post

শায়খ আহমেদ ইয়াসিন হুইলচেয়ারে বসা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক

মুহাম্মদ নূরে আলম

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শায়খ আহমেদ ইয়াসিন ((Sheik Ahmed Yassin) ) হামাসের প্রতিষ্ঠাতা এবং আধ্যাত্মিক নেতা। শায়খ আহমেদ ইয়াসিন অনেক পরিচয় বহন করেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস-এর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়াও তিনি গাজায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একাধারে ইসলামী ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, বহু দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার রূপকার, সমাজ সংস্কারক, ফিলিস্তিনের শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক এবং ধর্মীয় নেতা ও একজন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দাঈ। একজন সাধারণ পঙ্গু মানুষ থেকে তিনি হয়ে ওঠেন অসাধারণ। তাঁর জীবন কিংবদন্তি মানুষের জীবন থেকেও বেশি কিংবদন্তিময়। একজন পঙ্গু ব্যক্তি হয়েও তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সন্ত্রাসী দখলদার ইসরাইলের জম। ১৯৪৮ সালে অবৈধ দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে। আর এই দুর্যোগের বিরুদ্ধে একজন প্যারালাইসিস আক্রান্ত মানুষ হয়েও রুখে দাঁড়িয়েছেন কঠোরভাবে। তিনি সারা বিশ্বের মুসলিমদের দেখিয়ে দিয়েছেন সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করা জন্য সাহস লাগে, লাগে দৃঢ় মনোবল ও মহান রবের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি সারা বিশ্বে মুসলিমদের কাছে শতাব্দীশ্রেষ্ঠ দাঈ এবং ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমেদ ইয়াসিন সম্পর্কে Hamas Transformation: Opportunities and Challenges (২০১৫) এই বইয়ের লেখক Ibrahim Natil e‡jb, Sheikh Yasin had been the symbol of the Islamic movement in the Palestinian territories. He had been the leader able to bridge the radical and moderate ideologies of the movement. However although Yasin had been the movement’s spiritual leader, much of the control of its financial resources and strategies had resided in the leadership abroad. Hamas was able to pass the test of losing its founder and spiritual leader. page-81 অর্থাৎ শায়খ ইয়াসিন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক এবং ইসলামী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন। তিনি ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে উগ্র ও মধ্যপন্থী মতাদর্শের সেতুবন্ধ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হামাস তার প্রতিষ্ঠাতা ও আধ্যাত্মিক নেতাকে হারানোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছিল।

হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমেদ ইয়াসিন আসকালান শহর (বর্তমানে ইসরাইলের দখলে) থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে ১৯৩৬ সালের জানুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম শায়খ আহমেদ ইসমাইল হাসান ইয়াসিন। তার পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ ইয়াসিন এবং মাতার নাম সাদা আল হাবেল। জন্মের মাত্র ৫ বছরের মাথায় বাবাকে হারান। লোকে তাকে চিনত তার মাতার নামের সাথে মিলিয়ে আহমাদ সাদা হিসেবে। ইয়াসিনরা ছিলো সাত ভাই-বোন। দশ বছরের বালক আহমেদের জায়গা হয় গাজার আল শাতিঈ শরণার্থী শিবিরে। শরণার্থী শিবিরের প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে এই বালকের মধ্যে ইসরাইলিদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় যা পরবর্তীতে তার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬০ সালে আহমাদ ইয়াসিন হালিমা নামে তার একজন আত্মীয়াকে বিয়ে করেন। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। শায়খ আহমাদ ইয়াসিনের ছেলে মেয়ের সংখ্যা হলো এগারোজন। খুব সাদাসিধে জীবনযাপনকারী এই নেতা গাজায় তিন রুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতেন। 

ইসরাইল তখন ফিলিস্তিন দখল করা শুরু করেছে। ফিলিস্তিনের অনেক অঞ্চল দখল করে নিজেদের বলে ঘোষণা দিয়েছে বর্বর যায়নবাদী ইহুদিরা। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ অংশ সন্ত্রাসী যায়নবাদী চক্র দখল করে নেয়। তরুণ ইয়াসিন ১২ বছর বয়সে তার পরিবার এবং অন্যান্য হাজার হাজার শরণার্থীর সাথে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শায়খ ইয়াসিন এবং তাঁর পুরো পরিবার ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় নিজ গ্রাম আস্কেলন থেকে গাজার আল-শাতি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। ইসরাইলের সন্ত্রাসী বাহিনী ফিলিস্তিন দখলের পর প্রায় ৫০০টি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামের সাথে তার জন্মস্থানটিও ধ্বংস করে দেয়। সেই সময় বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিদের মতো, ক্ষুধা এবং বঞ্চনার তিক্ত অনুভূতির স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন তিনি এবং তার পরিবার। তিনি গাজার কাছে মিসরীয় সেনাশিবিরে যেতেন সৈন্যদের অবশিষ্ট খাবার সংগ্রহ করতে। ১৯৫২ সালে ফুটবল খেলতে গিয়ে (বোমা বিস্ফোরণ) দুর্ঘটনার ফলে শায়খ ইয়াসিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন এবং হুইল চেয়ারে চলাফেরা শুরু করেন। এই দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা আহমেদ ইয়াসিনের মনস্তাত্ত্বিক গঠনে বিশেষভাবে শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়। 

শায়খ আহমেদ ইয়াসিন বাল্যকাল থেকেই শারীরিক ভাবে পঙ্গু ছিলেন, হাত পা দিয়ে কোনো কাজ করতে পারতেন না, হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন। তবে তিনি কথাবার্তা বলতে পারতেন এবং তিনি ছিলেন অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত এবং মেধাবী ছাত্র। স্কুলে পড়ার সময় প্রতিবেশী সহপাঠী বন্ধুর সাথে খেলতে গিয়ে ধস্তাধস্তি/ মারামারি করতে গিয়ে ঘাড়ে (স্পাইনাল কর্ড) ব্যথা পেয়ে আহত হন। অনেক চিকিৎসার পরও তিনি আর স্বাভাবিক হতে পারেননি। তার ঐ বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানার্থে তার পরিবারকে তিনি কখনোই তার ব্যথা পাওয়ার ঘটনাটি বলেননি। তার শঙ্কা ছিল ঘটনা জানাজানি হলে তার পরিবার- বন্ধুর প্রতি বা তার পরিবারের প্রতি নাখোশ হতে পারে এজন্য তিনি বিষয়টি চেপে যান, তবে ৩০ বছর পর কে বা কারা বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়।

যুবক বয়সে শায়খ আহমেদ ইয়াসিন কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করলেও শারীরিক সমস্যার কারণে আবার গাজায় ফিরে আসেন। এই সময়ে তিনি দৃষ্টিশক্তিও হারানো শুরু করেন ধীরে ধীরে। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে শায়খ আহমেদ ইয়াসিন নিজের বাসায়ই ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতির উপর পড়ালেখা শুরু করেন। এই সময় থেকেই তিনি এলাকার মসজিদে জুমআর নামাজে খুতবা দেয়া শুরু করেন। অসামান্য বাগ্মিতার জন্য অতি কম সময়েই তিনি ‘গাজার সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তা’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তারও কিছুদিন পরে শায়খ আহমেদ ইয়াসিন গাজার ‘রামিল’ এর একটি স্কুলে আরবির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এতদিন পরে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখল পুরো পরিবার।

১৯৫৫ সালে গাজার মুসলিম ব্রাদারহুডে তিনি যোগ দেন এবং ধর্মীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। গাজা তখন মিসরীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং তখন মুসলিম ব্রাদারহুডকে মিসর সরকার বেআইনি ভাবে নিষিদ্ধ করে। ১৯৬৬ সালে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ ইয়াসিনকে এক মাসের জন্য বন্দী করে। ১৯৬৭ সালের পর ইয়াসিন গাজা উপত্যকায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রাথমিক কাজের অবকাঠামো তৈরি করেন। সামাজিক, শিক্ষামূলক, স্বাস্থ্য এবং দাতব্য কাজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং আহমেদ ইয়াসিন গাজায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালে ইয়াসিন গাজায় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল নির্মাণ শুরু করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে অবৈধ দখলদার ইসরাইল বাহিনী দ্বারা গ্রেফতার হন। অস্ত্র রাখার ও একটি সামরিক সংগঠন গঠন এবং উসকানি দেওয়ার জন্য কারারুদ্ধ করা হয়। ১১ মাস কারাগারে থাকার পর, ইয়াসিন আহমেদ জিব্রিলের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন-জেনারেল কাউন্সিল (পিএফএলপি-জিসি) সংগঠনের সাথে বন্দীদের বিনিময়ে মুক্ত হন শায়খ আহমেদ ইয়াসিন। শায়খ আহমেদ ইয়াসিন সম্পর্কে Profiles in Terror: The Guide to Middle East Terrorist Organizations বইয়ের লেখক Aaron Mannes বলেন, Sheikh Ahmed Yassin – Hamas Founder and Spiritual Leader...He joined the Muslim Brotherhood in Gaza in 1955 and taught at religious schools. Gaza was then under Egyptian control...... In 1966, the Egyptian authorities imprisoned Yassin for a month. After 1967, Yassin built the infrastructure of the Muslim Brotherhood in the Gaza Strip. Focusing on social, educational, and charitable works, Yassin became a leader of the Muslim Brotherhood in Gaza. ...... Page-121.

১৯৮৯ সালের মে মাসে আবারও এই পঙ্গু হামাস নেতাকে গ্রেফতার করে বর্বর ইসরাইলের সন্ত্রাসী প্রতিরক্ষা বাহিনী। অবৈধ দখলদার ইসরাইলি কথিত সামরিক কোর্ট আহমেদ ইয়াসিনকে ১৯৯১ সালের অক্টোবরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাথে আরও ১৫ বছরের অতিরিক্ত সাজা দেয়। শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের বন্দিজীবন এবং জর্ডানে আটক দুই কুখ্যাত মোসাদের গুপ্তঘাতক এর বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে কিভাবে মুক্তিলাভ করেন এই সম্পকের Profiles in Terror: The Guide to Middle East Terrorist Organizations বইয়ের লেখক Aaron Mannes আরও বলেন, Arrested in May 1989, an Israeli military urt sentenced Yassin to life imprisonment plus 15 years in October 1991. That he was successfully prosecuted for the crimes of incitement, kidnapping, and murder, indicated that Yassin’s centrality to Hamas operations. He was released in an October 1997 deal between Jordan and Israel to allow the extradition of two Israeli agents arrested in Jordan after the failed assassination attempt on Khalid Mash’al, Chairman of Hamas’ Political Bureau, in Amman. Page-122. 

কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ পড়ানো শুরু করেন। প্রখর যুক্তি এবং মানুষকে আকৃষ্ট করার যোগ্যতার কারণে তার খুতবা এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে তরুণরা তার কথাবার্তায় খুঁজে পায় ফিলিস্তিনি জাতির মুক্তির মন্ত্র। এভাবে নানা এলাকার মসজিদে মসজিদে লোকে তাকে ডাকতে থাকে। এর পাশাপাশি রোজগারের জন্য একটি স্কুলে আরবি ভাষা বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষক হিসেবেও ছাত্রদের মধ্যে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তার ছাত্রদের মনেও তিনি বপন করে দেন ইসরাইলবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ। আহমেদ ইয়াসিন গাজায় ইসরাইলের দখলদারের বিরুদ্ধে অন্যতম সোচ্চার এবং বিখ্যাত খাতিব বা ধর্মী বক্তায় পরিণত হন। তার বলিষ্ঠ যুক্তি এবং উপস্থাপন ভঙ্গি তাকে ফিলিস্তিনের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। তিনি তাঁর সব বক্তৃতায় পরিষ্কার করে একটি কথা বলতেন-ফিলিস্তিন মুসলমানদের জন্য শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো আরব নেতার কোনো অধিকার নেই এই ফিলিস্তিনের এক টুকরো অংশও মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের মানুষদের ভোগ করতে দেয়া। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর সন্ত্রাসী যায়নবাদীরা গাজাসহ সমস্ত ফিলিস্তিনি অঞ্চল দখল করে নেয়। আহমেদ ইয়াসিন আল আব্বাসি মসজিদ থেকে মুসলিম এবং ফিলিস্তিনিদের প্রেরণামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন; অবৈধ ইসরাইলের দখলের প্রতিরোধের আহ্বান জানান। এ ছাড়াও ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর শায়খ তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। 

তিনি এ সময় ইসলামী সমাজ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে অবরুদ্ধ জনগণ, আহত এবং বন্দীদের জন্য ত্রাণ ও সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের ভালোবাসার মানুষে পরিণত হন। ১৯৮২ সালে ইয়াসিন জর্ডানের কিছু বিশিষ্ট মুসলিম ব্রাদারহুড ব্যক্তিত্বের সহায়তায় মাজদ কোড নামে স্থানীয় প্রতিরোধ ইউনিট শুরু করেন, ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা হয় প্রতিরোধ দল গঠন এবং অস্ত্র রাখার অভিযোগে। ১৯৮৫ সালে ইসরাইলি দখলদার কর্তৃপক্ষ এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে বন্দীদের বিনিময় চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ইয়াসিন সম্পর্কে Profiles in Terror: The Guide to Middle East Terrorist Organizations বইয়ের লেখক Aaron Mannes আরও বলেন, In the 1970s, Yassin began building an underground. He was arrested by Israel in 1984 and imprisoned for possessing weapons, forming a military organization, and incitement. After 11 months in prison, Yassin was freed in an exchange of prisoners along with terrorists from Ahmad Jibril’s Popular Front for the Liberation of Palestine-General Council (PFLP-GC) organization. page-121.  মুক্তির পর শেখ আহমেদ ইয়াসিন ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে গাজায় ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) প্রতিষ্ঠা করেন। মিসরের রাজনৈতিক দল (বর্তমানে নিষিদ্ধ) মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিন শাখা দল হিসেবে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের গাজা শহরে ‘ফিলিস্তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। শায়খ আহমেদ ইয়াসিন, আব্দুল আজিজ রানতিস্সি, মাহমুদ জহর, ইব্রাহিম কুকা, মোহাম্মদ তা’হাসহ আরো পাঁচজন মিলে সংগঠনটি তৈরি করেন, তখন যার প্রধান করা হয় শেখ ইয়াসিনকে। হামাসের লক্ষ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য যায়নবাদী দখলকে প্রতিরোধ করা। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইয়াসিন যে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে প্রথম ইন্তিফাদার মধ্য দিয়ে হামাস প্রতিষ্ঠার করেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিন শাখার সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ৪৯ বছর বয়সে শায়খ আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের জন্য ‘আল মুজাম্মা আল ইসলামী’ নামে একটি ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যার নামের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ইসলামী সমাজ সংস্কার সংস্থা। এই ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলতে অধিকৃত ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। ইসরাইল তা মঞ্জুর করে, কেননা তাদের লক্ষ্য ছিল গাজায় ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা পিএলও-এর একক প্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব হ্রাস করা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা পরে ব্যর্থ হয়ে যায় শায়খ ইয়াসিন এর প্রচণ্ড ইসরাইল বিরোধী মনোভাবের জন্য। এই সংগঠন ব্যাপকভাবে জনসেবা এবং সামাজিক কাজ করতে লাগল যেমন ফ্রি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা, ফ্রি স্কুলিং, মসজিদ এবং লাইব্রেরি নির্মাণ। ইসরাইলের তখনকার নেতারা আহমেদ ইয়াসিনকে সেভাবে বাধা দেয়নি। ধীরে ধীরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়ায় আহমাদ ইয়াসিনের কর্মকাণ্ড। ১৯৮০ সালে এই সংগঠন পরিবর্তিত হয়ে আল মুজাহিদ আল ফিলিস্তিনিয়্যুন সংগঠন গঠিত হয়। ‘মাজদ’ এই সাংকেতিক নামে ইসরাইলিদের উপর হামলা চালাতে থাকে তার শিষ্যরা। চিন্তাগত দিক থেকে আহমেদ ইয়াসিনের সংগঠন মিসরের ইখওয়ানের অনুরূপ। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় “হামাস চার্টার” যার লক্ষ্য হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো। হামাসের সামরিক শাখাও গড়ে তোলা হয়। এই শাখা দখলদার বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এই সংগ্রামের সময় ইয়াসিন ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হন এবং তার সহযোগী অনেক নেতা ইসরাইলি ঘাতকদের হামলায় শহীদ হন। এই সম্পর্কে Between State and Non-State: Politics and Society in Kurdistan-Iraq and Palestine (Palgrave Macmillan-2017) বইয়ের Editors: Gülistan Gürbey, Sabine Hofmann, Ferhad Ibrahim Seyder লেখকদ্বয় বলেন,   Hamas’ founder, Sheikh Ahmed Yassin, was part of the Muslim Brotherhood’s inactive branch in the Palestinian-occupied West Bank and Gaza Strip. Yassin founded the Islamic Center of Gaza (al-Mujamma’ al-Islami) in 1973 “to coordinate the Muslim Brotherhood’s political activities in Gaza.” After the beginning of the first Intifada in 1987, Yassin created Hamas out of the Brotherhood’s Gaza branch (Baumgarten 2005, 25-48). Prior to December 1987, when it issued its first Intifada statement, Hamas was a religious and social movement without any political platform. Like the Palestinian Liberation Organization (PLO), Hamas strove to become a driving force in the Intifada. Hamas first took center stage as the primary opponent of the Oslo accords brokered between Israel and the PLO. As stated in its charter, Hamas is thoroughly against the peace process. page-55.

ইয়াসিনকে আবার যায়নবাদী দখলদার কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে। ইয়াসিন প্রায় আট বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। অবৈধ দখলদার সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল দীর্ঘ ৮ বছর শায়খ আহমাদ ইয়াসিনকে কারাগারে বন্দী করে রাখে। ৭ অক্টোবর, ১৯৯৭, জর্ডান টাইমসের ইন্টারনেট সংস্করণে রিপোর্ট করা হয়েছে, ‘৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে জর্ডানে হামাস নেতা খালেদ মিশালকে হত্যা করার জন্য কুখ্যাত মোসাদের গুপ্তচর দিয়ে আক্রমণ করে। সে সময় কুখ্যাত মোসাদের গুপ্তচররা জর্ডানে আটক হয়। কুখ্যাত মোসাদের গুপ্তচরদের মুক্তির বিনিময়ে হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আহমাদ ইয়াসিন মুক্ত হয়ে গাজায় ফিরে আসার মাধ্যমে তাঁর ৮ বছরের কারাবন্দী জীবন শেষ হয়। মোসাদের দুই এজেন্টকে মুক্ত করার মাধ্যমে; সে সময় গাজা উপত্যকা ইসরাইলি কারাগার থেকে দশ হাজার জর্ডানি ও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই সম্পর্কে Letter to Israel: God’s Countdown for Mankind  বইয়ের লেখক R. Dean Hubbard বলেন, 2006 October 7, 1997, the Internet edition of The Jordan Times reported, ÔÔThe fiasco created by Israel’s attempt on the life of Hamas leader, Khaled Misha’al, on September 24, ended Monday with Hamas spiritual leader Sheikh Ahman Yassin free and back in the Gaza Strip, tens of Jordanian and Palestinian prisone released from Israeli jails and the two Mossad agents back in Israel.ÕÕ Yassin on October 1, 1997, the seventh day following September 24. The Sheikh arrived back in the Gaza Strip on the twelfth-day, October 6. The sixty-one-year old chief architect of Hamas had served only eight years of a life sentence. Page 241

ইসরাইল এর দখলদার বাহিনী এই দীর্ঘ কারাবরণের দিনগুলোতে তাঁকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। তারা ভেবেছিল-এইবার ছাড়া পেলে এই পঙ্গু বৃদ্ধ আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াবেন না নিজেকে। ইসরাইলি দখলদারেরা বিস্ময় নিয়ে দেখল-মুক্তি পেয়েই শায়খ আহমেদ ইসমাইল হাসান ইয়াসিন (রাহিমাহুমুল্লাহ) আবার ঝাঁপিয়ে পড়লেন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনে। বিভক্ত নেতৃত্ব ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ ক্ষতুœ করবে বলে বিশ্বাস করে শায়খ ইয়াসিন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। আহমেদ ইয়াসিন বিশ্বাস করতেন যে, ইসরাইলের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে এবং পুরো ফিলিস্তিনের প্রতিটি ইঞ্চি জমিই মুসলমানদের। আরব নেতাদের ফিলিস্তিন-ইসরাইল চুক্তিতে তার আস্থা ছিল না। এর চেয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধেই তিনি আগ্রহী ছিলেন। এইজন্য প্রথম দিকে তিনি হাসপাতাল, এনজিও, স্কুল, লাইব্রেরি গঠনের মাধ্যমে জনগণের মন আকর্ষণ করলেও ধীরে ধীরে হামাসের মাধ্যমে ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ দেন। তাই মুক্তির পরও ইয়াসিনকে গৃহবন্দী করে রাখে বর্বর দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইল।

শায়খ ইয়াসিন ২০০৩ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর গাজা শহরের একটি ভবনে ইজরাইলি এফ-১৬ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সময় একটি হত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যান। তার ডান হাত হালকা ভাবে আহত হয়েছিল। গাজার আশ শিফা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। তিনি সংবাদমাধ্যমকে তখন বলেন, ‘‘এমন একদিন আসবে, যখন এই আততায়ী হামলা হামাস এর সাথে কোন কাজে আসবে না। হামাস এর নেতারা শহীদ হওয়ার জন্য উদগ্রীব, তাঁরা মৃত্যুকে তো ভয় পায় না। জিহাদ চলতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দুটি লক্ষ্যের একটি অর্জিত হয়- জয় কিংবা শহীদ!’’ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনকে ২২শে মার্চ ২০০৪ সালে ইসরাইলের সন্ত্রাসী প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ নির্মমভাবে (বোমা নিক্ষেপ) হত্যা করে। ইসরাইলি হেলিকপ্টার গানশিপ হামাসের আধ্যাত্মিক নেতাকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যখন তিনি ভোরে ফজরের নামাজের পর একটি মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন, যার ফলে শায়খ ইয়াসিন তার দেহরক্ষী এবং নয়জন নিহত হন। আমরা হারিয়ে ফেললাম আমাদের সেরা শতাব্দীশ্রেষ্ঠ দাঈকে, আমাদের সাহসের প্রেরণার বাতিঘরকে। ইসরাইলি ভয়াবহ গণহত্যায় আরও ১২ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে শায়খ ইয়াসিনের দুই ছেলেও রয়েছে। তাঁর জানাজায় ২,০০,০০০ মানুষ অংশগ্রহণ করে। খ্রিষ্টান-মুসলমান নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষের ঢল নেমেছিল তার শেষ বিদায় মিছিলে। আব্দুল আজিজ আল রানতিসি তার মৃত্যুর পর হামাসের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যে ইসরাইল একই প্রক্রিয়ায় হত্যা করে হামাসের সদ্য নতুন প্রধান আবদুল আজিজ আল রানতিসিকে। দিনটি ছিল ১৭ এপ্রিল ২০০৪। শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের সাড়াজাগানো উক্তি ”We chose this road, and will end with martyrdom or victory’’- ‘‘আমরা যে রাস্তাটি বেছে নিয়েছি, শাহাদাত বা বিজয়ের মাধ্যমে তা শেষ করব।’’ শায়খ আহমেদ ইসমাইল হাসান ইয়াসিন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেখ ইয়াসিন গাজায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করেছেন। প্রতিদিন একটি রুটিন ধরে সব কাজ করতেন তিনি। একই রাস্তা দিয়ে যেতেন, একই রাস্তায় ফিরতেন। কখনো দেহরক্ষী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেননি তিনি। যদিও হামাস এর কিছু সদস্য তাঁর সাথে থাকতে চাইতেন সর্বদা, কিন্তু তিনি মানা করতেন। গাজায় আসা যে কোনো মানুষ ইচ্ছে করলেই তাঁর সাথে তাঁর বাসায় দেখা করতে পারতেন। নির্ভীকতার এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি ছিলেন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন ব্যক্তিগতভাবে হামাস নেতার বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার হামলার আদেশ করেছিলেন। ওয়াশিংটন শায়খ ইয়াসিনের হত্যার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। ইসরাইলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শৌল মোফাজ শায়খ ইয়াসিনকে বর্বরভাবে হত্যার পর “ফিলিস্তিনি (ওসামা) বিন লাদেন” বলে অভিহিত করেন।

শতাব্দীশ্রেষ্ঠ দাঈ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনির ওপর নেমে আসে দুর্যোগ। একে তারা নাম দেয় নাক্ববা। এই দুর্যোগের শিকার ছিলেন আহমেদ ইয়াসিন নিজে। তার পুরো গ্রামকেই ইসরাইলি বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়। এজন্য এই গ্রামটির বর্তমানে অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। খুব কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দেখবার সুযোগ পাওয়ায় তিনি এর থেকে পরিত্রাণ খুঁজে ফেরেন। ১৯৫৯ সালে দ্বিতীয়বার মিসরে গিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানের আন্দোলনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। ইখওয়ানের কর্মকাণ্ড তাকে দারুণ আকৃষ্ট করে। ফিলিস্তিন ফিরে এসে তার দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখেন। এসময় তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সমস্যা আমাদের, আমাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। অস্ত্র ধরে প্রতিরোধে নামতে হবে। আমাদেরকে আরবের কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক কেউ সাহায্য করতে আসবে না। ১৯৬৭তে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন দখল করে ফেলে ইসরাইল। শায়খ আহমেদ ইয়াসিন এই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং আল আকসার পুনরুদ্ধারের জন্য আহ্বান জানাতে থাকেন। মসজিদে মসজিদে তিনি খুতবা দিতে থাকেন। যুবকদের তিনি আহ্বান জানান নিজের অধিকার বুঝে নিতে। তার ভাষণে জাগরণের শুরু হয়। দলে দলে যুবকেরা যোগ দিতে থাকল তার এসব সমাবেশে।

প্রথম ইন্তিফাদার সময় আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের বোঝালেন আমাদের ভাগ্যের রাস্তা আমাদেরকেই খুলতে হবে। হামাসের নেতৃত্বে তিনি ডাক দিলেন প্রথম ইন্তিফাদাহ-এর। ইন্তিফাদাহ মানে গণ-অভ্যুত্থান। হাতের কাছে যা পাওয়া যাবে তাই নিয়েই ইসরাইলিদের প্রতিরোধে তিনি জনগণকে উৎসাহিত করতে থাকেন। শিশুরাও পর্যন্ত তার ডাকে রাস্তায় নেমে আসে। ইন্তিফাদাহ শুরুর এক বছরের মধ্যে ইসরাইলি সৈন্যদের হাতে ৩১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়, আহত হয় ৭ হাজারের অধিক লোক, ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে কারাগারে পাঠানো হয়। তারপরও অচিন্তনীয় প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ইসরাইলি বাহিনী যার পুরোভাগের নেতৃত্বই দিয়েছেন আহমদ ইয়াসিন। তিনি এই প্রতিরোধ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি, হয় বিজয় না হয় মৃত্যুর মাধ্যমে এর শেষ হবে। পরবর্তীতে তার এই কথা ফিলিস্তিনি জনগণ গণজাগরণের মূলমন্ত্র হিসেবে মনে করতে থাকে।

বিশ্বব্যাপী হত্যার প্রতিবাদ 

আরব বিশ্বে শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের রাজপথে প্রায় ৭,০০০ মানুষ একটি খালি হুইলচেয়ার সামনে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, শায়খ আহমেদ ইয়াসিন পঙ্গু ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর দৃঢ় চিত্ত পঙ্গু ছিলো না। মিসরের রাজধানী কায়রোয় প্রায় ৭,০০০ মানুষ শেখ ইয়াসিনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক স্মরণসভায় যোগ দিয়েছে। সিরিয়ায় প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি নারী দামাস্কাসের বাইরে এক শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সৌদি আরবে যুবরাজ আবদুল্লাহ শুক্রবারের নামাজের সময়ে সব মসজিদে শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার ডাক দিয়েছেন। গাজায় হামাসের নতুন নেতা আবদুল আজিজ আল রানতিসি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও ইসরাইলের জবরদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধই হবে আমার লক্ষ্য। জাতিসংঘেও ইয়াসিনের হত্যাকে কেন্দ্র করে তৎপরতা দেখা যায়। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইল শায়খ ইয়াসিনের হত্যার ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রেখেছে। ইসরাইলের মতে, ইয়াসিন অসংখ্য মানুষের হত্যার জন্য দায়ী ছিলেন। ফিলিস্তিনিরা অবশ্য এই হত্যাকে যুদ্ধাপরাধের আখ্যা দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে আলজেরিয়ার উদ্যোগে ইসরাইলের পরিকল্পিত হত্যার নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আনা হবে। 

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন হামাস-এর নেতা শায়খ আহমেদ ইয়াসিন-এর পরিকল্পিত হত্যার নিন্দা করেছে। জেনেভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে ইয়াসিনের মৃত্যুকে দুঃখজনক এক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।  কমিশনের ৫৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে ভারতসহ ৩১টি দেশের প্রতিনিধি পাকিস্তান ও অন্যান্য কয়েকটি ইসলামী দেশের আনা এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া।  ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।  ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, ঐ জোট এমন কোনো প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানাতে পারে না, যাতে শুধুমাত্র শায়খ ইয়াসিনের হত্যাকে নিন্দা করা হয়েছে, অথচ ইসরাইলে হামাসের সন্ত্রাসের কোনো নিন্দা করা হচ্ছে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একইসঙ্গে ইসরাইলের পরিকল্পিত হত্যার নীতির কড়া সমালোচনা করেছে। 

[গ্রন্থ সহায়িকা : ফিলিস্তিন ও হামাস : এক রক্তাক্ত উপাখ্যান, লেখক : ড. সায়ীদ ওয়াকিল, বিন্দু প্রকাশ-ঢাকা, ২০২২]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির