সম্পাদকীয়
১০ অক্টোবর ২০১৫
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি
(মানুষ- কাজী নজরুল ইসলাম)
সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ নিয়ে আমাদের সমাজ-সংসার। কাউকে উপেক্ষা করে আমাদের পথ চলা কঠিন। শ্রমিক শ্রেণির মানুষদেরও মন আছে, তারাও স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা আজ সমাজে নানাভাবে উপেক্ষিত, বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত। মালিকপক্ষ শ্রমিকের ঘামের ওপর দিয়ে গড়ে তোলে টাকার পাহাড় আর শ্রমিকশ্রেণি ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। মূলত ইসলামী শ্রমনীতি চালু না থাকার দরুন এই বৈষম্যনীতি বিষিয়ে তুলেছে আমাদের সমাজব্যবস্থাকে। আর তাই প্রতিনিয়ত দেখতে হয় শ্রমিকদের হাহাকার ও আর্তনাদ। শুধু বর্ণিল আয়োজনে সভা-সমিতি, দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী অর্থনীতির কবল থেকে মুক্তি পাক আমাদের অর্থনীতি।
২.
আল কুরআনকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়েছিল যারা
আজকে দেখো সামনে এসে
রক্তমাখা শহীদ বেশে ফের দাঁড়িয়েছে তারা
-কবি মতিউর রহমান মল্লিক
মুখের ফুৎকারে বারবার খোদাদ্রোহীরা আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু কখনো তা পারেনি। বরং আল্লাহ তার নূরকে আরো প্রজ্বলিত করেছেন। যুগে যুগে নাস্তিকরা আল কুরআনকে নিয়ে অবমাননা করার চেষ্টা করেছে; তারা মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করে রক্তক্ষরণ করার পাঁয়তারায় নেমেছে। অবশেষে তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামপ্রেমিক, তারা কুরআনকে মনপ্রাণে ভালোবাসে। এই কুরআনের অপমান কোনো দিনই সহ্য করেনি, তেমনই একটি ইতিহাসের জন্ম দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৌহিদী জনতা। ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের দু’জন নাগরিক পদ্মমল চোপরা এবং শীতল শিং কলকাতার হাইকোর্টে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার দাবিতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্টের বিচারপতি পদ্ম-খস্তগীর বিচারবিবেচনা না করেই রিট পিটিশনটি গ্রহণ করেন। কুরআনের বিরুদ্ধে মামলা! শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর বুকে দ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুরআনপ্রেমিক জনতা স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হোসাইন আহমাদের নেতৃত্বে ১১ মে বিক্ষোভের আয়োজন করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তৌহিদী জনতার ঢল নামে। জন স্তত জনরোষে হতভম্ব হয়ে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেয়। পুলিশের গুলিতে শহীদি মিছিলে যোগ দেন আবদুল মতিন, রাশিদুল হক, শীষ মোহাম্মদ, মুহাম্মদ সেলিম ও শাহাবুদ্দিন। কুরআনের এই আন্দোলন, কুরআনের এই মিছিল সম্মুখপানে চলবেই; শহীদের প্রিয় সাথীরা কোনো বাধা পরোয়া না করে আগামীর পথে অনন্তযাত্রা অব্যাহত রাখবে। কবি মোশাররফ হোসেন খানের ভাষায়-
হ্যাঁ, এটাই হলো হিরণয় কুরআনের মিছিল!
এ মিছিলের সমাপ্তি নেই
নেই কোনো বিশ্রাম!...
এ মিছিলকে রুখতে পারে
এমন সাধ্য আছে কার?
৩.
কুরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাস মুমিনের জন্য নিয়ামতস্বরূপ। আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের এক সুবর্ণ সময় এই মাস। আমাদের রোজা যেন কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা না হয়; আমাদের রোজা শুধু উপবাস কিংবা নিরর্থক অনাহারের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। রোজার পবিত্রতা সঠিকভাবে আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই হোক আমাদের সকলের একান্ত কামনা। কবি মাহফুজুর রহমান আখন্দের সাথে আমরাও কণ্ঠ মিলাই- সিয়ামের রঙ দিয়ে/ আমার দেহ মন দাও ভরিয়ে/ দুনিয়ার কোন লোভে/ না পাওয়ার কোন ক্ষোভে/ কোন রিপু জমা হলে মনের দুয়ার থেকে দাও সরিয়ে প্রভু।
আপনার মন্তব্য লিখুন