মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী কিছু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর নির্যাতনে নিজ দেশ এবং বসতভিটা ছেড়ে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসাবে বসবাস করছে। এদের প্রায় সবাই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বর্তমানে এরা কক্সবাজারের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাস করছে। এরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, নারীরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। নিজ বাসভূমি ছেড়ে এবং সহায় সম্বল ফেলে আসা এসব মানুষ আজ সর্বহারা এবং এরা এখন ত্রাণের উপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে। কিন্তু এভাবে বছরের পর বছর ধরে এই সব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তো আর বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে না এবং এদের ভার বাংলাদেশ অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বহন করতে পারে না। এসব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিরাট এক সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। সুতরাং এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তার জন্য বাংলাদেশের উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাস করা এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে এবং মিয়ানমারে অবস্থিত তাদের নিজ ভিটাবাড়িতে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দিতে হবে। মোটকথা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান। এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই মিয়ানমার সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বলছি, অনুগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করুন এবং তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং তখন এর নাম ছিল বার্মা। আর ১৯৬২ সাল থেকেই সেখানে সেনাবাহিনীর শাসন চলছে। সময়ে সময়ে গণতন্ত্র এলেও তা স্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশ সীমান্তের পাশর্^বর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছে। প্রায় হাজার বছর আগে রাখিয়াং নামে এক জাতি ইসলাম গ্রহণ করে রোহিঙ্গা নাম নিয়ে মিয়ানমারে বসতি স্থাপন করে। সেই থেকেই রোহিঙ্গা বলে পরিচিত এই জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে। অথচ মিয়ানমার সরকার এখন রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করছে, যার কোনো প্রমাণ মিয়ানমারের হাতেও নেই। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত এই রোহিঙ্গারা ভোট দিতে পারত এবং তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশটির সংসদে পাঠাত। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৮২ সালের ১৫ই অক্টোবর ‘বার্মিজ সিটিজেনশিপ ল’ নামে একটি আইন পাস করে এবং এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ২০১৪ সালের আদমশুমারিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য মতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়। ফলে রোহিঙ্গারা এখন একটি রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমারের বৌদ্ধদের হাতে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত হবার কারণে ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসাবে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। এদিকে ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া নতুন করে নির্যাতনে আরো প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এভাবে বাংলাদেশে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে এসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে এবং তারা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই রোহিঙ্গাদের ঘরে এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করছে। ফলে আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে এবং সমস্যাও বাড়ছে। সুতরাং অতিদ্রুত এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। প্রত্যেক মানুষেরই কতকগুলো মৌলিক অধিকার থাকে, যা যে কোনো দেশের, যে কোনো ধর্মের এবং যে কোনো নাগরিকের বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য। বিশ্বব্যাপী মানুষের এই মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সার্বজনীন মানবাধিকারের নীতিমালা গ্রহণ করে। সেই থেকে ১০ই ডিসেম্বর প্রতিটি বছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। আর মানুষের মৌলিক মানবাধিকারকে নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য। জাতিসংঘ ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের এই ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন উপধারাসহ মোট ৩০টি মূলধারা সংযুক্ত করা হয়। এই ঘোষণাপত্রে- আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমান অধিকার, জাতীয়তা লাভের অধিকার, চিন্তা-বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, সভা সমাবেশ করার অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশে সরকারে অংশ গ্রহণের অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার, সকলের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং সর্বোপরি শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে বিচার বা আদালতের মাধ্যমে তার কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের এইসব মূলনীতি বিশে^র দেশসমূহ গ্রহণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বসবাসরত প্রতিটি জনগোষ্ঠীর এবং প্রতিটি নাগরিকেরই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, মতপ্রকাশের এবং রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। একজন মানুষ হিসাবে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সকল অধিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরও রয়েছে। এখানে ধর্ম, বর্ণ এবং গোত্রীয়ভাবে কাউকে চিহ্নিত করে, তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই। যদি করা হয় তাহলে সেটা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতোমধ্যে এই সঙ্কটের চার বছর পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু এর কোনো সমাধান হয়নি। ফলে দিন দিন এই সমস্যাটা জটিল থেকে জটিল হচ্ছে এবং এটা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনাবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, রেডক্রস প্রধান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন দেশের পদস্থ কর্মকর্তাসহ অনেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। তারা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো এই সঙ্কটের কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। বিদেশী রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সাহায্য দিলেও, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়াটাই বেশি জরুরি। আর এটাই একমাত্র এবং স্থায়ী সমাধান। এসব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা চাই এসব উদ্বাস্তুদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের উন্নত বাসস্থানের জন্য ভাসানচরে আবাসিক ভবন তৈরি করেছে এবং সেখানে ইতোমধ্যেই অনেক রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরও করা হয়েছে। আর এটা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসবাসের পরিবেশটা উন্নত করতে সরকারের মহানুভবতা। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হচ্ছে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। ইতোমধ্যে মিয়ানমারে সরকারও পরিবর্তন হয়েছে। আমরা মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলছি, আপনারা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। মূলতপক্ষে এই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া এবং তাদের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ বসতবাড়িতে বসবাসের সুযোগ দেয়া। মোট কথা রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক করতে হবে। একই সাথে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের মূল জনগোষ্ঠীর অবিচ্ছেদ্য অংশ করতে হবে। তবে কোনো রোহিঙ্গা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হলে তাকে আইনের আওতায় শাস্তি দিতে হবে, কিন্তু তার জন্য পাইকারি ভাবে রোহিঙ্গাদেরকে জাতিগতভাবে নির্যাতন করা যাবে না। নিজ দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করাটা যেখানে প্রতিটি রাষ্ট্র এবং সরকারের নৈতিক দায়িত্ব, সেখানে মিয়ানমারের সরকার আজ সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে এবং জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদেরকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ার মত শক্তি সামর্থ্য আমাদের নাই এ কথা নিরেট সত্য। কিন্তু এর পরও শুধুমাত্র প্রাণে বাঁচানোর জন্য, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দিয়েছে। কারণ এটা একটা মানবিক বিষয়। এখানে ধর্ম, বর্ণ এবং গোত্র বিবেচনার বিষয় নয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশাল উদারতা, মানবিকতা এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে। একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা সত্যিই অতুলনীয়। বিশ্ববাসীর উচিত বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দশ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দেয়া এবং এতগুলো মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের জন্য বিরাট কঠিন একটি বিষয়। এরা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিরাট এক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন উপদলীয় সংঘাত। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাতে শতাধিক রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে নিজ কার্যালয়ে খুন হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতা জনাব মুহিবুল্লাহ, যিনি ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন। জনাব মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এভাবে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজ করতে হবে। আমি জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ সকল বৃহৎ রাষ্ট্রকে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদেরকে সহযোগিতা করার এবং এই সঙ্কটের একটি স্থায়ী এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান করার জন্য তাদের নিকট বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত এইসব শক্তি এবং রাষ্ট্রকে আজ মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন কর্তৃক প্রণীত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করলেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে। আমি কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি বিনীত নিবেদন জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের হাতেই এই সমস্যার সৃষ্টি এবং মিয়ানমারের হাতেই এর সমাধান।পরিশেষে একজন বিবেকবান এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্যাতন চিরতরে বন্ধ করার জন্য মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহবান জানাই। আর কিছু মানুষকে হত্যা করে কখনো একটি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করা যায় না। জাতিগত বিভেদ এবং সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল সৃষ্টি করে কখনো একটি সমাজে এবং রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। একইভাবে একটি সমাজ এবং রাষ্ট্রকে শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়া যায় না। সুতরাং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। বাংলাদেশের মাটিতে শরণার্থী হিসাবে বসবাসরত রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিন এবং তাদেরকে নিজ বসতভিটায় নিরাপদে বসবাস করতে দিন। রোহিঙ্গাদেরকে সাথে নিয়েই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন এবং জাতীয় উন্নয়নে কাজ করুন। এতেই মিয়ানমারের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন