post

ভূ

কাজী মো: বরকত আলী

৩১ মে ২০২২
ভূ-রাজনীতি হচ্ছে স্থান (space) ও রাজনীতির (politics) মধ্যবর্তী সম্পর্কে বিজ্ঞান যা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সেরা ভৌগোলিক ধারণা প্রদানের প্রচেষ্টা। জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষা থেকে এটি বেরিয়ে আসে। তথ্য ও নীতি অনুসন্ধান করে, যা জাতীয় চাহিদা পূরণ করতে কার্যকর হয়। রাষ্ট্রের পারিসরিক চাহিদা বিবেচনা করে ভূ-রাজনীতি প্রপঞ্চকটি প্রসারিত হয়। ভূ-রাজনীতির জনক Karl Hausofer স্পষ্টভাবে The Dynamic aut of Geopolitics”  এ বলার চেষ্টা করেছেন যে ভূ-রাজনীতিতে স্থানকে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয় (Fifield and Pearcy)। সুইডেনের Goleborg  বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জার্মানপন্থী অধ্যাপক সুইডেনবাসী  Rudolf Kjellen  ভূ-রাজনীতি শব্দটির স্রষ্টা ও প্রথম ব্যবহারকারী। এটিকে তিনি রাষ্ট্রের বিজ্ঞান হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছেন। Lebensraum (জীবন্ত স্থান) বা জৈবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্থানের জার্মান ধারণার ওপর ভূ-রাজনীতি বিষয়টি প্রসারতা লাভ করেছিল। শৃঙ্খলা ও আত্ম বিশ্বাসের নৈতিক অবস্থা বা শক্তিতে রাজনৈতিক সামরিক প্রশিক্ষণে এটি হাতিয়ার হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল। ভূ-রাজনীতির প্রকৃত সূত্রপাত সংঘটিত হয় ১৯২৪-এJournal of Geopolitics  প্রকাশনার সাথে সাথে। বিশ্ব বিষয়গুলোতে ভাগ্য নির্ধারণে জার্মানির পালনীয় বিরাট ভূমিকা সম্বন্ধে এই জার্নাল প্রমাণ, যুক্তি প্রভৃতি দ্বারা জার্মান রাজনৈতিক নেতাদের দৃঢ়প্রত্যয় সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিল। হিটলারের (Hitlar) নেতৃত্বাধীন ভূ-রাজনৈতিক নীতিগুলো বাস্তবে কার্যকর হয়েছিল এবং এর ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরূপে ভূ-রাজনীতি জার্মান রাজনীতিবিদদের জৈবিক রাষ্ট্রের (Lebensraum ) জন্য রাষ্ট্ররূপ জীবটির জীবন-মরণ সংগ্রামে রাজনৈতিক কার্যকলাপের কৌশলের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সরবরাহ করেছিল। এটি নাজি জার্মানির (ঘধুর (Nazi Germany) আগ্রাসনের নীতির স্বপক্ষে ভৌগোলিক ঘটনাগুলোর অপব্যবহারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থান করেছিল। জার্মানিতে জন্মলাভ করা ভূ-রাজনীতি প্রাসাদতুল্য সম্ভাবনা (edifice) ১৯৩৯-৪৫ এর যুদ্ধের পর প্রকৃত পক্ষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, এই যুদ্ধে মিত্র শক্তির (Allice) হাতে জার্মানি এক অকল্পনীয় অপমানকর পরাজয়ে পীড়িত হয়েছিল। আধুনিক রাজনৈতিক ভূগোলের জনক হিসেবে পরিচিত Friedrich Ratzel  জৈবিক রাষ্ট্রের ধারণার বিকাশ সাধন করেন এবং তাঁর থেকে Kjellen এবং Haushofer ধারণাটি গ্রহণ করেছিলেন। জার্মান ভূ-রাজনীতিবিদগণ দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করেছিলেন যে রাষ্ট্রের বেড়ে ওঠার জৈবিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং সেটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হলে মারা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সর্বনাশা পরাজয়ের ফল হিসেবে জার্মানিকে আকৃতিতে হ্রাস করা হয়েছিল। তথাকথিত জনাধিক্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় অধিক স্থানের প্রয়োজন হয়, যা প্রয়োজন হলে অনধিকার প্রবেশ বা আক্রমণ ও বিজয়ের মাধ্যমে লাভ করা যায়। জার্মান ভূ-রাজনীতিবিদদের এই ধারণাগুলো হৃদভূমি (Heartland) তত্ত্বের প্রবক্তা ব্রিটিশ ভূগোলবিদ Halford J Mackinder দ্বারা শক্তিশালী হয়েছিল। ম্যাকিন্ডার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে অধি রাষ্ট্রের (Superstate)  আকারে জার্মানির উত্থান হবে, অধিক শক্তির অধিকারী হয়ে সে হৃদভূমি (মানচিত্র-১) নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে থেকে সমগ্র পৃথিবীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে। তাঁর মতে “Who rules East Europe commands the Heartland Who rules the Heartland commands the World-Island Who rules the World-Island commands the world জার্মান আগ্রাসন নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে কেউ কেউ ভূ-রাজনীতি শব্দটি একটি অশুভ গূঢ় অর্থ বহনকারী অর্থে ব্যবহার করেছেন। জাতীয় রাজনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে তা ভৌগোলিক তথ্যগুলোর ধ্বংস ও মন্দ ব্যবহার জ্ঞাপন করে। এটি দুর্ভাগ্যজনক ১৯৩৮ সালে জার্মানি যখন ইউরেশিয়ার বিশাল উন্মুক্ত এলাকার দিকে এর সম্প্রসারণের গতিধারা শুরু করে তখন ভূ-রাজনীতির (Geo-politics) নতুন ছদ্মবিজ্ঞানের প্রতি আমেরিকান ভূ-রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এটির ওপর পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করে। lsaiah Bowman এর মত ব্যক্তিরা মনে করেন ভূরাজনীতি ছিল “চুরির জন্য একটি কৈফিয়তের বাস্তবতা।” অন্যান্য ব্রিটিশ আমেরিকান ভূগোলবিদরা ভূ-রাজনীতিকে “জাতীয় আয়তন বৃদ্ধিকরণের জন্য আগ্রাসন (aggrssive)" জাতীয়তা হিসেবে কলঙ্কিত করেছেন। রাজনীতির ওপর ঐতিহাসিক পরিবেশের পরোক্ষ প্রভাব অনুসন্ধান ভূ-রাজনীতি সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকান ভূ-রাজনীতিবিদ হার্ট শোর্নের (১৯৬৪) মতে “দলের সংরক্ষণবাদীদের ধারণা অনুসারে ভূ-রাজনীতি সরলভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমস্যাগুলোতে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক জ্ঞান এবং কলাকৌশলগুলোর উপস্থাপন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান শাসক হিটলার জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে (মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয়) কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি শিক্ষক হওসোফার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। কার্ল হাওসোফার রাষ্ট্রের জৈবিক ধারণা সমর্থন করে বলেছিলেন, “জনসাধারণের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র প্রয়োজরমত তার পরিসীমা বর্ধিত করতে পারে”- এই মতবাদের ওপর ভিত্তি করে নাৎসি-জার্মানির “অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় রাজ্যজয়” নীতি প্রবর্তিত হয় এবং এটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নাৎসি-জার্মানির বৈদেশিক নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল। এটি সমালোচনা করতে গিয়ে আমেরিকান বুদ্ধিজীবীরা ভূ-রাজনীতিকে একটি শক্তির আকাক্সক্ষার খেলায় ভৌগোলিক নীতির প্রয়োগ” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি জার্মানির নির্মম পরাজয়ের পর বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক গতিধারা পরিবর্তিত হয় এবং বিশ্বসম্প্রদায় দু’টি পারমাণবিক শক্তি বলয়ে (যুক্তরাষ্ট্রের ও সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে পৃথিবীর রাজনীতি নতুন মেরুকরণের দিকে প্রসারিত হয়। ভূ-রাজনীতির গতিধারা নতুন দিকে প্রবাহিত হয়।  স্নায়ু যুদ্ধ, ঠান্ডাযুদ্ধ ও তারকাযুদ্ধের প্রসারের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বৃদ্ধি পেলেও ভূমি দখলের রাজনীতি শেষ হয়নি। নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে স্থানিক প্রভুত্বের রাজনীতি বৃদ্ধি পায় এবং ভূ-কৌশলগত স্থানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নাৎসি জার্মানির মত বিশ্বপরাশক্তিগুলো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জৈবিক সত্তা বৃদ্ধির জন্য সরাসরি শক্তি প্রয়োগ না করলেও কৌশলে ও বিভিন্ন সংস্থার ছত্রছায়ার রাষ্ট্রের বহিঃবিশ্বে কলেবর বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যেমন- আফগানিস্তান ভূ-কৌশলগত ও রণকৌশলগত অবস্থানকে দখলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাটো (NATO) ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ব্যবহার করেছে। অন্য দিকে ন্যাটো এর কলেবর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর প্রভার বিস্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নব্বই এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বব্যাপী ভূ-কৌশলগত অবস্থানে সেনাঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ভূ-রাজনীতির নতুন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আমার মনে হয়। গত ১৫-২০ বছর ধরে নতুন করে চীনা শক্তির অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির উত্থানের ফলে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলের মাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সর্বাধিক ও অধিক সক্রিয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের অগ্রযাত্রা মোকাবেলা করার জন্য ভারত- যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রী স্থাপিত হচ্ছে। অন্য দিকে চীন তার নতুন কৌশলকে বেগবান করার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং একইভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য এলাকার দেশগুলোর সাথেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। শক্তির জন্য স্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য দিকে ভূ-রাজনীতি হলো “প্রাকৃতিক নিয়ামক ও পরিবেশগত উপাদান যখন রাজনীতির ওপর বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে তখন তাকে ভূ-রাজনীতি বলে।” এর প্রেক্ষিতেই ভূ-রাজনীতিবিদ কার্ল হাওসোফার পৃথিবীর গোলার্ধ সম্পর্কে মতবাদ প্রকাশ করে বলেন-“যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে নিজেকে পশ্চিম গোলার্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।” যদিও এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে চাপিয়ে রাখার একটি কৌশল। পরবর্তীতে আমেরিকা তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির উত্থানের ফলে বিশ্বব্যাপী তার প্রভাববলয় তৈরি করেছে। অর্থনৈতিক শক্তি পৃথিবীতে ব্যাপক বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রের স্থানের প্রাচুর্যতাই সম্পত্তি, শক্তি ও শান্তি বৃদ্ধি করতে পারে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমান বিশ্বের নতুন উদীয়মান শক্তি চীন তার স্থানের প্রাচুর্যতা, সম্পত্তি ও বিশাল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রকের আসনে নিজেকে বসিয়ে দেওয়া সহজতর হবে। যার জন্য তাকে তার বিশাল সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম কৃষিবলয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন আবশ্যকীয়। অন্য দিকে ভারতের মত জনসংখ্যাবহুল দেশকে যদি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে হয় তাহলে তাকে প্রতিবেশী প্রভাব বলয়ের সাথে সু-প্রতিবেশীসুলভ অবস্থান সৃষ্টি করে তার জনসংখ্যা, কৃষি, অর্থনৈতিক ও বিশাল জলসীমানাকে কাজে লাগাতে হবে। অন্যথায় ভারত ও চীন উভয়েরই বিশ্বশক্তি হওয়া কঠিন হবে। ব্রিটিশ ভূ-রাজনীতিক ম্যাকিন্ডার “হৃদভূমিতে আধিপত্যের রণকৌশল বিবেচনা করলেও মার্কিন ভূ-রাজনীতিক স্পাইকম্যান হৃদভূমির সমালোচনা করে বলেন, এটি বিভিন্ন দুর্বলতায় পর্যবশিত। তিনি বলেন, হৃদভূমি সুপ্ত সম্ভাবনার ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল। তিনি (স্পাইকম্যান) দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন যে ইউরেশিয়ার সুপ্ত সম্ভাবনাময় শক্তি হৃদভূমিতে নয় বরং হৃদভূমি বেষ্টনকারী পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশে অবস্থিত রয়েছে। স্পাইকম্যান এই এলাকায় নামকরণ করেছে প্রান্তভূমি (Rimland) যা মোটামুটিভাবে হৃদভূমির অধিকতর অভ্যন্তরীণ বা প্রান্তিক অর্ধচন্দ্রের সাথে সমসূত্রে অবস্থিত (মানচিত্র-১)। তাঁর মতে,Who Control the Rimland, rules Eurasia Who rules Eurasia, Control destinies of the world.” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হলেও এই বিশাল প্রান্তিক এলাকায় রাষ্ট্রগুলোকে একক কোন রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। এই এলাকার মধ্যেই অবস্থিত পৃথিবীর অধিকাংশ জনবহুল রাষ্ট্র এবং জনবহুল মুসলিমরাষ্ট্রসমূহ। বিংশ শতাব্দীর এই যুগে রণকৌশলের পরিবর্তন হওয়ায় আকাশশক্তি ভূ-রণকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্র তার স্থল, নৌ ও আকাশশক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ১৯৪৬ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রান্তিক তত্ত্বের আলোকেই প্রণীত হয়েছে। এর ফলে অক্ষশক্তিদ্বয়ের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয় বিস্তার রোধের জন্য এবং প্রান্তিক ভূমি দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সাথে বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করছে। ন্যাটো, সিয়াটো, সেন্টো, আসিয়ান, অ্যাঞ্জুস প্রভৃতি এ নীতিরই বাস্তব রূপ। অন্য দিকে SAARC ভুক্ত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে SAARC-এর সদস্য পদের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখে ইতোমধ্যেই সে SAARC-এর পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রান্তিক ভূমির দেশগুলোর ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য এসব দেশের অভ্যন্তরে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ বিভিন্ন কৌশলে তার উপস্থিতি বজায় রাখছে। ফলে প্রান্তিক ভূমির মধ্যে চীনের মত বৃহৎশক্তির উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে গ্রহণ করছে না বা করতে পারছে না। এমতাবস্থায় চীনের মতো দেশগুলো যদি পরাশক্তির বাসনাকে শক্তিশালী করতে চায় তাহলে সম্পদ ও জ্বালানি শক্তির সরবরাহকারী প্রান্তিক ভূমিতে অবস্থিত সামুদ্রিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাদের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে। অধিক জনবহুল বাংলাদেশ এই প্রান্তিক ভূমির এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত, যার উত্তর দিকে ভারত ও চীন, পূর্ব দিকে ভারত ও আসিয়ান এবং দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি অবস্থিত যাকে SAARC ও ASEAN নামক দু’টি সম্ভাবনাময় সংস্থার মধ্যে সেতুবন্ধকারী রাষ্ট্রে হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আগামী পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি হবে দক্ষ জনসংখ্যা ও জলজসম্পদ। বাংলাদেশের জন্য এ দু’টিও সম্ভাবনাময়, সুতরাং বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান আগামী পৃথিবীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। চীনকে যদি ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সামুদ্রিক শক্তিকে অব্যাহত রাখতে চায় তাহলে এসকল শক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্য দিকে ভারতের অখন্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থার একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয়। অন্যথায় ভারতের ঝবাবহ ঝরংঃবৎ বলে খ্যাত সাতটি রাজ্যের ওপর ভারতের আধিপত্য খর্বিত হতে পারে সে বিষয়টিকে ভারতকে মাথায় রাখতে হবে। এ প্রেক্ষিতে ভারতের উচিত হবে তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, স্থিতিশীলতা ও অখন্ডতার জন্য বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে সম্মান জানানো এবং বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। ভূ-রাজনীতি ও বাংলাদেশ বাংলাদেশ তার সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই প্রতিনিয়ত কোন না কোন সমস্যা মোকাবেলা করেই চলেছে। কখনও ফারাক্কা সমস্যা, কখন সীমান্ত সমস্যা, কখনও টিপাইমুখ সমস্যা আবার কখনও বা চলছে পার্বত্য এলাকার অশান্ত পরিবেশ- এমনিভাবে অসংখ্য সমস্যা। দেশটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধ আর লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে কিন্তু স্বাধীনতা ছিল এক খন্ডিত ভূ-খন্ড নিয়ে। বঙ্গভঙ্গের যে বাংলা তার ৬৪ শতাংশ নিয়ে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলার ৩৬ শতাংশ বঞ্চিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম। সুতরাং বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকেই বঞ্চনার শিকার আর এখন দেশটির বিরুদ্ধে চলছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের নগ্ন থাবা। ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো কিছু স্বার্থবাদীগোষ্ঠী এ দেশকে গ্রাস করার জন্য মেতে উঠেছে উন্মাদ হলি খেলায়। তারা পদে পদে এ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে ভূ-লুণ্ঠিত করতে চাচ্ছে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে। তারা আষ্টেপৃষ্ঠে খামছে ধরেছে এ দেশের লাল সবুজ পতাকাকে। ভৌগোলিকভাবে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি জনবহুল দেশ। দেশটি ২০০ ৩র্৪ উত্তরাংশ থেকে ২৬০৩র্৮ উত্তরাংশ এবং ৮৮০ ০র্১ থেকে ৯২০৪র্১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত যা দেশটির পরম (Absolute) অবস্থান নির্দেশ করে। অবস্থান ও ভূ-কৌশলগত কারণেই বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ। বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট ASEAN, SAARC-এর মত উদীয়মান আঞ্চলিক জোট, বর্তমান বিশ্বে আলোচিত দেশ ও Rising Country চীন-এর মত দেশ এবং দক্ষিণে বিশাল জলরাশিBay of Bengal এর মত অবস্থানিক প্রপঞ্চকের মধ্যে অবস্থিত যা তাকে বিদেশনীতি গ্রহণ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে (মানচিত্র-২)। এই সকল অবস্থানিক প্রভাব বলয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, সৎ, যোগ্য, জ্ঞানী ও জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার যার কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। অন্য দিকে একটি রাষ্ট্রের পরম অবস্থান (অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত), সমুদ্র উপকূলবর্তী অবস্থান  (Sea–Side Location) সামরিক কৌশলগত অবস্থান (Stratagic Location), সন্নিহিত অবস্থান (Relative Location) সুসংহত হলে সেই রাষ্ট্রের প্রভাববলয় বেড়ে যায় যা বাংলাদেশের অনুকূলে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভৌগোলিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তি বিশ্বব্যাপী আন্তঃনির্র্ভরশীলতার এ যুগে কোন জাতিই বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই একে অপরের সাথে সম্পর্ক রাখা জরুরি। সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা হয়। নীতি হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অবলম্বিত কিছু কার্যক্রম। একটি রাষ্ট্রের জাতীয় নীতি দুই প্রকারÑ ক. অভ্যন্তরীণ নীতি খ. বৈদেশিক নীতি। সাধারণভাবে অন্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত বৈদেশিক নীতিকেই পররাষ্ট্রনীতি বলে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভৌগোলিক উপাদান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ক্ষমতাসীন দল দ্বারা প্রভাবিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ও পাশের ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এমনকি পাকিস্তানের সাথে এই দু’টি দেশের সম্পর্কের ওপর। এই প্রেক্ষিতে ১৯৭২ এর পররাষ্ট্রনীতি এবং ২০১০ সালের পররাষ্ট্রনীতির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তি ১.অবস্থান : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অস্থিত। পাশের দেশগুলো থেকে দূরত্ব সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই দেশটিকে সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ স্থান দিয়েছে। ২.অবস্থানের সামরিক গুরুত্ব : বাংলাদেশের সব দিক ভারত দ্বারা বেষ্টিত। নিঃসন্দেহে এটা একটা দুর্বলতা। অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ নাজুক হলেও এর সামরিক গুরুত্ব অপরিসীম, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা অতিক্রম করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে ৯০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করলে আশপাশের প্রায় ৪৮২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ধ্বংসলীলা চালানো সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক সামরিক শক্তিধর দেশের বাংলাদেশের ওপর তীক্ষন্য দৃষ্টি রয়েছে। ৩.পানিসীমার অর্থনৈতিক গুরুত্ব : FOW  এর মতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মহীসোপানকে “স্বর্ণখনি” বলা হয়েছে। কারণ এখানে প্রচুর পরিমাণ মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৭৬ প্রজাতির মৎস্যসম্পদ রয়েছে যা ধরতে পারলে প্রতিবছর বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের সমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। ৪.পানিসীমার সামরিক গুরুত্ব : বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা একটি ত্রিভুজ আকৃতির সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ ভারত মহাসাগর একমাত্র দিয়াগো গার্সিয়া ছাড়া এর আশপাশে আর কোনো মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নেই। বাংলাদেশের পানিসীমার এই ত্রিভুজ এলাকার ওপর যে বৃহৎশক্তি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে সে পাশের রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় পানিসীমার ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে (মানচিত্র-৩)। এ জন্যই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক প্রপঞ্চক যার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশের লুলুপ দৃষ্টি রয়েছে। ৫.দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান : আঞ্চলিক সমঝোতা, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা প্রশ্নে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই বাস্তবতা থেকেই বাংলাদেশের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে SAARC নামে একটি আঞ্চলিক রাষ্ট্রজোট গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বিজয়। এ ছাড়া ASEAN, সিয়াটো সেন্টো, BIMSTEC প্রভৃতি আঞ্চলিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠী দ্বারাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বহুলাংশে প্রভাবিত। ৬.বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থের দ্বন্দ্ব : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে মতাদর্শের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থের টানাপড়েনেই সৃষ্ট। স্বাধীনতাযুদ্ধের শত্রুরা আজ বাংলাদেশের মিত্র (যেমন-ইউএসএ, চীন) এবং সাহায্যকারীরা দূরে সরে গেছে। অতীতের এবং বর্তমানে সরকারগুলোর পটপরিবর্তনের ফলে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তা বৃহৎশক্তিগুলোর সম্প্রসারণবাদী নীতিরই সৃষ্ট। ৭.খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অবস্থা : নদীবাহিত পললদ্বারা বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সৃষ্ট হলেও এ দেশের একটা বৃহৎ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাচীন ভূভাগ, সে সকল এলাকাগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম, মৃত্তিকা, পানিসম্পদসহ বহু প্রাকৃতিক সম্পদ। এসব সম্পদের প্রতি রয়েছে বহৎ শক্তিবর্গের শকুনি দৃষ্টি। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরের সময় মৌলভীবাজারের ইউরেনিয়াম নিয়ে মন্তব্য করতে ভুল করেননি। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মতো জ্বালানি শক্তির ওপর পাশের দেশসহ বহুদেশ মন্তব্য করেই চলেছে যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে প্রভাবিত করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির পরাজয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর চীন ধীরে ধীরে বর্তমান বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজকে প্রস্তুত করছে। এমতাবস্থায় চীনকে যদি আগামী বিশ্বশক্তির কেন্দ্রবিন্দু বলে খ্যাত ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে সবচেয়ে যোগ্যতম স্থান হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা তথা বাংলাদেশ কেননা এখানে চীনের সাথে আছে জনসংখ্যার মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক মিল এবং কম দূরত্ব। এমতাবস্থায় চীন এই এলাকার ওপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটা কোন দিক থেকে গ্রহণ করবে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাংলাদেশের সরকারযন্ত্রের। সামান্য ভুলের কারণে হয়তো এই সম্ভাব্য এলাকাটি এক সময় সমগ্র জাতির জন্য দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির