ইতিহাসের একটি অসভ্য যুগ ও সমাজব্যবস্থার নাম ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’। যার নাম শুনলেই আঁতকে ওঠে হৃদয়। সেই সমাজ ও সভ্যতাকে আল্লাহর রঙে রঙিন করতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর দাওয়াতি পয়গাম ও অক্লান্ত পরিশ্রম সারা বিশ্বে অতুলনীয়। মহান আল্লাহর ঐশী হুকুম বাস্তবায়নে তাঁর এই চেষ্টা ছিল অবিরাম। তাঁর দাওয়াতের মিশন ও ভিশন ছিল মানুষের মনমগজ, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলা; চিন্তাধারা পাল্টে ফেলা; রীতি-প্রথা ও আদত-অভ্যাস পরিবর্তন করা; অধিকার ও কর্তব্যের রীতি-পদ্ধতি পাল্টে ফেলা; ন্যায়-অন্যায় এবং হালাল-হারামের মানদণ্ড বদলে ফেলা; নৈতিক মূল্যবোধের রূপান্তর ঘটানো; আইন ও সংবিধানের পরিবর্তন ঘটানো; যুদ্ধ-সন্ধির নিয়ম কানুনে রদবদল করা, বিয়ে-শাদি ও সমাজপদ্ধতি পাল্টে ফেলা। মহান এই মানবের সমস্ত কাজের পরিধি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সমাজের সর্বাত্মক পরিবর্তনে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত কোনো সেক্টরেই কল্যাণ ও মঙ্গল ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না। এর কোনো অংশেই অকল্যাণ নেই, কোনো অঙ্গনে দুষ্কৃতি নেই, কোথাও কোনো বিকৃতি নেই। সর্বত্র কল্যাণ, গঠনমূলক তৎপরতা ও উন্নতি দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বসেরা একদল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশ আজ মুসলিম জনপদের অধিকারী হয়েও তার অধিবাসীদের দুঃখের অবসান ঘটাতে পারছে না। কারণ আজ আমরা তাঁর সেই সুমহান আদর্শকে নিজে তো ধারণ করতেই পারিনি বরং এই মানুষটিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে অনেক কুলাঙ্গার। সরকারি তরফ থেকে এই জঘন্য ঘটনাগুলোর বিচার হয়নি উল্টো প্রতিবাদকারী মুসলমানের বুকে গুলি চালিয়ে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। এই মহান ব্যক্তির আদর্শকে যারা লালন করে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে; রাষ্ট্রীয়ভাবে জেল-জুলুম, গুম-খুন, অত্যাচার-হয়রানি, মামলা-হামলা, ফাঁসি-যাবজ্জীবন রায় ইত্যাদির মাধ্যমে এদেশে ইসলামী চিন্তা-চেতনাকে স্তব্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে নিয়মিত। সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে আমাদের সোনার বাংলাকে মুক্ত করার জন্য এক্ষুনি সজাগ হতে হবে মুসলমানদের।
মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. সত্য ও ন্যায়ের এক স্বর্ণোজ্বল প্রভাতের অভ্যুদয় ঘটিয়ে সভ্যতার আকাশকে করেছিলেন কলঙ্কের মেঘমুক্ত। তিনি উদ্বোধন করেছিলেন ঐতিহাসিক যুগের। বিশ্ব ইতিহাসে এটা এত বড় কীর্তি ও কৃতিত্ব, যার কোন নজির আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থা তাঁর আদর্শে গড়ে তুলতে না পারলে প্রতিদিন শিক্ষিত নামধারী নরপশুদের হাতে কোন না কোন আবরার জীবন দেবে; কোন না কোন শিশু তুহিন অকালে ঝরে পড়বে; ভোলা জেলার মত যেখানে-সেখানে কুলাঙ্গার প্রশাসনের হাতে মারা পড়বে নিরীহ মুসল্লি ও মুসলমান; ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে ইসকন ষড়যন্ত্রের জাল: তিন বছরের শিশু থেকে একশ বছরের বৃদ্ধার ধর্ষণের আর্তচিৎকার ইথারে-পাথারে মিলিয়ে একাকার হতেই থাকবে। মহানবী সা.-এর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার অনুকরণে আমাদের সবাইকে এক প্লাটফরমে আসতে হবে। সমাজের সকল অসঙ্গতি দূর করতে তাঁর আদর্শের কোন বিকল্প নেই। কারণ পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র ও অদ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে ঘিরে সুশোভিত হয়েছে সকল প্রকার নান্দনিক গুণাবলি। দান, বদান্যতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নম্রতা, সবর, বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া-করুণা, অনুগ্রহ, সাহসিকতা, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, বীরত্বসহ সকল দিক থেকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. ছিলেন পরিপূর্ণতার অনন্য দৃষ্টান্ত।
আপনার মন্তব্য লিখুন