১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয় আমাদের ভাষা আন্দোলন। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৫২ সালে অসংখ্য তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার এবং আরো অনেকের জীবন দিয়ে ছিনিয়ে আনা আমাদের এই বাংলা ভাষা। এই ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ভাষাসৈনিকদের যথাযথ সম্মান প্রদান করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার করা দরকার।
বাংলা সাহিত্যে ধ্রুবতারা খ্যাত সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় এই মহান ব্যক্তিত্বের রয়েছে অনেক অবদান। কবি আল মাহমুদের প্রতিটি লেখায় নীরব চিন্তার বিকাশ, ধ্যান ও জ্ঞানের বিচ্ছুরণ, মানবতার কল্যাণ, দেশপ্রেম, প্রকৃতির মায়া-মমতা নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি গ্রাম-শহরের অপরূপ দৃশ্য, জ্যোৎস্নার আলো, সকালের সূর্য, বিকেলের রোদ, নদীর গুঞ্জরণ, সোনালি হেমন্তের মাঠ, রুপালি চাঁদ, পাহাড়ের নীরবতা, ফুলের রঙ, পাখির কলতান, বৃষ্টির শব্দ, নাওয়ের দোলা, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞানসহ চলমান রাজনীতির ধরন প্রকৃতি যথাযথভাবে উপস্থিত করেছেন প্রতিটি সাহিত্যে। কবির রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু ধর্ষণ, গুম-হত্যা, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাগুলো আশঙ্কাজনকভাবে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মা-বোনের সম্ভ্রম, পরিবারের মানুষজনের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে এখন আমরা শঙ্কিত সবাই। প্রতিদিন লোমহর্ষক ঘটনার খবর মিডিয়ায় আসছে। কিন্তু এসব অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীর দৃটান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় একের পর এক অপরাধ ঘটেই চলছে। আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই কিন্তু পক্ষ-বিপক্ষের বেড়াজালে আইনকে প্রশাসনের নিজের মতো ব্যবহার অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের সম্প্রীতি রক্ষার জন্য প্রয়োজন ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব না করা।
সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে মুসলমান এখন বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো তাদের ঐক্য ও শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে অসহায় ভাইদের পাশে এসে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই। মুসলমানরা চুপ করে বসে থাকলেও বিধর্মীরা চুপ করে নেই। ইরানসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইসরাইল ও ভারতের দুঃসম্পর্ক এখন চরমে। সময় থাকতে আমাদের বোধোদয় না হলে ভবিষ্যৎ কত অন্ধকারের দিকে যেতে পারে তা নিরূপণ করা কঠিন।
মুসলমান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য পৃথিবীকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। একনিষ্ঠ একজন আল্লাহর বান্দা হিসেবে দাবি করতে হলে আমাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে হবে। এই পৃথিবীর মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং সুখের করতে হলে সন্ত্রাস, হানাহানি, খোনাখুনি বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মানুষের ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করতে হলে হিংসা, বিদ্বেষ এবং পরশ্রীকাতরতা বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেয়া; মাদকের হাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা; নারী নির্যাতন বন্ধ করা; কোমলমতি শিশুদের নির্মল হাসিতে পৃথিবীকে সাজিয়ে দেয়া আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একদিন এই পৃথিবী শিক্ষার আলোতে আলোকিত হবেই ইনশাআল্লাহ।
আপনার মন্তব্য লিখুন