post

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা ও কুশলী প্রচেষ্টা

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪

আব্দুল্লাহ আল মামুন

Medicalআমরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। সাধারণত আমাদের দেশের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যেকোনো পরিবারের বাড়ন্ত যে কোনো বালক বা বালিকাকে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে যদি জিজ্ঞেস করি আমি নিশ্চিত অন্তত শতকরা সত্তর ভাগই বলবে আমি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট হবো। আমাদের বাবারাও এমনটাও বলবে আমরাও বলেছি হয়তো আমাদের পরের প্রজন্মও একইরকম বলবে। যদিও কঠিন বাস্তবতার সামনে এসে অধিকাংশের স্বপ্ন বাল্যকালেই ঝরে যায়। ভর্তিযুদ্ধের সময় তাই বাকি থাকে হাতেগোনা কয়েকজন সৈনিক। যেমন, শুধু সরকারি মেডিক্যাল ৩৩৪৪টি আসনের জন্য প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার অংশ নেয় মাত্র ৬০ হাজার (১) পরীক্ষার্থী (২) সংখ্যাটি কিন্তু নেহাত কম নয়। তবে একটা কথা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, তা হলো fortune favours the brave তাই যারা সাহস বুদ্ধিমত্তা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে যুদ্ধে যাবে তাদের বেলাতে কেবল উজ্জ্বল তারা (স্টার) হওয়া সম্ভব। পড়াশোনাটাই এখানে একমাত্র মুখ্য বিষয় নয় বরং অন্যতম একটি মুখ্য বিষয়। এবার ডাক্তারি বিদ্যা নিয়ে কিছু বলি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সর্বাগ্রে এই পেশা। কেননা এখনও দেশের প্রতি ২৬০০০ মানুষের জন্য ডাক্তার মাত্র একজন। নিজের বিবেক ও মানবিকতা দিয়ে চিন্তা করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় দরিদ্র এই দেশে একজন ডাক্তার হিসেবে মানুষের জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি আমাদের ডাক্তাররা মানবিক এবং নীতিবান। তবুও আমাদের আরও নীতিবান ও আরও বেশি মানবিক ডাক্তার প্রয়োজন। মোদ্দাকথা হলো এই পেশাটি নিঃসন্দেহে একটি মহৎ পেশা এবং মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য প্রত্যক্ষভাবে কিছু করবার সুযোগ এ পেশাতেই সবচেয়ে বেশি, তাই আমার বরাবরই মনে হয়েছে। বাংলাদশের প্রেক্ষাপটে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীর যোগ্যতা ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এইচএসসি কৃতকার্য হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ন্যূনতম মোট জিপিএ হারে হবে ৮.০০ (SSC+HSC) ২. সকল উপজাতি ও পাহাড়ি অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য SSC ও HSC-এর ন্যূনতম মোট জিপিএ ৭.০০ পরীক্ষা পদ্ধতির : মোট নম্বর ২০০ ১. জিপিএ ((SSC+HSC) : ১০০ (SSC জিপিএ x ৮=৪০ HSCজিপিএ x ১২=৬০ ২. লিখিত (MCQ) =১০০ জীববিজ্ঞান : ৩০, রসায়ন : ২৫, পদার্থবিজ্ঞান : ১৫, সাধারণ জ্ঞান : ১০ * ভর্তি পরীক্ষায় থাকবে ৮০% মেধা কোটা এবং ২০% জেলা কোটা * পরীক্ষার্থীর পছন্দ ও মেধা তালিকায় তার অবস্থানের ভিত্তিতে বাছাইকৃত মেডিক্যাল কলেজের নামসহ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা মেডিক্যাল ভর্তিইচ্ছু পাঠকদের সুবিধার জন্য নিচে ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হলো : জীববিজ্ঞান এই বিষয়টির জন্য নির্ধারিত নম্বর অনেক বেশি। তাই জীববিজ্ঞানে দুটি শাখাতেই পরীক্ষার্থীর ভালো দখল রাখতে হবে। এখানে মূলত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পার্থক্য, উদাহরণ কাজ তুলনা জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া ও জীবনচক্র প্রভৃতি বিষয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক তথ্য মনে রাখার জন্য পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন কৌশল তৈরি করে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়সমুহ : কোর্সের গঠন ও বৈশিষ্ট্য কাজ গ্যামেটোজেনিসিস ম্যালেরিয়া পরজীবী আরশোলা কঙ্কালতন্ত্র রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্র সংবেদী অঙ্গ পরিপাকতন্ত্র ও অর্থনৈতিক প্রাণিবিদ্যা। নমুনা টিপস ভাইরাসজনিত রোগের নাম : হায় হায় বসন্তকাল এলো ভাইকে ইনফ্লোয়েঞ্জা ও ডেঙ্গু জ্বরে পেলো। হাম হার্সিটস বসন্ত, এইডস ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভঙ্গে জলাতঙ্ক। উদ্ভিদ বিজ্ঞান : ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া, গোত্র পরিচিতি কোষ, কোষ বিজ্ঞান টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্র, উদ্ভিদের জৈবনিক প্রক্রিয়া প্রভৃতি। নমুনা টিপস ছোট দিনের উদ্ভিদ: ছোট্ট  পলাশের ডালি সাজিয়ে     তোমাকে     ঈদের শুভেচ্ছা পাঠালাম পালাশ ডালিয়া জিনিয়া তামাক ঈক্ষু            পাট আসলে রোপা, আমচন্দ্র এলাকায় শীত কম আমন রোপা  আম    চন্দ্রমল্লিকা    এস্টার জিম কলমি শাক,  ধান  কলমস রসায়ন রসায়ন বিজ্ঞানের ১ম ও ২য় পথের প্রশ্নের ধরন কিছুটা বৈচিত্র্য থাকে। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী রসায়ন প্রশ্ন ভুল করার জন্য মেধা তালিকায় পিছিয়ে যায়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় প্রথম পত্র : পদার্থের অবস্থা পরমাণু গঠন পর্যায় সারণি রাসায়নিক বন্ধন রাসায়নিক বিক্রিয়ার শক্তির রূপান্তর নিষ্ক্রিয় গ্যাস, পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম, গ্রুপ IA ও IA এর মৌলসমূহ নমুনা টিপস সমযোজী ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবরণ আণবিক বর্ণালি রঞ্জনরশ্মি পরীক্ষা রসুন বর্ণালী নিউটন বর্ণালী পরীক্ষা দ্বিতীয়পত্র : v.v1, v11, d ব্লক মৌলসমূহের রসায়ন জৈব রসায়নের সুচনা হাইড্রোকাটন আ্যালকোহল, ফেনল ইথার জৈব এসিড ও তাদের জাতকসমূহ টিপস : পিকরিক এসিড বৈশিষ্ট্য পিকল ও তিথি হলুদ দানাদার বিষ খেয়ে রেগে আগুন পিকরিক এসিড তিক্ত হলুদ দানাদার বিষাক্ত বিস্কোরক পদার্থ বিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানে মূলত প্রশ্ন হিসেবে বিভিন্ন সংখ্যা বৈশিষ্ট্য উদাহরণ সূত্র, পার্থক্য নির্ভরতা মাঝে মাঝে গাণিতিক সমস্যা (এক সূত্রের) থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় : প্রথমপত্র : ভেক্টর গতিসূত্র, মহাকর্ষ, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ ও গ্যাস তাপ বিকিরণ তাপগতিবিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র শব্দ। ২য় পত্র: স্থির বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ প্রবাহ ও বর্তনী বিদ্যুৎ প্রবাহের চৌম্বক্রিয়া চৌম্বকপদার্থ ও ভূ-চৌম্বকত্ব আলোর প্রতিফলন প্রতিসরণ আলোক যন্ত্রপাতি, পরামাণু ইলেকট্রন ও ফোটন ইলেক্ট্রনিকস টিপস প্রতিসরণ দূরীকরণ যন্ত্র: সরাতে     নেই ভূমণের গালিচা প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ     নভো দূরবীক্ষণ    ভূ-দূরবীক্ষণ গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ English ইংরেজিতে কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি না থাকলে কিছু নির্দিষ্ট Topics থেকে নিয়মিত প্রশ্ন এসে থাকে। ইংরেজতি ভাল করতে হলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলি চর্চা করে যেতে হবে : Appropriate preposition, right forms of verbs, correction, transformation phrase and idioms voice. narration, translation সাধারণ জ্ঞান এখানেও কোনো সুনির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি নেই। মেডিক্যাল পরীক্ষাগুলোতে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ছাড়াও বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভৌগোলিক, স্থাপনা, বিখ্যাত স্থাপনা সংস্কৃতি, সভ্যতা স্বাস্থ্য প্রভৃতি topics গুরুত্বের দাবি রাখে। ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার বিশেষ পরামর্শ : নিয়মিত নতুন বিষয় না পড়ে নিয়মিত পুরনো বিষয় বারবার পড়ার অভ্যাস করা। মনে রাখতে হবে ১০০টা পড়ে ১২টা মনে রাখার চেয়ে ১০টা পড়ে ১০টা মনে রাখা ভাল। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা করে পড়া ৩. যেকোনো অনুশীলন পরীক্ষা দেয়ার আগে নির্দিষ্ট সিলেবাস অন্তত তিনবার রিভিশন দেয়া ৪. পড়ার পাশাপাশি খাতায় সংক্ষিপ্ত আকারে নোট রাখা এবং রিভিশন দেবার সময় ঐ নোটটিকে অনুসরণ করা। ৫. অনুশীলন পরীক্ষাগুলোতে একটি ব্যক্তিগত strategy অনুসরণ করে প্রতি পরীক্ষায় একই রকম strategy তে অভ্যস্ত হওয়া। যেমন কেউ আগে প্রশ্ন পড়ে ও পরে উত্তর পূরণ করে বা কোউ প্রশ্ন পড়ার সাথে সাথে উত্তর পূরণ করে ইত্যাদি। ৬. একটি প্রশ্ন না পারলে সেটা নিয়ে বেশি সময় নষ্ট না করে পরেরটিতে যাওয়া। মনে রাখতে হবে তিনটি প্রশ্ন পড়া ও উত্তর করার সর্বোচ্চ মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। ৭. কখনও ঘাবড়ে না যেয়ে সবসময় আত্মবিশ্বাস থাকা এবং মনে সবসময় বিশ্বাস রাখতে হবে যে যদি একজন চান্স পায় তবে সেটা হল আমি। সবশেষে বলব শুধু পড়াশোনাই ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার একমাত্র শর্ত নয়। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে সুস্থ রাখা। আল্লাহ তাআলায় কাছে বিনয়ের সাথে নিজের চাওয়াটাকে পেশ করা, বাবা মা সর্বোপরি সবার কাছে দোয়া চাওয়া এবং অবশ্যই নিজের জন্য নিজেকে অনেক অনেক দোয়া করা অতীব জরুরি। পরিশেষে হৃদয় থেকে দোয়া করছিÑ আল্লাহ তাআলা যেন আমার সকল মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু পাঠকের ওপর সদয় হউন। ইনশাআল্লাহ দেখা হবে বিজয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির