post

‘মুসলিম বিশ্বের জন্য ট্রাম্প সেরা প্রেসিডেন্ট’

এইচ এম জোবায়ের

০২ মে ২০১৮
নাম, চেহারা, কর্মকাণ্ড, বক্তব্য-মন্তব্য ও বৈশিষ্ট্যে এক ব্যতিক্রমী মানুষের নাম ‘ট্রাম্প’। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি আমেরিকার গদিতে সমাসীন হন। ট্রাম্প মূলত আমেরিকার প্রথম কাতারের একজন সফল ব্যবসায়ী। নানাবিধ ঘটনা-মন্তব্য বিশেষত নারীঘটিত বিষয়াদি নিয়ে তিনি আগে থেকেই আমেরিকান সমাজে হাস্য-রসের পাত্র ছিলেন। উলঙ্গ নারীদের নিয়ে নৃত্য, পর্নোস্টারদের উদ্দেশে ছোড়া অশ্লীল আহবান ইত্যাদি সব ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করলেও আমেরিকানদের কাছে তা আমলযোগ্য কোনো বিষয় বলে মনে হয়নি বরং সে সমাজের জন্য তা মামুলি বিষয় ছাড়া কিছু না। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন নারী সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। যেকোনো সমাজের বা রাষ্ট্রের নেতা তিনিই হন- সমাজের বেশিরভাগ মানুষের চরিত্র ও কর্মের সাথে যার মিল থাকে। আমেরিকান সমাজের ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয়, চরিত্রহীনতা এবং স্খলনই প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে নির্ধারণ করে দিয়েছে। মহান আল্লাহ পাকের এটিই সুন্নাত। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বিশেষত আমেরিকান মুসলমান, অভিবাসী এবং সর্বোপরি মুসলিম বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ও মুসলমানদের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন অস্বস্তিবোধের কারণ ডেমোক্র্যাটদের পরাজয় এবং রিপাবলিকানদের বিজয়ের জন্য নয়। এর কারণ হচ্ছেন- ব্যক্তি ট্রাম্প। ট্রাম্পের লাগামহীন মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড, দায়িত্বজ্ঞানহীন টুইটবার্তা, হুট-হাট ডিক্রি জারি মুসলমানসহ গোটা দুনিয়াবাসীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন- ‘পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুসলিম সম্প্রদায়কে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দেয়া উচিত’ মন্তব্য করে তিনি হইচই ফেলে দেন তিনি। তাই ট্রাম্পের বিজয়ে মুসলিম ইস্যুতে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। প্রথমত- ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থান গোটা দুনিয়ার পাশাপাশি আমেরিকাতেও সুসংহত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মার্কিনিরা সজ্ঞানে ও অন্ধভাবে ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে আতঙ্ক ভাবতে শুরু করেছে। ট্রাম্প সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে- মুসলিম ইস্যুতে ঝড় তোলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। দ্বিতীয়ত- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৩১ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৩% অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি অভিবাসী। রক্ষণশীল আমেরিকানরা এদেরকে নিজেদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির জন্য থ্রেট মনে করেন। মার্কিন মুল্লুকের বেশির ভাগ গ্রামবাসীর নিকট ইসলাম ও অভিবাসী এই দুটি ইস্যু অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই ইস্যু দু’টিকে সামনে এনে গ্রামবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন ট্রাম্প। যাইহোক, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান পরাশক্তি আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এবার মূল আলোচনায় ফিরে আসি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইরানি নিউজ সাইট ‘পার্সটুডে’র বরাতে প্রকাশিত : আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন- ‘মুসলিম বিশ্বের জন্য ট্রাম্প সেরা প্রেসিডেন্ট’। বুশের বক্তব্যের হেডলাইন থেকে বোঝার উপায় নেই তিনি কী বলতে চেয়েছেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলে নিমিশেই পরিষ্কার হবে বুশ তার বক্তব্যে উত্তরসূরি ট্রাম্পকে মুসলিমবিদ্বেষের ক্ষেত্রে আরো উসকে দিয়েছেন। সাথে সাথে তিনি মুসলমানদেরকে মার্কিনিদের জন্য থ্রেট মনে করেছেন। বুশ বলেছেন- “ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত নিয়ম-শৃঙ্খলার জন্য কোন পুরস্কার পাননি, নিঃসন্দেহে তিনি ঘৃণ্য ব্যক্তি, মেজাজি এবং অসম্ভব রকমের গোঁয়ার্তুমি রয়েছে তার মধ্যে। এসবই তার অব্যাহত টুইটার পোস্ট থেকে পরিষ্কার হয়েছে। কোনোভাবেই আমি ট্রাম্পকে ভালো প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারি না। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর আসনে বসে বলদর্পিতা দেখান, দেশের মানুষকে ভয়-ভীতি দেখান এবং মিথ্যা কথা বলেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমি এখনো মনে করি মুসলিম বিশ্বের জন্য তিনি হচ্ছেন সেরা প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পকে সেরা প্রেসিডেন্ট মনে করার কারণ হচ্ছে- দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশটিতে মুসলমানরা উৎপাত করছে। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে এগুলো শেষ হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে।” বুশের বক্তব্যে যেমন রয়েছে মুসলিমবিদ্বেষ ও বিদ্বেষে উসকানির পাশাপাশি তিনি নিজের ক্ষেত্রেও স্ব-বিরোধী কথা বলেছেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন তিনি মিথ্যা কথা বলেন। ট্রাম্প যদি মিথ্যাবাদী হন তবে চিন্তাশীলদের ধারণা- ট্রাম্প মিথ্যা বলা শিখেছেন জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছ থেকেই। জর্জ বুশ এমন অসত্য বলতেন যে, অসত্যের মাধ্যমে তিনি দুনিয়াকে দুই-দুটি যুদ্ধ উপহার দিয়েছেন এবং কার্যত আফগানিস্তান ও ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন। বুশ ২০ জানুয়ারি ২০০১ থেকে ২০ জানুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত টানা আট বছর আমেরিকা তথা দুনিয়াকে শাসনের নামে জুলুম-নির্যাতনের ‘ব্যাটল ফিল্ডে’ পরিণত করেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার পর ঠিক ২৬ দিন পর ঠুনকো অজুহাতে আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্র অর্থাৎ পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাল্পনিক অজুহাতে ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তাদের দোসররা। উভয় দেশে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রণহানি ঘটে। লাখ লাখ মানুষ আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ দুটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। মূলত এই দু’টি যুদ্ধই দুনিয়ার ইতিহাসে মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং তা ছিল মারাত্মক ভুল। ইরাক যুদ্ধকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলেই আখ্যায়িত করেছিলেন সে সময়ে বাগদাদে নিয়োজিত জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শক সংস্থা ‘আনমোভিক’ এর প্রধান জনাব হ্যান্স ব্লিক্স। তার মতে- “ইরাক যুদ্ধ ছিল ইতিহাসের ভয়ঙ্কর ভুল এবং এটি ছিল জাতিসংঘের আইনের চরম লংঘন।” মি. ব্লিক্সের পাশাপাশি দুনিয়ার সবাই এই ভুলের স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্তু লাভ হয়নি, হবে না। মুসলমানদের ঘরে যদি শত্রু লুক্কায়িত থাকে তবে বহিঃশত্রুর সামান্য ধাক্কায়ই যে কোনো মুসলিম দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে। মুসলমানদের অনৈক্যের ফলে ইসলাম বিরোধীরা মুসলমানদেরকে উচ্ছেদ, হামলা ও হত্যার সুযোগটি গ্রহণ করছে অনায়াসে। তাই বুশের এই যুদ্ধ এবং ট্রাম্পের ক্রমাগত মুসলিমবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড মূলত একই সূত্রে গাঁথা। তারা মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি, সৌহার্দ্য, শৃঙ্খলা, সহমর্মিতা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস এবং একতাকে মারাত্মক ভয় করেন। এ জন্যই মুসলিম কোন দেশ স্থিতিশীল থাকুক এটা তারা মেনে নিতে পারেন না। এই প্রেক্ষিতেই আফগান, ইরাক, সিরিয়া আক্রমণ। এ কারণেই মিসরের নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান। তুরস্কে বারবার সামরিক জান্তাদের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের চেষ্টা। একই কারণে আলজেরিয়া-বাংলাদেশসহ দেশে দেশে উদীয়মান ইসলামী দলগুলোর ওপর বর্বর জুলুম-নির্যাতন। জামায়াত ও ইখওয়ান নেতাদের ফাঁসিকাষ্ঠে শাহাদাত বরণও বিশ্ব মুসলিম অনৈক্যের অনিবার্য ফল। বুশ যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রেক্ষিতে আরো কিছু বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। বুশ বলেছেন, “ট্রাম্প ঘৃণ্য ব্যক্তি, মেজাজি, গোঁড়া। তিনি মানুষকে ভয় দেখান এবং মিথ্যা কথা বলেন।” সাবেক প্রেসিডেন্টের এই কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় ট্রাম্প ভদ্রজন নন। তিনি অসম্ভব রগচটা এবং ক্ষেত্র বিশেষ অসত্য বলে থাকেন। তবে তার সব নেতিবাচক গুণ মুসলিমদের ওপর হামলে পড়েছে। মুসলিম ইস্যুতে তিনি অন্ধ, বধির, অবিবেচক এবং একগুঁয়ে। বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের কাল্পনিক বিচারে যেমন কোন বিশ্বশক্তি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি তেমনি বুশ-ট্রাম্প গং যখন মনগড়া অজুহাতে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য প্রদান ও নীতি গ্রহণ করেন তখনও কোন বিশ্বশক্তির পক্ষ থেকে কার্যকর প্রতিবাদ বা বুলন্দ আওয়াজ লক্ষ করা যায় না। আর এই নীরবতাই ট্রাম্প গংয়ের অতি উৎসাহের কারণ। তারা জানেন, বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় কল-কব্জা যেহেতু তাদের এবং তাদের দোসর ইহুদিদের হাতে সুতরাং তাদের লাগামহীনতা ও বাড়াবাড়ির ব্যাপারে কারো কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। ট্রাম্প গংয়ের স্বেচ্ছাচারিতার সূত্র ধরে আর একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। তা হচ্ছে কতিপয় মুসলিম দেশ ও রাজা-বাদশাহদের আমেরিকা ও ইহুদিপ্রীতি। পবিত্র আল কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী ইহুদিরা মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু। সেই অভিশপ্ত ইহুদিদের দ্বারা যুগ যুগ ধরে হত্যা-নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে আরব বিশ্বের বহুদেশ। ইহুদি-মার্কিন লবি সামান্য কিছু সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে কিছু প্রভাবশালী মুসলিম দেশকে কিনে নিয়ে মানব সভ্যতার জঘন্য ও নজিরবিহীন ইতিহাস তৈরি করে চলেছে। আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের খায়েশে বিধর্মীদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে মুসলমানদের সর্বনাশ যারা করছে তাদের সুমতির দোয়া করা ছাড়া কি-বা করার আছে। বর্তমানে- সৌদি আরব, ইরান, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান এই দেশগুলো যদি এক টেবিলে বসে মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে তবে বিশ্বের কোন শক্তিরই ক্ষমতা নাই মুসলমানদের ওপর হাত উঠাবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে সেদিন বহুদূর মনে হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি সেখানে একটি ডানপন্থী ইহুদি গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি নির্মাণ সহযোগিতায় উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ইহুদিদের সংগঠন-জেইএনএ বিপুল অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। বৈঠকের তথ্য ফাঁস হওয়া একটি কপিতে দেখা যায় যুবরাজ একই ধরনের আরও দুটি সংগঠন স্ট্যান্ড ফর ইসরাইল-এডিএল ও নর্থ আমেরিকান জিওশ কমিটি-এজেসি এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির ব্যাপারে গুঞ্জন রয়েছে। পাশাপাশি তিনি আমেরিকার প্রাক্তন দুই প্রেসিডেন্ট বুশ পরিবারের সাথে তাদের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। ট্রাম্প-বুশ ও ইহুদিদের সাথে সৌদি যুবরাজের একান্ত সাক্ষাৎ এমন সময় সংঘটিত হলো যখন মধ্যপ্রাচ্য, আরাকান, আসামসহ দুনিয়ার অসংখ্য মুসলিম দেশ ও গোষ্ঠী ইহুদি-মার্কিন লবির দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের চূড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করছে। যুবরাজের আমেরিকা সফর ও ইহুদিদের সাথে অন্তরঙ্গ সংলাপে কী কী বিষয় আলোচনা হয়েছে তা আমরা জানি না। সেখানে যদি মুসলমানদের সমস্যা সমাধানের কোনো বিষয়ে আলোচনা এসে থাকে তবে নিঃসন্দেহে ধন্যবাদের দাবি রাখে। তবে তা না হয়ে যদি ইহুদি-মার্কিন তোষণের মাধ্যমে তাদের সহায়তার বদৌলতে আরব বিশ্বের কথিত নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিসন্ধি থাকে তবে আফসোসের শেষ থাকবে না। যাইহোক আমরা মুসলমানদের নিরঙ্কুশ ঐক্য ও সৌহার্দ্য কামনা করি। বিশ্বাস করি একমাত্র প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর শর্তহীন ঐক্যই মুসলিম বিশ্বের শান্তি-স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। মার খেতে খেতে নিঃশেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে হয়তো আমরা এই দৃশ্যই দেখতে পাবো। বুশের বক্তব্য থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়- ট্রাম্প প্রশাসন ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনি চিন্তা ছাড়া কিছু করে না। বুশ বলেছেন- “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশটিতে মুসলমানরা উৎপাত করছে কিন্তু ট্রাম্পের আমলে এগুলো শেষ হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে মি. বুশ ইরাক আক্রমণ চালানোর সময়ের মতোই মিথ্যা বলেছেন। নিকট অতীতের আমেরিকার ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মুসলমানগণ আমেরিকার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। আমেরিকার উন্নতি-কল্যাণ নিশ্চিত করতে মুসলমানগণ দিন-রাত কাজ করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বোমা হামলা, আত্মঘাতী হামলা, বন্দুকধারীর আক্রমণ ইত্যাদি সব ইস্যুতে মুসলমানদের জীবন বাজি রেখে ভূমিকা পালনের কথা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। এতদসত্ত্বেও তার এই বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়- আমেরিকা প্রবাসী মুসলমানগণ বর্তমানে ভালো নেই। তাদের ওপর সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি চালানো হচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও সুদানসহ গোটা মুসলিম দুনিয়াও নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। বুশের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়েছে- বর্তমান বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমান দমন-পীড়ন, নিধন-উচ্ছেদে বুশ প্রশাসন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। যার প্রেক্ষিতে আমেরিকান মুসলমানদের মাঝে স্বাভাবিক আশঙ্কা বিরাজ করছে। আর এতেই মি. বুশরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে (!) আছেন। ইহুদি-মার্কিন গোষ্ঠীর এমন প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতা যাদের চোখে পড়ে না তাদের জন্য আফসোস। আল্লাহপাকের ঘোষণা মতে- এদের চোখ-কান থাকলেও এরা দেখতে ও শোনতে পায় না। এরপরও সময় এসেছে জেগে ওঠার। আজ মুসলমানদের বড়ই দুর্দিন। বিশ্বের মোড়লরা একজোট হয়ে আরাকান থেকে মুসলমানদের সমূলে নিধন করছে। তাদের সাথে মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম আচরণ করা হচ্ছে। সেখানকার নারী ও শিশুদের আর্ত চিৎকার ও আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ কেঁপে কেঁপে উঠছে, তবুও আমরা ঘুমিয়ে। একদিন ফিলিস্তিন, আরাকান ও সিরিয়ায় মুসলমানদের রক্তে প্রবাহিত স্রোত থেকেই বিপ্লবের আওয়াজ আসবে। যে আওয়াজে হয়তো জেগে উঠবে ঘুমিয়ে থাকা প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলো। লেখক : সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির