মীর জাফরের প্রেতাত্মারূপে আবির্ভূত আওয়ামী লীগ
৩০ মে ২০১৬
জুন এলেই মনে পড়ে পলাশী ট্র্যাজেডির কথা। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি ন্যক্কারজনক কালো অধ্যায়। এ দিন দেশীয় কিছু বিশ্বাসঘাতকের কারণে ইংরেজদের হাতে পরাজিত হন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। সেই সাথে পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। ইংরেজ বেনিয়া আর তাদের গোলামদের বিষাক্ত নখরে বাঙালির খুনে লালে লাল হয়েছিল পলাশী প্রান্তর। এর পরের ইতিহাস পৌনে দুশো বছরের ইংরেজ গোলামি।
পলাশীর পতনের পথ ধরে একটি স্বাধীন জাতির অস্তিত্ব বিলোপের যে ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত নানারূপে, নানান রঙে। পলাশীর প্রান্তরে নিজদেশ, রাষ্ট্র, স্বাধীনতা সবকিছুর সঙ্গে জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মীর জাফর প্রমুখের বেঈমানির নির্মম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের নিষ্ঠুর ইতিহাসের কথা যুগ যুগ ধরে লেখা থাকবে বাংলার ইতিহাসে।
এরপর মীর জাফর সিরাজউদ্দৌলাকে বন্দী করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পাঠিয়ে দেয়। বন্দী হওয়ার সময় নবাবের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী লুতফা বেগম এবং চার বছর বয়সী কন্যা উম্মে জহুরা। এরপর ৪ জুলাই (মতান্তরে ৩রা জুলাই) মীর জাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মুহাম্মদিবেগ নামে এক ঘাতক সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে। সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা এবং তাঁর শিশুকন্যাকে মীর জাফর পুত্র মিরনের নির্দেশে ঢাকায় বন্দী করে রাখা হয়।
মজার ব্যাপার হলো সিরাজের পতনের পূর্ব পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ঘসেটি বেগমকে ব্যবহার করলেও সিরাজের পতনের পর আর তাকে কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি, যেমন দেয়া হয়নি মীর জাফরকে। সিরাজের মা আমেনা, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও তার শিশুকন্যার সাথে বন্দী করা হয় খালা ঘসেটি বেগমকেও। তাদের আটক রাখা হয় বর্তমান ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এরপর মিরনের নির্দেশে ঘসেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে নৌকায় করে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।
অনির্বাচিত জনসমর্থনহীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে অন্যায়ভাবে এক এক করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রহসনের এক বিচারের রায়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের এই ঘৃণ্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১০ সালের ২৯ জুন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বানোয়াট-ঠুনকো অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ৯টি হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয় মাওলানা নিজামীকে। এসব মামলায় তাকে ২৪ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও শীর্ষস্থানীয় আলেমকে রিমান্ডে নিয়ে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে করেছে কলঙ্কিত। অন্যান্য মামলায় জামিন পাওয়ার পরও সরকার হীন উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১০ সালের ২ আগস্ট তাঁকে গ্রেফতার দেখায়।
২০১০ সালে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ১৯৭৩ সালের আইনে সংশোধন এনে দলীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষী দিয়ে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞগণ প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ, আইনজীবীদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এ নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য নানা সুপারিশও দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতই করেনি। সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই বিচার হচ্ছে।
এর আগে একইভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। মূলত জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকারের এই ঘৃণ্য চক্রান্ত।
আজ এত বছর পরও এদেশীয় মীর জাফররা সক্রিয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তারই প্রেতাত্মারূপে আবির্ভূত হয়েছে। ভয়াবহ এই দুঃশাসন তার পরিচয়ই বহন করে। পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধির এই মাসকে সামনে রেখে তাই আজ সময় এসেছে এসব মীর জাফরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার।
আপনার মন্তব্য লিখুন