বাংলা ভাষা চর্চা ও ভাষা আন্দোলন বিতর্ক নিষ্পত্তি
২৯ ডিসেম্বর ২০১১
আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ
পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা বিরল। পোলিশ জাতি তাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়ে তার মান ধরে রেখেছে আর বাংলাদেশের মানুষ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। ভাষাসমূহের মাঝে বাংলা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ভাষা। এ ভাষায় প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কথা বলে। বাংলাদেশ, ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ কিছু এলাকায় বাংলা ভাষাভাষী লোক রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরো বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাভাষী। চর্যাপদের পালি ভাষা ছিল বাংলা ভাষার আদিরূপ। নেপালে খুঁজে পাওয়া চর্যাপদের ওপর গবেষণা করে তাত্ত্বিকগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায় মুসলিম শাসকদের সময়ে। পাল রাজাদের পরাজিত করে সেনদের শাসন চালু হলে বাংলাকে কোণঠাসা করে রাখা হয়। বাংলায় পূজা-পার্বণ পরিচালনা ও গীতা মহাভারত র্চচা বদ্ধ করে দেয়া হয়। বলা হয় বাংলায় এসবের চর্চা যারা করবে তাদেরকে রৌরব নরকে স্থান পেতে হবে। অতঃপর ১২০৩-১৭৫৭ পর্যন্ত মুসলমানগণ বাংলা শাসন করেন। তাদের আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পায়। ফার্সির পাশাপাশি বাংলার ব্যাপক চর্চা হয়। এরপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্র কাননে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসনের অবসান হলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়। এ সময়ে বাংলার কোন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছিল না।
ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে একটি রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারির শাহাদাতের মধ্য দিয়ে বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার একটি দেশ সিওরিলিওনে বাংলাভাষা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ভাষাশহীদের সম্মানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ আমরা গর্বের সাথে বলতে পারিÑ ‘আমি বাংলাভাষী, বাংলা আমার অহঙ্কার।’
বিতর্ক শেষ হয়নি
বাংলা ভাষার এ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও পর্যন্ত ভাষা নিয়ে, এর ইতিহাস নিয়ে, মর্যাদার লড়াই নিয়ে কিন্তু বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। আমরা মনে করি আজ যখন সারা পৃথিবী আমাদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে তখন এ সমস্ত বিতর্কের সমাপ্তি হওয়া দরকার।
বিতর্কের বিষয়গুলো নিম্নরূপ :
১. বর্তমানে আমরা যে বাংলাভাষা ব্যবহার করছি এর প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিভাবে? বাংলাদেশের বিগত হাজার বছরের ইতিহাসের কোন অধ্যায় বাংলাকে স্বীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে?
২. উপমহাদেশে ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের মুহূর্তে যে ভাষা বিতর্ক হয় তার প্রকৃত ইতিহাস কী?
৩. পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বপক্ষে যে আন্দোলন হয় তা কারা শুরু করে, কারা এর জন্য জীবন দেন এবং সে ক্ষেত্রে ডান-বাম রাজনীতিক ও তাদের দলের ভূমিকা কী ছিল?
৪. স্বীকৃতি প্রদান ও বাস্তবে বাংলাচর্চার সার্বিক চিত্রটি কী?
৫. বাংলা ভাষাকে ব্যাপক মর্যাদা দেয়ার জন্য কী করা উচিত?
নিম্নে এ বিষয়সমূহের ব্যাপারে আলোকপাত করা হলো:
ক: বাংলা ভাষার প্রকৃত মর্যাদার ইতিহাস
আমরা শুরুতেই বলেছি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে কোন মর্যাদা সেন আমলে দেয়া হয়নি। তারা মনে করতো বাংলা একটি নীচ ভাষা কেবল মাত্র মেøচ্ছ ও অছ্যুত শ্রেণীর লোকেরা এ ভাষার কথা বলে। বরং এও মনে করা হতো এটি কোনো মনুষ্য ভাষা নয় বরং পক্ষীকুলের ভাষা। এভাবে সে আমলে বাংলা ভাষাকে নরকবাসীদের ভাষা মনে করা হতো। বাংলার কোন স্থান মন্দিরে ছিলো না। প্রাত্যহিক জীবনেও তা ছিলো অপাঙ্ক্তেয়।
১২০৩ সালে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী গৌড়ের রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। মুসলমানগণ স্বাভাবিক নিয়মেই বাংলাভাষাকে সবিশেষ মর্যাদা দান করে।
প্রথমত, আল্লাহ প্রতিটি মানুষের জন্য তার মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিয়েছেন। নবীদের স্ব স্ব জনপদের ভাষায় দাওয়াত দেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়। কুরআন নাজিল হয় আরবদের ভাষায়, আরবিতে।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর প্রিয় নবী সাহাবীদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন অন্য ভাষা রপ্ত করতে যাতে করে যাদের কাছে যাবে তাদের ভাষায় তাদের দাওয়াত দেয়া যায়। এর প্রধান কারণ মুসলমান কেবল রাজ্য জয় করতে আদিষ্ট নন তারা মানুষের হৃদয় জয় করে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্যও নির্দেশিত।
ত্বতীয়ত, মানুষ স্বভাবতই তার মায়ের ভাষায় কথা বলে ও নিজেকে প্রকাশ করে আনন্দিত ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
এ অবস্থায় বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছরের সময়কালে বাংলা ভাষা স্বীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলো। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সময়টিকে বাংলা ভাষার স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য যে অসামান্য প্রয়াস মুসলিম শাসকগণ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় টিকে থাকা প্রচারক ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণ (সমাজ সংস্কারক) করেছেন তা একটি অনন্য উদাহরণ। এর ফলে বাংলা ভাষা ব্যাপক জনগণের ভাষা হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফার্সি আদালতের ভাষা ছিল বলে বাংলা ভাষায় ফার্সি ভাষা থেকে অনেক শব্দ এসে যুক্ত হয়। যুক্ত হয় অনেক আরবি শব্দও। কুরআন ও হাদিস মূলত আরবি ভাষায় এবং একই কারণে প্রচুর ‘পারিভাষিক শব্দ’ বাংলায় স্থান পায় মুসলমানদের প্রাত্যহিক শব্দ হিসেবে। এতে করে বালাভাষা যেমন সহজ হয় তেমনি ব্যাপক মুসলিম জনগণ এ ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়।
বাংলাভাষা কোণঠাসা হয়ে পড়ে আবার ইংরেজ শাসকদের হাতে। প্রায় দুইশত বছর তারা ক্ষমতায় ছিলো। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিলো ইংরেজি। ইংরেজরা ১৮৩৫ সালে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। এবং বাংলা ভাষাকে নতুন করে সাজানোর জন্য তারা প্রতিষ্ঠিত করে ফোর্ট ইউলিয়াম কলেজ। উইলিয়াম কেরি প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে যে বাংলাভাষা রচনা করা হয় তা ছিলো মূলত বাংলা ভাষাকে আরবি ফার্সি মুক্ত করার আন্দোলন। তারা যে বাংলার চর্চা করেন তাতে বাংলাভাষাকে সংস্কৃত ভাষার একটি শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নেয়া হয়। অথচ সংস্কৃত চর্চাকারীগণ কখনো বাংলাভাষার বিকাশ কামনা করেনি।
সবচেয়ে বড় কথা, বাংলা ভাষায় আরবি ফার্সি শব্দের ব্যাপক ব্যবহারে প্রধান কারণ ছিলো ক. আরবি ফার্সি মুসলিম শাসকদের আদালতের ও পারিবারিক ভাষা ছিলো। খ. ইসলামী বিধানের অধিকাংশ পরিভাষা ছিলো আরবি গ. নিজ ব্যবহার্য ভাষা হিসেবে বাংলায় এরসব পরিভাষা যুক্ত হয়ে একটি মুসলমানী বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ লাভ করে। ইংরেজগণ ক্ষমতায় এসে বাংলার মর্যাদা বৃদ্ধির চাইতেও বাংলা ভাষাকে মুসলমানী পরিভাষা মুক্ত করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং অতীত বাংলার ইতিহাসে মুসলমানী শাসন আমল ও পরবর্তী কালের ১৯৪৭ উত্তর বাংলা চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলা তার প্রকৃত মর্যাদা পায়। প্রসঙ্গক্রমে আরো একটি বিষয়ের নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। সেখানেও বাংলা চর্চা হয়। ১৯৪৭ পরবর্তীকালে অনেক পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু পরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে যান যাদের মাঝে আনেক বড় বড় বাংলাভাষী সাহিত্যিক কবিগণ রয়েছেন। অনেকে মনে করেন কলকাতার দাদা বাবুরা বাংলা ভাষার জন্য সবিশেষ যতœবান। কিন্তু ইতিহাস ও বর্তমান বাস্তবতা তার সাক্ষী দেয় না। পশ্চিমবঙ্গের লোকদেরও এক নম্বর ভাষা হিন্দি, বাংলা তাদের আঞ্চলিক ভাষা। পশ্চিমবঙ্গে যারা বাংলাভাষী সাহিত্যিক, কবি তাদের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। বরং ৭০% বইয়ের বাজার এই বাংলা।
ফলে, বাংলাভাষার প্রকৃত মর্যাদা, বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। হোক তা সরকারি বা বেসরকারি যে কোন পর্যায়ে।
খ. ইংরেজদের বিদায়ের সময়ে ভাষাবিতর্ক
ইংরেজ শাসনের অবসান হয় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এ আন্দোলনের সূচনা হয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল কংগ্রেস সমস্ত ভারতবাসীর মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু অচিরেই প্রকাশ পেল যে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার নামে তলে তলে অখণ্ড হিন্দু ভারত স্বাধীন করার কাজ করছিল। ফলে উত্থান হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের। ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগের। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে শুরু হয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহ নিয়ে মুসলিম দেশ বা দেশসমূহ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে এ আন্দোলন তীব্রতা পায়।
“কুড়ি শতকের সূচনাতে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হলে অঞ্চল নির্বিশেষে সারা ভারতের হিন্দুরা হিন্দির পক্ষে মত দিয়েছিল। অন্য দিকে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া সারা ভারতের মুসলমানরাই ছিল উর্দুর পক্ষে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৮ সালে গান্ধীকে লেখা চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রভাষা রূপে হিন্দির পক্ষে তার মত ব্যক্ত করেন। আর একই বছর বিশ্বভারতীতে রবীন্দনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জনাব মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তার মত ব্যক্ত করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘শুধু ভারত কেন সমস্ত এশিয়া মহাদেশেই বাংলা ভাষার স্থান হবে সর্বোচ্চ। ভাব সম্পদ ও সাহিত্যগুণে বাংলা ভাষা এশিয়ার ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে অদ্বিতীয়।”
উর্দু-হিন্দি-বাংলা ভাষা বিতর্কের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি কংগ্রেসের সব নেতাই একবাক্যে হিন্দির পক্ষে মত দেন। ১৯২১ সালে তৎকালীন বাংলার জননন্দিত নেতা সৈয়দ নওয়াব আলী লিখিত দাবি নামায় দাবি জানান, ভারতের রাষ্ট্রভাষা যাই হোক বাংলার রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। এবং তার দাবিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যাকে হিন্দু পণ্ডিতেরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলে ব্যঙ্গ করতো। এ ছাড়া ১৯৩৭ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ আজাদের সম্পাদকীয়তে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার পক্ষে মত দেন। তিনি লিখেন, ‘সাহিত্যের মধ্যে বাংলা সমস্ত প্রাদেশিক ভাষার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাংলা ভাষায় বিবিধ ভাব প্রকাশের উপযোগী শব্দের সংখ্যাই বেশি। অতএব বাংলা সব দিক দিয়েই ভারতের রাষ্ট্রভাষা হইবার দাবি করিতে পারে। মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেস হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করিবার প্রস্তাব করিয়াছে বটে, কিন্তু এ বিষয়ে বাংলা ভাষার চেয়ে হিন্দির যোগ্যতা কোন দিক দিয়েই বেশি নহে।’
ভাষা বিতর্কের এ পর্যায়ে বাংলাদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে দ্ব্যর্থহীন মত প্রদান করেন ও যৌক্তিক দাবিসমূহ তুলে ধরেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, উপমহাদেশের ভাষাসমূহের মধ্যে বাংলার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হয়েছে এভাবে যে, এখানকার ভাষাসমূহের মাঝে একমাত্র বাংলা ভাষাতেই একজন কবি নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। আর তাহলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিলেও সাহিত্য সাধনা করেছেন মূলত বাংলায়।
গ. পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলনের সূচনা, নেতৃত্ব কারা দেন কারা তাকে এগিয়ে নেন?
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর ভারতের মাদ্রাজে অবস্থিত CISR (The Christian Institute for the study of Religion and society, Bangalore তাদের প্রকাশিত বই ÔProfile of Bangladesh’ এ প্রফেসর আনিসুজ্জামানের একটি প্রবন্ধ ছাপেন। সেখানে তিনি The Language controversy শিরোনামে লেখেন, ÔFor the last twenty three years and half, two basic factors have been at work in the lives of the East Bengal: (1) The urge for secular, democratic and just social order and (2) The growing sense of identity based on their language and culture, Not only were these two forces complimentary, but they also often reinforced each other. A conflict on the cultural plane assumed the nature of a democratic movement or struggle for a secular orter. The state language movement of 1948, for instance was also the being of the politics of dissent and the controversy over the acceptance of Tagore in the cultural tradition of the country was, in fact, a conflict between the communists and the forces of secularism.”২
এ শুধু প্রফেসর আনিসুজ্জামানের নয়, বরং অধিকাংশ তথাকথিত বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করে কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার হঠকারী কাজটি করেছেন এবং করছেন যুগ যুগ ধরে। অথচ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি স্বাধীন হওয়ার মাত্র পনের দিনের মাথায় তমদ্দুন মজলিস নামক একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান জন্মলাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে। তমদ্দুন মজলিসের জন্মের সময়ে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের সম্পাদনায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা বের হয়। এতে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল মনছুর আহমদ এর তিনটি প্রবন্ধ স্থান পায়। এই বইয়ের ভূমিকায় প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম চারটি প্রস্তাব দেনÑ
১. বাংলা ভাষাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা, আদালত ও অফিসাদির ভাষা।
২. পাকিস্তনের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা হবে ২টি: বাংলা ও উর্দু।
৩. পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের প্রথম ভাষা বাংলা, দ্বিতীয় ভাষা উর্দু এবং তৃতীয় ভাষা থাকবে ইংরেজি।
৪. শাসন কাজ ও বিজ্ঞান শিক্ষার সুবিধার জন্য আপাতত কয়েক বছরের জন্য ইংরেজি, বাংলা দুই ভাষাতেই পূর্ব পাকিস্তনের শাসনকাজ চলবে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনানুযায়ী বাংলা ভষার সংস্কারকাজ চলবে।৩
তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। তমদ্দুন মজলিস সুশৃঙ্খল ও একনিষ্ঠতার সাথে কাজ করে। এর মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ ১৯৪৮ সালে ১৪ নভেম্বর থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়। সৈনিক সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল গফুর। বিতর্ক সভা, সাপ্তাহিক সাহিত্য সভা ছিল মজলিসের নিয়মিত কাজ। এ ছাড়া মজলিস নিয়মিত পুস্তক প্রকাশ করতো। এদের রচিত ও প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিলো পাঁচ শতকের মতো।”৪
১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়ে বাংলা ভাষা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া পযর্ন্ত যে দীর্ঘ সংগ্রাম সাধনা হয় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত এ আন্দোলনে যে সমস্ত ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিলো তারা ছিলেন “আবুল মনছুর আহমদ, কাজী মোতাহের হোসেন, তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সপাল আবুল কাসেম, দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ, আব্দুর রশিদ, আবুল হাশিম, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক গোলাম আযম, শিল্পী কাজী আবুল কাসেম, ড. নুরুল হক ভুঁইয়া, শামসুল আলম, ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, অলি আহাদ, আব্দুর রহমান চৌধুরী, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, কবি ফররুখ আহমদ, অধ্যাপক আবদুল গফুর, সানাউল্লাহ নূরী, অধ্যাপক শাহেদ আলী, এম আর আখতার মুকুল, শিল্পী আবদুল লতিফ, আলতাফ মাহমুদ, আবদুল গফ্ফার চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল মতিন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মৌলভী ফরিদ আহমদ, ইব্রাহীম তাহা, এস এ বারী এটি, কামরুদ্দিন আহমদ, ড. শাফিয়া খাতুন, রওশন আরা বাচ্চু, ড. সুফিয়া আহম্মদ, শামসুন্নাহার আহসান, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, কাজী গোলাম মাহবুব ও আতাউর রহমান খান, আনোয়ারা খাতুন, ড. আহমদ রফিক, মোহাম্মদ সুলতান, হাবিবুর রহমান শেলী, ডা. ওবায়দুর রহমান, গাজীউল হক, আবুল খালেক, (শহীদ বরকতের মামা), ফরমান উল্লাহ খান, হাসিনা খাতুন (শহীদ বরকতের মা), শহীদ বরকত, শহীদ রফিক, শহীদ সফিউর, সালাম, জব্বার প্রমুখ।
উপরের তালিকায় উল্লিখিত ব্যক্তিদের অনেকেই আজ আর আমাদের মাঝে নেই। মাত্র গুটি কয় ব্যক্তি এখনও জীবিত আছেন।
বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে শুরু করে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বি¯তৃত আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব যারা দেন তারা ছিলেন ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারার লোক। তারা এটিকে পূর্ব পাকিস্তানের সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব হিসেবে পালন করেন। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে তারা আত্মপ্রকাশ করেন। এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ভাষা প্রশ্নে বিশেষ কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু পরবর্তী কালে কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার নির্লজ্জ মহড়ায় আমরা তাদেরকে দেখতে পাই, এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি উদ্ধার করা হয়, সত্য উন্মোচন করা হয়, ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকায় মোস্তফা কামাল কতৃর্ক ভাষা সৈনিকদের সাক্ষাৎকারসমূহ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। এছাড়া বদরউদ্দীন উমর তাঁর গ্রন্থসমূহেও যথেষ্ট নিরপেক্ষ আলোকপাত করেছেন।
প্রফেসর আনিসুজ্জামান তাঁর প্রবন্ধে যে কৃতিত্ব কমিউনিস্ট পার্টি ও তথাকথিত সেক্যুলার ফোর্সকে দিতে চেয়েছেন ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস তার পক্ষে সায় দেয় না।
ইচ্ছে করলে যে কোন একটি আলাদা বইতে উপরে বর্ণিত ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে আলাদা আলাদা অধ্যায় রচনা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে ইসলামী মনমানসিকতাসম্পন্ন তমদ্দুন মজলিসের নেতৃবৃন্দই এই আন্দোলনের রূপকার ও বাস্তবায়নকারী। কোন কোন ক্ষেত্রে মোটামুটি ভূমিকা থাকলেও কমিউনিস্ট পার্টি বা সেক্যুলার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মত কোন বিশেষ ভূমিকা পালন করেননি।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়- তাহলে কিভাবে এ কৃতিত্ব হাইজ্যাকের কাজটি সংঘটিত হয়? কারণগুলো নিম্নরূপ :
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা কমিটি ও ১৯৫১ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে তথাকথিত প্রগতিশীল শক্তি ও বামপন্থী চক্র ভাষা আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে। ৫২-এর রক্তাক্ত পরিণতির পর অধ্যাপক আবুল কাসেমসহ তমদ্দুন মজলিসের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ আত্মগোপন করতে বাধ্য হলে এ সুযোগে বাম-প্রগতিশীলগণ দায়িত্বপূর্ণ পদে বসে পড়ে।
আন্তরিকতাহীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সব কার্যক্রমকে ইসলাম ও মুলসমানদের ব্যর্থতা হিসেবে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগে বামপন্থী শক্তিসমূহ। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তারা সফল হয়।
তারা এ ক্ষেত্রে গোয়েবলসীয় প্রচারণায় লিপ্ত হয়। মিডিয়াসমূহের পরিকল্পিত প্রপাগাণ্ডাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা ইসলামী শক্তির সমস্ত ভূমিকা ও সাফল্যকে আড়াল করে রাখে এবং বামপন্থীদের সামান্য বিষয়কেও অসামান্য ও বড় করে দেখাতে থাকে।
স্বীকৃতি প্রদান ও বাস্তবে বাংলা ভাষাচর্চার অবস্থা কী কী?
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারির আন্দোলনের চূড়ান্ত অর্জন হিসেবে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ঢাকায় শহীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুরূপ শহীদ মিনার গড়ে ওঠে সারা দেশে। বাংলা ভাষা আদালতের ভাষাসহ সর্বস্তরে তাকে প্রয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয় । জাতিসংঘে বাংলাভাষা অন্যতম অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পায়। এবং সর্বোপরি ১৯৯৯ সাল থেকে সারা বিশ্বে ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হচ্ছে। সিয়েরা লিওনে বাংলাভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের জাদুঘর তৈরি হয়েছে। আমরা বাংলায় ব্যাপক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ইসলামচর্চার সুযোগ পাচ্ছি।
এ হচ্ছে মুদ্রার এক পিঠ। এ মুদ্রার অপর একটি পিঠও আছে। আর তাহলো :
বাংলা এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে সব জায়গায় অফিস-আদালতের ভাষা হতে পারেনি।
এখন পর্যন্ত সবাই আমরা শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করতে পারছি না। শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ার ফলে বিশুদ্ব বাংলা সংস্কৃতির চর্চাও ব্যাহত হচ্ছে।
আমাদের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারসমূহ তাদের সন্তানদেরকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পাঠানোর জন্য পেরেশান হয়ে যাচ্ছেন। অথচ ঐসব স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলামান সম্পর্কে কোনরূপ সচেতনতা জন্ম দেয় না। অনেক শিক্ষার্থী শুদ্ধ করে বাংলা পড়তে, লিখতে ও বলতে শিখে না।
হ বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শাসক শ্রেণী ও আমাদের সন্তানদের মাঝে বাংলা ভাষার চর্চা অত্যন্ত সীমিত। বাংলা ভাষার ব্যাপক ব্যবহার তারা অন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও নিজেদের ব্যাপারে মোটেও সচেতন নন।
হ তা ছাড়া আকাশ সংস্কৃতির ব্যাপক আগ্রাসনের শিকার আমরা। লাগামহীন হিন্দি চ্যানেলসমূহের দৌরাত্ম্যের কাছে আত্মসমর্পণ করছে আমাদের সবাই। ছেলে মেয়েরা শুদ্ধ করে বাংলা বলতে না পারলে কী হবে হিন্দি বলতে তাদের মোটেও আটকাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি হিন্দিকে ব্যাপকভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য যেসব বইপুস্তক বের হচ্ছে তার বাজার সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে কারণ ভারতীয় লেখকদের বইসমূহ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতের বইয়ের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করতে হবে। অসম বাণিজ্য রুখতে হবে।
বাংলা ভাষাকে ব্যাপক মর্যাদা দেয়ার জন্য কী করা উচিত
এক্ষেত্রে বর্তমান সকল আয়োজনের পাশাপাশি প্রথমেই দরকার একটি সত্যিকারের সিদ্ধান্ত। ব্যক্তি, .. সমষ্টির সকল পর্যায়ে আমরা বাংলা ভাষার ব্যাপক ব্যবহার ও চর্চাকে একটি অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুদ্ধ বাংলা শিখুন, বাংলায় কথা বলুন এবং বাংলার চর্চা করুনÑ এ-ই হতে হবে আমাদের শ্লোগান ও অঙ্গীকার।
.. প্রকৃত ইতিহাস তৈরি হতে হবে। বর্তমানে যে সমস্ত ভুল ও বিভ্রাট সম্মৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের রয়েছে তার স্থলে তথ্যযুক্ত, .. ও নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস রচনা করতে হবে। এ ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে ইতিহাসের সন্নিবেশন দরকার।
-বাংলাভাষাকে সর্বস্তরে পাঠ্য ও বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্য বইয়ের চাপ কমিয়ে পাঠ্যসূচিতে সুস্থ ও সুন্দর মানস গঠনের উপযোগী বিষয় আশয় সংযুক্ত করতে হবে। গাঁজাখোরি বই পুস্তক, কল্পনায় ঠাসা গল্প নয়, দরকার চরিত্র গঠনের উপযোগী রসোত্তীর্ণ বই।
কেবল বিশেষ দিবসে নয় বরং সারা বছর বাংলাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’, ‘বাংলা একাডেমী’সহ ভাষা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাড়িয়ে দিতে হবে।
আর সময় ক্ষেপণ নয়-
বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের অধ্যায় শেষ হয়েছে প্রায় ৬২ বছর আগে। ইতোমধ্যে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি বেসরকারি এসব উদ্যোগ আমাদের ভাষা সাহিত্য ও সামগ্রিক জাতি সত্তার উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক যোগ করেছে। কিন্ত এর পরও রয়ে গেছে কোথাও যেনো এক অদৃশ্য অতৃপ্তি, না পাওয়া ও হতাশার সুর। সেটি সম্ভবত রয়ে গেছে একটি কারণে আর তাহলো আমরা এখনো ঐক্যবদ্ধ সমচৈতন্যের জাতিসত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারিনি।
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-জৈন-শিখ-কাপালিক নির্বিশেষে সকল ভারতীয় যেমন কেবলমাত্র ‘ভারতীয়’ পরিচয়ে একাট্টা হতে পেরেছে- আমরা তেমনি ‘বাংলাদেশী’ হতে পারিনি। এখনো ‘বাঙালি’ কিংবা ‘বাংলাদেশী’ বিতর্কের অবসান হয়নি। বাংলাদেশ আজো ‘দেশপ্রেমিক’ মানুষের চিরহরিৎ লোকালয়ে পরিণত হয়নি। অনৈক্যের মূল কারণ জাতীয় বিষয়সমূহহে দ্বিধাÑএটি বুঝতে যত দেরি হবে ততই আমরা দুর্বল হতে থাকবো। অন্তত আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম অহঙ্কার ভাষা আন্দোলন বিতর্কসমূহের অবসান হওয়া দরকার। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যেনো বাংলাদেশের নতুন ও সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস রচনা করতে পারি সেই হোক আজকের অঙ্গীকার।
লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
আপনার মন্তব্য লিখুন