নানা অনাচার বাংলাদেশকে ক্রমেই গ্রাস করে নিচ্ছে। সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির অঙ্গনে অবক্ষয়ের দগদগে ঘা এখন চারদিকে দৃশ্যমান। নৈতিক মানের বড় ধরনের অবনতি দেখা যাচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের অন্যতম প্রধান উপায়। সমাজে যখন ধর্মীয় শিক্ষা দিন দিন বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে, সরকারের পক্ষ থেকে যেন বিপরীত পদক্ষেপ হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকের পর এবার উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম থেকেও ইসলাম শিক্ষাকে পুরো বাদ দেয়ার আয়োজন চূড়ান্ত করে এনেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হতে যাচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব শাখা থেকেই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হচ্ছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এনসিটিবিতে অনুষ্ঠিত ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাক্রম উন্নয়ন’ বিষয়ক এক কর্মশালায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে ওই শ্রেণীর বিষয়কাঠামোর যে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় তাতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনোটিতেই ইসলাম শিক্ষা স্থান পায়নি।
উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেয়া হলে নানা জটিলতাও সৃষ্টি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অধ্যয়নের কী হবে। উচ্চমাধ্যমিকে ২০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষা না থাকলে কোনো শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে সে বিষয়ে অনার্সে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় না। কলেজপর্যায়ে অনার্স আছে তেমন প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ বিষয়ে পাঠ গ্রহণের সুযোগ থাকবে না। ইসলামী শিক্ষাকে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হলে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজের শত শত শিক্ষকও কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এ বিষয়গুলোর কোনো ধরনের সুরাহা না করে ইসলামী শিক্ষার ওপর একতরফা খড়গ অযৌক্তিক ও আক্রমণাত্মক মনোভাবের প্রকাশ।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারের এ মনোভাবের প্রকাশ ঘটছে। এ সরকারের শিক্ষানীতি প্রণীত ইসলাম শিক্ষাকে সর্বস্তরেই ঐচ্ছিক রাখা অথবা বাদ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
পৃথিবীর সব ধর্মই শান্তি, সম্প্রীতি ও ন্যায়নীতির কথা বলে। শিক্ষা দেয় সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য। ধর্মীয় শিক্ষার ওপর অধিক হারে গুরুত্ব প্রদান বর্তমান সময়ের দাবি। দেশ পরিচালনায় সরকার বেকায়দায় পড়ার প্রধান কারণ নৈতিক অধঃপতন। যাদেরকে পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়েছে, রাষ্ট্রের ও জনগণের সম্পদ তারাই তসরুফ করছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লোপাট, শেয়ারবাজার লুট, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ যেভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে, ধর্মীয় মূল্যবোধসমৃদ্ধ কোনো নাগরিক তা করতে পারেন না। পদ্মা সেতু নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার কারণও একই। এগুলো নিয়ে সরকার বড় বেকায়দায়। একটি দুর্নীতিমুক্ত জাতি নির্মাণ করতে হলে দুর্নীতি, পাপাচার ও অন্যায়কে দূর করতে হবে। সে জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে ধর্মীয় মূল্যবোধ। সেটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সহজে সম্ভব। প্রচলিত শিক্ষায় তাই ধর্মীয় শিক্ষাকে আরো কার্যকরভাবে এবং গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে বিদায় করার চিন্তার পরিবর্তে তাকে যাতে সংহত করা যায় সে উদ্যোগ নেয়া দরকার। পাশাপাশি, অন্যান্য পর্যায়ে বাদ দেয়া ধর্মীয় শিক্ষাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আপনার মন্তব্য লিখুন