post

সফল জীবনের জন্য চাই একজন ভালো বন্ধু

আব্দুল জলিল আকন্দ

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত উক্তি “যদি থাকে বন্ধুর মন, গাং পার হইতে কতক্ষণ।” জগৎ সংসারে দু-একজন বন্ধু নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। একজন ভালো বন্ধু অনেক সময় আপনজনের সীমারেখাও অতিক্রম করে। একজন মানুষ আরেক জন মানুষের সাথে দৈনন্দিন কাজ, পারস্পরিক সহযোগিতা, মনের ভাব, কথা প্রকাশ, বিপদে এগিয়ে আসা, আনন্দের সময় কাছে ডাকা সর্বোপরি ভালো কাজে সহযোগিতা এবং অন্যায়, অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালানোর নামই বন্ধু। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “তোমরা ভাল কাজে একে অপরকে সহযোগিতা কর, আর অন্যায় কাজে সহযোগিতা কর না।” (সূরা মায়েদাহ : ২) দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল বলেছেন, বন্ধুত্ব হলো বিশ্বাস, দুই দেহে এক মন। বন্ধু নির্বাচনে কোন বয়সের ফ্রেম নাই। সত্যিকারের বন্ধু পরিবার থেকে নির্বাচন করা প্রয়োজন। বর্তমানে আধুনিক যুগে বন্ধু শব্দটি ব্যবহারের পরিধি অনেক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এখন বন্ধু বলতে সমবয়সী ছেলেমেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্ককেই বোঝায়। বন্ধুদের সহযোগিতায় অনেকেই উন্নত জীবন লাভ করেছে, আলোর দিশা পেয়েছে। নীতি নৈতিকতা, সুন্দর চরিত্র, উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে বন্ধুর প্রভাব অপরিসীম। আবার বন্ধুদের কারণেই অনেকেই ধ্বংসের পথে হেঁটেছে। তাই বন্ধু নির্বাচনে ভুল হলে বিপথে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। বর্তমানে অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের বন্ধু নির্বাচন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। পড়াশুনা, ক্লাস, প্রাইভেট, খেলাধুলা ইত্যাদি নিয়ে তাদের সন্তানেরা অধিকাংশ সময়ই ঘরের বাহিরে থাকে। আবার উচ্চ শিক্ষা বা ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য অল্প বয়সেই মেসে থাকতে হয়। অথবা পিতা-মাতা বা আপনজনের কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানদের সময় দিতে পারছেন না। যার কারণে সময় কাটানোর জন্যে ছেলেমেয়েরা পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমান আধুনিক যুগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে ছেলেমেয়েরা বাহিরের বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অন্যদিকে পত্রিকা, মিডিয়ার ফলে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মায়ের কোমলমতি সন্তান বখাটে হয়ে যাচ্ছে সে খবরও পিতা-মাতার কাছে যাচ্ছে। দল বেঁধে অপরাধ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গ্যাং পার্টি করে ইভটিজিং, র‌্যাপ, মাদক গ্রহণ, ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। বন্ধু বাছাই মানুষ জন্মগতভাবেই সামাজিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাই বন্ধুবিহীন জীবন যাপন করা অকল্পনীয়। বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের থিউরি মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন, “তোমরা সৎ লোকের সঙ্গী হও।” (সূরা তাওবা : ১১৯) মহামানব মুহাম্মদ (সা:) এর আনীত জীবন বিধান ইসলামকে সর্বপ্রথম গ্রহণ করেছেন তারই বন্ধু আবু বকর সিদ্দীক (রা:)। কোন সংকোচ ছাড়াই তিনি বন্ধু মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা:)-এর কথা বিশ্বাস করেছিলেন। বন্ধুত্ব তৈরি হয় বিশ্বাসের সেতুর মাধ্যমে। আবার বন্ধুত্বে বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই একজন অপরজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাচীন রোমের জুলিয়াস সিজারকে তারই অন্তরঙ্গ বন্ধু ব্রুটাসের নেতৃত্বে ঘাতকরা হত্যা করে। কাউকে ক্ষতি করতে চাইলে বন্ধু নামক অমিয় সুধা পান করালেই হয়। ১৯৪৮ সালে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী যখন মুসলমানদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পলায়নপর তখন ইসরাইলি নেতা ডেবিড বেনগুরিয়ন বন্ধুত্বের জাল পাতেন। গোল্ড মায়ার নামক জনৈক সুন্দরী রমণী মহিলাকে মুসলমানদের চিফ কমান্ডার আবদুল্লাহর কাছে পাঠান। ছলনাময়ী নারীর বন্ধত্বের খপ্পরে ধরাশায়ী হয়ে মুনাফেক বাদশাহ যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) বলেছেন, নির্বোধের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাক। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হবে। ভালো বন্ধু বাছাইয়ে যে সকল বিষয়গুলো লক্ষ রাখা উচিত আচার ব্যবহার ব্যবহার বংশের পরিচয় কথাটি সবার কাছেই পরিচিত। আচার ব্যবহারের মাধ্যমেই ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। যার সাথে বন্ধুত্ব হবে তার অভ্যাস, নিয়মনীতি পালন, সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। মহানবী (সা) বলেছেন, মানুষ তার ধ্যান ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেকেই লক্ষ রাখবে সে কার সাথে বন্ধুত্ব করে। (তিরমিযি) বিখ্যাত মনীষী মার্গারেট ওয়াকার বলেছেন, বন্ধুত্ব ও ভালো ব্যবহার তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে, যেখানে অর্থ তোমাকে নিতে পারবে না। সুতরাং যার সাথে বন্ধুত্ব হবে তাকে চাই সুন্দর আচার ব্যবহারের অধিকারী। বন্ধুর বিশ্বাস ও মূল্যবোধ চর্চা এ কথা অনস্বীকার্য যে মানুষের মূল্যবোধই মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তির মূল্যবোধ যত স্বচ্ছ ও প্র্যাকটিকাল হবে ততই ব্যক্তির আচার আচরণ কোমল ও মার্জিত হবে। ল্যাপটপ ও টাকা চুরি করার জন্য জাহেদ মাহমুদ নামের জনৈক ছাত্র তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কফিল উদ্দিনকে গলা টিপে হত্যা করেছে। (প্রথম আলো, ২৬ ডিসেম্বর ১২) জাহেদের মনে যদি বিশ্বাস থাকত যে, চুরি করা এবং হত্যা করা অন্যায়, মহাপাপ এবং এর কারণে বিচার দিবসে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তাহলে হয়তো সে তার বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করত না। বন্ধুর সাথে সময় কাটানোর সময় তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সমাজে প্রচলিত সামাজিক অপরাধ যেমন- মাদক সেবন, ইভটিজিং, ধর্ষণ, কিডনাপ ইত্যাদি সকল কাজই জীবনবিধান ইসলামে নিষিদ্ধ। আর এ সকল কাজ দল বেঁধেই হয়। সুতরাং বন্ধু যেন আমাকে অন্ধকার পথে নিয়ে না যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। নৈতিকতা বন্ধুত্ব তৈরি মানুষের সহজাত প্রবণতা। নিঃসন্দেহে বন্ধু একটি আদি ও অকৃত্রিম সম্পর্ক। তাই বন্ধুর আচরণে অন্য বন্ধু প্রভাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বন্ধু কি আমাকে সঠিক পথে চলতে সহযোগিতা করছে নাকি অন্যায় অপকর্মের অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করছে! মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার নারী এরা সবাই একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভালো কাজের হুকুম দেয়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, এরাই হচ্ছে সেইসব মানুষ; যাদের ওপর আল্লাহ অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী, কুশলী। (সূরা তাওবা : ৭১) মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, আর আপনি তাদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি করুন যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সকাল-সন্ধ্যা তাকে ডাকে। (সূরা আল কাহাফ : ২৮) দেশে বহুল আলোচিত ঐশী রহমান তার অসচ্চরিত্র বন্ধুদের সাথে মিশেই নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছে এবং নিজ পিতা-মাতাকেও হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। বন্ধুদের পাল্লায় পড়েই কোমলমতি মন বিগড়ে যায়। এ জন্য ভাল বন্ধু বাছাই বন্ধুত্ব করার আগে করতে হবে। ফরাসি কবি ও সাহিত্যিক জ্যাক দেলিল বলেছেন, নিয়তি তোমার আত্মীয় বাছাই করে দেয়, আর তুমি বেছে নাও তোমার বন্ধুকে। ইমাম গাজ্জালি (রহ) বলেছেন, যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটা গুণ থাকা চাই। তা হলো- বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া, পাপাচারী, বেদয়াতি ও দুনিয়াসক্ত না হওয়া। শিক্ষার কারণে বন্ধুর আচরণে প্রভাবিত প্রতি লিটার দুধের দাম ৮০ টাকা হলে ৩ লিটার দুধের সাথে ১ লিটার পানি মিশ্রণ করলে প্রতি লিটারে কত টাকা লাভ হবে? ১০% হারে সুদে ৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করলে মোট কত টাকা পরিশোধ করতে হবে? এসব হল ঐকিক নিয়মের অঙ্কের নমুনা। বিভিন্ন শ্রেণীর সিলেবাসে থাকা মহান মনীষীদের জীবনী, গল্প, কবিতা উঠিয়ে নিয়ে সেখানে বিতর্কিত, পুঁজিবাদী, নাস্তিক্যবাদী ধ্যান ধারণার গল্প, কবিতা সংযোজন করা হয়েছে। এসব গল্প, কবিতা এবং অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলামের মাধ্যমে ছাত্রদের মনমানসিকতা নৈতকতা বিবর্জিত হয়ে গড়ে উঠছে, এবং বন্ধুদের সাথে তাদের আচরণ ও নৈতিকতা বিবর্জিত হচ্ছে। একটি উন্নত নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনে অবশ্যই পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। আর নৈতিক শিক্ষাকে কখনোই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে আলাদা করা যায় না। বর্তমান সরকার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার জন্য ২০০৯ সালে মরহুম অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিটি অতি মাত্রায় ধর্মবিদ্বেষী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে সুপারিশ করে। যার কারণে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে যা শিখে তাই বন্ধুদের সাথে প্র্যাকটিস করে। শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিকতাহীন এবং পুঁজিবাদী ধ্যান ধারণার হওয়ার কারণে ছাত্রীরা তাদের সহপাঠীর মাধ্যমে অহরহ শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছে। (বগুড়ায় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে নবম শ্রেণীর ছাত্র গ্রেফতার। বার্তাবাজার, ২১ জুন, ১৮)। ধূমপান, মাদক গ্রহণ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন মনীষী গুরুত্ব দিয়েছেন। Stanly Hall e‡jb, If you teach your children the three Rs (Reading, Writing and Arithmetic) and leave the fourth R (of Religion), you will get a fifth R (of Rascality). বিখ্যাত কবি মিল্টন বলেছেন, Education is the development of body, mind and soul. তথা শরীর, মন ও আত্মার উন্নতি হলো শিক্ষা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শুধু উপভোগ করার মাধ্যমে শরীরের উন্নতিই শিখাচ্ছে। নবী (সা) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে তিনিই উত্তম, যিনি নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। তাই যার সাথে বন্ধুত্ব করলে নৈতিক শিক্ষা এবং নিজেকে উন্নত নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে তৈরি করা যাবে তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগী কিছু বন্ধু আছে যাদের নিজদের জীবন নিয়ে কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য নাই। সারাদিন গল্প গুজবে সময় কাটায়। এরা সুন্দর কথার মাধ্যমে আপনাকে তার সঙ্গী করতে চাইবে। তারা একজনের কথা অন্যজনকে লাগিয়ে এবং সামনে যিনি থাকবে তার প্রশংসা করে তার প্রিয়পাত্র হতে চায়। এদের কাছ থেকে সর্বদা দূরে থাকতে হবে। সত্যিকারের বন্ধু সবসময় আপনার সহযোগী হিসাবে ভূমিকা রাখবে। ওয়াল্টার উইনচেল বলেন, “প্রকৃত বন্ধু হলো সেই যে তোমার পাশে থাকবে, যখন সারা বিশ্ব চলে যাবে অন্য পাশে।” হঠাৎ করে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে কোন বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় সে বন্ধুত্বে দুঃখজনক পরিণতির দিকে যেতে পারে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোন বাছবিচার ছাড়াই বন্ধুত্ব করে কিশোর কিশোরীরা ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বন্ধুত্ব নির্বাচনে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “বন্ধুত্ব করার সময় খুবই ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে, কিন্তু যখন বন্ধুত্ব হয়ে যাবে তখন তা দৃঢ়তর ও স্থায়ী কর।” বন্ধু বাছাইয়ে পরিবারের ভূমিকা বন্ধুর প্রতি টান বা প্রয়োজনীয়তা কিশোর বয়সেই বেশি দেখা যায়। আর এ বয়সেই শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ ভিত্তি গড়ার আসল সময়। কিন্তু কিশোর বয়সে ভাল বন্ধুর সাহচর্যে না এলে বিপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বর্তমানে দেশে কিশোর অপরাধীদের সংখ্যাই বেশি। অধ্যাপক শিল্পী রানী দের কিশোর অপরাধ নিয়ে গবেষণার রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কিশোর অপরাধে সারাদেশে মামলা রেকর্ড হয়েছে ১ হাজার ৫৯৬টি। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৮৪টি। এ হিসাবে এক বছরে কিশোর অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। তাই বন্ধু বাছাইয়ে পরিবারের চাই যথেষ্ট ভূমিকা। মহানবী (সা) বলেছেন, “জীবন যাপন প্রণালী এবং চিন্তা ভাবনায় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বেলায় অভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়।” তাই সন্তানের বন্ধু নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের যত্নশীল হওয়া দরকার। বর্তমানে ছেলেমেয়েরো বন্ধু নাম দিয়ে যে সম্পর্ক তৈরি করছে, তা বেশির ভাগেই তাদের নীতিনৈতিকতা নষ্ট করছে। স্কুলের বাচ্চারা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পার্কে, হোটেলে বা কখনো সাইবার ক্যাফে বা মোবাইলে পর্ন ছবি দেখছে। সন্তান টাকা চাইলেই পিতা-মাতা কষ্ট হলেও তাদের চাহিদা পূর্ণ করে। কিন্তু আপনার দেয়া টাকা মাদক, ইভটিজিং বা সাইবার ক্রাইম বা অন্য কোন অপরাধী কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছে কি না খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব অবশ্যই পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রয়েছে। আজকাল মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে টিনএজ (১৩-১৮) বয়সের ছেলেমেয়েরা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ছেলেমেয়েরা কার সাথে সময় কাটাচ্ছে সে বিষয় খবর নেযার দায়িত্ব অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের রয়েছে। তারা বন্ধু নির্বাচনে ইসলামী শরিয়াহ মানছে নাকি তথাকথিত প্রগতিশীলতায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। ঝে মাঝে সন্তানদের বন্ধুদের নিয়ে বাসায় ছোট্ট খাবারের আয়োজন করে পরিচিত হওয়া যেতে পারে। জগদ্বিখ্যাত সুফি ও কবি আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী (রহ) এ সম্পর্কে বলেছেন, অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো যতটা পার, সে যে বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর আরো। দুষ্ট সাপ শুধু আঘাত করে তোমার প্রাণের পর, অসৎ বন্ধু ছোবল মারে প্রাণের সাথে ঈমানের ওপর। আমাদের জীবনের যেকোনো বাঁকে যাকে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। আমাদের বন্ধু হওয়া উচিত সৎ, বুদ্ধিমান, মেধাবী, ধৈর্যশীল, চরিত্রবান, ধার্মিক, সুন্দর মনের অধিকারী ও পরোপকারী। একজন ভালো বন্ধুই পাল্টে দিতে পারে আপনার জীবন। এই হোক বন্ধুর প্রতি বন্ধুর প্রত্যাশা। লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির