মাসুমুর রহমান খলিলী মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনার পর দুই বছরেই পুরো অঞ্চলের চিত্র পাল্টে যায়। তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া ও ইয়েমেনে শাসনের পরিবর্তন ঘটে। বিপ্লবোত্তর তিউনিসিয়া ও মিসরের নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো সরকার গঠন করে। রাজাশাসিত মরক্কোর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনেও ইসলামপন্থীদের সরকার গঠিত হয়। লিবিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের প্রাধান্য থাকলেও নির্বাচনে বিজয়ী হয় মধ্যপন্থীরা। ইয়েমেনে সরকার পরিবর্তন হলেও নির্বাচনের আয়োজন হয়নি এখনো। দেশটির গোত্রতান্ত্রিক অবস্থা অবশ্য অন্য প্রতিবেশীদের তুলনায় বেশখানিকটা আলাদা। সিরিয়ায় আরব জাগরণ শুরু হওয়ার পর দুই বছরে লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটার পরও বাশার আল আসাদের সরকারের পতন তো ঘটেইনি, বরং সিরিয়াকে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যেও পরিবর্তনের লণ দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনে নতুন নতুন শক্তি কেন্দ্রের উদ্ভব যেমন ঘটছে তেমনিভাবে পুরনো শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতার ক্ষয় হচ্ছে। বিশেষত পশ্চিমা শক্তি, যারা এত দিন মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছিল, তাদের সেই ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকেরাই। এর অর্থ পশ্চিমের সব ক্ষমতা অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটাও হয়তো নয়। তবে এদেরকে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সিরিয়া নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে এক ধরনের অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে। আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের একের পর এক অগ্রাভিযানের মুখে তাদের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অন্য দিকে বাসারের সরকারি বাহিনীর সাথে যোগ দেয় লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের মুকতাদা আল সদরের শিয়া মিলিশিয়া ও ইরানি বিপ্লবী গার্ডরা। এতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ার রণাঙ্গনের ভারসাম্য নতুন রূপ নেয়। কৌশলগত কাসির শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এরপর বিদে"াহীদের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। অস্ত্র সরবরাহের ওপর ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়; কিন্তু এর পরও প্রশ্ন থেকে যায় পশ্চিমারা কি আদৌ সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কার্যকর অস্ত্র সরবরাহ করবে? ওয়াশিংটন, লন্ডন ও ডি-এইট নেতৃবৃন্দের সামনে এটি ছিল একটি বড় ইস্যু। এই ইস্যুর পেছনেও ছিল একটি বড় প্রশ্ন। সেটি হলোÑ পশ্চিমারা গত শতকে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অবয়ব দেয়ার ব্যাপারে যে ক্ষমতার অধিকারী ছিল এখন কি তাদের সে ক্ষমতা আছে? মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্ত এখন ক্রমেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। ১৯১৬ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে অনুষ্ঠিত সিকেস-পিকট চুক্তি অনুসারে মধ্যপ্রাচ্যের এই সীমানা তৈরি হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রভাবের অনেকটাই অবসান ঘটে। এরপর মিসরে হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে রুশ-মার্কিন দুই বৃহৎ শক্তি আবির্ভূত হয় মধ্যপ্রাচ্যের রঙ্গমঞ্চে। স্নায়ুযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শক্তি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে একক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় আমেরিকা। উপমহাসাগরের তেল রক্ষা, ইরানের প্রভাব প্রতিহত করা এবং ইসরাইল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু টুইন টাওয়ারের ঘটনার জের ধরে আফগানিস্তান ও ইরাক দখল করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার ভেতর থেকে পরিবর্তন ঘটে। যারা এক সময় আমেরিকাকে সিরিয়ার সঙ্কটে বড় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন, এরা যেন নতুন এই বাস্তবতা উপলব্ধি না করে অতীতের মধ্যে রয়ে গেছেন। এরা ধরে নিয়েছেন যে আমেরিকা এখনো আগের মতো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রাখতে পারবে; কিন্তু চারটি মৌলিক পরিবর্তনের কারণে এখন সেই অবস্থা আর যুক্তরাষ্ট্রের নেই অথবা সেটি এখন দেশটির জন্য আর কাক্সিক্ষতও মনে করা হচ্ছে না। পরিবর্তিত এই বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে মূলত ইরাক ও আফগান যুদ্ধে আমেরিকার ব্যর্থতার কারণে। সেই সাথে এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে আরব বসন্ত। এর জন্য আমেরিকানদের সম্ভাব্য জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়টিও কাজ করছে। তেলনিরাপত্তা আমেরিকানদের সামনে আগের মতো তত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা বুঝতে পেরেছে তার সামরিক শক্তি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সরকারের পতন নিয়ে আসতে পারবে; কিন্তু একটি জাতি গঠনের ক্ষেত্রে আমেরিকা একটি খুবই দুর্বল ও অকার্যকর শক্তি। আফগানিস্তান ও ইরাকে এক দশক ধরে আমেরিকা অবস্থান করে অস্থিরতা, সড়ঘাত ও সহিংসতার বিস্তৃতিই কেবল ঘটিয়েছে। এ দুটোর কোনো একটি দেশই নিশ্চিতভাবে পশ্চিমা শিবিরে এসে গেছে, এমনটি বলা যাবে না। ইরাকের ওপর ক্রমেই সুদৃঢ় হচ্ছে ইরানের নিয়ন্ত্রণ। আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থায় পুরোপুরি নেই। এ কারণে জন ম্যাককেইনের মতো ব্যক্তি যারা সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলছেন। তারাও বলছেন সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের পা রাখার দরকার নেই। এর পরিবর্তে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিলেই চলবে। পশ্চিমের কাড়িত রাজনৈতিক লাভের জন্য এটিই হবে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বিদ্রোহীদের কিছু অস্ত্রশস্ত্র দেয়া পর্যন্তই এগিয়েছেন; কিন্তু এর সাথে গভীরভাবে জড়ানোর ব্যাপারে বরাবরই তিনি উদাসীন ও অনিচ্ছুক থেকেছেন। ওবামার উপদেষ্টাদের বক্তব্য ছিল ইরাক আর আফগানিস্তান দখল করে আমেরিকার জন্য যেখানে ভালো কোনো ফল পাওয়া যায়নি সেখানে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করে কী এমন বড় ফল পাওয়া যাবে। লিবিয়ায় নো ফ্লাই জোন কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ভূমিকা রেখেছিল ফ্রান্স। এর পরও বেনগাজিতে চার মার্কিন কূটনীতিক হত্যার ঘটনার পর লিবিয়ায় সামরিক অভিযান নিয়ে আমেরিকান কংগ্রেসে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। শুধু এই ইস্যুকে ঘিরে জাতিসঙ্ঘে বক্তব্য রাখাকে কেন্দ্র করে সুজানা রাইস আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেননি। সেখানে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছেÑ মধ্যপ্রাচ্যে যে সরকারের পতন ঘটানো হচ্ছে তারা আমেরিকার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর; কিন্তু যারা এরপর ক্ষমতায় আসছেন তারা মার্কিন স্বার্থের পক্ষে ভূমিকা রাখবেন, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? এটি মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে আমেরিকাকে অনেকটাই নিরুৎসাহিত করছে। আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের জন্য মহামন্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হলো এমন এক বাস্তবতা, যার অর্থ হলো পশ্চিমের পক্ষে এখন আর বড় রকমের অর্থনৈতিক দায় বা বোঝা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতার কারণেই ইউরোপে সামরিক ব্যয় দ্রুতগতিতেই কমানো হচ্ছে। পেন্টাগনের বাজেট কমানোও শুরু হয়েছে। ইরাক যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ব্যয় হবে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। আমেরিকার সরকার এর মধ্যে প্রতি এক ডলার ব্যয়ে ৪০ সেন্ট খরচ করেছে ঋণ নিয়ে। এ ঋণের বড় অংশের জোগানদাতা হলো চীন। এ বিপুল ঋণে দায়গ্রস্ত হয়ে এখন আর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনো অর্থনৈতিক দায় সৃষ্টিকারী অঙ্গীকার নিতে না চাওয়া ওবামার জন্য মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তৃতীয় বিষয়টি হলো আরব জাগরণ। মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ছিলেন আমেরিকার দীর্ঘ দিনের মিত্র ও সহযোগী সরকার। ২০১১ সালের গোড়ার দিকে আমেরিকা তার পতনের ব্যাপারে একমত হয়। এতে ইসরাইল ও সৌদি আরবের মতো মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অন্য দীর্ঘ দিনের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, ওবামা প্রশাসনের জন্য মোবারককে বিসর্জন দেয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিকই ছিল। তিনি সিরিয়ার মতো রক্ত ঝরিয়ে টিকে থাকার ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলেন। অর্থাৎ সিরিয়ার মতো জনবিক্ষোভের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে পারলে আমেরিকা মোবারককে রক্ষার চেষ্টা করতে পারত বলে তাদের ধারণা। মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে মার্কিন নীতির একটি সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো, আমেরিকা স্বীকার করে নিয়েছে যে সেখানকার জনগণই ঠিক করে নিক এরা কোন পথের যাত্রী হবে। মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে অনেক শক্তি সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকান বিশ্লেষকদের ভাষায় ইসলামিজম শিয়া-সুন্নি মতের কট্টর অনুসারীসহ এমন অনেক শক্তি কাজ করছে, যা পশ্চিমা স্বার্থের জন্য হয়তো বা বিপজ্জনক। এসব শক্তিকে কোনোভাবেই পশ্চিমারা একবারে দমন করতে পারবে না; কিš' কৌশলে এক পরে বির"দ্ধে অন্য পকে যুদ্ধে জড়িয়ে দেয়া গেলে যেই হার"ক না কেন লাভ হবে আমেরিকান স্বার্থের। সুন্নিদের মধ্যে আমেরিকান স্বার্থের জন্য সবচেয়ে বড় বিপজ্জনক হলো আলকায়েদা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শক্তিগুলো। অন্য দিকে শিয়াদের মধ্যে অরাষ্ট্রিক শক্তি হিজবুল্লাহ ও মুকতাদা সদরের মিলিশিয়া এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইরান আমেরিকার স্বার্থের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সিরিয়ায় এই দুই শক্তিকে মুখোমুখি করে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এই লড়াইয়ের দ্রুত সমাপ্তি ঘটলে পক্ষগুলোর শক্তি ক্ষয়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এ কারণে বিদ্রোহীরা যখন শক্তিশালী হয়েছে তখন তাদের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আবার যখন বাশার আসাদ বাহিনী প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করেছে তখন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধকে চূড়ান্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। সম্ভবত এ কারণে জন ম্যাককেইনের মতো ব্যক্তিও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এখন অস্ত্র সরবরাহের পক্ষে কথা বলছেন। আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমেরিকার জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জন। যুক্তরাষ্ট্রে শেইল বিপ্লবের মাধ্যমে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদন বেড়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলের ওপর আমেরিকার নির্ভরশীলতা কমিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একটি প্রধান যুক্তি ছিল সেখানকার তেলসম্পদের ওপর আমেরিকার নির্ভরশীলতা। সেই নির্ভরশীলতা এখন ক্রমেই কমে আসছে। আর একই সাথে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের দিনও শেষ হয়ে আসছে। যদিও উপসাগর এবং অন্য মিত্র দেশগুলোতে আমেরিকার বৃহদাকার ঘাঁটিগুলো মার্কিন বৈরী শক্তিগুলোর প্রাধান্যকে প্রতিহত করতে এখনো ভূমিকা রেখে আসছে। অন্য দিকে সিরিয়ায় ভূমিকা রাখার পরও রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে খুব বেশি উদগ্রীব, এমনটি বলা যাবে না। তবে ইরানের আমেরিকার ব্যাপারে বিশেষ ভীতি রয়েছে। ইরানের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিবাচক ফলাফলের পরও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে পারমাণবিক প্রকল্পে হামলার বিষয়টি বিকল্প হিসেবে সামনে রয়ে গেছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন অনুসারে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের উদ্বেগের সাথে দেখার একটি বড় কারণ হলো বিদ্রোহীদের মধ্যে আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট জিহাদি গ্রুপের অবস্থান। এ ছাড়া আমেরিকা ও ইউরোপ এখানকার আঞ্চলিক কূটনীতির সাথেও গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। এখানে পশ্চিমা মানবাধিকারবাদীদেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। এরা লিবিয়ার বিদ্রোহীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে সমর্থন করেছিল; কিন্তু সিরিয়ায় বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে পশ্চিমারা কতটুকু করবে তার একটি সীমাবদ্ধতা নানা কারণে দেখছে। বেসামরিক নাগরিকদের রায় কর্তব্য তত্ত্বের সমর্থক অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গারেথ ইভান্সও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তারা মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের প্রতিপক্ষ আদর্শিক শক্তিগুলোর দ্বন্দ্ব দেখতে চান; কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে স্নায়ুযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি কামনা করেন না। যার কিছুটা হলেও লক্ষণ সিরিয়াকে কেন্দ্র করে দেখা যাচ্ছে। এসব কারণেই সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহায়তা দানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিদ্ধান্ত নিলেও দেশটির সঙ্কটে গভীরভাবে জড়ানোর ব্যাপারে তিনি বেশখানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত। অধিকন্তু তার উপদেষ্টা এবং মিত্রদের অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা শক্তির সীমিত ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন। কয়েক দশক আগেই পশ্চিমাদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কলোনি স্থাপনের যুগের অবসান ঘটেছে। এখন অনানুষ্ঠানিক কলোনি করে রাখার সময়ও সম্ভবত শেষ হয়ে আসছে। লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন