[ পর্ব-৬ ]
বিদেশে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত এই ধারাবাহিকটি ষষ্ঠ পর্বে আমরা ইউরোপের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, স্কলারশিপ, প্রস্তুতি ও আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা ইতঃপূর্বে প্রকাশিত পর্বগুলো পড়েছেন, তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা হয়েছে। তাই আমরা এই পর্বে প্রস্তুতির বিষয়ে আলোকপাত করব না।
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড উচ্চশিক্ষা এবং উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে ইউরোপের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং গবেষণায় বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত এই দেশটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। আয়ারল্যান্ডের বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বল্প জনসংখ্যা এবং ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহার শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক করে তুলেছে। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে সহজেই সংযুক্ত হতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
কেন পড়বেন আয়ারল্যান্ডে?
বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা : আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং শিক্ষার্থীরা এখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ পান, যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটি ইত্যাদি।
শিক্ষা খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় : আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে যুক্তিযুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা আংশিক কাজের মাধ্যমে তাদের খরচ মেটানোর সুযোগ পান। টিউশন ফি সাধারণত বছরে €৯,০০০ থেকে €২৫,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে এবং জীবনযাত্রার খরচ প্রতি মাসে গড়ে €৭০০ থেকে €১,২০০ হতে পারে, যা আবাসন, খাদ্য এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত করে।
ক্যারিয়ার ও কাজের সুযোগ : আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময় শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পার্ট-টাইম কাজ করতে পারেন এবং ছুটির সময়ে ফুল-টাইম কাজের সুযোগ পান। পড়াশোনা শেষে আয়ারল্যান্ডের “Stay Back Option” এর মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ে এক বছর এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুবছর পর্যন্ত কাজের অনুমতি মেলে।
আয়ারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
আয়ারল্যান্ডে বেশ কিছু বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম এবং স্কলারশিপ সুবিধা দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো:
Trinity College Dublin (TCD) : বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় Trinity College Dublin। এটি ইউরোপীয় শিক্ষার একটি কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এবং আইরিশ শিক্ষাব্যবস্থার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও গবেষণা করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আবেদন www.tcd.ie/study/international
University College Dublin (UCD) আয়ারল্যান্ডের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় University College Dublin, যা গবেষণায় বিশেষায়িত এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে। এখানে ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রাম রয়েছে। আবেদন লিংক : www.ucd.ie/studyatucd
National University of Ireland, Galway (NUI Galway) : এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম প্রদান করে। আবেদন লিংক: www.universityofgalway.ie/global-galway
Dublin City University (DCU) : Dublin City University উদ্ভাবনী এবং প্রযোজ্য গবেষণার জন্য বিশেষায়িত, যেখানে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। আবেদন লিংক :www.dcu.ie/global/prospective-students
University of Limerick (UL) : University of Limerick গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে এবং এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম পাওয়া যায়। আবেদন লিংক : www.ul.ie/global
স্কলারশিপ ও ফান্ডিং
আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ কিছু স্কলারশিপ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ বহনে সহায়তা করে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেধাভিত্তিক ও গবেষণাভিত্তিক স্কলারশিপের মাধ্যমে এখানে পড়াশোনা করতে পারেন। নিচে উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
Government of Ireland International Education
Scholarships : আয়ারল্যান্ড সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই স্কলারশিপ প্রদান করে, যা টিউশন ফি ছাড়াও আবাসন এবং মাসিক স্টাইপেন্ড প্রদান করে। এটি আয়ারল্যান্ডের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপলব্ধ। আবেদন লিংক : www.hea.ie
Irish Research Council Scholarships : এই স্কলারশিপটি পিএইচডি এবং পোস্টডক্টরাল শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার সুযোগ প্রদান করে। এটি মেধার ভিত্তিতে প্রদান করা হয় এবং শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার জন্য ফান্ডিং পেয়ে থাকেন। আবেদন লিংক: www.research.ie
Erasmus+ Scholarships: Erasmus+ একটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করে। আবেদন লিংক : www.erasmus-plus.ec.europa.eu
University-based Scholarships : Trinity College Dublin, University College Dublin এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান করে। এই স্কলারশিপগুলো মূলত মেধাভিত্তিক এবং আংশিক বা পূর্ণ টিউশন ফি ছাড় দিয়ে থাকে।
আবেদন প্রক্রিয়া
আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া মোটামুটি সহজ হলেও ধাপে ধাপে সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি। এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে আবেদনকারীকে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন, আবেদন ফরম পূরণ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ এবং ভিসা আবেদন।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রাম নির্বাচন : প্রথমে আপনাকে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের প্রস্তাবিত প্রোগ্রামগুলোর ওপর গবেষণা করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রোগ্রামগুলোর তালিকা এবং ভর্তির যোগ্যতা দেওয়া থাকে। এই ধাপে আপনাকে বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম, টিউশন ফি, স্কলারশিপ সুযোগ এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনা করতে হবে।
আবেদনের সময়সীমা এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা : সাধারণত, শরৎকালীন সেশনের ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে এবং বসন্তকালীন সেশনের ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে। স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য HSC বা এ-লেভেল সমমানের যোগ্যতা এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য IELTS বা TOEFL স্কোর লাগবে, যেখানে IELTS এর ক্ষেত্রে ৬.০ থেকে ৬.৫ স্কোর প্রয়োজন। আবেদন ফি সাধারণত €৫০ থেকে €১০০ হয়। আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য একাডেমিক সার্টিফিকেট, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ, মোটিভেশন লেটার, রিকমেন্ডেশন লেটার, সিভি, পাসপোর্ট কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন : আবেদন করার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। এরপর আবেদন ফরম পূরণ করে ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পছন্দের প্রোগ্রাম সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন ট্রান্সক্রিপ্ট, রিকমেন্ডেশন লেটার এবং মোটিভেশন লেটার আপলোড করতে হয় এবং আবেদন ফি প্রদান করে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর সাধারণত ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন মূল্যায়ন করে এবং সফল হলে অফার লেটার পাঠায়। অফার লেটার শর্তহীন (Unconditional) বা শর্তযুক্ত (Conditional) হতে পারে, যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের ওপর ভিত্তি করে ভর্তির নিশ্চয়তা দেয়।
ভিসার জন্য আবেদন
আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের “Long Stay Study VisaÓ (D-Visa) প্রয়োজন হয়, যা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। ভিসা ফরম পাওয়া যাবে www.irishimmigration.ie এই ওয়েবসাইটে। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিশ্চিতকরণ চিঠি (Offer Letter), টিউশন ফি প্রদানের প্রমাণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বনিম্ন €৭,০০০ সমমূল্যের), স্বাস্থ্য বীমা, পাসপোর্টের কপি এবং পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম। স্টুডেন্ট ভিসার ফি সাধারণত €৬০ থেকে €১০০ পর্যন্ত হয় এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের কোনো দূতাবাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভারতের আয়ারল্যান্ড দূতাবাসে গিয়ে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ভিসা প্রাপ্তির পর আয়ারল্যান্ডে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এতে প্রথমেই ফ্লাইট বুকিং এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি বা বেসরকারি বাসস্থান ভাড়া করতে পারেন। আয়ারল্যান্ডের জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা এবং স্থানীয় পরিবেশ সম্পর্কে জানাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, আয়ারল্যান্ডে স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক, তাই আপনার জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য বীমা ক্রয় করতে হবে, যা আপনার পড়াশোনা এবং বসবাসকালীন যে-কোনো জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করবে।
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডস, তার উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, উদ্ভাবনী গবেষণা এবং উচ্চমানের আন্তর্জাতিক শিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিশ্বমানের শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশের জন্য পরিচিত এই দেশটি মূলত ইংরেজি মাধ্যমে প্রোগ্রাম অফার করে, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক। উন্নত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ার কারণে, নেদারল্যান্ডস থেকে শিক্ষার্থীরা ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।
কেন পড়বেন নেদারল্যান্ডসে?
বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা : নেদারল্যান্ডসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় বৈশ্বিক খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা, তথ্যপ্রযুক্তি, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স এবং সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্স পাওয়া যায়।
সাশ্রয়ী টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ : ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় নেদারল্যান্ডসে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। স্নাতক পর্যায়ে বছরে €৬,০০০ থেকে €১৫,০০০ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে €৮,০০০ থেকে €২০,০০০ পর্যন্ত টিউশন ফি হতে পারে। জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতি মাসে গড়ে €৮০০ থেকে €১,১০০ হয়, যার মধ্যে আবাসন, খাদ্য, যাতায়াত এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কাজের সুযোগ : শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্ট-টাইম কাজ করতে পারেন। ছুটির সময়ে ফুল-টাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। পড়াশোনা শেষে “Orientation Year” প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক বছর পর্যন্ত কাজের অনুমতি দেওয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক।
ইংরেজিতে পড়াশোনার সুযোগ : নেদারল্যান্ডসের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক।
নেদারল্যান্ডসের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
নেদারল্যান্ডসে অনেক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো:
Delft University of Technology (TU Delft): ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়। আবেদন লিংক : www.tudelft.nl
University of Amsterdam (UvA) : সামাজিক বিজ্ঞান এবং গবেষণার জন্য বিখ্যাত। নেদারল্যান্ডসের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। আবেদন লিংক : www.uva.nl
Eindhoven University of Technology (TU/e) : প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে বিশেষজ্ঞ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গবেষণার জন্য বিশ্বখ্যাত। আবেদন লিংক : www.tue.nl
Leiden University : নেদারল্যান্ডসের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, যা গবেষণা এবং মানবিক শাস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। আবেদন লিংক : www.universiteitleiden.nl
Utrecht University : এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউরোপের অন্যতম পুরনো এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞান, বায়োমেডিক্যাল এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত। আবেদন লিংক : www.uu.nl
স্কলারশিপ ও ফান্ডিং
নেদারল্যান্ডসে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে, যা টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচে সহায়তা করে।
Holland Scholarship : স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হয়। এটি এককালীন €৫,০০০ পর্যন্ত প্রদান করে। আবেদন লিংক : www.studyinholland.nl
Erasmus+ Scholarships : ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করার সুযোগ প্রদান করে। আবেদন লিংক : www.erasmus-plus.ec.europa.eu
Orange Tulip Scholarship (OTS) : এটি বিশেষভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এবং নেদারল্যান্ডসের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে টিউশন ফি ছাড়ের সুযোগ দেয়। আবেদন লিংক : www.nesobangladesh.org
University-based Scholarships : TU Delft, University of Amsterdam, Leiden University এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ প্রদান করে। এই স্কলারশিপগুলো টিউশন ফি ছাড় এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
আবেদন প্রক্রিয়া
নেদারল্যান্ডসে উচ্চশিক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া বেশ সোজা, তবে প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রাম নির্বাচন : প্রথমে আপনাকে নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোগ্রামগুলো দেখে তুলনা করতে হবে এবং যে প্রোগ্রামটি আপনার জন্য উপযুক্ত, তা নির্বাচন করতে হবে।
আবেদনের সময়সীমা এবং যোগ্যতা : সাধারণত, শরৎকালীন সেশনের ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে এবং বসন্তকালীন সেশনের ক্লাস শুরু হয় জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে। স্নাতক পর্যায়ের জন্য HSC বা ও-লেভেল এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। IELTS বা TOEFL-এর মতো ইংরেজি ভাষার দক্ষতার পরীক্ষায় ন্যূনতম স্কোর ৬.০ থেকে ৬.৫ স্কোর প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস : আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে একাডেমিক সার্টিফিকেট, ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (IELTS/TOEFL), মোটিভেশন লেটার, রিকমেন্ডেশন লেটার, সিভি এবং পাসপোর্ট কপি। আবেদন ফি সাধারণত €৫০ থেকে €১০০ পর্যন্ত হতে পারে।
আবেদন ফরম পূরণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয়।
ভিসার জন্য আবেদন
নেদারল্যান্ডসে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের MVV (Provisional Residence Permit) এবং VVR (Residence Permit) প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস : ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিশ্চিতকরণ চিঠি (Offer Letter), টিউশন ফি প্রদানের প্রমাণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বনিম্ন €১০,৫০০), স্বাস্থ্য বীমা এবং পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম।
ভিসা ফি এবং প্রসেসিং : ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে সাধারণত €১৭৪ ফি লাগে এবং আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে নেদারল্যান্ডসের ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে। www.ind.nl
যাত্রার প্রস্তুতি
ভিসা প্রাপ্তির পর নেদারল্যান্ডসে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট বুকিং এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নেদারল্যান্ডসে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডরমিটরি ব্যবস্থা রয়েছে, তবে আপনি চাইলে বেসরকারি আবাসনও খুঁজতে পারেন। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক হওয়ায়, বীমা গ্রহণ করতে হবে যা আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যয় মেটাতে সহায়তা করবে।
আগামী পর্বে আমরা আরো কিছু নতুন দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানব, ইনশাআল্লাহ। আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ হাফিজ।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক
আপনার মন্তব্য লিখুন