গত ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন এক অগ্রযাত্রার। ঢাকায় থাকার সুবাদে পুরো আন্দোলনকেই দেখার সুযোগ হয়েছে খুব কাছ থেকে। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই বঙ্গ প্রদেশের ইতিহাস অনেক পুরাতন। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এ মাটির বিবর্তন এবং পালাবদল খুবই তাৎপর্যবহ। নদীবিধৌত অঞ্চল হওয়ায় মানবিক বৈচিত্র্য রয়েছে এ বঙ্গে। এ মাটির ওপর যারাই জুলুমতন্ত্র চালিয়েছে তারাই অপমানজনক পরিণতি বরণ করেছে। সেটি দ্রাবিড়রা হোক, আর্যরা হোক, সেনরা হোক, পালরা হোক কিংবা ইংরেজরা। সর্বশেষ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হয়েছে এ মাটি থেকে লাঞ্ছিত হয়ে।
বাঙালির আচরণের সাথে বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোমের মিল রয়েছে। আসুন জানি বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোম আসলে কী? বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোম একটা জনপ্রিয় মেটাফোর। একটা ব্যাঙকে যদি আপনি একটি পানি ভর্তি পাত্রে রাখেন এবং পাত্রটিকে উত্তপ্ত করতে থাকেন তবে ব্যাঙটি পানির তাপমাত্রার সাথে সাথে নিজের শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্যে রাখতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে সে পানির উত্তাপ সহ্য করতে থাকে; লাফ দিয়ে বের হওয়ার পরিবর্তে।
কিন্তু একসময় পানির প্রচণ্ড তাপমাত্রা ব্যাঙের শরীর আর মানিয়ে নিতে পারে না। যখন সে আর পানির প্রচণ্ড তাপমাত্রায় তার শরীরের তাপমাত্রার সমতায় আসতে পারে না, তখন ব্যাঙটি ফুটন্ত পানির পাত্র থেকে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হায়! সে লাফ দিতে পারে না তখন, কারণ সে তার সমস্ত শক্তি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করে ফেলেছে। অতঃপর সে ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ হতে থাকে। তার মৃত্যুর কারণটা আসলে গরম পানি না, বিপজ্জনক পরিস্থিতির শুরুতে সেই পরিস্থিতি অস্বীকার করে লাফ না দেওয়াটা তার মৃত্যুর কারণ। যে ভুলটা আওয়ামী লীগ করেছে। জনগণ বা ইয়াং জেনারেশনের পালস না বুঝে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেছে বারবার।
বাঙালি জাতিকে জুলুম করলে সে প্রাথমিক পর্যায়ে সহ্য করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী মনে করে সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে, মানুষ সব মেনে নিচ্ছে এবং তাদের এ অপকর্মকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তাই সে তার ইচ্ছেমতো সবই চাপাতে থাকে জনগণের ওপর। লুটপাট করে স্বর্গরাজ্য তৈরি করে শাসকেরা। তারা মনে করে তারা চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু জালিমেরা ভুলে যায় যে, মানুষ নিরুপায় হয়ে গেলে মৃত্যুর কথা ভাবে না। জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। অবসান হয় জুলুমতন্ত্রের।
এটা বড় দুর্ভাগ্যের যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। লিবিয়ায় গাদ্দাফি, মিসরে হোসনি মোবারক, তিউনিসিয়ার আল-আবিদিন বেন আলির ইতিহাস আওয়ামী লীগের নিশ্চয়ই জানা ছিল। বাংলাদেশের স্বৈরশাসক এরশাদের পরণতিও তারা দেখেছে। কিন্তু কীভাবে তারা আবার সে পথেই হেঁটেছে। জানি না পরবর্তী শাসনভার যাদের হাতে যাবে তারা কতটুকু সতর্ক হবে।
এখন আসি মূল কথায়, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনূস সরকার ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা সংস্কার কমিশন। এ কমিশনের যাদের সদস্য করা হয়েছিল তাদের নামের ব্যাপারে আলেমদের আপত্তি উঠায় কমিটি আবার বিলুপ্ত করতে হয়েছে। চিন্তা ভাবনা ছাড়া এমন বিতর্কিত সদস্যদের নিয়ে কমিশন গঠন করাটা নিন্দনীয়। মনে রাখতে হবে ২০২৪-এর আন্দোলনে অনেক ইসলাম পন্থী ও মাদরাসার ছাত্রদের জীবন গিয়েছে। ফ্যাসিবাদ দীর্ঘদিন আমাদের ঘাড়ে চেপে আলেম সমাজ ও ইসলামী আদর্শের মানুষের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে। বামদেরকে তারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ১৫ বছরের নির্যাতন-নিষ্পেষণ তিলে তিলে আগ্নেয়গিরিতে রূপ নিয়েছে। সেখানে শিক্ষা সংস্কার কমিশনে আলেমের অংশগ্রহণ নাই; সেটি ভাবাই দুষ্কর। এ দেশের মূল ধারার শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরাতন। স্বাধীন সুলতানি আমলে এ দেশে ৮০,০০০ মাদরাসা ছিল। তখন বঙ্গ প্রদেশে এটাই ছিল মূল শিক্ষাব্যবস্থা। ব্রিটিশদের আমলে ধীরে ধীরে ১৯০ বছর ধরে এ নৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তাদের অনুগত লোক তৈরির প্রজেক্ট হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে।
এখনো এদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মাদরাসা শিক্ষার সাথে জড়িত। এটি প্রমাণিত যে, যারা মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত তারা সমাজের অপকর্ম থেকে জেনারেল শিক্ষিতদের তুলনায় অনেক বেশি বিরত থাকে। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া দেশ ও জাতি গঠন অসম্ভব। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটানো। কিন্তু এ দেশের শিক্ষা কারিকুলাম যারা প্রণয়ন করেছে তারা মানুষকে ভোগের সামগ্রী হিসেবেই শুধু বিবেচনা করে থাকে। তাই লেখাপড়া করে মানবিক হওয়ার চাইতে অর্থবান হওয়াকেই আমাদের সমাজ বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
প্রচলিত শিক্ষা যদি মানুষ তৈরি করতে পারত তবে স্বাধীনতার পরে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ধর্ষণ, লুটপাট, মাদক, ইভটিজিং, খুন, ঘুষ, সম্পদ দখল থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম কমার কথা ছিল। শিক্ষকদের হওয়ার কথা ছিল এ সমাজের সবচেয়ে আদর্শবান মানুষ। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এর সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। হয়তো আপনারা বলবেন ইউরোপ, আমেরিকাতে শিক্ষার কারণে মানুষ ভালো আছে দুর্নীতিবাজ না। এটা একটা পয়েন্ট। তবে মনে রাখতে হবে ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া বা চীনে বাহ্যিকভাবে চোখধাঁধানো বড় বড় বিল্ডিং বা মেশিনারি তৈরি করেছে ঠিকই কিন্তু পৃথিবীতে তাদের দ্বারা সবচেয়ে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোল্ড ওয়ার, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, রুয়ান্ডার গণহত্যা, ইন্দোনেশিয়ার গণহত্যা ঘটিয়ে কোটি কোটি মানুষকে কারা মেরেছে?
একুশ শতকে আফগানিস্তানে রক্তপাত, ইউক্রেনে রক্তপাত, গাজায় হামলা, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ কারা চালিয়েছে বা চালাচ্ছে তা সবার কাছেই পরিষ্কার। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য অন্য মানুষকে পশু মনে করে তারা হত্যা করে, এটাই তাদের আধুনিক বিশ্ব আর আধুনিক শিক্ষার আলটিমেট লক্ষ্য।
এটাতো গেল বাহ্যিক দিক। পশ্চিমারা সভ্যতার কথা বলে সবচেয়ে অসভ্য এবং নোংরামি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। লিভ টুগেদার, মদ্যপান, পরকীয়া, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, অবাধ যৌনাচার ইত্যাদির রোগে লিপ্ত হয়ে মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করছে তারা। সিংগেল মাদার কনসেপ্ট ডেভেলপ করে বিকৃত যৌনতাকে একটা আর্টে পরিণত করা হয়েছে পশ্চিমা সমাজে। ইউরোপের পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় তরুণ প্রজন্ম বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক সন্তানের জন্ম হয় সেখানে কিন্তু তারা তাদের পিতৃপরিচয় জানে না। কতটা জাহেলিয়াতের মধ্যে তারা আছে ভাবাও যায় না। দিন দিন ইউরোপে নেগেটিভ পপুলেশন হচ্ছে, আর মেয়েদেরকে স্বাধীনতার নামে কর্মক্ষেত্রে এক চেটিয়া নামানো হয়েছে। আর তাদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে সমাজে। পুরুষের কাপড়ের বিজ্ঞাপনেও নারী ছাড়া চলে না। তাছাড়া নারীরা পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে কিন্তু এদিকে যে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রƒক্ষেপই নাই।
একটি পরিবারে মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি। নারীদের গৃহস্থালি কার্যক্রমের অর্থনৈতিক প্রভাবও অনেক বিস্তৃত। একজন নারীকে পরিবার পরিচালনায় অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। একজন নারী একটি পরিবারের জন্য একজন মা, একজন স্ত্রী, একজন ম্যানেজার হিসেবে ভূমিকা রাখে। আসুন, এবার দেখা যাক ৫ জনের একটি পরিবারে একজন নারীকে কী পরিমাণ কাজ করতে হয়। দৈনিক রান্নাবান্না করা, সন্তান লালন-পালন করা, ঘর পরিপাটি রাখা, সন্তানদের লেখাপড়া করানো, পরিবারের বয়োবৃদ্ধদের সেবা যত্ন করা। এ সকল কাজে তাকে অন্তত দিনের ১৫ ঘণ্টা ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এসকল কাজ অত্যধিক কষ্টসাধ্য। এ সকল কাজের জন্য যদি কোনো লোক নিয়োগ দেওয়া হয় তবে মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। কিন্তু তার পরেও মন মতো কাজগুলো করা অসম্ভব। আপনার সন্তানকে অন্য কেউ মমত্ববোধ দিয়ে গঠন করে দেবে না। কিন্তু নারীদের গৃহস্থালি এ কাজগুলোর মর্যাদা সমাজ দেয় না। ফলে নারীরা বাসার বাহিরে কাজ করাকে আত্মসম্মানের অংশ মনে করে। আর এজন্য সামাজিকীকরণ নষ্ট হচ্ছে। ধর্মহীন শিক্ষা মানুষকে ভোগের পণ্য হিসেবে তৈরি করে, মনুষ্যত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। যাইহোক, পশ্চিমারা তাদের শিক্ষাকাঠামো এবং আইনের প্রয়োগ এমন পর্যায়ে নিয়েছে যাতে কেউ ঘুষ খাবে না বা দুর্নীতি করবে না ঠিকই কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য তাদের দিয়ে বাস্তবায়নও হবে না। যদি তাই হতো তাহলে এই পৃথিবীটা সাম্যে ভরে যেত।
এখন দেখার চেষ্টা করব স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাকাঠামো কেন এত দুর্বল। এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদেরকে ভৌগোলিক সমীকরণের দিকে চোখ রাখতে হবে। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এমন একটি অবস্থানে আছে যেখানে তিন দিক আধিপত্যবাদী ভারত কর্তৃক ঘেরাও করা। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে মুসলিম মেজরিটির এ দেশটি মূলত হাজার মাইল দূরের পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। তখন থেকেই শুরু হয় ভারতের ষড়যন্ত্র। এখানে একটি প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সাথে না গিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতের অঙ্গরাজ্য হতো তবে স্বাধীন হওয়া এ দেশের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব ছিল?
যেমন পরণতি বরণ করেছে হায়দারাবাদ, জুনাগর, মানভাদর, গোয়া, সিকিম আর কাশ্মির। হায়দারাবাদের আয়তন ছিল ৮২ হাজার বর্গমাইল অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়েও বড়। ব্রিটিশ আমলেও মুসলিম শাসিত এ অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন কিন্তু ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পরেই হায়দারাবাদকে ষড়যন্ত্র করে দখল করে নিয়েছে ভারতীয়রা। আজাদির জন্য এ অঞ্চলের মানুষেরা রক্ত দিলেও ভারত নেহেরু ডকট্রিনের অধীনে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সেখানে কীভাবে স্বাধীনতার আশা করত?
বরং কাশ্মির বা সিকিমের পরিণতিই বরণ করতে হতো এ দেশটিকে। আজও সেভেন সিস্টার্সের বঞ্চিত, অনুন্নত আর অবহেলিত জনপদগুলো স্বাধীনতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পূর্বদিকে ভারতের সেভেন সিস্টার্স আর পশ্চিমে বিশাল ভারতের অংশ। আর এই পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম ২০-২২ কিলোমিটারের এই সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর। বাংলাদেশ যদি সত্যিই ভারতের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয় আর শিলিগুড়ি করিডোরের ওপর বাহিরে থেকে শক্ত আঘাত আসে তবে ভারত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। এটা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তাই মুসলিম সেন্টিমেন্ট নিয়ে ভাগ হওয়া বাংলাদেশকে দীর্ঘ ২৩ বছরের চক্রান্তের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে পাকিস্তান থেকে আলাদা করা হয়। আর নিজেদের পুতুল সরকার কায়েমের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ও মেধা খরচ করে। এ দেশে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট সরকারকে বসিয়ে কয়েকটি কাজ তারা শক্তভাবে করে থাকে-
১. কালচারাল হেজিমনি
২. দুর্বল শিক্ষাকাঠামো
৩. জাতিগত বিভেদ তৈরি
৪. নির্ভরশীল ও দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো
এগুলো করতে পারলে যুগ যুগ ধরে তারা এদেশের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগকে তারা নিজেদের জন্য সবচেয়ে পরীক্ষিত বন্ধু মনে করে থাকে। এ কারণে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা কখনো ভুলবে না।” অথচ ক্ষমতার মসনদে থাকাকালীন দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।
যাই হোক, বাংলাদেশকে ডমিনেট করার অংশ হিসেবে এ দেশের শিক্ষাকে তারা দুর্বল করার জন্য অনেক কাজই করেছে। সেক্যুলার ও অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করার সকল ফর্মুলা আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে নিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে দেশে ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ড থাকার পরেও কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সদিচ্ছা আওয়ামী সরকারের মধ্যে ছিল না। দক্ষ শ্রমশক্তি গঠন করে বিদেশি মুদ্রা আয়ের সুযোগও তারা কাজে লাগায়নি। বরং আমরা দেখেছি দেশে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব আর চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম হতাশা। ফলে কোটা আন্দোলন একটি অভ্যুত্থানেই রূপ নিল। বাংলাদেশ যদি উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার দিক দিয়ে এগিয়ে যায় আর যুবকদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার মানসিকতা বৃদ্ধি পায় এবং সরকারের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয় তবে এ দেশ তাইওয়ানের মতো একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর এমনটি হলে ভারতের রক্ত চক্ষুর তোয়াক্কা বাংলাদেশ করবে না। এটাই ভারতের মূল চিন্তার কারণ।
তাই ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে সরকারের উচিত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার একটি আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য মানবিক মূল্যবোধ ও কারিগরি উপাদানে ভরপুর একটি শিক্ষাকাঠামো জাতিকে উপহার দেওয়া। যারা আগামীর বাংলাদেশকে মর্যাদাসম্পন্ন ও সার্বভৌম ভিত্তির ওপর টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর থাকবে।
লেখক : কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
আপনার মন্তব্য লিখুন