post

মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট

০৭ জানুয়ারি ২০১৪

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

(গত সংখ্যার পর) Jabbar-vaiবিশ্বব্যাপী মুসলিম মিল্লাত ইহুদি, খ্রিষ্টান ও জায়নবাদীদের সম্মিলিত আক্রমণের শিকার। সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও জঙ্গিপনার কথা বলে গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে কোথাও রাষ্ট্রীয় শক্তি হিসেবে ইসলামী শক্তিকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না সম্্রাজ্যবাদীরা। মানবতা ও গণতন্ত্র এসব শুধু নিজেদের স্বার্থের ডিকশনারিতে আবদ্ধ। ক্ষমতার মোহে মানবতা ও গণতন্ত্রের (!) সত্যিকার স্বরূপ মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টে যায়। নতুন নতুন শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির শব্দ জন্ম নিতে থাকে। এসব শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই। ফিলিস্তিনে হামাস নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল, তাদেরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়নি; মুসলমানদের আবাসভূমি ফিলিস্তিনে এখনো আমেরিকার সহায়তায় পরগাছা ইসরাইল মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলছে, আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করা হলো সন্ত্রাসবাদের দোহায় দিয়ে, আলজেরিয়াতেও ইসলামী শাসনকে স্থির হতে দিলো না এবং বাংলাদেশে সময়ের পরিক্রমায় বিজয়ী শক্তি হিসেবে ইসলামী হুকুমাত কায়েম হবে বুঝতে পেরে সাম্রাজ্যবাদীদের মদদপুষ্ট হয়ে আলেম-ওলামা, ইসলামী আন্দোলনের নেতা- কর্মীদের নিধনে গণহত্যা চলছে নীরবে। মিসরে ইসলামী হুকুমত কায়েম হওয়ার এক বছরের মাথায় অবৈধভাবে মিসরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এ অবৈধ ক্ষমতার দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলতে থাকে একটানা দেশব্যাপী বিক্ষোভ। ব্রাদারহুড ও মুরসি সমর্থকদের দমানোর জন্য চলে মিসরের জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি। হাজার হাজার শিশু, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে হত্যা করা হলো অমানবিকভাবে; কারাগারেও নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি অসংখ্য প্রতিবাদী বনি আদমকে। শেষ আশ্রয়স্থল মসজিদেও তারা মুসলমানদের হত্যা করতে সামান্য দ্বিধা করেনি। মিসরের নীল নদ রক্তের বন্যায় লালে লাল হয়ে গেল। হাজার হাজার বনি আদমের গোঙানিতে আকাশ-বাতাস ভারী হতে থাকল প্রতিনিয়ত। এ যেন এক নব্য ফেরাউনের উত্থান, আরো রচিত হবে নির্যাতনের নতুন নতুন অধ্যায়। যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী শাসক জামাল নাসের। যেখানে রচিত হয়েছিল সাইয়েদ কুতুব ও জয়নব আল গাজালির শত নির্যাতনের সম্মুখে বাতিলের কাছে মাথা নত না করার ইতিহাস। মুমিনদের রক্ত, ক্ষত-বিক্ষত লাশ, জুলুম-নির্যাতন ও কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ ইসলামবিরোধীদের জন্য আনন্দ-উৎসবের হলেও এসব মুমিনের জীবনের অংশমাত্র আর অনাগত মর্দে মুজাহিদদের চেতনা-প্রেরণার ফল্গুধারা। ক্ষমতার লিপ্সায় নিজের চেতনাকে বিকিয়ে দিয়ে সৌদি বাদশাহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নিরস্ত্র মিসরের মুসলমানদের সন্ত্রাসী বলতে মুখে বাদ সাধে না, তোমাকে ধিক! রাসূলের দেশে জন্ম নিয়ে হেরেম শরিফের দায়িত্ব নিয়েও তুমি মিল্লাতে মুসলিমার পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারলে না। মুসলমানদের রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে সেকুলার রাষ্ট্রগঠনের প্রত্যয়ে মিসরের সেনাবাহিনীকে মিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ দিচ্ছে সৌদি বাদশাহ, এটা ভাবা সম্ভব! মিসরের জালিমশাহি শাসক হোসনি মোবারকের শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে যেভাবে গণবিপ্লব শুরু হয়েছিল, জনমতের ভিত্তিতে ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়েছিল; ঠিক একইভাবে আরববিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের প্রতিনিধিত্ব না করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকায় পশ্চিমাদের পা-চাটা গোলামে পরিণত হওয়ায় সময়ের ব্যবধানে সবার পরিণতি একই রকম হবে তাতে সন্দেহ করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। সাময়িকভাবে হত্যা নির্যাতনের মাধ্যমে এ ন্যায্য আন্দোলন থামিয়ে দিলেও সাগরের পানিকে যেভাবে বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে রাখা যায় না সময়ের পরিক্রমায় মুসলিম মিল্লাতের বিশ্বব্যাপী হক প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার যে জোয়ার শুরু হয়েছে তা কেউ রুখতে পারবে না। মুমিনদের ভুলে গেলে চলবে না যে হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন, হক ও বাতিল এক সাথে চলতে পারে না। তবে সাময়িক এ ভয়াবহতার জন্য কেউ কেউ নিজের মোড়ক পাল্টে দিতে চান, নয়া কৌশল নির্ধারণ করতে চান। দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অনেক কৌশল করা যায়, নিজের অস্তিত্ব বিকিয়ে দেয়া যায় কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে ইসলাম কায়েম করা যায় না। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার দিকে আহ্বানের জন্য চিরন্তন, শাশ্বত নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, (হে নবী!) আপনি মানুষকে আপনার রবের দিকে ডাকুন হিকমত ও উত্তম নসিহত সহকারে। তর্ক-বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল : ১২৫) এ হক ও চিরন্তন পথের অনুসারীদেরকে সে পথ ও মতের ওপর সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। এ পথে চলতে গিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষ বিরোধিতা করে, বাধা দেয় তাতে ও পথ চলা বন্ধ হবে? না মোটেও না। এতে যারা বিরোধিতা করে বা যারা না বুঝে ঝামেলা পাকায় তারা সত্যপন্থীদের জীবনাচরণের মধ্যেই অনেক উত্তর খুঁজে পাবে। তারপরও যদি তারা নিবৃত্ত না হয় তা হলে কি হাল ছাড়ার উপায় আছে? অস্বীকারকারীদের আচরণ এমনই হয়ে থাকে। কুরআনে তার উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, “কাফেররা বলে এ কুরআন তোমরা কিছুতেই শুনবে না। যখন তা শুনানো হয় তখন গণ্ডগোল করবে। এভাবে হয়ত তোমরা বিজয়ী হবে।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ : ২৭) আদ, সামুদ, লুত প্রত্যেকটি জাতির জন্য আল্লাহ তা’য়ালা নবী প্রেরণ করেন। নবীদের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ার মূল কেন্দ্র ছিল মানুষের কাছে তাওহিদের বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া। তাদের নবুওয়তকালে লোকেরা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি, তাদেরকে আল্লাহর তাওহিদ পালন না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল বারবার কিন্তু তারা তা থোড়াই কেয়ার করল। তারা নবীদের সাথে চ্যালেঞ্জ করল এবং নবীর ঘোষিত আজাবের কামনা করছিল ঠাট্টাছলে আবার কখনো রাগান্বিত হয়ে, নবীকে নানাভাবে অপমানিত করে। তখন সে সকল কওমের ওপর নেমে এসেছিল ভয়াবহ শাস্তি। নবী মুহাম্মদ (সা)ও তার উম্মতদেরকে সত্য পথে আহবান করেছিলেন এবং তিনি চূড়ান্তভাবে সফল হলেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আজ আমি ইসলামকে তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নেয়ামত তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণভাবে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩) রাসূল (সা) ওফাতের সময় বলে গেলেন, তোমাদের জন্য আমি কুরআন ও আমার সুন্নাহ রেখে গেলাম, যারা একে আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না এবং তিনি এ-ও বলে গেলেন, আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। তিনি বললেন, আলেমরাই নবীদের উত্তরাধিকারী। অর্থাৎ ইসলাম যারা জানবে, মানবে ও তা বাস্তবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত হবে তারাই আমার প্রতিনিধিত্ব করবে। তারা হবে দৃঢ়চেতা, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত কিন্তু আল্লাহর গোলামির প্রশ্নে তার একচুলও ছাড় দেয় না। আর এমন লোকদের জন্য সাহায্য অবারিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা ঘোষণা করে আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর এ কথার ওপর মজবুত ও অটল রয়েছে, নিশ্চয়ই তাদের কাছে ফেরেস্তা নাজিল হয় এবং তাদেরকে বলে, ভয় পেয়ো না, চিন্তাও করো না, ঐ বেহেস্তের সুসংবাদ শুনে খুশি হও, যার ওয়াদা তোমাদের সাথে করা হয়েছে। আমি দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের অভিভাবক এবং আখেরাতেরও। সেখানে তোমাদের মন যা চাইবে তা-ই পাবে। আর তোমরা দাবি করবে তা তো পাবেই। (সূরা হা-মীম সিজদাহ : ৩০, ৩১) হকের পথে চলতে গিয়ে বাধা বিপত্তি এলে গন্তব্য পানে চলা বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আরবিতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘মান লাহুল মাওলা ফালাহু কুল’ মানেÑ যার জন্য আল্লাহ তার জন্য সব। তাই আল্লাহর এ নৈকট্য কি এমনি এমনি লাভ করা যাবে? না, ঠুনকো বাধা বিপত্তি তো নয়ই; যেকোনো ধরনের বিপদ মুসিবতকে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন, কর্ণধার হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। (সূরা আহজাব : ৩) যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের দৃঢ়তা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “আর যাদেরকে লোকেরা বলেছে, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনাবাহিনী একত্র হয়েছে, তাই তাদেরকে ভয় কর’Ñএ কথা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেল এবং তারা বলল, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতই না ভালো কাজ সমাধাকারী। (সূরা আলে ইমরান : ৭৩) আল্লাহ তায়ালা সামগ্রিকভাবে তার বান্দার দায়িত্ব নিয়েছেন, এতে মুমিনদের ন্যূনতম শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আল্লাহর ঘোষণা, “এমন এক জায়গা থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করেনি। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ নিজের কাজ অবশ্যই পুরো করে থাকেন। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্যই তাকদির নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সূরা তালাক : ৩) পরীক্ষা নিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাদের বাছাই করতে চান, কারো পরীক্ষা বেশি আবার কারো কম। আল্লাহ তায়ালা যাচাই বাছাই শেষে তার বান্দাকে পুরস্কৃত করেন। আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, “মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ওপর ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদেরকে কোনো পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তাদের আগে সবাইকে আমি পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে, (ঈমান এনেছি বলার মধ্যে) কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক। (সূরা আনকাবুত : ২, ৩) আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাদের বাছাই প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলেন, “তোমরা কী মনে করেছ, তোমরা এমনিই বেহেস্তে চলে যাবে? অথচ আল্লাহ দেখে নেননি যে, তোমাদের মধ্যে এমন কারা আছে, যারা তার পথে জিহাদ করে এবং (তারই খাতিরে) সবর করতে পারে। (সূরা আলে ইমরান : ১৪২) ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক, আফগানিস্তান, মিসর সর্বত্রই ইসলামপন্থীদের দমনের অপচেষ্টা চলছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে শত্রু হিসেবে ব্যবহার করছে সুকৌশলে। অথচ মুসলিম দেশগুলোর কাছে যে পরিমাণ অর্থ ও জনবল আছে তারা ঐক্যবদ্ধ হলে পুরো পৃথিবী তাদের কাছে পদানত হতে বাধ্য। আজকের বিশ্বে বিভিন্ন দেশে মুসলিম নিধন ও ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যা, গুম ও গ্রেফতার করে আইনের কাঁধে বন্ধুক রেখে ইসলামিস্টদের দমনের সরব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে কথিত গণতন্ত্রের মুখোশধারী সাম্রাজ্যবাদীরা। এমতাবস্থায় মুসলমানদের আর হারাবার কিছু নেই। সর্বশক্তি নিয়ে বাতিলের মোকাবেলায় সাহসী সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দৃঢ়তা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ সময়ের দাবি। আর আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের অনৈক্যের সুবাধে ইহুদি ও খ্রিষ্টান চক্র যেভাবে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে তাতে নির্বাক পলকে তাকিয়ে থাকা আর ভাই হারানোর বেদনায় আমরা কি শুধু কাতরাবো? সময় এসেছে এখনই সর্বস্তরের ইসলামপ্রিয় জনতার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। রুখে দিতে হবে জালিমশাহির সমস্ত বক্রজাল। যেখানে লক্ষ কোটি মানবতার আর্তচিৎকার শোনা যায়। সেখানে একটু বেঁচে থাকার শুধুই ব্যর্থ গগনবিদারি আর্তনাদ। এ কঠিন পরীক্ষায় মুমিনরা কি মুষড়ে শেষ হয়ে যাবে? রাতের শেষে দিনের আগমন যেভাবে অনিবার্য ঠিক কঠিন পরীক্ষার পর চূড়ান্ত বিজয় তেমনি সুনিশ্চিত। পরীক্ষা না দিয়ে কেউ যদি ফল লাভের প্রত্যাশায় প্রহর গুনে তাহলে তাকে অরণ্যেরোদন বৈ কী বলা চলে? হালাকু খান বাগদাদ পতন করে মুসলিম জনগণের হাজার বছরের ঐতিহ্য নষ্ট করে, মুসলমানদের রক্ত সাগরের ওপর দিয়ে জালিমদের অশ্বারোহী বাহিনী পাড়ি দেয়, স্পেনের মুসলমানদেরকে মিথ্যা ধোঁকা দিয়ে মসজিদে আটকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়; ফজরের নামাজের সময় যে সকল ঘরে বাতি দেখা যেত তাদেরকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এখনও তার চেয়েও ভয়াবহ কৌশলে মুসলিমনিধন ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ নিধন চলছে। কিন্তু বিশ্ব মোড়লদের ক্রীড়নক মিডিয়াগুলোর অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিশ্বমানবতা অন্ধকারেই থেকে গেল। এ চরম পরীক্ষায় বলা চলে মুসলিম মিল্লাত আজ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যারা বিশ্বসভ্যতা বিনির্মাণ করেছিল তাদের ওপর অত্যাচারের খড়গহস্ত চালিয়ে অবদমিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা দ্বীনে হককে কখনো বাতিল মতাদর্শের কাছে মাথা নত করতে দেবেন না, এটিই আল্লাহর ঘোষণা, “এ লোকেরা মুখের ফুৎকারেই আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়; অথচ তিনি তার এ নূর পরিপূর্ণ করে দিতে চান; তা কাফেরদের কাছে যতোই অপছন্দনীয় হোক না কেন।” (্সূরা আস সাফ : ৮) আল্লাহর কথা কখনো অসত্য হয়নি বরং এখন যে জুলুম-নির্যাতন মুসলমানদের ওপর চলছে তা নিতান্ত নিজেদের হাতে কামাই করা। মুসলমানেরা ঈমানিয়াতের দাবি থেকে সরে গিয়ে নিজদের নফসের খায়েশ মেটাতে ব্যস্ত। তাই এ সকল পরীক্ষার কশাঘাতে মুসলমানেরা জর্জরিত। মুসলমানদের কাজই হচ্ছে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, রাসূলের (সা) রেখে যাওয়া গাইডলাইনই মুসলিম উম্মাহর একমাত্র অনুকরণীয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তিনি সেই সত্তা যিনি তার রাসূল (সা)কে দ্বীনে হক সহকারে পাঠিয়েছেন, সকল জীবনব্যবস্থার ওপর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য। আর এ বিষয়ে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।” (সূরা ফাতাহ : ২৮) সুতরাং নিজদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কারো ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যার যা আছে তা নিয়েই ময়দানে নামতে হবে। পৃথিবীতে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যারা দুনিয়ার ভবিষ্যৎ গড়তে অবিরাম জীবন চেষ্টা চালিয়েছে তারা কেউ এ ধরায় স্থায়ী হতে পারেনি অনাগতকালেও সেটি সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি মুহূর্ত মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি। প্রকৃত সফলতা হচ্ছে তার অনন্তকালের সফলতা। যারা মৃত্যুকে ভয় করে মৃত্যু তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মু’মিনরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। কাপুরুষতার ইতিহাস নেই ইসলামে। মিল্লাতের এহেন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় জেগে উঠতে যুবকদেরকে, আবারও প্রমাণ করতে হবে ইসলাম সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থার নাম। সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তুলে ধরতে হবে যৌক্তিক বক্তব্য। নিতে হবে সাহসী পদক্ষেপ, ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার এক দুর্দমনীয় যাত্রা; যা হতবাক করবে বিশ্ববাসীকে। আর তা হবে অনাগত মিল্লাতের প্রেরণার বাতিঘর। যেমন তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয়ে স্বল্প সৈন্য বাহিনী দিয়ে বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন, শত্রু-অভ্যন্তরে সৃষ্টি করেছিলেন এক ভয়ঙ্কর কম্পন; তাই বিজয় হয়েছিল সুনিশ্চিত। মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। [email protected] লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির