
শিক্ষার জায়গাটিতে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ রাখতে পারলে এখান থেকে আমাদের জাতির জন্য দক্ষ উন্নত মানবসম্পদ তৈরি হবে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো-কে রাজনীতিমুক্ত রাখাটা খুবই জরুরি[/caption] বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, এসব প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত জটিল বিষয়ে শিক্ষককে পাঠদান করতে হয়। এজন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুনির্দিষ্ট একটি মানের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়। এই পাঠদান অনেকটা ছাত্রছাত্রীদের প্রণোদনা জোগানোর মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে শিক্ষক যা বললেন তাই যথেষ্ট নয়। বরং তিনি আরও যেসব বই বা মূল্যবান তথ্যাদি সংগ্রহ করার কথা বলবেন, সেসবও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই বলা হয় যে সুশিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র পঞ্চাশ মিনিট বা এক-দেড় ঘণ্টার একটা ক্লাসে শিক্ষক যা বললেন, তা দিয়েই জ্ঞানচর্চা পূর্ণ হয় না। শিক্ষক ক্লাসে আরও কিছু বই শিক্ষার্থীদের পড়তে বলবেন। সেগুলো অনুধাবন করতে বলবেন। প্রয়োজনবোধে এগুলো নিয়ে পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সঙ্গে আরও আলোচনায় বসতে পারে। এভাবেই তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান এগিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে কেবলই পাঠদান, জ্ঞানচর্চা বা বিদ্যমান জ্ঞানভাণ্ডার থেকে পড়াশোনা হয় তা নয়। বরং একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই নতুন নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হয়। একটি জাতি বা সমাজের নতুন জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হয় এ ধরনের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দু’টি বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রাখলে বলতে হয়, সমাজ বা জাতির জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি জাতির যে কোন বিষয়ে জ্ঞানের নতুন জগৎ এখানে তৈরি হয়। তা সে বিজ্ঞান বিষয়ে হোক কি তথ্যপ্রযুক্তি বা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েই হোক। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার একটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান খুঁজে নিতে চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ জন্য ব্যাপক তাগিদ তৈরি হয়। এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটা আবহাওয়া দরকার যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের নেশায় ছুটতে পারে। আর শিক্ষকরাও নতুন জ্ঞানের ভাণ্ডার তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা জোগাতে পারেন। তাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে দলীয় চিন্তাভাবনা, কার্যক্রম এসব নিষিদ্ধ। রাজনৈতিক আনুগত্যও বর্জনযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা হয়, তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির চর্চা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এর কারণ হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষকরা এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন তবে তারা আর নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। শিক্ষার্থীরাও রাজনৈতিক স্বার্থ দিয়ে পরিচালিত হলে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তাই আমি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি। আর সরকারি ৩২ কি ৩৩টি। এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেশী বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শীর্ষ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জায়গা করে নেয়ার যোগ্য। সেখানে এখন সঙ্কট চলছে। এ নিয়ে ভিসি, প্রো-ভিসিএবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকমণ্ডলী বারবার আলোচনা করছেন। তবু সঙ্কট কাটছে না। ওদিকে দেশের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম সেরা জ্ঞানপীঠ। এখানে ভিসিকে ঘিরে ছ’মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগরের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ২৫ দিন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এভাবে তো সঙ্কট কাটবে না। সঙ্কট কাটানোর জন্য প্রয়োজন অন্য কিছু। ওই যে বললাম, সমস্যার কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বৈশিষ্ট্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য জ্ঞানের উৎকর্ষতাকে প্রাধান্য না দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি উঁচু পর্যায়ের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমাবেশ না ঘটে তাহলে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি পাবে ঠিকই, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞানের সন্ধান পাবে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কোনো দলের রাজনৈতিক স্বার্থ, সরকারের আধিপত্য, কারও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থর আকাক্সক্ষা এসব থাকতে পারে না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশের দশকের ছাত্র। এখানে শিক্ষকতা করেছি দুই দশকেরও বেশি সময়। ভিসি হিসেবে ছিলাম চার-পাঁচ বছর। আমাদের ছাত্রজীবনেও ক্যাম্পাসে রাজনীতি ছিল। কিন্তু তখন ব্যক্তি-গোষ্ঠী স্বার্থে হানাহানি ইত্যাদি ছিল না। এখন সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই প্রবণতা বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক এত বেশি যে, এখানে নেতিবাচক কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলে কষ্ট পাই। একইভাবে দেশের যে কোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কোনো ঘটনা আমাকে আলোড়িত করে। রাজনীতির কলুষপূর্ণ দিকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে যায়। ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ নিয়ে যখন একটি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম চলে, কোনো রাজনৈতিক দলের সহযোগী কোনো সংগঠনের কর্মীদের যখন বিশেষভাবে সুযোগ করে দেয়া হয়, এ ধরনের পরিবেশ যতক্ষণ পর্যন্ত না পাল্টানো যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে না। একজন ভিসিকে সরানোর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তার বাড়ি পর্যন্ত ঘেরাও করেন কখন? আসলে একদম বেপরোয়া একটি অবস্থানে চলে না গেলে শিক্ষকদের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়। কাগজে দেখেছি ভিসি-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মীরা পর্যন্ত আহত হয়েছেন। আমরা সবসময় দেখেছি, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে তিনিই নিয়োগ পান যিনি তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সহিষ্ণুতা, পরিচালন দক্ষতা, নিরপেক্ষ-বোধ সবকিছু নিয়েই আলোচিত থাকেন। নিয়োগ পাওয়ার আগে থেকেই সম্ভাব্য ভিসি হিসেবে তার নাম আলোচিত হতে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাপ্রবাহ যতটা জেনেছি তাতে দেখা গেছে, সেখানে ভিসি স্বয়ং সরকারি ছাত্র সংগঠনের (এরা আমারই ছাত্র হতে পারত) একটি অংশের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল করেছেন। এমনকি সেখানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দলীয় বিবেচনা কাজ করেছে। আমি একে মহা-অপরাধ বলব। দলীয়করণ প্রশাসনসহ অন্য সব জায়গায় যত বেশিই হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া একান্তভাবেই অনুচিত। এখানে যদি দলীয় বিবেচনায় একজন শিক্ষককেও নিয়োগ দেয়া হয়, তবে তিনি পরের পঁয়ত্রিশ বছর ধরেই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বোঝা হয়ে থাকবেন। কারণ তিনি তো সবসময়ই দলীয় আনুগত্য দিয়ে চালিত হবেন। আমি অনেকবার এসব বিষয়ে বলেছি, লিখেছি। সরকারগুলোকে বলেছি, আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাদের দলের লোকদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এপিএস-পদস্থ কর্মকর্তা বা বিদেশী দূতাবাসের প্রধান বানান। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেবেন না প্লিজ। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য এটা জরুরি। আরেকটি কথা হলো, প্রতিটি সরকারের উচিত তাদের দলের সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের কোনো অন্যায়কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশ্রয় না দেয়া। আর শিক্ষকদের প্রতি সবরকম শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক ভালো শিক্ষক রয়েছেন কিন্তু দলীয় বিবেচনায়ও এখানে অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন। এসবের ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিকে ঘিরে যে সঙ্কট তৈরি হলো, সেক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নিজে তো সেখানে যেতে পারতেন। একজন ভিসিকে তার নিজ দলের সমর্থকরা চাচ্ছেন না। এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? এ ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ভিসি নিজেও পদত্যাগ করতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে, সর্বোপরি বৃহত্তর পর্যায়ে দেশের উচ্চতর শিক্ষার স্বার্থে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। আমার এ কথা শুনে তিনি মন খারাপ করতে পারেন। তবু একজন সিনিয়র ফেলো হিসেবে আমি কথাটা বলছি। উনি তো একজন শিক্ষক। আর একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বলতে পারতেন, আমি কাউকে তোয়াক্কা করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদের চেয়ে একজন শিক্ষকের সম্মান কম নয়। এ প্রসঙ্গে আমার নিজের ভিসি জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক আমাকে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট নিয়োগের বিষয়ে একটি সুপারিশ দিয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না বা করতে পারেন না। হয় তাকে সিন্ডিকেটের পরামর্শ নিতে হবে, নয়তো একাডেমিক কাউন্সিলের। অথবা বোর্ড অব হায়ার স্টাডিজ নামের একটি কাউন্সিল বা ডিন্স কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। একটি ক্ষেত্রে ভাইস চ্যান্সেলর নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেটা প্রভোস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে। আমি ততদিনে আরেকজন সিনিয়র প্রফেসরকে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলাম। ফলে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের প্রশাসনের একটি সঙ্কট তৈরি হলো। শিক্ষামন্ত্রী আমাকে বারবার বলছিলেন, ‘স্টিল আই ইনসিস্ট।’ তখন আমি তাকে বললাম, ‘ইউ নো মি। আই এম নট অ্যান আননোন পারসন।’ এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে আমি পদত্যাগ করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে এনে আমি বলেছিলাম, ‘আমি এখানে আর কাজ করতে পারছি না। ভাইস চ্যান্সেলরের পদটি অত্যন্ত সম্মানজনক পদ।’ আসলে আমি জানতাম এ পদের মর্যাদা রক্ষা করা আমার দায়িত্ব ছিল। বিদেশে পড়াশোনা করেছি। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। আমি সেখানে দেখেছি, ভাইস চ্যান্সেলরের পদটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে আমার বক্তব্য হলো, আজ শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ভিসিকে বলতে পারেন যে, ‘আপনাকে হাতজোড় করে বলছি, আপনি শিক্ষার স্বার্থে পদত্যাগ করুন। আপনাকে আমরা অ্যাম্ব্যসেডর বানিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ এ ধরনের একজন বিতর্কিত ব্যক্তি ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কিভাবে সেটাও একটা বিষয়। ওইদিকে বুয়েটের মতো একটি প্রতিষ্ঠানেও এমন অচলাবস্থা কাম্য নয়। বাংলাদেশের চারটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। তাই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার স্বার্থে যে কোনো সঙ্কট দ্রুত দূর করতে হবে। আমি একটা কথাই জোর দিয়ে বলব, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই। আমাদের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর বিভিন্ন ইংরেজি-ভাষী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছে। বিশ্বের নানা ধরনের কর্মক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এই মান আরও উন্নত করতে হলে দরকার উন্নততর পরিবেশ। রাজনৈতিক হট্টগোল থেকে মুক্ত আবহাওয়া। দুঃখের বিষয়, আমরা আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করি। এই স্বার্থচিন্তা থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অমুক দলের কাউকে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিই। আবার দলীয় বিবেচনা থেকে অনেককে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন করি না। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলই কাজটা করে। আমরা এমনিতেই পিছিয়ে থাকা একটি জাতি। যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা উন্নত একটি মান অর্জন করতে পারি তবে তাই দিয়েই বিশ্বে জায়গা করে নেয়া সম্ভব। আমরা কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পা রেখেছি অনেক পরে। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় আট শ’ বছর। ওই দিকে অক্সফোর্ড সাড়ে সাত শ’ বছর পার করেছে। আমাদের সবচেয়ে পুরনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এখনও একশ’র চেয়ে কম। শিক্ষার জায়গাটিতে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ রাখতে পারলে এখান থেকে আমাদের জাতির জন্য দক্ষ উন্নত মানবসম্পদ তৈরি হবে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিমুক্ত রাখাটা খুবই জরুরি। লেখক : সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন