post

সম্পাদকীয়

২৭ অক্টোবর ২০১৫

স্বাগতম ২০২২ ঈসায়ী সন। নতুন দিনের পথচলা হোক নির্মল, উচ্ছল, উজ্জ্বল। বিজয়ের মাস শেষে পুরনো দিনের গ্লানিগুলো ধুয়ে-মুছে নতুন স্বপ্ন বাঁধি বুকে, নতুন একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের আগামী হোক সম্ভাবনাময়। আত্মগঠন, মানোন্নয়ন ও সফল ক্যারিয়ারের জন্য বছরের শুরুতে সুন্দরভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। ছাত্রদের উন্নত ক্যারিয়ার ও সাংগঠনিক কাজের গতিবৃদ্ধিতে কিছু ফর্মুলা হতে পারে- ১. স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা : বিশেষ করে আমরা যখন একজন ছাত্র, সংগঠনের একজন জনশক্তি, সাংগঠনিক বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল; আমাদের যোগ্যতা অর্জন, সেই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ এবং কাজের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে নির্ধারিত লেভেলের মান নিশ্চিত করা। ২. একাডেমিক এক্সিলেন্সি অর্জন করা : আত্মিকভাবে এবং জাগতিক উপায় উপকরণ অর্জনের দিক থেকে একাডেমিক এক্সিলেন্সি অর্জন অত্যন্ত জরুরি। মুসলিম মিল্লাতের কাণ্ডারি হিসেবে আমরা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের যোগ্যতা অর্জন অবশ্যই নিখুঁত এবং উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু আমরা শুরু থেকে পড়ার নির্দেশনা সংবলিত দ্বীনের দায়ী, সেহেতু পড়াশোনাকে দ্বীনকে সমুন্নত করার মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাতে হবে পরিপূর্ণ মেজাজেই। ৩. অর্থবহ মানোন্নয়ন করা : আমাদের সংগঠনের জনশক্তির মান নির্দেশিত হয় কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর হুকুমের আদলে। তাই এ কাজে সিরিয়াস হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এবং এক্ষেত্রে সকল জনশক্তির জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেই এগোতে হবে। বিশেষ করে সকলকেই পরিপূর্ণ মানে আনার জন্য জিরো টলারেন্স নীতিতে আসা প্রয়োজন। যাতে করে দুর্বল চিত্ত এবং হালকা প্রকৃতির হয়ে কেউ গড়ে উঠতে না পারে। কারণ সংগঠনের এই মুজাহিদরাই উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় জাহেলিয়াত থেকে জাতিকে উদ্ধারে কাজ করছে। ৪. সর্বব্যাপী মজবুত সাংগঠনিক কাঠামো নিশ্চিত করা : আমাদের সংগঠনের পরিধি যেমন দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি, তেমনি মানসম্মত সংগঠন নিশ্চিত করাও জরুরি। এক্ষেত্রে যে স্তরে যে কাজ হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তা বাস্তবায়নে টাইমলাইন অনুযায়ী এগোনো। ৫. দায়িত্বশীল হিসেবে ময়দানে কাজ : আমাদেরকে সংগঠন নিয়ে চিন্তা করা দরকার। এক্ষেত্রে ময়দানে কাজের পাশাপাশি সুন্দর ও গুছিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে টেবিল ওয়ার্ক করা প্রয়োজন। আমরা সংগঠনের সর্বপর্যায়ের জনশক্তিদের কাছে নিজের নিরেট সুন্দর চরিত্রের ব্যক্তি হিসেবে প্রেরণাদায়ক করে গড়তে দৈনন্দিন রুটিন মেইনটেইন করার ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। আমরা যেন ইবাদত, আখলাক, আনুগত্যের রোল মডেল হতে পারি। আর এ আদলে লিডারশিপ ডেভেলপমেন্টে আমাদের ভিশনারি পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আত্মপ্রচার বন্ধ করা এবং দায়িত্বের আমানতদারিতা আমাদেরকে আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হওয়ার দিকে নিয়ে যাবে যদি আমরাই সক্ষম হই। দুর্বার বাংলাদেশে সোনালি আলোর জ্বলন্ত সূর্য আমাদের শির উঁচু করে দাঁড়াতে বলে। শহীদি রক্তের ওপর গজানো সবুজ দূর্বাঘাসের গালিচায় শিশিরবিন্দু আমাদের উজ্জীবিত করে প্রতিদিন। কিন্তু আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বিষয়টি এখনো প্রশ্নবোধক। স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেয়ামক শক্তি ছাত্রদের সংগ্রামী চেতনায় ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন কিংবা নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দেশের জন্য গর্বের। এইসব আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অন্যায় অনাচার আর জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে বারুদের অগ্নি উদগিরণ করেছে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন আপামর জনতা। শিক্ষকদের লাঞ্ছনা, সহপাঠীদের পিটিয়ে হত্যা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতি শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করছে নিত্যদিন। এসবের প্রভাব পড়ছে সমগ্র বাংলাদেশে, সমস্ত মহলে। ফলে দুর্নীতির অক্টোপাসে বন্দী হয়ে আছে এদেশের জনগণ। ঘুষের মতো সর্বগ্রাসী দুর্নীতি দেশকে করেছে জীবন্ত জাহান্নাম। এমতাবস্থায় সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নটাও ঢাকা পড়ছে হতাশার কালোমেঘে। কিন্তু না, সত্যের সেনানিদের হাল ছেড়ে দিলে চলে না। অনাবিল আনন্দভরা এক বসুন্ধরা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যাদের অগ্রযাত্রা তারা এই সমস্যাকে কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামেও সদা তৎপর। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন দুর্নীতিবিরোধী মন-মানস চিন্তা-চেতনা ও বাস্তব সাহস সঞ্চারী একটি ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার প্রণয়ন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির