১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের পলাশী যুদ্ধ শুধু একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সাধন করেনি, ইংরেজ তথা বিদেশী শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তনের ফলে বাংলার তৎকালীন মুসলিম সমাজ একটি সাংস্কৃতিক সঙ্কটের মুখে পতিত হয়। দীর্ঘ অর্ধ সহ¯্র বছরের শাসনক্ষমতা থেকে বঞ্চিত একটি আত্মমর্যাদাবান জাতির উপর নানাভাবে নিক্ষিপ্ত হতে থাকে আগ্রাসনের আবর্জনা। এ যেন প্রবাদ বাক্যের- হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙের লাথি মারার মতো। আজকের এই তথাকথিত প্রগতিশীলতার যুগে ধর্মনিরপেক্ষতার বান ডাকা সময়ের পূজ্য ব্যক্তি রথি-মহারথি কবি-সাহিত্যিকরাও সে সুযোগ নিতে পিছপা হননি। বক্তব্যে, লেখনীতে তাদের অন্তকরণের বিদ্বেষ ছুড়ে মারতে ভুল করেননি। সে সময়টা যেন তারা কোনো মুখোশ ধারণের প্রয়োজন বোধ করেননি- ‘যবন শক্তি’র যবনিকাপাত ঘটাবার মানসে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এবং ভারত উপমহাদেশেও বহু যুদ্ধ-সংঘাতের কাহিনী আছে। বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসও আছে। যাকে কেন্দ্র করে পলাশীর মর্মন্তুদ ঘটনা- সেই নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ যে বিশেষ ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কোনো শাসক ছিলেন তাও নয়। কিন্তু এই ঘটনা ইতিহাসে পৃথক একটি স্থান করে নিতে পেরেছে প্রধানত দু’টি কারণে। প্রথমত, এই যুদ্ধ ছিল ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বিশ্বাসঘাতকতায় ভরা। এই সঙ্গে তরুণ নবাব যিনি ছিলেন মাতামহ নবাব আলীবর্দী খাঁর বিশেষ ¯েœহভাজন- সিরাজকে অত্যন্ত করুণ এক নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। একটি বিদেশী শক্তিকে এদেশে স্বার্থের শিখরে স্থান দিতে এ ধরনের নির্মমতা ছিল নজিরবিহীন। দ্বিতীয় কারণ ছিল, এই যুদ্ধ সমাপ্তির পর শুধু বাংলা নয়, পুরো ভারতবর্ষ ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তির পদানত হয়। একটি ভূখণ্ড দখল করতে ব্রিটিশ পক্ষ কী ধরনের প্রতারণা, নির্মমতা ও নৃশংসতার আশ্রয় গ্রহণ করে তার নজির এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে অসংখ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বস্তুত পলাশীর পরাজয় ছিল উপমহাদেশের ইতিহাসের দিক পরিবর্তনকারী এক লড়াই।
যা হোক, এসব বিষয় বহুল আলোচিত-সমালোচিত। কিন্তু এর ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বাংলায় মুসলমানদের নৈতিকতা ও সংস্কৃতির ওপর অন্য ধারায় চলতে থাকে নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন হামলা। প্রতিপক্ষের ওপর যুদ্ধের নানা কৌশল প্রয়োগ হতে পারে, কিন্তু ঘোষিত যুদ্ধ-লড়াইয়ের বাইরে অন্য এক অস্ত্র প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতার বালাই রাখা হয়নি। সেই জের আজও চলছে- মিথ্যা আরোপ, অপপ্রচার ও সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। যা আজকাল তথ্য-সন্ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এসব কাজে শাসকশক্তি ইংরেজ যেমন সিদ্ধহস্ত ছিল, সেই সঙ্গে সুযোগ নিয়েছিল এখানকার মুসলিমবিদ্বেষী অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো। এদের মধ্যে লেখক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুধীর কুমার চক্রবর্তী, নবীনচন্দ্র সেন প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য। ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিলেন- অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, বিনয় ঘোষ, নিখিল নাথ প্রমুখ এই দলে ছিলেন। শেষোক্তরা নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে ইতিহাসের পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধারে সচেষ্ট ছিলেন। নিরপেক্ষ ইতিহাসের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রথমোক্ত ব্যক্তিবর্গ মুসলমানদের বিভিন্ন উপায়ে সাম্প্রদায়িকতার ভেতরে ঠেলে দিয়ে নিজেদের মুখোশই খুলে ফেলেন। অপপ্রচারের প্লাবন পলাশী যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে হিন্দু জাগরণকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে শুরু হয় ব্যক্তিচরিত্র হনন ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রদায়কে উসকে দেয়ার প্রয়াস। যা ছিল মুসলমানদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন। “এ ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী ভূমিকা গ্রহণ করেন শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর মন্ত্রশিষ্যগণ তাদের সাহিত্যে, কবিতায়, প্রবন্ধে মুসলমানদের নামের পূর্বে ‘নেড়ে’, ‘পাতি নেড়ে’, ‘ম্লেচ্ছ’ প্রভৃতি বিশেষণ ব্যবহার না করে লেখনী ধারণ করা পাপ মনে করতেন। দুর্গেশনন্দিনীতে জগৎ সিংহ ও কল্পিত আয়েশাকে পরস্পর প্রণয়াবদ্ধরূপে দেখানো হয়েছে। তবুও আয়েশাকে যবনী বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করা হয়েছে।”১ বাদশাহ আওরঙ্গজেব ও তাঁর পুণ্যবতী কন্যা জেবুন্নেসার চরিত্রহননে বঙ্কিম ছিলেন একশো কদম এগিয়ে। “সতীসাধ্বী পুণ্যবতী মুসলিম রমণীদের চরিত্রে কতখানি কলঙ্ক আরোপ করা হয়েছে তা ইতিহাসের ছাত্র মাত্রেই স্বীকার করবেন। বঙ্কিমচন্দ্র ‘লেখনী কলুষিত করিতে পারিলাম না’ বলে খেদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একজন লোকের নিছক মুসলিমবিদ্বেষের কারণে বিবেক ও রুচি কতখানি বিকৃত ও ব্যাধিগ্রস্ত হলে কোন অন্তঃপুরবাসিনী, পর্দানশীন, সতীসাধ্বী, দ্বীনদার, খোদাভীরু ও মুসলিম রমণীর চরিত্র তিনি এমনভাবে কলঙ্কিত করতে পারেন তা পাঠকের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।”২ “... জেল, ফাঁসি, দ্বীপান্তর, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ এবং ইংরেজ কর্তৃক অন্যান্য নানাবিধ অমানুষিক-পৈশাচিক অত্যাচারে মুসলিম সমাজদেহ যখন জর্জরিত, সে সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখনির মাধ্যমে নির্মম আঘাত শুরু করেন মুসলিম জর্জরিত দেহের ওপর। তিনি তাঁর আনন্দমঠ, রাজসিংহ, দুর্গেশনন্দিনী, দেবী চৌধুরাণী প্রভৃতি উপন্যাসগুলিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং তার বর্ণনামতে মুসলমান কর্তৃক ‘হিন্দু মন্দির ধ্বংস’, ‘হিন্দু নারী ধর্ষণ’ প্রভৃতি উক্তির দ্বারা হিন্দুজাতির প্রতিহিংসা বহ্নি প্রজ্বলিত করার সার্থক চেষ্টা করা হয়েছে।”৩ উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে দেখা যায়, বাংলা গদ্য সাহিত্যের স¤্রাট বলে পরিচিত বঙ্কিমচন্দ্র কেমন ধারার সাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। ইংরেজের নির্যাতনে সৃষ্ট ক্ষতের ওপর তিনি নুনের ছিটা দিতে চেয়েছেন। এই সঙ্গে ইংরেজকে সন্তুষ্ট করা এবং তাদেরকে মুসলিম দলনের জন্য প্রশংসিত করা তার বাসনা ছিল- এটাও প্রতীয়মান হয়েছে। বলা বাহুল্য, পলাশী পর্বের আগে কোনো কোনো মুসলিম শাসক রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই হোক অথবা দিগভ্রান্তির কারণেই হোক, হিন্দুদের সঙ্গে সহাবস্থানের এবং তাদের দ্বারা উজ্জীবিত হওয়ার নীতি লালন করেছেন। অন্যরা ধর্মীয় সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শ মেনে চলেছেন। ফলে ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিম শাসকদের দ্বারা অন্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপের নজির নেই বলা যায়। এটি ছিল ইসলামের রাজনৈতিক ও নৈতিক সংস্কৃতিরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু প্রতিপক্ষ বুদ্বিজীবীরা এই সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন করেছেন এবং বিরূপ প্রচারণার সাহায্যে নিজেদের লোকদের অনুপ্রাণিত করতে প্রয়াস পেয়েছেন। বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিম বাবুর মত না হলেও পিছিয়ে ছিলেন না। ‘রীতিমত নভেল’ ছোটগল্পের প্রথম পরিচ্ছেদ শুরুই করেছেন: “এভাবে ‘আল্লা হো আকবর’ শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে। একদিকে তিন লক্ষ যবনসেনা, অন্যদিকে তিন সহ¯্র আর্য সৈন্য। বন্যার মধ্যে একাকী অশ্বথ-বৃক্ষের মতো হিন্দু বীরগণ সমস্ত রাত্রি এবং সমস্ত দিন যুদ্ধ করিয়া অটল দাঁড়াইয়া ছিল, কিন্তু এইবার ভাঙিয়া পড়িবে তাহার লক্ষণ দেখা যাইতেছে। এবং এই সঙ্গে ভারতের জয়ধ্বজ্জা ভূমিসাৎ হইবে এবং আজিকার এই অস্তচলার সহ¯্র রশ্মির সহিত হিন্দুস্থানের গৌরবসূর্য চিরদিনের মতো অস্তমিত হইবে।”৪ ‘হর হর বোম বোম’। পাঠক বলিতে পার কে এ দৃপ্ত যুবা পঁয়ত্রিশ জন মাত্র অনুচর লইয়া মুক্ত অসি হস্তে অশ্বারোহণে ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর করনিক্ষিপ্ত দীপ্ত বজ্রের ন্যায় শক্রন্যৈর উপরে আসিয়া পতিত হইল, বলিতে পার কাহার প্রতাপে এই অগণিত যবনসৈন্য প্রচণ্ড বাত্যাহৃত অরণ্যানীর ন্যায় বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল? কাহার বজ্রমন্দ্রিত ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ কণ্ঠের ‘আল্লা হো আকবর’ ধ্বনি নিম¯œ হইয়া গেলা রবি ঠাকুর তাঁর বিশাল গল্পভাণ্ডারে কোন মুসলিম তরুণ-যুবক বা হিরোকে নায়ক করতে আগ্রহী হননি। দু’চারটে চরিত্র যা এনেছেন পিয়ন-চাপরাশি-পাহারাদার গোছের মাত্র।
রবি ঠাকুর তাঁর ‘দুরাশা’ গল্পে অত্যন্ত চতুর ও সুনিপুণ কায়দায় মুসলমানদের চরিত্রের উপর এক হাত নেয়ার এবং হিন্দু চরিত্রের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। গল্পে মুসলিম নবাবকে বিশ্বাসঘাতক, ইংরেজ অনুগত এবং কাপুরুষ হিসেবে চিত্রিত করা, হিন্দু ব্রাহ্মণ যুবককে বীর ও দৃঢ় চরিত্রে তুলে ধরা, গল্পের নায়িকা মুসলমান হলেও হিন্দু ধর্মীয় আচারের প্রতি গভীরভাবে আগ্রহী করে দেখানো এবং মুসলিম রমণী হয়েও হিন্দু সেনাধ্যক্ষের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম, মুসলমানদের জোরপূর্বক ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করা প্রভৃতি বহুবিধ বিষয় উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি নবাব কাদের খানের কন্যার জবানীতে বলেছেন, আমরা হিন্দু দাসীর নিকট হিন্দু ধর্মের সমস্ত আচার-ব্যবহার, দেবদেবীর সমস্ত আশ্চর্য কাহিনি, রামায়ণ-মহাভারতের সমস্ত অভূতপূর্ব ইতিহাস তন্নতন্ন করিয়া শুনিতাম, শুনিয়া সেই অন্তঃপুরের প্রান্তে বসিয়া হিন্দুজগতের এক অপরূপ দৃশ্য আমার সম্মুখে উদঘাটিত হইত। মূর্তি, প্রতিমূর্তি, শঙ্খঘণ্ট-ধ্বনি, স্বর্ণচূড়াখচিত দেবালয়, ধুপধুনার ধুম, অগুরুচন্দনমিশ্রিত পুষ্পরাশির সুগন্ধ, যোগীসন্ন্যাসীর অলৌকিক ক্ষমতা, ব্রাহ্মণ্যের অমানুষিক মাহাত্ম্য, মানুষ ছদ্মবেশধারী দেবতাদের বিচিত্র লীলা- সমস্ত জড়িত হইয়া আমার নিকটে এক অতি পুরাতন, অতি বিস্তীর্ণ, অতি সুদূর অপ্রাকৃত মায়া লোক সৃজন করিত, আমার চিত্ত যেন নীড়হারা ক্ষুদ্র পক্ষীর ন্যায় প্রদোষকালের একটি প্রকাণ্ড প্রাচীন প্রাসাদের কক্ষে কক্ষে উড়িয়া উড়িয়া বেড়াইত। হিন্দু সংসার আমার বালিকাহৃদয়ের নিকট একটি পরমরমণীয় রূপকথার রাজ্য ছিল। (গল্প: দুরাশা) গল্পের নায়ক ব্রাহ্মণ সেনাধ্যক্ষ কেশরলালের প্রতি মুসলিম দুহিতার আকর্ষণ প্রকাশের ভঙ্গি দেখানো হয়েছে এইরূপ: বিধাতা আমার মনে বোধ করি স্বাভাবিক ধর্ম পিপাসা দিয়াছিলেন। অথবা আর কোন নিগূঢ় কারণ ছিল কিনা বলিতে পারি না। কিন্তু প্রত্যহ প্রশান্ত প্রভাবে নবোন্মোষিত অরুণালোকে নিস্তরঙ্গ নীল যমুনার নির্জন শ্বেত সোপানতটে কেশরলালের পূজার্চনাদৃশ্য আমার সদ্যসুপ্তোথিত অন্তঃকরণ একটি অব্যক্ত ভক্তিমাধুর্যে পরিপূত হইয়া যাইত। নিয়ত সংযত শুদ্ধচারে ব্রাহ্মণ কেশরলালের গৌরবর্ণ প্রাণসার সুন্দর তনু দেহখানি ধূমলেশহীন জ্যোতিঃশিখার মতো বোধ হইত; ব্রাহ্মণের পুণ্যমাহাত্ম অপূর্ব শ্রদ্ধাভরে এই মুসলমান দুহিতার মৃঢ় হৃদয়কে বিন¤্র করিয়া দিত।৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এদেশে কোনোভাবে মুসলিম শাসন ফিরে আসুক, নিদেনপক্ষে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাক, সেটা কখনোই কামনা করেননি। না করারই কথা, বরং তাদের প্রভাব হ্রাসের জন্য সচেষ্ট ছিলেন বই কি। এ সম্পর্কে একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে দুঃখ করে বলা হয়, রবি ঠাকুর পর্যন্ত এ ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে আমরা দুঃখিত। তাঁর এইরূপ বলতে শুনা গেছে, ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলিম শাসন কায়েম হবে। সে জন্য হিন্দুদের মারাত্মক ভুল হবে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেয়া। মহাত্মা গান্ধীকে মুসলমানেরা পুতুলে পরিণত করেছে। তুর্কি খেলাফতের সঙ্গে হিন্দুস্বার্থের কোনই সং¯্রব নেই।৭ রবি ঠাকুর তাঁর ‘শিবাজী উৎসব’ কবিতা লিখে হিন্দু পুনরুজ্জাগরণের পক্ষে তাঁর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু তাতে তিনি নাকি সাম্প্রদায়িক হননি। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর লেখকজীবনের প্রথম দিকে যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুসলিম বিদ্বেষ তিনি চাপা দিয়ে রাখতে পারেননি। তিনি তাঁর উপন্যাসে মুসলমানদের ‘যবন’ এবং হিন্দুদের ‘বাঙালি’ বলে পরিচিত করতে ভোলেননি। তিনি তাঁর এক প্রবন্ধে লেখেন “হিন্দুস্তান হিন্দুর দেশ। সুতরাং এদেশকে অধীনতার শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিবার দায়িত্ব একা হিন্দুরই। মুসলমান মুখ ফিরাইয়া আছে তুরস্ক ও আরবের দিকে, এদেশে তাহার চিত্ত নাই।”৮ অবশ্য শরৎচন্দ্র যতটা হিন্দুপন্থী ছিলেন তার বেশি ঝোঁক ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের প্রতি। কোন কোন ঐতিহাসিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর আঘাত পলাশী যুদ্ধ-পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শক্তি মুসলমানদের ক্ষমতা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি খর্ব করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা গ্রহণ করে। এ জন্য তারা পাশে নেয় এদেশীয় হিন্দু জমিদার ও ধনিক শ্রেণিকে। এর পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ। যে কোনো জাতির শিক্ষাদীক্ষা ও উন্নয়নের পেছনে থাকে আর্থিক আনুকূল্য ও সাহায্য-সহযোগিতা। বলাবাহুল্য, “পলাশীর ময়দানে বাংলার মুসলিম শাসন বিলুপ্ত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, গোটা দেশ দারিদ্র্য ও দুঃখ-দুর্দশা কবলিত হয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে মুসলমানদের জাতীয় জীবনে নেমে আসে ধ্বংসের ভয়াবহতা। কোম্পানি-শাসনের প্রথম দিকেই বাংলার মুসলমানগণ বিপন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।”৯ ব্রিটিশরা শাসনক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের মাধ্যমে এদেশে তাদের ভিত্তি শক্ত করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর ফলে অন্যদের বেলায় যাই ঘটুক, মুসলমানদের ধর্মীয় ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক বড় আঘাত হিসেবে আপতিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য এক নতুন চিন্তাধারার উন্মোচন করে দিয়েছে। “যদি আমরা দক্ষতার সাথে অবৈতনিক শিক্ষাদান করতে পারি তাহলে শত শত লোক ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করার জন্য ভিড় জমাবে। আশা করি তা আমরা এক সময়ে করতে সক্ষম হবো এবং এর দ্বারা যীশুখ্রিষ্টের বাণী প্রচারের এক আনন্দদায়ক পথ উন্মুক্ত হবে।”১০ “উইলিয়াম কেরীর সভাপতিত্বে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর (হুগলী) কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের জ্ঞান দান করা এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে এদেশের লোককে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা।”১১ “সে সময় যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সিলেবাস পড়ানোর ব্যবস্থা করা হতো সেগুলোর লক্ষ্যই ছিল হিন্দুদের সুবিধা প্রদান এবং মুসলমানদের বঞ্চিত রাখা। মাতৃভাষার স্কুলগুলোতে সংস্কৃতি শব্দবহুল বাংলা পড়ানো হতো- এসব স্কুলের দ্বার মুসলমানদের জন্য রুদ্ধ ছিল। আবার বিহারে হিন্দি ভাষা দেবনাগরী বর্ণমালা শিখানো হতো এবং সেটাও ছিল মুসলমানদের কাছে একেবারে অপরিচিত।”১২ উপরন্তু এসব স্কুলে বাংলা ভাষায় যে সব পাঠ্যপুস্তক ছিল তা সবই হিন্দু ধর্ম সংক্রান্ত। বাংলা ভাষায় সাধারণত নিম্নলিখিত বইগুলো পড়ানো হতো: গুরুদক্ষিণা, অমর সিংহ, চাণক্য, সরস্বতী বন্দনা, মানভঞ্জন, কলঙ্কভঞ্জন প্রভৃতি। হিন্দু বই যথা- দানশীলা, দধিলীলা প্রভৃতি যা ছিল কৃষ্ণের বাল্যকালের প্রেমলীলা সম্পর্কে লিখিত। বিহারে এতদ্ব্যতীত পড়ানো হতো সুদাম চরিত, রামযমুনা প্রভৃতি।১৩ উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ প্রমাণ করে, মুসলমানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রাখার জন্য খ্রিষ্টান মিশনারি, ইংরেজ শাসক ও এদেশীয় দালালেরা ছিল একাট্টা। হিন্দু শিক্ষকদের সহযোগিতায় সংস্কৃতি ভাষার নিয়ম-পদ্ধতি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে থাকে। আর এ ধরনের বাংলা ভাষা মুসলমানদের কাছে ছিল অপরিচিত। যদিও বাংলার এক বিরাট অংশের মুসলমানদের ভাষা সংস্কৃতিকে টার্গেট করে। বলতে গেলে এরই জের ধরে পরবর্তীকালে উর্দুকেও টার্গেট করে ফেলা হয় বিদেশি ভাষা বলে। কারণ, কুরআন-হাদীসের অনুবাদ-সাহিত্য মূলত উর্দুনির্ভর ছিল। উর্দুকে নির্বাসিত করতে পারলে মুসলমানদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবন ও চিন্তার বিকাশকে পঙ্গু করে ফেলা সম্ভব হবে। এই ভাবনা থেকেই ষাট-সত্তর দশক জুড়ে উর্দু হঠানোর জন্য সংগ্রাম শুরু করে ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজ্জাধারীরা। আজও তা অব্যাহত আছে। এই প্রক্রিয়ার নমুনা সেই ব্রিটিশকালে দেখা যায়। “....আরবী-ফারসীতে অশুদ্ধ পদ প্রচারের জন্য সেকালে কয়েকটি অভিধান রচিত ও প্রকাশিত হইয়াছিল। সাহেবরা সুবিধা পাইলেই আরবী ও পারসীর বিরোধিতা করিয়া বাংলা-সংস্কৃতকে প্রাধান্য দিতেন, ফলে দশ-পনেরো বৎসরের মধ্যেই বাংলা গদ্যের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্পূর্ণই পরিবর্তিত হইয়াছিল।”ীরা ইংরেজরা উপলব্ধি করেছিল, মুসলমানদেরকে সাংস্কৃতিকভাবে দাবিয়ে রাখতে হলে তাঁদের ভাষারও গোড়া কেটে দিতে হবে। ইংরেজ তথা মিশনারি-পূর্ব বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করে মুসলমানদের যে এক নতুন বাংলাভাষা গড়ে উঠে, যার মধ্যে শক্তি ও প্রেরণা সঞ্চার করেছিল আরবী-ফারসী তাকে বলা যেতে পরে মুসলমানী বাংলা। স্বভাবতই তা মোটেই গ্রহণযোগ্য ছিল না হিন্দুদের কাছে। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের পর হিন্দুবাংলা (আরবী ফার্সী শব্দ বর্জিত সংস্কৃত শব্দবহুল বাংলা) প্রাদেশিক মাতৃভাষা হিসাবে সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভের পর মুসলমানী বাংলার অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হয়। অফিস আদালত থেকে এতদিনের প্রচলিত ফার্সি ভাষা তার আপন মর্যাদা হারিয়ে ফেলে এবং নতুন বোধনকৃত বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করতে থাকে। নতুন বাংলা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে থাকে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর এ ভাষা হিন্দু সংস্কৃতি ও জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার বাহন হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।১৫ পলাশী-পরাজয়ের প্রভাব এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল যে, মুসলমানদের ভেতরে কোনো সংস্কার কাজ পর্যন্ত সহ্য করা হতো না। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে মীর নিসার আলী তিতুমীরের এমনি সংস্কার আন্দোলনের সমকালে হিন্দু জমিদার ইসলামের সংস্কৃতির উপর সরাসরি আঘাত হেনে বসে। জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ফরমান জারি করেন: ১. যারা তিতুমীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করবে, দাড়ি রাখবে, গোঁফ ছাঁটবে তাদের দাড়ির জন্য আড়াই টাকা এবং গোঁফের জন্য পাঁচসিকা করে খাজনা দিতে হবে। ২. মসজিদ তৈরি করলে কাঁচা মসজিদের জন্য পাঁচশ’ টাকা এবং প্রতি পাকা মসজিদের জন্য এক হাজার টাকা করে জমিদারকে নজর দিতে হবে। ৩. আরবী নাম রাখলে প্রত্যেক নামের জন্য খারিজানা ফিস পঞ্চাশ টাকা জমিদারকে জমা দিতে হবে। ৪. গরু হত্যা করলে তার ডান হাত কেটে নেওয়া হবে। যাতে আর কোন দিন গো-হত্যা করতে না পারে। মুসলমানদের উপর এ ধরনের অত্যাচার চালানোর জন্য অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল তারাগুনিয়ার জমিদার রামনারায়ণ, কুরগাছির জমিদারের নায়েব গৌরপ্রসাদ চৌধুরী, পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় প্রমুখ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পলাশী পূর্বকালে এ ধরনের অত্যাচার-নিপীড়নের কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না।
সাংস্কৃতিক দিগভ্রান্তি অন্যদিকে, বাংলার কোনো কোনো হিন্দু বৈষ্ণব ও তান্ত্রিক-সাধকদের নানা কুসংস্কার ও অনাচারমূলক কার্যকলাপের প্রভাবে-প্রতাপে মুসলমানরাও দিগভ্রান্ত হয়। এতে তাদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের প্রান্তে উপনীত হয়। বিশেষ করে শ্রী চৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মমত প্রবর্তনের ফলে হিন্দুজাতির চরম নৈতিক অধঃপতন ঘটে। শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলা, মুণ্ডিত কেশ বৈষ্ণব বৈষ্ণবীদের জঘন্য যৌন-অনাচারের স্রােত প্রবাহিত হয়। যা শুধু হিন্দু সমাজের বৃহৎ অংশকেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়নি, অশিক্ষিত সাধারণ মুসলমানদেরকেও এদিকে আকৃষ্ট করে তারাও ধর্মের নামে যৌন উচ্ছৃঙ্খলার গর্তে পতিত হয়। অন্যদিকে, “মুসলমানদের নামকরণের উপরেও তারা হস্তক্ষেপ করলো। বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা নামে এই বিপথগামিতা প্রকাশ পায়। হিন্দু ঠাকুর মশায়রা বলা শুরু করলো, তোমরা বাপু মুসলমান হলেও বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য তেমনি বাংলা নামের প্রয়োজন। অতএব ঠাকুর মশায়ের ব্যবস্থা অনুসারে মুসলমানদের নাম রাখা হতে লাগলো- গোপাল, নেপাল, গগাবর্ধন, নবাই, কুশাই, পদ্মা, চিনি, চাঁপা, বাদল, পটল, মুক্তা প্রভৃতি।”১৬ বাংলার হিন্দু জাতি ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করে এবং আপন মাতৃভূমির প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলমানদেরকে শুধু রাজ্যচুত্যই করেনি, জীবিকা অর্জনের সকল পথ রুদ্ধ করেছে এবং একজন মুসলমানের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্বল ঈমানটুকুও নষ্ট করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি। মুসলমানদেরকে নামে মাত্র মুসলমান রেখে ঈমান, ইসলামী জীবনপদ্ধতি ও সংস্কৃতি থেকে দূরে নিক্ষেপ করে নিম্ন শ্রেণির হিন্দু অপেক্ষাও এক নিকৃষ্ট জীবে পরিণত করে তাদেরকে দাসানুদাসে পরিণত করতে চেয়েছিল।১৭ ইতিহাসের এসব উদ্ধৃতি ও ঘটনাবলি থেকে প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয় যে, পলাশী যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের ঈমান, আকিদা, মূল্যবোধ, চেতনা, দৈনন্দিন আচার ও সংস্কৃতির উপর এক বিধ্বংসী আঘাতের মতোই। এটি একদিকে মুসলমানদেরকে হতাশার গভীরে নিমজ্জিত করে, আবার হিন্দু-খ্রিষ্টান ঐক্যের উজ্জীবন ঘটায়। অর্ধসহস্র বছরের গড়ে ওঠা সংস্কৃতি এক রাহুগ্রাসে তলিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীকালে মুজাদ্দিদ-মুজাহিদসহ ইতিহাসের নায়কদের কর্মপ্রচেষ্টা মুসলমানদের পুনঃজাগরণের পথে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়। সৈয়দ আহমদ বেরলবীর বালাকোট আন্দোলন, শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম, শরীয়তুল্লার ফারায়েজি আন্দোলন প্রভৃতি তারই উজ্জ্বল নিদর্শন। যদিও ইংরেজ ও সহযোগী শক্তি এসব আন্দোলন নস্যাতের নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে। তথাপি পরবর্তীকালের মুসলমানদের জন্য তা পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে, এ কথা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি পলাশী যুদ্ধের দ্বারা ঘটে যায় তার পূরণ আজও হয়নি সেটাও অবধারিত সত্য।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তথ্যনির্দেশ:
১. আব্বাস আলী খান: বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, পৃ. ১২১। ২. পূর্বোক্ত, পৃ. ১২০। ৩. পূর্বোক্ত, পৃ. ১১৯। ৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: গল্পগুচ্ছ। ৫. পূর্বোক্ত। ৬. দুরাশা: গল্পগুচ্ছ। ৭. রিয়াজউদ্দীন আহম্মদ ও মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সম্পাদিত: সাপ্তাহিক সুলতান, ১৯২৩ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা। ৮. শরৎচন্দ্র রচনাবলী। ৯. আব্বাস আলী খান: বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস। ১০. এম ফজলুর রহমান: মিশনারী রিপোর্ট-এর উদ্ধৃতি, বেঙ্গলী মুসলিম অ্যান্ড ইংলিশ এডুকেশন। ১১. পূর্বোক্ত। ১২. রিপোর্ট অব বেঙ্গল প্রভিনসিয়াল কমিটি, এডুকেশন কমিশন। ১৩. এ.আর.মল্লিক: বৃটিশ পলিসি অ্যান্ড দি মুসলিম ইন বেঙ্গল। ১৪. বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস। ১৫. আব্বাস আলী খান: বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, পৃ. ১৮৫। ১৬. পূর্বোক্ত, পৃ. ২১৭। ১৭. পূর্বোক্ত, পৃ. ২১৩।
আপনার মন্তব্য লিখুন