post

ভারতের পানি আগ্রাসন ও বাংলাদেশের দুর্বিষহ জীবন

মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্

বিশ্বসভ্যতার ক্রমোন্নতির সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্যভাবে যে বিষয়টি জড়িয়ে আছে তা হচ্ছে সুপেয় পানির সহজলভ্যতা ও নদ-নদীর প্রবাহ। নীলনদের তীরে গড়ে ওঠা মিসরীয় সভ্যতা, টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস বা দজলা-ফোরাতের তীরে গড়ে ওঠা মেসোপটোমিয়া সভ্যতা, সিন্ধু নদের তীরে গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতা এবং গঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা প্রাচীন ভারতীয় ও বাংলার সভ্যতার বাইরে এশিয়া-আফ্রিকার ঐতিহাসিক বিবর্তনকে কল্পনা করা যায় না। ঠিক একইভাবে টেম্স, ভলগা, দানিউব ও রাইন নদীকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল ইউরোপের গড়ে ওঠার ইতিহাস। হাজার হাজার বছর ধরে প্রবাহমান এসব নদ-নদী এখনো যথারীতি প্রবাহিত হয়ে চলেছে। নদী উপত্যকা ও অববাহিকার কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা, ভূ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য এসব নদীর পানি ও নাব্যতার ওপর একচ্ছত্রভাবে নির্ভরশীল। নদ-নদীর পানি প্রবাহ অবারিত রাখা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ কারণেই ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার ওয়াটার শেয়ারিং সম্পর্কিত ডিসপুটগুলো শত শত বছর ধরে রাষ্ট্রসমূহের আন্তঃসম্পর্কের অন্যতম নিয়ামক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে প্রাচীন ইতিহাসেও অনেক যুদ্ধবিগ্রহের নজির আছে। নগর সভ্যতা ও শিল্প-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংঘাত বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক ফোরাম গঠনে ট্রান্সবাউন্ডারি বা যৌথনদীর পানিকেন্দ্রিক আঞ্চলিক বিরোধ মীমাংসা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

যৌথনদীর পানিকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল গ্রহণ করায় আগামী দশকগুলোতে অনেক দেশই পানি সংকটে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সম্ভবত সারা বিশ্বের মধ্যে যৌথনদীর উজানে পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মাণের সবচেয়ে বড় বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। গঙ্গা ও তিস্তার মতো আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত বাংলাদেশের নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের আগ্রাসন সৃষ্টি করেছে। নদীবাহিত পলি দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ মূলত মানবসৃষ্ট ভূ-প্রাকৃতিক ভাগাড়ে পরিণত হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। উজানের হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলো বঙ্গোপসাগরে মিলে যাওয়ার আগে গঙ্গা বেসিনে লাখ লাখ টন পলিমাটি জমা করে তিলে তিলে হাজার হাজার বছরে এ দেশটিকে গড়ে তুলেছিল। উর্বর মাটি এবং অসংখ্য নদীর সুপেয় পানিই এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। উজান থেকে নদীর পানি প্রবাহ রুদ্ধ করা মানে ঠাণ্ডা মাথায় বাংলাদেশকে হত্যা করা। বিগত পাঁচ দশক ধরে ভারত এ কাজটিই করে চলেছে।

এমনিতেই আন্তর্জাতিক নদীর ওপর কোনো দেশের এককভাবে বাঁধ নির্মাণ বা পানি প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক নদী আইনে এ সুযোগ নেই। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রকল্প সবসময়ই অববাহিকা অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। 

ভাটির অববাহিকার দেশ বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা ছাড়াই একতরফভাবে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণকালে সত্তরের দশকের প্রথম দিকে রিডার ডাইজেস্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করলেও এটি চালু করতে পাকিস্তানের সাথে চুক্তিতে আসতে হবে, অন্যথায় এটি কখনো চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে ১৯৭১ সালে ভারতের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফারাক্কা প্রকল্পের সমাপ্তি ও চালু করতে ভারতকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন মুজিব সরকার ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর অনুমতি দেয়। কার্যত বাংলাদেশের সাথে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি ছাড়াই এদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানি আটকে দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাণীবৈচিত্র্য, নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ছাড়পত্র নিশ্চিত করে দেয়। অথচ ১৯৬৫ সালে গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করলেও পাকিস্তান সরকারকে তা চালুর অনুমতি প্রার্থনা করতেও ভারত চরমভাবে ভয় পেয়েছিল। ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে ফিডার ক্যানেল ও হুগলি ভাগিরথী নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির পর বাংলাদেশের তিস্তার উজানে হুগলি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলকেও ইতোমধ্যে ভয়াবহ পানি বিপর্যয়ের সম্মুখীন করা হয়েছে।

একতরফাভাবে ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর ৭ বছরের মাথায় গজলডোবা (তিস্তা) ব্যারাজ দিয়ে ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার শুরু করে। ডাইভারশন ক্যানেলের মাধ্যমে মহানন্দা নদীতে পানি সরিয়ে নেয়ার কারণে তিস্তা এখন একটি মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। গজলডোবা বাঁধের আগে তিস্তা অববাহিকায় যেখানে ২৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যেত, সেখানে ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে এখন পানি প্রবাহের পরিমাণ ৪০০ কিউসেকেরও কম। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নে তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশ আমল থেকে বিবেচনাধীন থাকলেও অবশেষে ১৯৭৯ সালে তিস্তা ব্যারাজ ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়ে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ তা শেষ করে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও গজলডোবা ব্যারাজ এবং ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সেচ প্রকল্প এখন আংশিকভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত একটি জাতীয় ওয়াটার গ্রিড নির্মাণের যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তা বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিতভাবেই মরণ ফাঁদ। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম জননেতা মওলানা ভাসানী ফারাক্কা ব্যারাজের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভাসানীর সেই ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের চেতনা গত চার দশকে বাংলাদেশে আরো গভীর ও মূর্ত হয়েছে। এদেশের প্রত্যেক নাগরিক যেমন ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ, একইভাবে এ বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বিষ্ময়কর নীরবতায় নতুন প্রজন্ম ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত।

ফারাক্কার বাঁধের চরম ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে জাতীয় জাগরণের কবি ফররুখ আহমদের গানে :

শোনো মৃত্যুর তূর্য-নিনাদ/ফারাক্কা বাঁধ ফারাক্কা বাঁধ।

মরণও বার্তা কোটি মানুষের/মরণও বার্তা গণজীবনের

মরণও বার্তা সুখ স্বপনের/হানে বিষাক্ত শায়ক নিষাদ।

কুটচক্রীর চক্র এবার /মুছে দিতে চায় মানবিকতার

সকল চিহ্ন সম অধিকার /হানে দুর্যোগ রাতের বিষাদ।

এনে দিতে বুকে পাক-জমিনের /মরণও বহ্নি জাহান্নামের 

আনে উষরতা হিং¯্র লোভের /বাড়ায় দ্বন্দ্ব ফিতনা-ফ্যাসাদ।

নিযুত প্রাণের শুনি আহ্বান/জাগো দিকে-দিকে জঙ্গি জোয়ান

অপমৃত্যুর বুকে লেলিহান/হানো সঙ্গিন চালাও জিহাদ।

শোনো মৃত্যুর তূর্য-নিনাদ /ফারাক্কা বাঁধ ফারাক্কা বাঁধ।

[ফারাক্কা বাঁধ]

সদ্য বিলুপ্ত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা সা¤্রাজ্যবাদী, উগ্র-সাম্প্রদায়িক ভারত সরকারের কাছ থেকে না ফারাক্কা বাঁধ উঠিয়ে দিয়ে, না তিস্তা চুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের জন্য পানি আদায় করতে পেরেছে! কেমন এক নির্লজ্জ রাষ্ট্র প্রধান হাসি হাসি মুখে বলতে পারে, “ওরা যা চেয়েছে আমি তা দিয়ে দিয়েছি, চাওয়ার আগে দিয়ে দিয়েছি। আমরা কিছু না পেলেও ওরা আমার কথা মনে রাখবে।”

রোড ট্রানজিট, রেলওয়ে ট্রানজিট, পোর্ট ট্রানজিট এবং রিভার ট্রানজিট শেখ হাসিনা সরকার এক তরফাভাবে ভারতকে প্রদানের পরও বাংলাদেশের জন্য এক ফোঁটা পানি আদায় করতে পারেনি। জুলাই ৩৬ বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে শতসহস্র ছাত্র তরুণ যুবার রক্ত মাড়িয়ে পলাতক স্বৈরাচারকে দিল্লি তাদের কোলে আশ্রয় দিয়েছে। রক্তের স্রােত শুকাতে না শুকাতেই ত্রিপুরার গোমতী নদীর ওপর স্থাপিত ডম্বুর বাঁধ আকস্মিকভাবে মধ্যরাতে খুলে দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। “আমরা কিছু না পেলেও ওরা আমার কথা মনে রাখবে” সত্যিই ভারত তার কথা মনে রেখেছে।

ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ, বরাক অঞ্চলের বাঁধ দিয়ে ও ডম্বুর বাঁধ বছরের পর সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা পলিমাটি ও সুপেয় মিঠা পানির বাংলাদেশকে মরুঅঞ্চলে পরিণত করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বাংলাদেশের আজন্ম দুশমন ভারত। শুকনো মওসুমে পানির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি অনাবাদি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

ভারতের কথিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত-সমালোচিত একটি প্রকল্প। বিশ্বের পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কাগুলো তুলে ধরছেন। বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও একটি জাতীয় পানিগ্রিড নির্মাণের যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তা বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিতভাবেই মরণ ফাঁদ। এদেশের প্রত্যেক নাগরিক যেমন ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ, একইভাবে এ বিষয়ে আমাদের তথাকথিত মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের বিষ্ময়কর নীরবতায় নতুন প্রজন্ম ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে দেশের মূল ধরার গণমাধ্যমও ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দায়সারা আচরণ করেছে। সাম্প্রতিক আকস্মিক প্রলয়ঙ্ককরী বন্যায় কোটি কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভারতের পানি আগ্রাসনসহ সব আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারও এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাধ্য হয়ে ভারত সরকার তাদের চিরাচরিত উচ্চকণ্ঠ নিচু করে ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার যেনতেন ব্যাখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী কথা ছিল ৭২ ঘণ্টা পূর্বে জানানো। এসব কথার মাঝে ভারতের আগ্রাসী নীতি কখনো বদলাবে বলে মনে হয় না। যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যৌথ নদীর পানির হিস্যা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেওয়া না হয়, তবে বাংলাদেশের সামনে আরও দুঃখ-দুর্দশা তেড়ে আসছে।

বিগত ৬০ বছরেও ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, উত্তর চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা এরূপ আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করেনি। এতে তারা হারিয়েছে নিজ বসতবাড়ি, মাথাগোঁজার একটুকু ঠাঁই, কোলের শিশু, তরুণ-যুবক, বৃদ্ধ মা-বাবা, গোয়ালের গরু, খামারের হাঁস-মুরগি, মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল, স্কুলঘর, কলেজ-মাদরাসা, রুটি-রুজির দোকান এবং আরও অনেক অনেক জীবিকার বাহন। বলা যায় চোখের এক পলকে কোটি মানুষ মুহূর্তেই সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। এর একমাত্র কারণ ভারতের পানি সন্ত্রাস।

কয়েক সপ্তাহ পর উল্লিখিত অঞ্চলে পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা দিয়েছে আরও চরম সমস্যা। রাস্তাঘাটগুলো একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গৃহহীনরা আশ্রয়হীন। কাঁচা, টিনের ঘর, সেমি পাকা এবং কোথাও কোথাও এক তলা বাড়ি একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে নানা রোগ-ব্যাধি। আমন ফসলের মাঠগুলো ধু ধু বালুচর। ফসলী জমি গড়ে ৩-৫ ফুট, কোথাও কোথাও ১০ ফুট পাহাড়ী বালুতে ঢাকা পড়েছে। ফলে এই জমিগুলোতে পুনরায় কখন চাষাবাদ করতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট তারিখ কৃষকদের অজানা। ফলে এসব অঞ্চলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবার সমূহ সম্ভাবনা।

আগ্রাসী ভারত বাংলাদেশর উজানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রবহমান অসংখ্য নদীর ওপর পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার সমূহ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে। শুকনো মৌসুমে নদীর উজানে বাঁধ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে ভাটি অঞ্চলের শত শত নদীতে পলি পড়ে নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অতি বৃষ্টি অথবা ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে প্রতি বছর বাংলাদেশ এ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এ সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন।

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে, দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ১১ জেলায় মোট ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫২২ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপদেষ্টা আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৯ লাখ ৪২ হাজার ৮১১ জন। মৃত্যের সংখ্যা ৭৪ জন। আহত হয়েছেন ৬৮ জন। মৃতদের অনেকেই সর্পদংশনে মারা গিয়েছে।

বাংলাদেশকে ভারতীয় অবন্ধুসুলভ যাবতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার হতে হবে। কুটনৈতিক পর্যায়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। বন্ধু রাষ্ট্রসমূহকে বাংলাদেশের পাশে রেখে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এটি অবৈধ সীমান্ত হত্যার চেয়েও গুরুতর সমস্যা। এর সমাধানের মাঝেই আছে এক সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

লেখক : সম্পাদক, মাসিক দ্বীন দুনিয়া ও কিশোর দ্বীন দুনিয়া

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির