post

শহীদ বেশে ফিরে এলেন আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত

মো: আফজাল হোসেন

২৫ এপ্রিল ২০১৭
দেখতে দেখতে ৪টি বছর পেরিয়ে গেল। সময় চলে যায় কিন্তু স্মৃতিগুলো বারবার হৃদয়ের অন্তরালে হানা দেয়। কিছুতেই ভুলে থাকা যায় না শহীদের স্মৃতিগুলো। আমি দায়িত্বশীল থাকাকালীন অবস্থায় অনেক ভাইকে শহীদ হতে দেখেছি। চোখের সামনে বাতিলের আঘাতে অসংখ্য ভাইয়ের আহত, পঙ্গুত্ব ও শাহাদাতের অনেক স্মৃতিই চোখের সামনে ভেসে আসে বার বার। তেমনি আমার জীবনে যার শাহাদাতের স্মৃতিগুলো বারবার ভেসে আসে সে আমার প্রিয় ভাই “শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত”। ৩ মে ২০১৩ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফোনে আমার সাথে শেষ কথা হয় শহীদ শাহাদাতের। তখন সে ঢাকায় অবস্থান করছিল। সে ঢাকায় যাবার পূর্বে আমাকে বলেছিল, সে ঢাকায় ৩-৪ মাস অবস্থান করবে। কিন্তু সেদিন সে হঠাৎ করে ফোনে বলল, ৫-৬ দিনের মধ্যে সে রাজশাহীতে ফিরবে। শাহাদাত নিখোঁজ হওয়ার খবর ৪ মে ২০১৩ ঠিক বিকেল সাড়ে ৫টায় শহীদ শাহাদাত ভাই-এর  ছোট  হাসানুল বান্না সোহাগ ও তার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, ভাই আপনার সাথে কি আজ শাহাদাতের কোনো কথা হয়েছে? আমি বললাম নাতো, কেন ভাবী? তিনি বললেন, দুপুরের পর থেকে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। একথা শুনে আমার হৃদয়টা কেঁপে উঠলো। আমি ভাবীকে বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না আমরা দেখছি। এরপর আমি শহীদ শাহাদাতের ছোট ভাই হাসানুল বান্না সোহাগ ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালাম, সেও একই কথা বলল। এরপর ঢাকায় যে সকল স্থানে সে অবস্থান করছিল সে সকল স্থানে খবর নিতে শুরু করলাম। শাহাদাতের আটকের খবর এভাবে দুই দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। ৬ মে ২০১৩ আমাদের এলাকার এক কর্মী আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ভাই শাহাদাত ভাইকে ৪ মে বিকেলের দিকে ঢাকায় সাদা পোশাকে প্রশাসনের লোকজন আটক করে নিয়ে গেছে। একথা শোনার পর আমার হৃৎপিন্ড কেঁপে উঠলো। হয়ত তারা আর শাহাদাতকে বাঁচিয়ে রাখবে না। আমি বললাম কোথা থেকে শুনলে? তার নম্বরটা দাও। সে আমাকে নম্বরটা দিলে আমি সেই নম্বরটিতে ফোন দিলে সে আমাকে বলে আমার সামনে থেকে ৪ মে ২০১৩ বিকেলের দিকে ঢাকা মিরপুর-২, মধ্যমনিপুর, বাসা নম্বর ৭০৭ থেকে তাকে আটক করে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী প্রশাসনের লোকেরা। একথা শোনার পর আমার চোখ-মুখ শুকিয়ে যেতে লাগল। কারণ শাহাদাত ছিল আমার সব থেকে কাছের। বাতিলের জন্য সে ছিল এক অগ্নিশিখা। তার সাহসিকতা আর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এতই বেশি ছিল যে তাতে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যা করার জন্য অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল। সুতরাং তাকে সাদা পোশাকের লোকদের আটকের ঘটনায় কি ঘটবে তা আর বুঝতে আমাদের বাকি ছিল না। এরপর খবরটি তার ছোট ভাইকে জানালাম। এ খবর পাবার পর সেসহ আমরা সবাই ঢাকায় খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। কিছু কিছু মাধ্যম দ্বারা খবর পাওয়া গেল যে র‌্যাব-৩ মিরপুর শাখায় তাকে আটক রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে লোক পাঠালে তারা শাহাদাতের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। ফলে আমাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। এরপর যে যেখানে ছিল সেখানে খোঁজ নেয়ার জন্য বলা হলো। এভাবে ৩-৪ দিন অতিবাহিত হলো। প্রশাসনের কাছে তাঁর মায়ের আকুতি সর্বশেষ ১০ মে ২০১৩ বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পারলাম তাকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ খবর পাবার পর এর সত্যতা যাচাই করা শুরু করি এবং এর সত্যতাও পাই। এর পরদিন ১১ মে সকাল ১০টার দিকে তার মা, স্ত্রী ও বোন খবর নেয়ার জন্য র‌্যাব-৫ এ যান। কিন্তু র‌্যাব সদস্যরা তাদেরকে সেখানে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি শাহাদাতের আটকের বিষয়টিও তারা অস্বীকার করে। সেখান থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার মাকে কিছুতেই সেখান থেকে সরাতে পারে নাই। কারণ তার মা জানতেন সেখানেই শাহাদাতকে আটকে রাখা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর তার মা হঠাৎ দেখতে পান একটি মাইক্রোবাসের ভেতর মুখে কালো কাপড় বাঁধা অবস্থায় শাহাদাতকে পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সেটা বুঝতে পেরে বারবার তার মা তাদেরকে আকুতি মিনতি করে দু’হাত জোড় করে তাদের অফিসারকে বলেছিলেন “আপনারা আমার শাহাদাতের এক হাত ও এক পা কেটে নেন তবুও তাকে জীবিত ফেরত দেন। তার ৩ বছরের একটি বাচ্চা রয়েছে তার বাপ-মা হারা এতিম স্ত্রী রয়েছে তাদেরকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার শাহাদাতকে জীবিত ফেরত দিন।” এই বলে তাদের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের হৃদয়ে সামান্যটুকু মনুষ্যত্ব বোধের জন্ম হয়নি। বারবার চেষ্টার পরও যখন তারা কিছুতেই শাহাদাতের আটকের বিষয়টি স্বীকার করল না, তখন ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে খালি হাতে সেখান থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল তাদের। র‌্যাবের নাটক এরপর একি নাটক তৈরি হলো? সেদিন রাত্রে অর্থাৎ ১১ মে ২০১৩ আমি ঘুমানোর জন্য রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো সেদিন ৩-৪ বাসায় ঘুমানোর জন্য গেলাম, কিন্তু কোথাও ঘুমানোর জায়গা পেলাম না। অবশেষে রাত্রি ১টার দিকে আমিসহ ২-৩ জন রাজশাহী রেডিও সেন্টারের পাশে যেখানে শাহাদাতকে হত্যা করা হয় ঠিক তার পাশে একটি নিরিবিলি জায়গায় বসে গল্প গুজব করে রাত যাপন করছিলাম। হঠাৎ করে রাত প্রায় ৩.১৫ মি. চারিদিকে প্রচন্ড গুলাগুলির শব্দ শুরু হলো। চারিদিকে শুধু গুলাগুলির শব্দ আর আওয়াজ ভেসে আসছিল ধর ধর ধর। সে কি এক ভয়ানক দৃশ্য। অন্ধকারে আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম এবং মনে হচ্ছিল আমাদেরকে হয়তো কে বা কারা গুলি করতে করতে ধেয়ে আসছে। এমতাবস্থায় আমরা যে যার মত আশপাশের বাসাগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিই। এভাবে প্রায় ১৫-২০ মি. ধরে গুলাগুলির শব্দ চলতে থাকে। আর চারিদিকে শুধু আতঙ্ক বিরাজ করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই গোলাগুলির শব্দ? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমরা। শাহাদাতের মৃত্যুর খবর কিছুক্ষণ পর গুলাগুলির শব্দ থেমে গেল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে হঠাৎ করে পুলিশের এক পরিচিত ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, “খোঁজ নেনতো ভাই শাহাদাত নামের শিবিরের এক ছেলেকে রেডিও সেন্টারের ভেতরে র‌্যাবে গুলি করে হত্যা করেছে!” এ কথা শোনার পর আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মনের অজান্তে দু’চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি ঝরতে শুরু করল। এরপর ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত শাহাদাতের ছোট ভাই ও আমার এক পরিচিত সাংবাদিক ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানালাম। এর কিছুক্ষণ পর প্রায় ভোর সাড়ে ৪টায় সেই সাংবাদিক ভাই আমাকে শাহাদাতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেন। তিনি জানান, র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা রাত ৩.১৫ মি. শাহাদাতকে রেডিও সেন্টারে গুলি করে হত্যা করেন। শাহাদাতের মৃত্যুর সংবাদ পাবার পর পর হৃদয়ের ভেতর থেকে চাপা কান্না বের হয়ে আসছিল বার বার। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম। যতই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করি ততই ভেঙে পড়ি। মনে মনে ভাবলাম “হে আল্লাহ তাহলে কি আর শাহাদাতের সুন্দর হাসিমুখটা আর দেখতে পাবো না? তার হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসা থেকে কি আমরা বঞ্চিত হবো? তার মৃত্যুর বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।” যাই হোক আমি সঠিক খবরটা তার ভাইকে জানালাম। খবরটি শুনে সাথে সাথে সে, তার বাবা, তার বড় চাচা, চাচি, বোনসহ সকলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন। শহীদের ওপর বর্বর নির্যাতন কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর দেখা গেল এক লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। তার দেহটাকে করা হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত। শরীরে চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বুকের ওপর পিস্তল ঠেকিয়ে চালানো হয়েছে ৬টা গুলি। শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার হাত দু’টোকে মুচড়ে হাড়গুলোকে চামড়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে, তার ডান পায়ের ওপরের অংশের হাড়টাকে এমনভাবে ভেঙে ফেলেছিল যে মাংসপেশি ও প্যান্ট ভেদ করে হাড়টি বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল যা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। তার সারা শরীরের রং হলুদ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। তার শরীরে দেয়া হয়েছিল ইলেকট্রিক শক। আমরা আরও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছিলাম যে তাকে আটকের পর থেকে তার ওপর চালানো হয়েছিল অমানুষিক নির্যাতন। তাকে আটকের পর থেকে ৭ দিন তেমন কিছুই খেতে দেয়া হয়নি। সব সময় ইলেকট্রিক শক দিয়ে রাখা হতো। ফলে তার শরীরের রং ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ তার শরীরে রক্ত ছিল না। তার ওপর এমন জুলুম, নির্যাতন দেখে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের গায়ের লোম শিউরে উঠেছিল। তাদের সেই নৃশংসতার দৃশ্য দেখে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি সেদিন। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই কেঁদেছিল, কেঁদেছিল শহীদের সাথীরা, কেঁদেছিল প্রতিবেশীরা, কেঁদেছিল রেডিও সেন্টারের প্রতিটা ঘাস ও মাটি। শুধু তাই নয়, গত ২০১১ সালের জুন মাসে তাকে নিজ বাসা থেকে আটকের পর ৫ দিন তাকে ঢাকায় গুম ও ৫ দিন তাকে রিমান্ডের নামে চালানো হয়েছিল অমানবিক নির্যাতন। দীর্ঘ এক বছর ধরে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। সংগঠনের প্রতি ভালোবাসা ও সমাজসেবা কিন্তু কেন শাহাদাতকে এমন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল? কী অপরাধ ছিল তার? সে কি কোন নামধারী সন্ত্রাসী ছিল? সে কি সমাজে কোনো অন্যায় বা অপরাধ করে বেড়াত? সে কি কোন দিন কোনো অন্যায় বা ক্ষতি করেছে? আমরা জানি সবার মুখে একই কথা উচ্চারিত হবে ‘না’। তবে কেন তার ওপর এমন নির্মম নির্যাতন চালানো হলো? এ সকল প্রশ্নের উত্তর একটাই আর তা হলো সে ছিল ইসলামী আন্দোলনের একজন নির্ভীক কর্মী। তার এই ইসলামী আন্দোলনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও আন্তরিকতাই ছিল তার একমাত্র অপরাধ। শুধু তাই নয়, সে ছিল একজন সমাজসেবক। সমাজের মানুষের উপকার করাই ছিল তার প্রতিদিনের অভ্যাস। আমি নিজেই দেখেছি তাকে তার নিজের জীবনকে বাজি রেখে মানুষের উপকার করতে। পাড়ার কোনো মানুষ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তার রক্ত দেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় চিকিৎসার খোঁজখবর রাখত। শুধু তাই নয়, সে এলাকায় ব্লাডব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। কোনো রক্তের প্রয়োজন হলে তার কাছে জানালেই সে যেভাবেই হোক জোগাড় করে দিত। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করত, সবার সাথে মিশতো, মানুষের বিপদে আপদে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতÑ এগুলোই ছিল তার অপরাধ। আর এজন্যই আওয়ামী লীগ সরকার তার ওপর এমন নির্মম বর্বরতা ও নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে। শেষ কথা এত নির্যাতনের পরও তাকে এই আন্দোলন থেকে এক কদম সরাতে পারেনি। তারা মনে করেছিল শাহাদাতকে হত্যা ও নির্যাতন করেই হয়ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে শিবিরের আন্দোলন থেমে যাবে। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, “ওরা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।” (সূরা সফ : ৮) সুতরাং তারা কি পেরেছে এভাবে তাকে হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনকে দমাতে? শুধু গুলি করেই তাকে হত্যা করতে পারতো তবে কেন তার ওপর এমন পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল? কে করবে এই বর্বরতার বিচার? হয়তবা তার এতিম বাচ্চা সাইমুম আর কোনদিন তাকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না। তার একমাত্র স্ত্রী যে ছোটকালেই তার মা-বাবাকে হারিয়ে ১৪-১৫ বছর বয়সেই এতিম অবস্থায় ঘর বেঁধেছিল শাহাদাতের সাথে। আজ তার একমাত্র স্বামীকে হারিয়ে মা, বাবা ও স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। কারাগার থেকে পাঠানো শহীদ শাহাদাতের চিঠিগুলো এখনও তার স্ত্রী বুকে জড়িয়ে কাঁদেন বার বার। শাহাদাতের  ছেলেটি এখনো তার মাকে  বার বার বলে আমার আব্বুকে এনে দাও। কী বলে জবাব দেবে তার ৪ বছরের ছোট্ট বাচ্চাটাকে। কী বলে বুঝাবে তার অবুঝ শিশুটিকে, দু’ চোখের পানি ঝরানো ছাড়া তার আর কোনো জবাব নেই। ঈদের দিন সবাই যখন পিতার হাত ধরে নামাজ পড়তে যায় ঈদগাহে, তখন তার ছোট্ট শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। আর আফসোস করে, আজ যদি তার পিতা বেঁচে থাকতেন তাহলে তাকে তার হাত ধরে এভাবেই হয়ত ঈদগাহে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এই হায়েনা সরকার সেই এতিম শিশুটিকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে। শহীদ শাহাদাত ঠিকই তার কথা রাখলেন, যে তিনি ঢাকা থেকে ৫-৬ দিন পর আসবেন বলে আমাকে কথা দিয়েছিলেন সে ঠিকই এলেন কিন্তু জীবিত নয় শহীদের বেশে। আমরা হয়ত দেখতে পাবো না শহীদ শাহাদাতের হাসিমাখা মুখটি। পূরণ হবে না তার শূন্যতা। কিন্তু তার ওপর এই নির্মম নির্যাতনের পরও বাতিলের কাছে মাথা নত না করার যে শিক্ষা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন এবং এই আন্দোলনের প্রতি যে ত্যাগ কোরবানি ও নিঃশর্ত ভালোবাসার নজরানা পেশ করে গেছেন, তা যতদিন এই আন্দোলন বাংলাদেশের বুকে টিকে থাকবে ততদিন এই আন্দোলনের প্রতিটা কর্মী তার এই ত্যাগ, কোরবানিকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে। একটি ধান থেকে যেমন কয়েকশত ধান জন্মে তেমনি এক শাহাদাত এর মৃত্যুর বদলে হাজার শাহাদাতের জন্ম হবে ইনশাআল্লাহ। সেই দিন তার জানাজার নামাজে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করেছিল শাহাদাত তার এলাকার মানুষের কাছে কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। আল্লাহ যেন তার পরিবারের সকল সদস্যকে ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটা কর্মীকে ধৈর্যের সাথে এই আন্দোলনে টিকে থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির