post

মুক্তিপাগল মানুষ কখনো হিম্মত হারায় না

মু. আতাউর রহমান সরকার

১১ আগস্ট ২০১৫
s5বাংলাদেশ আর দশটি দেশের মতো সাধারণ কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নয়। লাখো শহীদের পুণ্যভূমি, হযরত শাহজালাল ও শাহপরাণের মতো ওলি-আউলিয়ারা এ দেশের পূর্বপুরুষ। এ দেশের মাটি, প্রকৃতি, মানুষ সবসময়ই সত্যকে ও সুন্দরকে বেছে নিয়েছে। ভৌগোলিক সম্ভাবনা, ইসলামের প্রতি ভালোবাসা এবং জনগণের মানসিক শক্তির কারণে সবসময়ই এদেশটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এসেছে। কালের আবর্তে বর্তমান সময়ে একইভাবে বিভিন্ন দিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ২০০৯ সালে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ধাপ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা ও সঙ্কটে চলছে স্বাধীন সার্বভৌম এই বাংলাদেশ। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য নানামুখী পরিকল্পনা চলছে প্রতিনিয়ত। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে যে সরকারকে ব্যস্ত থাকার কথা ছিলো, তাদের হাতেই মানুষের জীবন ও গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবর্তে অপরাজনীতির চর্চা করছে বেশি। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির প্রহর গুনছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কে দেবে তাদের মুক্তি? তাদের মুক্তি আন্দোলনে যারা ভূমিকা রাখতে যাবে তাদেরকে নির্মম নির্যাতন সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে। মৃত্যুর জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত। যে সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যা ও অপরাজনীতির পথ বেছে নেয়, যারা জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র করে, জনগণকে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, যারা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে তাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া কি এত সহজ? সর্বত্র একই প্রশ্ন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে মানুষ। ইসলামকে ভালোবেসে ব্যক্তিজীবনে যারা তার অনুসরণের চেষ্টা করে সেসব ধর্মপ্রাণ মানুষ আজ সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের অধিকাংশ কারান্তরীণ। কেউবা পুলিশের নির্যাতন ও হয়রানির কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। ইতোমধ্যে সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফ দীর্ঘদিন কারান্তরীণ থাকার পর সঠিক চিকিৎসার অভাবে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছেন। বাবার সামনে দুই সন্তানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ হয়রানির শিকার হয়ে অপর নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের সাজিয়ে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে জুডিশিয়ারি কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক তথাকথিত মানবতাবিরোধী বিচারের নামে দায়েরকৃত মামলায় আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এটিএম আজহারুল ইসলাম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মোবারক হোসাইন, রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুন অর রশিদ খান, রাজশাহী মহানগরী আমির অধ্যাপক আবুল হাশেম, সাবেক শিবির সভাপতি জাহিদুর রহমান, ডা: ফখরুদ্দিন মানিক, দেলোয়ার হোসেন সাইদী, বগুড়া জেলা আমির গোলাম রব্বানী, চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ আমির জাফর সাদেক, দিনাজপুর জেলা আমির আনোয়ারুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা আমির আ: রহিম সরকার, সাতক্ষীরা জেলা আমির মাওলানা আ: খালেকসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সরকারের মামলা হামলা থেকে রেহাই পায়নি ছাত্রসমাজও। ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ছাত্রশিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইনকে গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শতাধিক মামলা ঠুকে দিয়ে মাসের পর মাস রিমান্ডে নিয়ে সম্ভাবনাময় এই ছাত্রনেতাকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ আওয়ামী সরকারের সাজানো নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জনগণের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা, গুম, নির্যাতন-নিপীড়ন ও মামলার সংখ্যা নিষ্ঠুরভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এতে জনজীবনে চরম নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মানবিক মূল্যবোধ আজ ভূলুণ্ঠিত। সমাজকে নিয়ে যারা একটু ভাবেন তাদের মাঝে আজ চরম হতাশা। শঙ্কিত মানুষ, বীভৎস মানুষের চিৎকার চলছে সর্বত্র। সরকার আজ প্রতি পলকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাদেরকে বেছে বেছে আটক করে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করছে। একদিকে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে, অন্য দিকে অপ্রচার ও মিথ্যাচার চালিয়ে দেশের আপামর জনগণকে করছে বিভ্রান্ত। বিগত ২০১৪ সালে ১ মাসেই সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, সীতাকুন্ড, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, যশোর, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কথিত “বন্দুকযুদ্ধের” নামে তিন শতাধিক ১৯ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। যার অধিকাংশই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। সরকার বুলডোজার পিষ্ট এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করেছে সাতক্ষীরা, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরকে। আসামি ধরার নামে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে শুরু করে পুরো জানুয়ারি ২০১৫ মাসজুড়ে বাড়িঘর ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। শুধু ১৯ দলের কর্মীদের নয় একই ঘটনা ঘটেছে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও। এসব ঘটনা অধিকাংশ ঘটেছে রাতের মধ্যভাগে অথবা শেষ রাতে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। পুড়িয়ে দেয়া হয় দোকানপাট বাড়ির ধান, চাল, কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র ও হাঁস-মুরগি। রক্ষা পায়নি পবিত্র কোরআন-হাদিস, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার বইপুস্তকও। সরকারি লোকজনের দেয়া আগুনে বাড়িঘর পুড়তে থাকলেও এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোন লোককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। দেখলে মনে হবে এটি কোন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। সে সকল অত্যাচারীরাও জানে পৃথিবীতে কোন অত্যাচারী শাসক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। তারাও পারবে না। প্রতিটি অত্যাচারের জবাব তাদেরকে একদিন দিতে হবে। বিচার হবে প্রতিটি অন্যায়মূলক ঘটনার, জবাবদিহি করতে হবে প্রতিটি অন্যায়ের। আজ হয়তো ভারতের কাছ থেকে অব্যাহত সমর্থন পেয়ে তারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। ইতিহাস বলে, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র কেনার জন্য মজলুম মানুষের রক্তের আহাজারি কোনদিন বৃথা যায়নি। কেউ অন্যায় করলে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। প্রমাণিত অন্যায়ের বিচার হলে সবাই তা মেনে নেবে। কিন্তু তাদেরকে-সুযোগ না দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা করবে এ কেমন মানবতা! গোটা জাতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়া সরকার নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর। সরকার যদি গণতন্ত্র ও জাতির কল্যাণের কথা বিশ্বাস করত তাহলে এ সকল অন্যায়ের পথ থেকে বিরত থাকত। কিন্তু এ সরকার আজ অনেক বেপরোয়া। ভারতের নিরঙ্কুশ সহযোগিতা পেয়ে কাউকে পরোয়া করছে না তারা। তাদের চরম দমন নিপীড়ন ও নেতাদের ২০২১ পর্যন্ত পর্যন্ত থাকার আস্ফালন দেশে চরম ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মত ও দলের ওপর শতাব্দীর নিকৃষ্টতম দমন-নিপীড়ন অন্য দিকে প্রশাসন, বিচার বিভাগকে চরম দলীয়করণ করা হয়েছে। প্রশাসনযন্ত্র আজ সরকারের পুরোপুরি কব্জায়। ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারে না আজ কেউ। যারা বিবেকের তাড়নায় কিছু করতে চায়, বলতে চায় তারা আজ নিগৃহীত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন। কিন্তু আজ বিপরীত অবস্থা দেখতে হচ্ছে আমাদের। কিছুদিন আগে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে যাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের মূল হোতা। আইনের রক্ষকের ভূমিকা থেকে সরে ভক্ষকের ভূমিকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক ব্যক্তির হুকুমে চলছে দেশ। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তার হুকুম বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তাদের হাতে থাকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ডেথ ওয়ারেন্ট। পাইকারি হারে চলছে গ্রেফতার। গুম-খুন রয়েছে অব্যাহত। জামিনে মুক্তি পেলেও কারাফটকে গ্রেফতার করে নতুন মামলা দেয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। উচ্চ আদালতে জামিন পেয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়া স্বাভাবিক বিষয় হলেও সরকার তার তোয়াক্কা করছে না। নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। বিচারের বাণী যেন আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মানুষের আইনের সহযোগিতা পাওয়া মৌলিক অধিকার হলেও সেখান থেকে মানুষ বঞ্চিত। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান সংসদে দাঁড়িয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম যখন “বিরোধী দলের দমনে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করে” বক্তব্য রাখে তখন তার বক্তব্যে অনেকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন হলেও আমি হইনি। কারণ ২০০৯ সাল থেকে অদ্য পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল ভারতের স্বার্থের সাথে জড়িত। যারা ভারতের দালালি কোনদিন করে না, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে যারা ভূমিকা রাখছে তাদের দমনই আজ সরকারের মূল কাজ। টিপাইমুখ বাঁধ, ভারতের সাথে বিভিন্ন অসম চুক্তি ও ট্রানজিটের বিরোধিতাই আজ জামায়াতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যার প্রতিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে জামায়াত আজ সরকারের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যেকোনো মূল্যে জামায়াতকে ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে এমন কোন কাজ নেই সরকার করছে না। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলের একজন কর্মী পর্যন্ত আজ সরকারের নির্মম, নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার। বিগত ৭টি বছর সরকার জামায়াতের কর্মীদের ওপর এমন নির্যাতন করেছে যা হিটলারের নির্মম নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী শাসন আমলে যৌথবাহিনী, পুলিশ ও আওয়ামী নেতকর্মীদের হামলায় জীবন দিয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৭ জন, খুলনা অঞ্চলের ৩৩ জন, ঢাকায় ০৯ জন কুমিল্লায় ২১ জন, সিলেটে ০৩ জন, বরিশালে ০১ জন, ফরিদপুরে ০১ জন, রাজশাহীতে ৫৭ জন ও রংপুর অঞ্চলে ৩১ জন জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে ৩৫ হাজার, আসামি ৭ লক্ষাধিক, আটক ১ লক্ষাধিক, পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে ২২ হাজার, গুলিবিদ্ধ ১০ হাজার, রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে ৩৫ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে ৫ শতাধিক, জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে ৪ হাজারের অধিক এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস করতে না পেরে হল থেকে বিতাড়িত হয়ে লক্ষাধিক ছাত্রের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের পথে। ইসলামবিশ্বাসী এ সকল নিরীহ নিরপরাধী মানুষগুলোর প্রতিটি ঘরে ঘরে কান্নার রোল। শাহাদাতের মিছিল আজ অনেক দীর্ঘ। আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী ও কারাগারের নির্মম নির্যাতনে পিষ্ট মজলুম মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস আজ ভারাক্রান্ত। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে তারা যেন অপরাধ করেছে। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও আজ কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের। একদিকে চলছে নিষ্ঠুর নির্যাতন অন্যদিকে শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে সরকারের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারও লক্ষণীয়। তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে ইউনিট পর্যন্ত সকল পর্যায়ের কার্যালয় আজ বন্ধ। শুধু গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনীতি করার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়নি, সারাদেশে জামায়াতের কর্মীদের পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগুলো একে একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কৌশলে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত লাখো জামায়াতকর্মী আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের নির্মম বুলেটের তাড়া খেয়ে শুধু প্রতিষ্ঠান থেকেই নয়, লাখো মানুষ আজ তাদের বাসা-বাড়ি থেকে বিতাড়িত বহুদিন ধরে। এমনভাবে চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে বাংলাদেশে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই, পান থেকে চুন খসলে সবকিছুতেই জামায়াতকে জড়ানো এদেশের কিছু মিডিয়ার মজ্জাগত স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে যা ঘটছে সব কিছুতেই জামায়াতকে জড়ানোর অপপ্রয়াস লক্ষণীয়। পিতা জামায়াত করার অপরাধে সন্তানকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন নিয়মিত ব্যাপারে হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নির্যাতন-গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না সরকার। নারীদের ওপরেও চড়াও হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিগত পাঁচ বছরে দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র ছিলো ভয়াবহ। শিশু থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, শিক্ষিকা, অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ, চাকরিজীবী ও নারী মানবাধিকার নেত্রী কেউই বাদ যায়নি এ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের হাত থেকে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার এবং দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে নিত্য নতুন পৈশাচিক কায়দায় চালানো নির্যাতনের চিত্রগুলো আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকেও যেন হার মানিয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গি কর্মকান্ডের অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ নামাজি, বোরকাধারী ও ভিন্ন রাজনৈতিক মত ও আদর্শের কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ছিলো বেশি। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই নিরীহ নারীদেরকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বহু ঘটনায় দেশ-বিদেশের বিবেকবান মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট মানবাধিকার এবং নারী সংগঠনগুলো ছিলো একেবারে নির্বিকার। ধর্মীয় কিছু সংগঠন এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গেলেও তারা সরকারের প্রতিরোধের শিকার হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পর্দানশিন নারীদের নির্যাতনের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে। ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে মগবাজার ওয়ারলেস রেলগেট সংলগ্ন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংগঠনিক বৈঠক চলাকালে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সহায়তায় অভিযান চালায় রমনা থানা পুলিশ। কোন কারণ ছাড়াই উপস্থিত নেতাকর্মীদেরকে অফিসে অবরুদ্ধ রেখে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টা অভিযানের সময় জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। এসময় পুলিশের পুরুষ সদস্যরা পর্দানশিন নারীদের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করে। এক পর্যায়ে তারা অফিসের নগদ টাকা পয়সা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, কম্পিউটার-ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র জব্দ করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা সংগঠনটির ২০ নিরীহ নেতাকর্মীকে। অভিযানের খোঁজ নেয়ার সময় ওই ভবন থেকে আটক করা হয় জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগে কর্মপরিষদ সদস্য ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সহধর্মিণী সানোয়ারা জাহানকে। পরদিন ৫৪ ধারায় তাদের আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে ২ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আটক ২০ জনের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী, একজন সদ্য বিবাহিতা ও ৩ জন পরীক্ষার্থী ছাত্রীও ছিলেন। আদালতে নেয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পরিকল্পিতভাবে অমানুষিক কষ্ট দেয়া হয়। এ ছাড়া কোর্ট হাজতে বোরকা খুলতে বাধ্য করা হয় পর্দানশিন এসব নারীকে। বিনা অপরাধে আটক পরীক্ষার্থীরা জেল থেকে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয় এবং অসুস্থ অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা নারী দীর্ঘ ২০ দিন কারাবরণ করেন। নিরীহ এসব নারীর আটক ও আদালতে নেয়ার দৃশ্য দেখে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পর্দানশিন ২১ নারীকে আটকের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ও তাদের মুক্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করলে সেখানেও হানা দেয় পুলিশ। ওই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ ও শেষে বের হওয়ার সময় বিকেলে ভাষাসৈনিক অধ্যাপিকা চেমন আরা, কলেজ শিক্ষিকা ও ছাত্রীসহ ১৩ নারীকে অন্যায়ভাবে আটক করে পুলিশ ও র‌্যাব। রাতে চেমন আরাসহ ৬ জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিলেও বাকিদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তারা একে একে জামিনে মুক্তি পান। ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার অপরাধে বিগত ৫ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্দানশিন ৪ শতাধিক ছাত্রী ও মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয়েছে নির্মম নির্যাতন। এতকিছুর পরও ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মীরা কি থেমে যাবে! বিভ্রান্ত হবে তাদের অপপ্রচারে, মিথ্যাচারে? ভুলে যাবে তাদের আন্দোলনের সম্পৃক্ততার মূল উদ্দেশ্য, এমন কিছু করা কি ঠিক হবে যা শহীদি কাফেলার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের বিপরীত। ইসলামী আদর্শের বিপরীতও বটে। তাই ইসলামী আন্দোলনের মুজাহিদদের মৌলিক চেতনা ধারণ করা এখন সময়ের দাবি। “নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ সব লোকদের ভালোবাসেন, যারা তার পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসাঢালা মজবুত প্রাচীর।” (সূরা আস সফ-৪) কোরআনের এই আয়াতের মত সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় কাতারবন্দী হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে এ আন্দোলনের পথে। এই আন্দোলন ব্যক্তি বা মানুষের নয়। এটি আল্লাহর আন্দোলন। আন্দোলনের কর্মীরা সঠিক ভূমিকায় থাকলে আল্লাহই তার হেফাজত করবেন। দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও সবরের সঠিক নির্দেশনা ইসলামপ্রিয় মানুষের সংগঠনকে এগিয়ে নেবে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও আন্দোলনের স্বার্থে ঐক্যকে এতটাই মজবুত করতে হবে যেন বাতিল কোন ছিদ্র খুঁজে বের করার সুযোগ না পায়। আন্দোলনের স্বার্থেই পর্যালোচনা জরুরি। তবে এ পর্যালোচনা হওয়া চাই রাসূলের (সা) সুন্নাহ অনুসারে। আন্দোলনের বৃহত্তর কল্যাণে, পারস্পরিক সম্পর্ক হতে হবে যত্নশীল। কোরআনের কাক্সিক্ষত আন্দোলনের বাস্তব রূপরেখা তৈরি করতে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কল্যাণকামিতা নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ময়দানে টিকে থাকতে হবে। আনুগত্য, পরামর্শ ও এহতেসাব এ তিনের সমন্বয়ে একটি মজবুত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে আন্দোলনের শেকড় আনুগত্যের, যে আন্দোলনের মজবুতি- বিকাশ পারস্পরিক পরামর্শে, যে আন্দোলনের অবাঞ্ছিত অংশ দূর হয়ে যায় সুগভীর কল্যাণকামী এহতেসাবে সে আন্দোলনের প্রাচীরে গর্ত সৃষ্টি তো দূরের কথা, ছিদ্র খুঁজে বের করাও বাতিলের জন্য অসম্ভব। আজ আন্দোলনের অনেকের মতোই আমাদেরও আত্মোপলব্ধি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেমন ব্যক্তি চান আমরা হয়তো তেমন কাক্সিক্ষত মানের হতে পারিনি। তাই নিজের নৈতিক মানকে সর্বোচ্চ কাতারে পৌঁছে দেওয়ার আত্মিক লড়াইয়ে সফলভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বদরের প্রান্তর আমাদের সামনে। তখনকার সাহাবীদের সংখ্যাগত স্বল্পতা, প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র, রণকৌশল সবকিছুই ছিল স্বল্প। তবু তারা কেন বিজয়ী হয়েছিলেন? কেন এত বড় জৌলুসপূর্ণ বাহিনী পরাস্ত হলো এই ক্ষুদ্র বাহিনীর কাছে? কোরআন তো এর রহস্য ভেদ করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। “যদি তোমাদের মধ্যে ২০ জন সবরকারী ঈমানদার ব্যক্তি থাকে তবে তারা ২০০ জনের ওপর বিজয়ী হবে।” (সূরা আল ইমরান) মূলত আন্দোলনের গতি প্রকৃতি, শূরার সিদ্ধান্ত, নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা এই সবকিছুকে সামনে রেখে আন্দোলনের পথে নিঃসংকোচে, দ্বিধাহীনচিত্তে দৃঢ়তার সাথে আনুগত্যপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই ‘সবর’। ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনিবার্য বাস্তবতা হলো পরীক্ষা, নির্যাতন-নিপীড়ন। যুগে যুগে যারাই এই আন্দোলনের জন্য নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন তাদের ওপরই নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ। তাদের অর্থনৈতিক, পারিবারিক জীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। তবুও ঈমানদারদের ঈমান কমেনি বরং প্রতিনিয়ত ঈমান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ সকল পরীক্ষায় তারা তাদের ঈমানের সত্যতা প্রমাণ করেছেন। বর্তমান যুগে এই উপমহাদেশ ছাড়াও মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামী আন্দোলন ও তার নেতৃত্বের ওপর এ নির্যাতন চলছে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে শুধু এ নির্যাতনই ইসলামী আন্দোলনের শেষ নয় বরং এখানেই আন্দোলনের সাফল্যের শুরু। ঠিক যেমন আমরা দেখেছি ইরান, মিসর, তিউনিসিয়া, তুরস্কের ইসলামী বিপ্লব। ইখওয়ানুল মুসলিমীনসহ ইসলামী দলগুলো শত প্রতিকূলতা, সংঘাত পার করে আজ জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ সৈনিকের মনে রাখতে হবে আল্লাহর পথে সঠিকভাবে প্রচেষ্টারত থাকলে আল্লাহই আমাদের অভিভাবক হবেন। কখনো “যুদ্ধাপরাধী” কখনো “জঙ্গিবাদ” কখনো “রগকাটা” এর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আন্দোলনকে যতই জনগণ থেকে দূরে সরানো চেষ্টা করা হোক না কেন এই আন্দোলনের নৈতিক প্রাণশক্তি সম্পন্ন মুজাহিদরাই এই আন্দোলনকে জনগণের আন্দোলনে পরিণত করবে। আদর্শের সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে মানুষের কাছে সমস্ত মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির যৌক্তিক জবাব দিয়ে জনগণের কাছে আন্দোলনের স্বরূপ তুলে ধরতে হবে। এই আন্দোলনের কর্মীরা কখনোই হিম্মত হারাবে না, প্রতিটি বাধা বিপত্তি তাদের ত্যাগের মানসিকতাকে আরো জোরদার করবে। প্রতিটি মুহূর্তেই দৃঢ় মনোবল আর সুদৃঢ় ঈমান নিয়ে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো হতাশা ও দুর্বল সঙ্কল্পকে মনের কোণে আসতে দেয়া যাবে না। আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে আন্দোলনের সর্বস্তরের কর্মীরা নৈতিকভাবে দৃঢ়তা লাভ করবে। এমন সবরকারী কিছু ব্যক্তি যখন কাতারবন্দী হয়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যায় তখন বদরের প্রান্তরের মতই কুফরির ভিত নড়ে ওঠে। বাতিল ভয়ে প্রকম্পিত হয়, নৈতিকভাবে, বাস্তবভাবে পরাজিত হয় সত্যের কাছে। তাই আন্দোলনের প্রাণশক্তি সঞ্চারকারী এই ঈমানদার বাহিনীর প্রয়োজন এখন সমস্ত পিছুটান ভুলে, শহীদি কাফেলাকে সার্থক করতে সংগঠনের কাতারকে আরও মজবুত করতে সবকিছু দিয়ে আন্দোলন করা। দুনিয়াবি পিছুটান যেন আমাদের জমিন সঙ্কীর্ণ করে না দেয়। মরহুম আব্বাস আলী খান বলেছিলেন, “কাজ যেহেতু আমরা আল্লাহর করছি এবং আমাদের চরম লক্ষ্য যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, সে জন্য তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক হতে হবে অত্যন্ত গভীর, নিবিড় ও মজবুত। রাতের নিভৃত প্রহরে অশ্রুকাতর কণ্ঠে তাঁর দরবারে ধরনা দিতে যেনো আমরা ভুল না করি। আমাদের নিষ্কলুষ, পরিশুদ্ধ ও পাপমুক্ত করার কাজে সাহস ও শক্তি দান করার আকুল আবেদন জানাতে হবে তাঁর কাছে। আমাদের আমল- আখলাকে যদি আল্লাহ খুশি হয়ে যান এবং তিনি যদি মনে করেন যে, হ্যাঁ এমন একটি দল তৈরি হয়েছে যাদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে এবং সামান্যতম ক্ষমতার অপব্যবহারও তারা করবে না, আমানতদারি ও দিয়ানতদারি তারা করবে তাহলে ইসলামী বিপ্লব কেউ ঠেকাতে পারবে না।” আত্মোপলব্ধি আর কোরআনের আলোকে সংশোধনপূর্ণ জীবন নিয়ে প্রভুর রহমত কামনা করতে হবে প্রতিনিয়তই। তবেই এ আন্দোলন আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হবে। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই দেশ পরিণত হবে এক অনন্য ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রে। সবশেষে শিল্পীর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে মহান আল্লাহর কাছে মিনতি জানাই- “পৃথিবীর হাজারো কাজের ভিড়ে ইকামতে দ্বীনের এ কাজ যেন- আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়”। লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির