post

শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান এক কর্মচঞ্চল দায়ী’র প্রতিচ্ছবি

২৯ জুন ২০১৩

মু. রেজাউল করিম

শাহাদাতের তামান্না নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সবাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন না। একটি সাজানো বাগান থেকে প্রস্ফুটিত ফুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি ছিঁড়ে নেয় অত্যন্ত যতেœর সাথে বাগানের মালিক। ঠিক তেমনি আল্লাহ তাআলাও তাঁর অসংখ্য বান্দাদের মধ্য থেকে প্রিয়তম বান্দাটিকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে তাঁর নিকট তুলে নেন। আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, “তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করেন।” যারাই আল্লাহর পথে শহীদ হন, শহীদ হওয়ার পূর্বে তাদের কর্মতৎপরতা, চাল-চলন, বাচনভঙ্গি ও উন্নত আমল আখলাকই থাকে অন্যরকম। শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান ভাইয়ের জীবনে শাহাদাতের পূর্বে তেমনটি দেখেছি। শহীদি কাফেলার সাথী হওয়ার পর থেকে সংগঠনের কাজে ছিলের সদা তৎপর। কোনো কাজের জন্য একবারের বেশি দুইবার বলতে হয়নি। এলাকার ছাত্রদের নিকট ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছতে ছিলেন সদা তৎপর। আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের জন্য ছিলেন তাহাজ্জুদ গুজার। এই ছোট বয়সেই গত বছরের রমজানে ছিলেন ইতিকাফে। সদা কর্মচঞ্চল, হাস্যোজ্জ্বল দায়ী’র প্রতিচ্ছবি ছিলেন শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান। এই শাখার তিন জন সভাপতির নাম একত্রে বহনকারী শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান দায়িত্বের ভার আমাদের উপর দিয়ে চলে গেলেন পরপারে। হে প্রভু! মিনতিটুকু রেখো, মর্যাদা দিও চির জান্নাতে, রিযিক দিও বে-হিসেবে, তাওফীক দিও রেখে যাওয়া কাজ আঞ্জাম দেয়ার। যেভাবে শহীদ হলেন ৩১ মার্চ, ২০১৩। এই কাফেলার সিপাহসালার মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেন ভাইকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে ছাত্রশিবিরের জিন্দাদিল মর্দে মুজাহিদেরা। সংগঠন থেকে ঘোষণা করা হয় বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধের। শুরু হলো সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। তারই অংশ হিসেবে আইআইইউসি শাখার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ। মিছিলটি সংঘটিত হয় কুমিরা বাজারে। তাতে অংশ নেন শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান। মিছিলে তার শ্লোগান ছিল অন্য দিনের চেয়ে ভিন্ন। নারায়ে তাকবীরের শ্লোগানে প্রকম্পিত করেছিল আকাশ-বাতাস। একপ্রকার কোনো বাধা ছাড়াই মিছিলটি সম্পন্ন হয়। রাতে অবরোধের সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বার আউলিয়া এলাকায়। সিদ্ধান্তের আলোকে আমাদের ভাইয়েরা অংশ নেয় অবরোধ কর্মসূচিতে। শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান রাতের বেলায় না খেয়ে অংশগ্রহণ করেন সেই অবরোধে। শহীদ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে সংগঠনের সাথী তার ক্লাসমেট সাইফুল ইসলামের সাথে বলাবলি করতে থাকেন এই শাখাতে যদি কেউ প্রথম শহীদ হয় তাহলে আমি-ই হবো প্রথম শহীদ। কথার কী অপূর্ব মিল! অবরোধ পালন করতে গিয়ে ঘাতক ট্্রাকের নীচে পিষ্ট হয়ে রাত ১১.২০ মিনিটে শাহাদাতের অমীয় শুধা পান করেন সংগঠনের সাথী শহীদ রেজাউল হায়াত রোমান। শহীদ হওয়ার সময় তার মোবাইলে রিংটোন বাজছিল ‘‘মানবতা দিকে দিকে কাঁদছে/শোকের পাথর বুকে বাঁধছে...। স্মৃতিতে অম্লান শহীদ রোমান শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে শামিল হয়ে কর্মী হওয়ার পর থেকে জীবন পরিচালনার দিগন্তে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। ইসলামকে জানা, পালন করা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখাই ছিল তার প্রধান কাজ। এই চেতনাতেই নেন সাথী শপথ। শপথ গ্রহণ করার পর থেকেই সদা-কর্মচঞ্চল দেখা যায় তাকে। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে ডাক আসে ঢাকা চলো কর্মসূচির। কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। এবং বলতে থাকেন আমি ঢাকা যাবো শহীদ হতে। শাহাদাতের দুইমাস আগে রোমান তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করো। কান্নার আওয়াজে পিতার ঘুম ভাঙ্গে। পিতাও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন। ফজরের পর শহীদ রোমান ভাইয়ের পিতা তার মায়ের কাছে বলেন, ‘তোমার ছেলে বেশিদিন বেঁচে থাকবে না।’ শহীদের বাড়ির পাশের মসজিদের ইমামের সাথে রোমান একদিন বলছিলেন ‘হুজুর! আমার জন্য দোয়া করেন, আমি যেন আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আগে শাহাদাত বরণ করি।’ শহীদের মায়ের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, রোমান একদিন তাঁর মাকে বলেন, ‘মা! কিছুদিন আগে এক ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন, যার পাঁচ বোন রয়েছে, তার কোনো ভাই নেই। আমি শহীদ হলে কোনো সমস্যা নেই, তোমার আরো দুই ছেলে আছে।’ যে রাতে শহীদ হন সে রাতেই এশার নামাজ পড়ে সবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেন। এবং পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আব্বা! আপনি কতটুকু ইসলাম বুঝেছেন জানি না, তবে আমি যতটুকু বুঝেছি, তা হলো, ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে।’ বড়ভাইকে উদ্দেশ্য করে একদিন বলেন, ‘কারো মনে কষ্ট দেয়া যাবে না। কষ্ট পায় এমন কথাও বলা যাবে না।’ ছোট ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ব্যক্তিগত রিপোর্ট লিখতে কখনো ভুল করবে না কারণ মৃত্যুর পর আর রিপোর্ট লিখতে পারবে না।’ শহীদের পিতা-মাতার আকুতি আমার ছেলে দীনের জন্য শহীদ হয়েছে, এতে আমরা শঙ্কিত নই। তোমরা তাঁর কাজকে বাস্তবায়ন করো। লেখক : সভাপতি, আইআইইউসি, চট্টগ্রাম

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির