post

বেকারত্ব দূরীকরণ : ইসলামের অনুপ্রেরণা ড. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম

০৫ অক্টোবর ২০২১

রাসূল সা. অনাগত যুগের, সর্বযুগের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ। শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। তিনি নিখিল বিশ্ব প্রভুর প্রিয় বন্ধু। একদিকে তিনি ছিলেন সাধারণ একজন মানুষ, সবার মতো সামাজিক মানুষ, অন্যদিকে তিনি মানুষের মুক্তির দূত। তিনি বার্তাবাহক, নেতা, পথপ্রদর্শক, আশীর্বাদ ও করুণার আধার, বরকতের অবারিত দ্বার, সতর্ককারী, সুসংবাদদাতা এবং উজ্জ্বল প্রদীপ। মহান আল্লাহ তাঁর এই রাসূলের, আখেরি রাসূলের, মানুষের জন্য এই মানুষ রাসূলের মহৎ গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তার নিজ বাণীতে। মানবজাতির প্রতি অবতীর্ণ তাঁর চির শাশ্বত মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর গুণাবলি উল্লেখ করেছেন। জীবনের সকল বিভাগে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। কুরআন বলছে, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : ২১) রাসূল সা. তাঁর যাপিত জীবন দিয়ে কুরআনকে প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সাহাবায়ে কেরামগণ সে আদর্শের প্রতিরূপ। রাসূল সা. ছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য আশীর্বাদ। আল্লাহ বলেন, “আমরা তোমাকে জগদ্বাসীর জন্য রহমত ও আশীর্বাদ হিসেবে পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) ধনিক-বণিকরা বিপদ গুনেছে তাঁর আদর্শের বাস্তবায়নে। বেলাল, যায়েদ, আম্মারসহ সমাজের নিচু স্তরের এসব মানুষ মুক্তির সন্ধান পেয়েছে তাঁর আহবানে। বেকারত্ব আরব উপদ্বীপের জন্য ছিল অভিশাপ। সে সময়ে বেকারত্ব যেন প্রকট অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছিল। তিনি এই সমস্যা দূরীকরণে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। বেকারত্ব বেকারত্ব বলতে সাধারণভাবে কর্মক্ষম মানুষের কর্মহীনতাকে বুঝায়। একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার আওতাভুক্ত ব্যক্তির কর্মের ইচ্ছা, উপযুক্ত সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি সে কোনো উপার্জনমূলক কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ হয় তবে উক্ত ব্যক্তি বেকার। এবং বেকার ব্যক্তির কর্মহীন অবস্থা পরিস্থিতিকে ‘বেকারত্ব’ বলে ধরা হয়। মোটকথা বেকারত্ব হলো একটি পরিস্থিতি বা অবস্থা যার সাথে কর্মক্ষম মানুষের কর্মহীন অবস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বেকারত্ব এমনই এক অবস্থা যেখানে যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি কর্ম লাভে ব্যর্থ হয়। বেকারত্বের প্রকৃতি অনুসারে একে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে- ১. ক্ষণস্থায়ী বেকারত্ব ২. প্রযুক্তিগত বেকারত্ব ৩. মৌসুমি বেকারত্ব ৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব ৫. ব্যক্তিগত চরম বেকারত্ব ৬. স্থানগত বেকারত্ব। মদিনা রাষ্ট্রে বেকারত্বের কারণ ছিল বহুবিধ। কর্মের সীমিত সুযোগ, শিল্পের বিকাশ না হওয়া, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি, দারিদ্র্য, কুটির শিল্পের দুর্বল অবস্থা, বিনিয়োগে ত্রুটিপূর্ণতা, মূলধনের অভাব, নিরাপদ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সমস্যা, শ্রমজীবীদের গতিশীলতার অভাব, অলসতা ও শ্রমবিমুখতা, বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা প্রভৃতি কারণে সদ্য বিকশিত ইসলামী রাষ্ট্রে বেকারত্ব একটি অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছিল। রাসূল সা. বেকার সমস্যা মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বেকারত্ব দূরীকরণে রাসূল সা.-এর অবদান রাসূল সা. মদিনায় গিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করেন। যেখানে বিভিন্ন জাতির লোকেরা ছিল। বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরা ছিল। মুহাম্মাদ সা. একাধারে নবী ছিলেন একই সাথে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। মৌলিক সিদ্ধান্তগুলো তাঁর শাসনামলে তাঁরই নির্দেশনায়-অনুপ্রেরণায় সে দেশের অর্থনীতিসহ সবকিছু পরিচালিত হচ্ছিল। তখন থেকেই স্বাভাবিকভাবে মদিনা রাষ্ট্র ইসলামী অর্থনীতির প্রয়োগ শুরু হয়। রাষ্ট্রে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মহানবী সা. নজর দিয়েছেন। তিনি উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছেন, কারণ এর সাথে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা জড়িত। কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ নিজের বেকারত্ব দূর করবে, নিজের ভাগ্য গড়ে নেবে। পরিশ্রম করে আয়কারীরা নিজেদের পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী বানায়। ইসলামের কামাই-রাজী অর্জনে হালাল উপায়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রমলব্ধ পন্থা। কুরআন এবং রাসূল সা.-এর অনুপ্রেরণা অনুযায়ী এ উপায়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়- ক. নিজে উপার্জনের নীতি : বেকার থাকা যাবে না। কুরআনে প্রত্যেক নামাজীকে আল্লাহর ফজল (অনুগ্রহ) তালাশ করতে আদেশ করা হয়েছে। (সূরা জুমআ : ১৩) হাদিসে বলা হয়েছে- কোনো মানুষের নিজের চেষ্টায় উপার্জিত আয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই হতে পারে না। (ইবনে মাজাহ) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে নিজ হাতে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু যে চেষ্টা করবে রিজিকের সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে সে রিজিক পাওয়ার যোগ্য আর যে অলস ভঙ্গিতে বসে থাকে, সে বঞ্চিত হবারই যোগ্য। খ. নিজে কাজ করার নীতি : ইসলামে কাজকে পুণ্য এবং অলসতাকে পাপ গণ্য করা হয়েছে। কুরআনে মহানবী সা.কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, “আর আপনি বলে দিন, তোমরা কাজ করে যাও। আল্লাহ তোমাদের কাজ দেখবেন আর দেখবেন রাসূল ও মুমিনরা।” (সূরা তওবা : ১০৫) হযরত দাউদ (আ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ নিজের হাতে কামাই করার জন্য আমাকে রোজগারের একটি পথ খুলে দাও। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন, কঠিন লোহাকে মোমের মতো নরম করে দিলেন যাতে করে তিনি যুদ্ধের পোশাক হেলমেট ইত্যাদি লোহা উদগত পণ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজন ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। (বুখারি) মহানবী সা. বলেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাকে হালাল রুজির মধ্যে পরিশ্রমরত অবস্থায় দেখতে ভালোবাসে। (তিরমিজি) রাসূল অন্য একটি বর্ণনায় বলেন, শ্রমজীবীরা আল্লাহর বন্ধু। ইসলামে বৈরাগ্যবাদ সন্ন্যাসবাদ এবং ব্রহ্মচর্চাকে নিন্দা করা হয়েছে। যারা জীবিকা অর্জনের জন্য কোনো কাজ না করে সব সময় শুধু ইবাদতে মশগুল থাকে তাদেরকে যারা খাদ্য পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগান দেয় তারা প্রথমোক্তদের চেয়ে উত্তম বলে মহানবী সা. স্বয়ং বর্ণনা করেছেন। (তিরমিজি, নাসাঈ) গ. কৃষিকাজের মাধ্যমে উপার্জনের নীতি : কৃষিকাজের জন্য কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও উৎসাহব্যঞ্জক বাণী রয়েছে একে আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে সহজ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মানুষকে দেয়া তাঁর অকৃপণ অনুগ্রহ ও উপকরণসমূহ উল্লেখ প্রসঙ্গে কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। কুরআন বলছে, “তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। তা দিয়ে আমরা সব ধরনের উদ্ভিদ উদগত করি। সেখান থেকে আমরা সবুজ পাতা বের করে আনি। উৎপন্ন করি ঘন নিবিড় শস্যদানা। খেজুর গাছের মাথা থেকে বের করে আনি ঝুলন্ত কাঁদি। উৎপন্ন করি নানান ধরনের আঙ্গুরের বাগান, জাইতুন ও আনার। লক্ষ্য করে দেখো এইসব ফলের প্রতি যখন তা ফলবান হয় এবং যখন তা পাকে। যারা ঈমান রাখে তাদের জন্য এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন।” (সূরা আনআম : ৯৯) মহানবী সা. বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য কৃষিকাজের উপর জোর দিয়েছেন। আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা মর্মে মহানবী সা. এ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো মুসলিম গাছ লাগালে ফসল চাষ করলে তা থেকে কোনো মানুষ বা পশুপাখি খেলে এটা তাঁর জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। (বুখারি ও মুসলিম) ঘ. শিল্প ও অন্যান্য পেশার মাধ্যমে উপার্জনের নীতি : ইসলাম শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। এ প্রসঙ্গে ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভী লিখেছেন মুসলমানদের অবশ্যই এমন সব শিল্প পেশা এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে হবে যা সমাজের জন্য অপরিহার্য। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য সহায়ক এবং একটা দেশের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য অনুকূল। বেকারত্ব দূরীকরণে মহানবী সা. শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তার শাসনামলে নগরায়ণ ও শহরে কারুশিল্প ও শিল্পায়ন শুরু হলো এবং এর ফলশ্রুতিতে কৃষি পণ্য পৌঁছে গেল বিভিন্ন স্তরে। পেশাগত সুযোগ সৃষ্টি হলো এবং বেকারত্বের অভিশাপ কাটিয়ে মদিনা রাষ্ট্রের নাগরিকগণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ঙ. স্বনির্ভরশীলতার নীতি : কুরআনে বলা হয়েছে- “আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যে পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন না করে।” (সূরা রাদ : ১১) এই নির্দেশনার অর্থনৈতিক তাৎপর্য হলো ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করার কোনো উদ্যোগ নেয়া উচিত হবে না, যতক্ষণ না তারা নিজেরাই তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে কঠোর শ্রম দিতে এগিয়ে না আসবে। অন্যকথায় ইসলাম এমন সমাজের কল্পনা করে যেখানে কেউ কারো উপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিটি মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর ইসলাম সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলামে মুদারাবার মতো স্ব-নিয়োজিত কর্মোদ্যোগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এজন্য জাকাতের অর্থও দরিদ্রদের ক্ষণিকের প্রয়োজন পূরণে ব্যায়ের চেয়ে তারা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তেমনভাবে ব্যবহারের ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সকল সক্ষম সবল মানুষ বেকার না থেকে বৈধ উপায়ে পরিশ্রম করে তাদের জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করবে এটাই ইসলামের দাবি। পৃথিবীতে মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং তা পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা ছাড়া মানুষ অর্জন করতে পারে না। আল্লাহর লিখিত নির্দেশ হচ্ছে জীবিকা। মানুষকে উপার্জন করতে হবে এজন্য মানুষকে শ্রম দিতে হবে। চ. প্রবাসী উপার্জনের নীতি : বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলামে। মহানবী সা. বলেছেন, “প্রবাসে যাও ধনী হতে পারবে।” (তাবারানি-আওসাত) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “যে হিজরত করবে আল্লাহর পথে সে জগতে বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করবে।” (সূরা নিসা : ১০০) এক হাদিসের ভাষ্য এমন যে, “আল্লাহর রাসূল সা. মদিনায় এক লোকের সমাধিতে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আহ এই (হতভাগ্য) লোকের মৃত্যু যদি প্রবাসে হত’-” (বুখারি) কোন বৈধ উদ্দেশ্যে পর্যটন/ভ্রমণ/চাকরির জন্য, রোজগারের জন্য প্রবাসী হওয়ার বা প্রবাস জীবনযাপনকারীদের জন্য এর চেয়ে বেশি উৎসাহ দানের দৃষ্টান্ত আর কি আছে? এসব হাদিসের অনুপ্রেরণায় রাসূল সা.-এর যুগেই মুসলিমগণ পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিভিন্ন দেশের অলিতে গলিতে। সেখানে তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরির পাশাপাশি দ্বীন প্রচার করেছেন। ছ. ব্যবসা বাণিজ্য : কুরআন ও হাদিসে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কুরআন মজিদে ব্যবসা-বাণিজ্য বোঝাতে ‘বাই’ ও ‘তিজারত’ পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামে ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের মর্যাদা অনেক উপরে। রাসূল সা. বলেছেন, হে উম্মতগণ! তোমরা ব্যবসা কর। কেননা রিজিকের দশ ভাগের মধ্যে নয় ভাগই ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে। সত্যবাদী, ন্যায়পন্থী ও বিশ^স্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবেন। জ. চাকরি : সম্পদ অর্জনের আরেকটি উপায় হচ্ছে চাকরি। চাকরি পেলেও বেকারত্ব দূর হয়। যারা চাকরি করে উপার্জন করেন ইসলামে তাদের ন্যায্য বেতনের নিশ্চয়তা বিধান করা, সুবিচারপূর্ণ বেতন পদ্ধতির আওতায় মৌলিক প্রয়োজন, অতিরিক্ত সুযোগ, পারস্পরিক সমঝোতা ইত্যাদি বিবেচনার দাবি রাখে। ইসলামী অর্থনীতিতে যথারীতি বেতনের উপর যে কতটুকু গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা একটি হাদিস থেকে জানা যায় মহানবী সা. বলেন, শেষ বিচারের দিন আমি তিন প্রকার ব্যক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেবো ১. যে ব্যক্তি আমার নামে প্রতিজ্ঞা করে অথচ অবিশ্বাসীর মত কর্ম করে। ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে সেই অর্থ নিজে গ্রহণ করে। ৩. যে ব্যক্তি যেকোনো লোককে কাজে নিয়োগ করে তার নিকট হতে পূর্ণ কার্য আদায় করে বটে কিন্তু ঠিকমত বেতন দেয় না। (বুখারি) চ. দুর্বল ব্যক্তিদের স্বার্থ সংরক্ষণ : বেকারত্ব দূরীকরণে মহানবী সা.-এর অন্যতম অবদান হচ্ছে দুর্বল বঞ্চিত নির্যাতিতদের অবস্থার উন্নয়ন সাধন। গরিব, অসহায়, বিত্তহীন নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক উন্নতি ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য তিনি অত্যন্ত মনোযোগী হন। মহানবী সা. এটি করেছেন নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার, সামাজিক সংহতি ও সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে। জাকাত, ওশরসহ ইসলামের ট্রান্সফার মেকানিজমসমূহ বাস্তবায়িত করা হয়। স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নকেও বিশেষ লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ঞ. ভিক্ষাবৃত্তি নয় আত্মকর্মসংস্থান : আল্লাহর রাসূল সা. ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। রাসূল সা.-এর কাছে একজন আনসারী এসে কিছু ভিক্ষা চাইলেন তিনি তখন উক্ত আনসারীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমার ঘরে কি কোনো জিনিস নেই? আনসারী জবাব দিলো যে একখণ্ড কাপড় ও পানি রাখার একটি জগ আছে। আল্লাহর রাসূল সা. তা নিয়ে আসার জন্য বলেন। আনসারি দুটি জিনিস রাসূলের কাছে আনার পর তিনি সাহাবীদের মাঝে ঘোষণা করেন, তোমাদের মাঝে কে এই জিনিস ক্রয় করতে ইচ্ছুক। একজন সাহাবী আগ্রহ প্রকাশ করলেন এবং এক দিরহাম দেয়ার কথা জানালেন। অতপরঃ রাসূল সা. জানতে চাইলেন এর চেয়ে বেশি দেওয়ার মত কেউ আছে কিনা। আরেকজন সাহাবী দুই দিরহাম দেওয়ার কথা জানালে উক্ত জিনিসটি তাঁকে দেওয়া হয়। এক দিরহাম দিয়ে খাবার অন্য দিরহাম দিয়ে কুঠার কিনে তার কাছে আনতে বললেন। তিনি নিজ হাতে আনসারিকে কুঠার কিনে দিলেন এবং হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন আজ থেকে বনাঞ্চলে গিয়ে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতে পারো। এবং ১৫ দিন পর এর অগ্রগতি জানাতে বললেন। এই ঘটনা থেকে বুঝা যায় রাসূল সা. বেকারদেরকে ভিক্ষার পরিবর্তে আত্ম-কর্মসংস্থান ও ব্যবসার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির