানুষ প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশ : সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক ভূ-স্বর্গ।
লেখক : কবি ও সাহিত্যিক
আপনার মন্তব্য লিখুন