post

রামাদান মাসের ভাবনা শরিয়তের দৃষ্টিতে রোজার বিধিবিধান

১২ জুলাই ২০১৪

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

Storyনবী-রাসূলদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মানুষের মাঝে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবায়ে কিরাম (রা:)। কিতাবের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। এভাবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনেক কিছুতেই মুসলমানদেরকে সেরা করে রেখেছেন। আল-কুরআন পৃথিবীবাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে পৃথিবীর সেরা নবী মুহাম্মদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। কুরআনকে যে মহামান্বিত রজনীতে নাজিল করা হয়েছে, সে রজনী হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। মাহে রামাদান মুমিনদের আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য এক অনন্য সেরা মাস। এ মাসের ১টি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদাতের সমান। রামাদান মাস আমাদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে আছে সাহরী, ইফতার, তারাবিহ, ইতেকাফ, লাইলাতুল ক্বাদর, ফিতরা ও ঈদুল ফিতর। কুরআন নাজিল হয়েছে এ মাসের লাইলাতুল ক্বাদরে, সংঘটিত হয়েছে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদর ও বিজয় হয়েছে পবিত্র মক্কা। কাজেই আত্মগঠন ও বিজয়ের মাস রামাদান। মাহে রামাদানে ইসলামের আদর্শকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী রমজানের তাকওয়া অর্জন গঠনে আজকের প্রবন্ধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মাস। এ মাসে রোডম্যাপ মাহে রামাদান ও তাকওয়ার পথ ও পথে নিয়ম-কানুনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ সংযুক্ত করা বিধিবিধান আলোচনা করা হলো। আশা করি এ আলোচনা থেকে মাসব্যাপী তাকওয়া সমাজকল্যাণ ও জ্ঞানার্জনের সহায়ক হবে। রোজার (সিয়ামের) পরিচয় : রোজা ইসলামের ৫টি মৌলিক ভিত্তির একটি অন্যতম ভিত্তি। রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ অর্থাৎ কুরআনের ভাষা ‘আস্সাওম’ অর্থ হচ্ছে আত্মসংযম, কঠোর সাধনা, অবিরাম চেষ্টা ও বিরত থাকা ইত্যাদি। এর প্রতিশব্দ ‘আল ইমসাক’। ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে ঋধংঃরহম আর ব্যাপক অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সাওমের নিয়্যতে সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। মাহে রামাদান আরবি চন্দ্র বছরের নবম মাস। রামাদান শব্দটি আরবি ‘রমজ’ শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষের সঞ্চিত পাপ পঙ্কিলতা জ্বালিয়ে দেয়া, নিঃশেষ করে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। রোজা সম্বন্ধে আল-কুরআনের ধারাবাহিক বর্ণনা : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’। (সূরা বাকারা-১৮৩) “কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের রোজা। যদি তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তাহলে সে অন্য সময় যেন এ দিনগুলোর রোজা আদায় করে নেয়। আর যারা রোজা রাখতে সক্ষম (হয়েও রোজা রাখে না) তারা যেন ‘ফিদ্ইয়া’ দেয়। আর যে ইচ্ছা করে কিছু বেশি সৎ কাজ করে, তা তার জন্যই ভালো। (সূরা বাকারা-১৮৪) “রামাদান ঐ মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য পুরোটাই হেদায়াত, যা এমন স্পষ্ট উপদেশে পূর্ণ যে, তা সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। তাই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পায় তার অবশ্য কর্তব্য, সে যেন পুরো মাস রোজা রাখে। আর যে অসুস্থ বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য সময় ঐ দিনগুলোর রোজা আদায় করে নেয়। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা-ই চান, যা কঠিন তা তিনি চান না। তোমাদেরকে এ জন্যই এ নিয়ম দেয়া হয়েছে, যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পুরা করতে পার, আর সে হেদায়াত আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন এর জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করতে পার এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পার।’’ (সূরা বাকারা-১৮৫) “হে নবী আমার বান্দারা যদি আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তাহলে তাদেরকে বলে দিন, আমি তাদের কাছেই আছি। আমাকে কেউ যখন ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং সাড়া দিই। তাই তাদের উচিত, তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে। এ কথা তাদেরকে আপনি শুনিয়ে দিন, হয়তো তারা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।’’ (সূরা-বাকারা-১৮৬) “তোমাদের জন্য রোজার সময় রাতের বেলায় স্ত্রীদের কাছে যাওয়া হালাল করে দেয়া হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা চুপে চুপে নিজেরাই নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে। কিন্তু তিনি তোমাদের অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা জায়েয করে দিয়েছেন তা হাসিল কর। আর রাতের বেলায় খানাপিনা কর, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকট রাতের কালো রেখা থেকে সকালের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে না ওঠে। তখন এসব কাজ ছেড়ে দিয়ে রাত পর্যন্ত নিজেদের রোজা পুরা কর। আর যখন তোমরা মসজিদে ইতেকাফ কর, তখন তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এটা আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমা, এর কাছেও যেও না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধান মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আশা করা যায়, তারা তাকওয়া অবলম্বন করবে।’’ (সূরা বাকারা-১৮৭) রোজা ফরজ হয় রাসূল (সা)-এর নবুওয়াতের ১৫তম বর্ষে তথা দ্বিতীয় হিজরিতে। সূরা বাকারার ১৮৩নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমানদারকে ডেকে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ আমাদের ওপরই কেবল সিয়াম ফরজ করা হয়নি বরং পূর্ববর্তী সব নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদের ওপরও সিয়াম ফরজ ছিল। উক্ত আয়াতে ২টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে: ১। পূর্ববর্তী সব নবী-রাসূলের ওপর সিয়ামের বিধান ছিল। ২। সিয়াম ফরজ করার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। পূর্ববর্তীদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজের ইতিহাস : হযরত আদম (আ) থেকে হযরত নূহ (আ) পর্যন্ত প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখার বিধান ছিল। একে বলা হতো আইয়ামে ‘বিজ’। ইহুদিরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার এবং বছরে মহররমের দশম তারিখে রোজা রাখতো। মূসা (আ) তুর পাহাড়ে অবস্থানের ৪০ দিন রোজা পালনের নির্দেশ ছিল। খ্রিষ্টানদের ৫০ দিন রোজা রাখার রেওয়াজ ছিল। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা একাদশী উপবাস পালন করে। ১. রোজার প্রতিদান : হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য, কেবল রোজা ছাড়া। কারণ তা আমার জন্য এবং আমি তার প্রতিদান দেবো। আর রোজা ঢালস্বরূপ। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কাজ না করে, শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে তার বলা উচিত, আমি রোজাদার। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার কসম! রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধযুক্ত। রোজাদারের দুটি আনন্দ, যা সে লাভ করবে, একটি হচ্ছে সে ইফতারির সময় খুশি হয়। আর দ্বিতীয়টি লাভ করবে যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।) ২. উত্তম আমলের সীমাহীন পুরস্কার : এটি সবর, ধৈর্য ও তিতিক্ষার মাস। আর সবরের প্রতিফল জান্নাত। এ মাস হচ্ছে পরস্পর সহৃদয়তা ও সৌজন্য প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার ফলস্বরূপ তার গুনাহ মাফ করে দেয়া ও জাহান্নাম হতে তাকে নিষ্কৃতি দান করা হবে। আর তাকে প্রকৃত রোজাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে; কিন্তু সে জন্য প্রকৃত রোজাদারের সওয়াব কিছুমাত্র কম করা হবে না। আর যে লোক এ মাসে নিজের অধীন লোকদের শ্রম-মেহনত হাল্কা বা হ্রাস করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা দান করবেন এবং তাকে দোযখ হতে নিষ্কৃতি ও মুক্তিদান করবেন। (বায়হাকী) ৩. গুনাহ মাফের ঘোষণা : “হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে লোক রামাদান মাসের সাওম পালন করবে ঈমান ও সাওয়াবের ইচ্ছা পোষণ করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী) ৪. রোজাদারের করণীয় : “আবু হুরাইয়া (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, (গোনাহ হতে আত্মরক্ষার জন্য) রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজাদার অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহিলি আচরণ করবে না। কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে অথবা গালমন্দ করলে সে তাকে বলবে, আমি রোজা রেখেছি। কথাটি দু’বার বলবে। যার মুষ্টিতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট ক¯ুÍরীর সুগন্ধি থেকেও উৎকৃষ্ট। কেননা (রোজাদার) আমার উদ্দেশ্যেই খাবার, পানীয় ও কামস্পৃহা পরিত্যাগ করে থাকে। তাই রোজা আমার উদ্দেশ্যেই। সুতরাং আমি বিশেষভাবে রোজার পুরস্কার দান করব। আর নেক কাজের পুরস্কার দশ গুণ পর্যন্ত দেয়া হয়ে থাকে। ৫. নিষ্ফল রোজা : “হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘কতক এমন রোজাদার আছে, যাদের রোজা দ্বারা শুধু পিপাসাই লাভ হয়। আর কতক এমন নামাজি আছে, যাদের রাত জেগে নামাজ পড়া দ্বারা শুধু রাত জাগরণই হয়।’’ (ইবনে মাজা) রাসূল (সা) বলেছেন : “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং কাজ পরিহার করল না, তার খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’’ (বুখারী, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ) ৬. রামাদান মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় : হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, রামাদান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়।’’ (মুসলিম শরীফ চতুর্থ খণ্ড-২৩৬৩) ৭. ঈমান ও ইসলামের পরিচয় : “আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী (সা) লোকদের সামনে বসেছিলেন। এমন সময় একজন লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন, ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, (পরকাল) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। মরণের পর আবার জীবিত হতে হবে, তাও বিশ্বাস করবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন, ইসলাম এই যে, তুমি আল্লাহর ‘ইবাদত করতে থাকবে এবং তাঁর সাথে (কাউকে) শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, নির্ধারিত ফরজ জাকাত দেবে এবং রমজানের রোজা রাখবে। সে জিজ্ঞেস করল ‘ইহ্সান কী?’ তিনি বললেন, (ইহ্সান এই যে) তুমি ইবাদত (এমনভাবে আল্লাহর) ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখছ; যদি তাকে না দেখ, তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন (বলে অনুভব করবে)। সে জিজ্ঞেস করল, ‘কিয়ামত কখন হবে?’ তিনি বললেন, এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি জানেন না। তবে আমি তোমাকে তার (কিয়ামতের) শর্তগুলো (লক্ষণ) বলে দিচ্ছি, ‘যখন বাঁদী তার মুনিবকে প্রসব করবে এবং কাল উটের রাখালরা যখন দালান কোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে। যে পাঁচটি জিনিসের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাখেন, কিয়ামতের জ্ঞান তারই অন্তর্ভুক্ত।’ এরপর নবী (সা) এই আয়াত পড়লেন। “নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনক্ষণ সংক্রান্ত জ্ঞান আল্লাহরই নিকট রয়েছে...’’। অতঃপর লোকটি চলে গেল। তিনি বললেন, লোকটিকে ফিরিয়ে আন। কিন্তু কেউ তার সন্ধান পেল না। নবী (সা) বললেন, ইতি জিবরাইল, তোমাদেরকে ইসলাম শিখাতে এসেছেন। ৮. মুনাফিকের পরিচয় : আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটিÑ ১) কথা বললে মিথ্যা বলে ২) ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ৩) আর তার কাছে কোনো আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে। ৯. পবিত্রতার (অজুর) নিয়ম সংক্রান্ত : ওসমান ইবনে আফ্ফান (রা) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি একটি পানির পাত্র আনিয়ে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। তারপর তিনি তাঁর ডান হাত পানির পাত্রে প্রবেশ করালেন এবং কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল এবং তিনবার দু’হাতের কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। দু’পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত তিনবার ধুইয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় এরূপ অজু করার পর একাগ্রচিত্তে দুই রাক’আত নামাজ পড়বে, কিন্তু মাঝখানে সে নাপাক হবে না। আল্লাহ পাক তার পূর্বকৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। হেমরান থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে অজু শেষ করে উসমান বললেন, আমি কি তোমাদের একটি হাদীস শুনাব না? যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকতো, তাহলে আমি তোমাদেরকে তা শুনাতাম না। আমি নবী (সা) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে নামাজ পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার উক্ত নামাজের পূর্বেকার সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন। উক্ত আয়াতটি হলো ‘যারা আল্লাহর অবতীর্ণ প্রত্যাদেশসমূহ গোপন করে ...?। ১০. নামাজ সংক্রান্ত : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলমান হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে সে যেন ঐসব নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব নামাজের জন্য আজান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়তের পন্থা পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করেছেন। আর এসব নামাজ ও হেদায়াতের পন্থা পদ্ধতি হলো : যেমন এই ব্যক্তি নামাজের জামাতে হাজির না হয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ে থাকে, অনুরূপ তোমরাও যদি তোমাদের বাড়িতে নামাজ পড়ো তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পন্থা-পদ্ধতি পরিত্যাগ করো তাহলে অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলবে। কেউ যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (নামাজ পড়ার জন্য) কোন মসজিদে হাজির হয় তাহলে মসজিদে সে যতবার পদক্ষেপ করবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্য একটি নেকি লিখে দেন। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে গুনাহ দূর করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা মনে করি যার মুনাফিকি সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামাতে নামাজ পড়া ছেড়ে দেয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা) এর জামানায় এমন ব্যক্তি জামাতে হাজির হতো যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে নামাজের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। সিয়াম বা রোজার কতিপয় মৌলিক বিধিবিধান : বিভিন্ন প্রকার সিয়াম বা রোজা : ১। ফরজ রোজা- মাহে রামাদানের রোজা ২। ওয়াজিব রোজা- কাফফারার রোজা, মান্নতের রোজা ৩। সুন্নাত রোজা- আশুরার রোজা (মহররম মাসের ৯, ১০ তারিখ) ও আইয়ামে বিজের রোজা (চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) শাওয়াল মাসে যে কোন ৬টি রোজা রাখা, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখ, ৪। নফল রোজা- ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত বাদে সব রোজাই নফল রোজা ৫। মাকরূহ রোজা : শুধুমাত্র শনিবার বা রবিবার রোজা রাখা, শুধুমাত্র আশুরার দিন রোজা রাখা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা এবং মাঝে কোন বিরতি না দিয়ে ক্রমাগত রোজা রাখা, ৬। হারাম রোজা- বছরে ৫ দিন রোজা রাখা হারাম। ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা, ঈদুল আজহার দিন রোজা রাখা ও ১১, ১২ ও ১৩ই জিলহজ তারিখে রোজা রাখা। (বাকি অংশ আগামি সংখ্যায়) লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির