post

মাহে রামাদান প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ অর্জনের মাস

০৭ জুন ২০১৫
siam আলাউদ্দিন# রমজান আরবি শব্দ রমজ থেকে গৃহীত, এর অর্থ দহন জ্বলন। রোজা রাখার দরুন ক্ষুধা পিপাসার তীব্রতায় রোজাদারের পেট জ্বলতে থাকে, এই অবস্থা বোঝানোর জন্য আরবি ভাষায় বলা হয় ‘আস সায়িমু ইয়ারমাদ’ রোজাদার দগ্ধ হয়। অন্যভাবে বলা হয় এই মাসে যেসব নেক আমল করা হয় তাহা সমস্ত গুনাহখাতা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়। তাই এর নাম রাখা হয় রমজান। ইসলামের ইতিহাসে যে মাস চিরস্মরণীয় ও প্রসিদ্ধ তা হলো রমজান মাস। রামাদান মাস যেমনভাবে প্রত্যেক বছর মুমিনের দ্বারে দ্বারে মহান বার্তা নিয়ে আসে তেমনি, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য শিক্ষা লাভের মাস হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মাসে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন, যা মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর অন্যতম করুণা। রমজানের রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরিতে, আর এই মাসেই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। হক ও বাতিলের দ্ব›দ্ব চিরন্তন। আর যখন রাসূল সা: সবেমাত্র নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র মদিনা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলেন তখন সেই নবগঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য বাতিল তার সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত করে। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছা তিনি বাতিলকে ধ্বংস করে হককে বিজয়ী করবেন। তাই রমজান মাসকে বিজয়ের মাসও বলা যায়। যে মাসে রাসূলের সাহাবীরা বিজয় অর্জন করেন। ইসলামের ইতিহাসে দু’টি বড় বড় বিজয় অর্জিত হয় এই মাসে। জাহেলিয়াতের পরিবেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ নয়। এ পথ অত্যন্ত বন্ধুর, সঙ্ঘাতমুখর। হাজারো বাধা বিপত্তি, অসুবিধা দলিত মথিত করে যেতে হবে সামনে। রমজান মাস যেন সেই শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য, যে কোন কঠিন ত্যাগ স্বীকারের তালিম। আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘কাফের কি ইহ পহচান কি আফাক মে গুম হা, মমিন কি ইহ পাহচান কি গুম ইসতে হায় আফাক’ অর্থাৎ কাফেরের পরিচয় সে পৃথিবীর মধ্যে হারিয়ে যায়, আর মুমিনের পরিচয় তার মধ্যে পৃথিবী হারিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, তাতে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩) আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের ঈমানদারগণকে সম্বোধন করে বলেন, তারা যেন সিয়াম পালন করে। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ পালনের খাঁটি নিয়তে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। এর উপকারিতা এই যে, এর ফলে মানবাত্মা পাপ ও কালিমা থেকে সম্পূর্ণ রূপে পরিষ্কার ও পবিত্র হয়ে যায়। রোজা পূর্ববতীদের মতোই ফরজ আল্লাহ তায়ালা বলেন, এই সিয়ামের হুকুম শুধুমাত্র তাদের ওপরেই ফরজ হয়নি বরং পূর্ববর্তী উম্মতের প্রতিও সিয়ামের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাই অন্য উম্মত থেকে উম্মতে মোহাম্মদী যেন পিছিয়ে না যায় তাই রমজানের রোজা তাদের ওপর ফরজ করা হয়। আদম আ: থেকে নূহ আ: পর্যন্ত প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিধান ছিল। একে বলা হত আইয়্যামে বিজ। ইহুদিরা প্রতি সপ্তাহের শনিবার এবং বছরে মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখতো। হজরত মূসা আ: তুর পাহাড়ে অবস্থানকালে ৪০ দিন রোজা পালনের নির্দেশ ছিল। খ্রিষ্টানদের ৫০ দিন রোজা রাখার রেওয়াজ ছিল। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা একাদশী উপবাস পালন করে। siam-2 আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের (সম্প্রদায়) জন্য আমি শরিয়ত এবং নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছিলাম; আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি এ কারণে যে যে ধর্ম দিয়ে তিনি তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করবেন, সুতরাং তোমরা কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে ধাবিত হও।” (সূরা মায়িদা : আয়াত ৪৮) রোজা ফরজ হওয়ার হিকমত হলো এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, অন্তর বাজে চিন্তা ফিকির হতে বিরত থাকে, ধনী ব্যক্তি তার সম্পদের মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কদর বুঝতে পারে, নফস অহঙ্কার থেকে মুক্ত রাখা যায়, ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে রক্ত চলাচল ক্ষীণ ও কমে যায়, তাই শয়তানের ও মানবদেহে চলাচল কমে যায়। মৌলিক ইবাদতের মূল লক্ষ্য হলো প্রশিক্ষণ বছরে একবার মুসলমানদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়। দীর্ঘ এক মাস ধরে একটি কঠিন তারবিয়াত চলতে থাকে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাদিন উপবাসের কঠিন ব্রত পালন, ইফতারের পর ক্লান্ত শরীরে খতমে তারাবির জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এবং সুখ নিদ্রা ত্যাগ করে রাতের শেষ ভাগে সেহেরির জন্য জাগ্রত হওয়া এগুলো মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের ওপর কষ্ট ক্লেশ; দুঃখ যাতনা ইত্যাদি সহ্য করার এক নজিরবিহীন প্রশিক্ষণ। সুতরাং বলা যায় রামাদান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণের (সাার্ভিসিংয়ের) মাস। এই প্রশিক্ষণ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতিটি নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পণের। রোজাদার যখন ক্ষুধার জ্বালা উপলব্ধি করে তখন সে গরির দুঃখীর না খেয়ে থাকার কষ্ট বুঝতে পারে এবং তাদের প্রতি হৃদয় মনে দয়ার উদ্রেক হয় ও তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য দান খয়রাত করে । কেননা বাহনে আরোহী যাত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত হেঁটে না চলবে ততক্ষণ হাঁটার কষ্ট অনুধাবন করতে পারে না। তখনি পারে যখন সে একই কষ্টে পতিত হয়। সিয়াম নফসের দাসত্ব ও পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। এ রমজান নিয়ম শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। তাকওয়া অর্জনের মাস তাকওয়া কী? এ সম্পর্কে হজরত উমর (রা:) হজরত উবাই ইবনে কাব (রা:)-এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন. ‘আপনি কি কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছেন? হজরত উমর (রা:) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব পুনরায় প্রশ্ন করেন, তখন আপনি কী করেছেন? জবাবে হযরত উমর (রা:) বলেন, আমি সাবধানতা অবলম্বন করে দ্রæত গতিতে ঐ পথ অতিক্রম করলাম। উবাই ইবনে কাব (রা:) বলেন, এটাই তাকওয়া।” তাকওয়া মূলত মানব মনের সেই অবস্থাকেই বলা হয় যা আল্লাহর গভীর ভীতি ও প্রবল দায়িত্বানুভূতির দরুন সৃষ্টি হয় এবং জীবনের প্রত্যেকটি দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে। তাকওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা, ব্যাপক অর্থে তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় বাস্তবায়ন করা, তার নিষেধ থেকে দূরে থাকা। মুত্তাকির সমগ্র জীবন ইসলামী জীবন রূপেই গড়ে উঠবে এবং তার চিন্তাধারায় মতবাদে তার হৃদয়াবেগ ও মনের ঝোঁক প্রবণতার তার স্বভাবগত রুচি তার সময় বণ্টন ও শক্তিনিচয়ের ব্যয় ব্যবহার, তার চেষ্টা সাধনার পথে পন্থায়, তার জীবনধারায় ও সমাজপদ্ধতিতে তার আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে, তার সমগ্র পার্থিব ও বৈষয়িক জীবনের প্রত্যেকটি দিকে ও বিভাগে পূর্ণ ব্যাপকতা ও সামগ্রিকতার সাথে ইসলাম রূপায়িত হতে থাকবে। তাকওয়ার তিনটি স্তর। সর্বনি¤œ স্তর হলো কুফর ও শিরক থেকে বেঁচে থাকা। এ অর্থে প্রত্যেক মুসলমানকেই মুত্তাকি বলা যায়। যদিও সে গুনাহে লিপ্ত হয়। দ্বিতীয় স্তর হলো : এমন সব কাজ থেকে বেঁচে থাকা, যা আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের সা: পছন্দনীয় নয়। ফজিলত ও কল্যাণ প্রতিশ্রæত হয়েছে তা এ স্তরের তাকওয়ার ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে। তৃতীয় স্তর : তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর। আম্বিয়া আ: ও তাদের বিশেষ উত্তরাধিকারী ওলিগণ এ স্তরের তাকওয়া অর্জন করে থাকেন। যেভাবে তাকওয়া অর্জন করা যায় : ১. সব কাজে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা। ২. রাসূলের নিয়ম অনুসারে কাজ করা ৩. সুন্দরভাবে কথা বলা ৪. বিন¤্রভাবে পথ চলা ৫. অপচয় না করে খাওয়া দাওয়া করা ৬. হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন করা ৭. সময় অপচয় রোধ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন : কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়ার জন্য মুত্তাকি হতে হবে; মুত্তাকি হতে হলে কুরআনের কাছে আসতে হবে। তাকওয়া অর্জনের কর্মসূচি হলো রোজা। কুরআনের শুরুতে হেদায়াতের পূর্বশর্ত বলা হলো তাকওয়া। আল্লাহ বলেন, “রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সংবলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫) কুরআন নাজিলের মাস “রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সংবলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়।’’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫) রাসূল সা: বলেন, “সৃষ্টির ওপর আল্লাহর যেমন শ্রেষ্ঠত্ব, সমস্ত বাণীর ওপর আল্লাহর বাণীর শ্রেষ্ঠত্ব।” রাসূল সা: অন্য এক হাদিসে হজরত আবু যারকে (রা:) বলেন, তোমার কর্তব্য আল কুরআন অধ্যয়ন করা, কেননা তা পৃথিবীতে তোমার জন্য আলো, আর আসমানে তা তোমার জন্য সঞ্চিত সম্পদ। এ মহাগ্রন্থটি তামাম জগতের সকল গ্রন্থের সকল জ্ঞানকে হারিয়ে দেয়। এই কিতাব সকল জ্ঞানের আকর, সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল জ্ঞান এর মাঝে লুকায়িত। এটা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য অলঙ্কার ও ভাষাশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি। তা কেনই বা হবে না, এটা তো তিনিই রচনা করেন যিনি সারা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। এই কুরআন এই জন্য নাজিল করা হলো যে এই কুরআনের সমাজ কয়েম হবে। মহানবী (সা:) তার জীবনে কুরআন বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। আল্লাহ বলেন, আর যেই ব্যক্তি আমার উপদেশনামা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে দুনিয়ায় সঙ্কীর্ণতাযুক্ত জীবিকা পাবে, আর কিয়ামাতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে। এর আগেই আল্লাহ সতর্ক করেছেন এই বলে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যেই পথের দিশা আসবে যারা তা অনুসরণ করবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১২৩-১২৪) কুরআন গোটা মানবতার মুক্তির জন্য নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “এই কিতাব আমি তোমাদের প্রতি নাজিল করেছি, যাতে তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে পার।” (সূরা ইবরাহিম : আয়াত ০১) কুরআন মানবতার সকল সমস্যার সমাধান বাতলিয়ে দেয়, কুরআন যুগ জিজ্ঞাসার জবাব। সুতরাং কুরআন এর তিলাওয়াত, অধ্যয়ন, গবেষণা, প্রচার, আমল, বাস্তবায়ন মানুষের জীবনকে আরো সফল করে তুলতে পারে। siam-3 আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস রামাদানুল মোবারক মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অপার সুযোগ। রহমত, মাগফিরাতের ও নাজাত লাভের সুযোগ পুরো মাসব্যাপী অবারিত থাকে। মহান আল্লাহ বলেন : “আর হে নবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা কর্তব্য, এ কথা তাদেরকে শুনিয়ে দাও, হয়তোবা তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৬) রোজার অন্যতম হিকমত হচ্ছে এটা মহান আল্লাহর ইবাদত। এর মাধ্যমে বান্দা তার রবের নৈকট্যে পৌঁছে। বিবাহ-শাদি, আহার বিহার, পানাহার এসব জৈবিক চাহিদা ও প্রিয়বস্তু পরিত্যাগ করে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছা যায়। এর দ্বারা প্রকাশ পাবে তার ঈমানের সত্যতা। আল্লাহর জন্য তার দাসত্বের পরিপূর্ণতা ও তার হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা সবটুকু আল্লাহর জন্য। সব চাওয়া পাওয়া আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা করা। শারীরিক কল্যাণ সাধনে রমজান সিয়াম পালনের অন্যতম হিকমত হলো শারীরিক উপকারিতা। খাবার কমিয়ে দেয়া হজম যন্ত্রের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আরাম দেয়া এবং শরীরের ক্ষতিকারক মলমূত্র ময়লা ও তরল পদার্থ ইত্যাদি বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শরীরে সুস্থতা ফিরে আসে। প্রফেসর ডিলার বলেন, “রোজা এমন রোগের ওষুধ যে রোগ বয়োজ্যেষ্ঠ ও যুবক ব্যক্তিদের হয়ে থাকে।” রোজা পেটের পীড়া দমনে সহায়ক, রোজা কলিজার রোগ; পান্ডু রোগ, শরীরের চর্বি ও তৈলাক্ততা কমাতে অনেক সাহায্য করে। রোজা পালনের দরুন গ্যাসস্ট্রিক, এসিডিটি অনেকাংশে হ্রাস পায়। Scientific indication in the Holy Qur'an বইতে বলা হয়, ‘Abnormal gastric acidity, both hypo and hyperchlorhydria are mostly changed to normal acidity due to month long fasting in Ramadan.’ অনন্য ইবাদত আল্লাহর অনুগত হওয়া ও তার বিধান মেনে চলাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইবাদত বলা হয়। ইবাদত কবুলের জন্য ঈমান আবশ্যক তাই মহান আল্লাহ রমজানের রোজা ফরজ করার শুরুতে মুমিনদেরকে সম্বোধন করেন তথা সকল ইবাদতের বেলায় আল্লাহর আহবান মুমিনদেরকে কেন্দ্র করে। ইবাদত শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য, ইবাদতের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা আরোপ করা অবৈধ, ইবাদতের বেলায় সর্বপ্রথম আহবান সমস্ত মানবজাতিকে, ইবাদত হলো আনুগত্যের সমন্বিত রূপ, সাওম হলো এই সকল গুণ সংবলিত ইবাদত। এটা দৈহিক ও অপ্রকাশ্য ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। সাওমের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সমস্ত মুসলিমদের জন্য ফরজ, সাওম আদায়ের অভিন্ন একটি সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যাতে বিশ্বময় এটি সুষ্ঠুভাবে আদায়ের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে একে অপরের সহায়ক হতে পারে। যদিও বলা যায় রোজাই একমাত্র ইবাদত নয়, মুমিনের সমগ্র জীবনই ইবাদত। এক মাস রমজানের রোজা রাখার মাধ্যমে বাকি মাসগুলোকে রমজানের মত পরিচালনা করার জন্যই মূলত এই রমজান মাস। রমজান মাস হলো মুমিনের ঈমান শাণিত করার মাস। বাকি মাসগুলো কিভাবে পরিচালিত হতে হবে তার উত্তম প্রশিক্ষণ শুরু এখান থেকেই। লেখক : সদস্যসচিব, মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ তথ্যসূত্র আল কুরআন হাদীস শরীফ ২য় খন্ড, মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, আফীফ আবদুল ফাত্তাহ তাববারা ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, শাইখ সালিহ আল উসাইমিন ইবাদাত, ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া আল কুরআন ইজ অল সাইন্স,মোহাম্মদ আবু তালেব রামাদান ম্যানুয়েল,ওয়ামী বুক সিরিজ ৪৪ রমাযানের ৩০ আসর, শাইখ সালিহ আল উসাইমিন

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির