বিরোধী দলের প্রতি সরকারের আচরণ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
১৮ আগস্ট ২০১২
আমরা যারা এ পৃথিবীতে বসবাস করি তারা সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সুখকে কেড়ে নেয় শয়তানি গোষ্ঠীর এক শ্রেণীর লোকেরা। অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের ডান ও বাম আছে (ভালো থাকলে তার মন্দ আছে)। পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দলের বিরোধী দল শান্তিতে থাকতে পারেনি। যেমন নমরুদের সময় ইব্রাহীম (আ), ফেরাউনের সময় মূসা (আ), আবু জাহেলের সময় হযরত মুহাম্মদ (সা) প্রমুখ। আবু জাহেলদের সময় রাসূল (সা) কে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু রাসূল (সা)-এর যুগে আবু জাহেল অনুসারীদের নির্যাতন তো দূরের কথা নির্যাতন কাকে বলে তাও বুঝতে দেয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা আবু জাহেলের সময়ের মত হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের প্রতি যে নির্যাতন চালাচ্ছে তা সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমার বোধগম্য নয়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় স্বর্গ পাওয়া যায় না। বরং আলেমের তাযীমের মাধ্যমে যদি স্বর্গের রাস্তা পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু বর্তমান সরকার আলেম সমাজের ওপর চড়াও হয়ে দেশ পরিচালনা করছে। আলেমদের ঠেকাতে চলছে কথিত যুদ্ধাপরাধী সহ বিভিন্ন হামলা-মামলা। সরকারের মন্ত্রীরা দুর্নীতির লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হচ্ছেন আদর্শের মডেল আর যারা মডেল হিসেবে বাংলার ১৬ কোটি মানুষের বুকে স্থান করে নিয়েছেন তাদেরকে বানানো হয়েছে চোর ডাকাত ইত্যাদি। অহঙ্কার ও গৌরবতো মাত্র দুই দিনের। অহঙ্কার ও গৌরব নিয়ে ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল, উৎবা, শায়বা টিকতে পারেনি, কেউ পারবেও না। তাই সরকার পক্ষের উচিত সবসময় আল্লাহর কাছে ইস্তেগফারের মাধ্যমে সংশোধনের জন্য চেষ্টা করা।
“বিরোধী দল” শব্দটি একটি গণতান্ত্রিক শব্দ। আমাদের দেশের মত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলকে সরকারের আয়না বলা হয়। সরকারের কোন অগণতান্ত্রিক, জনগণ ও দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজ ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও সরকারকে পরামর্শ দেয়াই ও সরকারকে সহযোগিতা করাই হল বিরোধী দলের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন কোনো দল বিরোধী দলে থাকে তখন তারা সরকারের জন্য হয়ে ওঠে আপদ। তাদের কোনো কথা, পরামর্শ সরকার আমলে নেয় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যে দলই সরকারে থাকুক না কেন তাদের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে ওঠে বিরোধী দলকে দমন করা। তাদের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। জেল, যুলুম, অযৌক্তিক, রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে। যে দল এবার বিরোধী দলে সে যদি আগামীবার সরকার গঠন করে তবে তার অন্যতম চিন্তা বিরোধী দলকে দমন। কোন দলের পক্ষে আজও সম্ভব হয়নি বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে দেশের কাজ করা। আজীবনই আমাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারটি খালি থাকে। সরকার তাদের সংসদে যোগ দেবার নামমাত্র আহবান জানায়। সরকার এটা বোঝে না যে বিরোধী দলবিহীন সংসদ প্রায় অনেকটা অকার্যকর ও হাস্যকর। আমরা যদি এই সঙ্কীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারি তাহলে নিজেদের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরোধী দল যদি না থাকত তবে সরকারের কোনো ভুলই চোখে পড়ত না এবং কোন কাজ সমালোচনাহীনভাবে সুচারুরূপে শেষ হতো না। আমদের বর্তমান সরকার বিরোধী দল দমনের জন্য যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা তাদের নিজেদের ও দেশের মানুষের জন্য কখনই কল্যাণ বয়ে আনবে না। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। সরকার যদি এ দমনপীড়ন নীতি পরিহার না করে তবে আগামীতে সরকার জনগণ হতে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ হতে বিচ্চিন্ন কোনো দলের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব নয়।
আবদুল্লাহ আল মাহামুদ হোসেন নিপুন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়না স্বরূপ। সরকার যখন কোনক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা এবং একটি আদর্শবাদী সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অপরদিকে সরকার যদি জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দাবি-দাওয়া উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তে লিপ্ত থাকে তবে সেটা যেমন তাদের জন্য আত্মঘাতী তেমন দেশ চলে যায় অনিবার্য সংঘাতের দিকে। যার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।
ইতোমধ্যে সরকারের সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হয়েছে। তাদের এ দীর্ঘ সময়ের সফলতা ও ব্যর্থতার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সফলতা ছাড়া আর কিছুই প্রতীয়মান হয় না। ব্যর্থতাতো পদে পদে আছেই।
বিরোধী দলের প্রতি সরকারের এমন আচরণ আজ জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে। সুজলা-সফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের ভাগ্যে আগামী কাল কী রয়েছে তা কেউ জানে না।
দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করা বাঘের হাতে ছাগল আমানত রাখার শামিল। অন্যদিকে বিরোধী দল সরকারকে এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করছে না। তারপরও ক্ষমতাসীনরা বারবার জোর গলায় বলে আসছেন দলীয় সরকারের অধীনেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। গণতন্ত্র আজ শুধু মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। সরকার দলের দলীয় কর্মসূচি কোটি টাকা ব্যয় করে টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হলেও বিরোধী দলের দলীয় কর্মসূচি পালনকালে গোপন বৈঠকের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। কেবল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কিছু অবাস্তব মিথ্যা অভিযোগে বিরোধী দলের প্রবীণ নেতৃবৃন্দকে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা(!) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের প্রতি এ কেমন গণতান্ত্রিক আচরণ করছেন তা আজ জাতির কাছে পরিষ্কার।
জয়নাল আবেদীন
শিক্ষার্থী, কানাইঘাট (সিলেট) ডিগ্রি কলেজ
গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই একটি দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। আর শান্তি বিরাজ না করলে একটি দেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। দেশটি সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সমস্যার দিকে ধাবিত হতে থাকবে। বাংলাদেশে তাই-ই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ হুমকির সম্মুখীন, ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যাপক মন্দাভাব বিরাজ করছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ ক্রমশ হ্রাস পাচেছ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে সমস্যা ছাড়া কোনো সম্ভাবনার দ্বার দেখা যায় না। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকার চরম প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। হামলা-মামলা, গুম, গ্রেফতার ও জেল-জুলুমের মাধ্যমে বিরোধী দলকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। ক্ষমতাসীনরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু সরকারের ব্যর্থতা এবং দায়িত্বহীনতার চিত্র বিরোধী দল জনগণের সামনে তুলে ধরুক এটা এই বাকশাল সরকার চায় না। যেখানেই বিরোধী দল গণতান্ত্রিকভাবে সরকারের সমালোচনা এবং জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলতে চেয়েছে ও চাচ্ছে সেখানেই আওয়ামী সরকারের পেটোয়া বাহিনী, বৈধ ক্যাডার পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলকে আক্রান্ত করে থামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
অপরদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দখলদারি এবং ব্যাপক অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে সরকার মোটেই দৃষ্টিপাত করছে না বরং এক্ষেত্রে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদেরকে সংশোধন করার পরিবর্তে সরকার দলীয় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যারা নেতৃত্ব দিয়ে এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেন, সেই মানের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে জামিনঅযোগ্য মামলা! কিছুদিন আগে বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরকে সাজানো মামলায় কারাভোগ করতে হয়েছে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তৈরির পরিবর্তে তাদেরকে ঘুরতে হচ্ছে আদালতের দ্বারে দ্বারে! জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেখিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে! তারা জামিন পাচ্ছেন না। আর এটাই আমাদের কাক্সিক্ষত সোনার বাংলার বর্তমান রাজনীতির বাস্তব চিত্র। এখন প্রশ্ন হলো, এই নোংরা রাজনীতি নিয়ে এই দেশ কিভাবে সামনে অগ্রসর হবে? এভাবে কী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে?
আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কিন্তু সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারকে বুঝতে হবে, সংকীর্ণমনতা পরিহার করে তাদের মনকে বড় করতে হবে এবং সুদূরপ্রসারী হতে হবে। নয়তো এই দেশ ধাবিত হবে এক অজানা গন্তব্যের দিকে।
এমদাদুল হক এমদাদ
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর চলে গেছে কিন্তু জনগণ আজও স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। নিজের মত প্রকাশের অধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সে অধিকারটুকু হরণ করে নিয়েছে। গণতন্ত্রকে গলাটিঁপে হত্যা করে আওয়ামী লীগ এক সময় একদলীয় বাকশালী দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী গ্রেফতার নির্যাতন করে পুনরায় একদলীয় শাসনের দুঃস্বপ্ন দেখছে। ক্ষমতায় আসার সূচনালগ্ন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দুর্বিনীত আচরণ লক্ষ করা গেছে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, রক্তপাত ও শিক্ষককে অপদস্থ করা, চাঁদাবাজি, জবর দখলের মতো অপকর্মে প্রকাশ্যে সক্রিয় থেকেছে তারা। কিন্তু সরকার কিংবা প্রশাসন কেউ তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনেনি। ফলে গত ৮ জুলাই এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন লাগাতে তাদের মনে কোনো কুণ্ঠা জাগেনি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেয়া আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ে গেল স্থাপনাটি। অনেকের চোখে দুঃখের অশ্র“ গড়ালেও ক্ষমতাসীনদের দাপটের সামনে তারা কিছু করতে পারেনি। বরং তারা এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার হিংস্রতার মত্ত হয়। এর বিপরীতে গ্রেফতার নির্যাতন করা হয়েছে নিরীহ ছাত্রদেরকে। আশা করি অতি সত্বর সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আত্মঘাতী নির্যাতনের কাজ থেকে সরে আসবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দিলোয়ার হোসেন মোছন
শিক্ষার্থী, এমসি কলেজ, সিলেট
আপনার মন্তব্য লিখুন