নাম : হারুন আর রশিদ কায়সার
পিতা : দিদারুল হক (স্কুল শিক্ষক)
ভাইবোন : ২ ভাই এক বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সন্তান
শিক্ষা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয় : মার্কেটিং ৩য় বর্ষ
মেথাμম : মেধা তালিকায় বিভাগের মধ্যে ২য়
বাড়ি : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার রাঘবপুর গ্রামে
স্থান : চৌধুরীহাট স্টেশন, মিরসরাই , চট্টগ্রাম[/caption]
দিনটি ছিল ২০১০ সালের ২৮ শে মার্চ, প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দিনশেষে শাটল ট্রেনগুলো চলে যাচ্ছে শহর অভিমুখে। নিমড়ববিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার থেকে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থীর যাতায়াতের প্রধান বাহন এই শাটল ট্রেন। বিকেলের ট্রেনে হাজারো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে পাড়ি জমায় টিউশন এর উদ্দেশ্যে। আবার টিউশন শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে রাতের (৮:৩০ মি.) ট্রেনে। চবি শিক্ষার্থীদের এই রীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এমনই একজন মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন আর রশিদ কায়সার। যার পিতা একটি প্রাইমারি স্কুলের অফিস সহকারী। আর ছোট ভাই স্কুলগামী শিক্ষার্থী। তাই পরিবারের ওপর নির্ভর না হয়ে টিউশন করেই নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন তিনি। তারুণ্যের শক্তিতে দীপ্তমান এই তরুণের আছে আরও একটি পরিচয়। আর তা হলো তিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। অর্থের অভাবে কাঠিন্য জীবন যাপন করেও স্বপ্ন দেখেন আল্লাহর এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার। লালন করেন ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াস। নিয়মিত রুটিনের অংশ হিসেবে সেদিনও টিউশন শেষে রাত সাড়ে ৮টায় ট্রেনে করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাত্রা করেন হারুন আর রশিদ কায়সার ভাই। তবে সেদিন আর ফেরা হয়নি প্রিয় ক্যাম্পাসে। ট্রেনে ওঠার পর থেকেই কায়সার ভাইকে হত্যার জন্য টার্গেট করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। হত্যার গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে নিভিয়ে দেয় ট্রেনের বগি (compartment)-র লাইট। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে জবাই করে দেয় প্রিয় কায়সার ভাইকে। চৌধুরীহাট স্টেশন অতিক্রম করলে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয় লাশ। কায়সার ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে রইল রেল লাইনের পাশে। প্রিয় ক্যাম্পাসে আর ফেরা হলো না তার। পান করলেন শাহাদাতের অমিয় সুধা। চলে গেলেন স্রষ্টার সান্নিধ্যে। শাহাদাতের পর একাধিকবার গিয়েছিলাম শহীদ কায়সার ভাইয়ের বাড়িতে। শহীদের পিতা সন্তান সম্পর্কে কিছু স্মৃতিচারণ করলেও অশ্রুসিক্ত নয়নে পানি ঝরানো ছাড়া কিছুই বলতে পারছিলেন না শহীদের মা। সন্তান হারানোর শোকে তারা আজও মুহ্যমান। কী দোষ ছিল কায়সার ভাইয়ের? যে অপরাধে এক পৈশাচিক নির্মমতার শিকার হতে হলো তাকে। যিনি ছিলেন নিজ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মেধাবী ছাত্র। না, ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে আল্লাহর রঙে নিজের জীবনকে রঙিন করার স্বপ্ন দেখা ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধ ছিল না তার। মূলত ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর আঁতাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার এক অপতৎপরতা ছিল শহীদ কায়সার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে যে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেয়া হয় হলগুলোতে, সেই মানদণ্ডে কোনভাবে পেরে উঠছি না ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। তাই তারা মেধার মানদণ্ডের পরিবর্তে বেছে নেয় হত্যার মতো জঘন্য পথ। কিন্তু তারা জানে না হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা থামানো যায় না। শহীদ কায়সার ভাইয়ের পরও আরো ৯৮ জন মুজাহিদ জীবন দিয়েছে এই বাংলার জমিনে। কিন্তু দ্বীনি আন্দোলনের কাজ বন্ধ ছিল না একটি দিনের জন্যও। কারণ আমাদের শহীদেরা আমাদের জীবন দিতে শিখিয়েছে বেঁচে থাকতে নয়। তাই কায়সার ভাইয়ের সহযোদ্ধারা আজ লক্ষ প্রাণে সুর তুলেছে... আমরা ছিলাম আমরা আছি আমরাই থাকবো মুছে যাবো না। ইনশাআল্লাহ।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক প্রেরণা
আপনার মন্তব্য লিখুন