আমরা অনেকেই মনে করি যারা পত্রিকায় লেখালেখি করেন তারা সবাই সাংবাদিক। আসলে কিন্তু তা নয়। যারা পত্রিকায় নিয়মিত নিউজ লিখেন ও নিউজ সেকশনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জব করেন তারাই মূলত সাংবাদিক। এই সাংবাদিকতার বাইরেও পত্রিকার পাতাজুড়ে অনেকের লেখা ছাপা হয়ে থাকে। যেমন- চিঠিপত্র কলাম, উপসম্পাদকীয়, ফিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ইভেন্টে যে কেউ লিখতে পারেন। এইসব লেখকদের পত্রিকায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করার প্রয়োজন হয় না। তারা স্বাধীনভাবে এসব বিভাগে লিখতে পারেন। এজন্য তারা হতে পারেন ‘ফ্রিল্যান্স রাইটার’ বা মুক্ত লেখক। অনেকে লিখতে পছন্দ করেন- কিন্তু লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতে চান না, তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুক্তভাবে লেখালেখি করে নিজের সৃজনশীল মনের বিকাশ ঘটাতে পারেন। এই লেখালেখির কাজটি কিভাবে শুরু করবেন-
এক. চিঠিপত্র কলাম যারা একেবারেই নতুন তারা- জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর ‘চিঠিপত্র’ কলামে লেখার মাধ্যমে নিজের লেখালেখি শুরু করতে পারেন। আমি নিজেও ১৯৯৫ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ‘চিঠিপত্র’ কলামে একটি লেখা প্রকাশের মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সূচনা করেছিলাম। সব পত্রিকার এই চিঠিপত্র কলামটি পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। আপনি আপনার এলাকার যেকোনো সমস্যা-সম্ভাবনা কিংবা নানা অসঙ্গতির কথা এখানে তুলে ধরতে পারেন। প্রায় প্রতিটি পত্রিকাতেই চিঠিপত্র কিংবা উপসম্পাদকীয় পাতার জন্য নির্দিষ্ট ই-মেইল থাকে। সেই ই-মেইলে আপনি আপনার লেখাটি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ প্রেরণ করবেন। অনেকে লেখার সাথে নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না সেক্ষেত্রেও আপনাকে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। তখন আপনি আপনার লেখার উপরে লিখে দিবেন ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’। তাহলে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আপনার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরটি সংরক্ষণ করে শুধু লেখাটি প্রকাশ করবেন। তবে লেখালেখির শুরুতে বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে না লিখে এলাকার জনদুর্ভোগ, সমস্যা-সম্ভাবনা এসব নিয়ে লিখুন, তাহলে ছাপা হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকবে। কয়েকটি বিষয় মনে রাখবেন- একই লেখা একাধিক পত্রিকায় পাঠাবেন না, কম্পিউটারে ‘সুটনিএমজে’ ফন্টে লিখে লেখা পাঠাবেন। অনেকে মোবাইলে অভ্রু বা ইউনিকোড ফ্রন্টে লিখে লেখা পাঠান। এই সিস্টেমে পাঠানো লেখা ছাপানোর সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এসব লেখা সফটওয়্যারের মাধ্যমে কনভার্ট করে (ফন্টচেঞ্জ করে) ‘সুটনিএমজে’তে রূপান্তর করতে হয়। কনভার্টের পর অনেক লেখার ফ্রন্ট ভেঙে যায়, এসব আবার ঠিক করতে হয়। সবমিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক বা সাব- এডিটরকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এ কারণে অনেক পত্রিকা কম্পিউটারের ‘সুটনিএমজে’ ফ্রন্ট ছাড়া অন্য ফরম্যাটে পাঠানো লেখা ছাপে না। চিঠিপত্র কলামের লেখাগুলো সর্বোচ্চ ৩০০ শব্দের মধ্যে হওয়াই উত্তম, লেখার সংশ্লিষ্ট দুর্ভোগের ছবিও দিতে পারেন।
দুই. ফিচার বিভাগ প্রত্যেকটি জাতীয় পত্রিকাতেই রয়েছে ফিচার বিভাগ। এসব বিভাগেও পাঠকদের জন্য অবাধে লেখালেখির সুযোগ রয়েছে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন- আপনি যে ফিচার পাতায় লিখতে চান, সেই পাতাটি অন্তত একমাস গভীরভাবে পড়বেন, সেখানে কোনো ধরনের লেখা ছাপা হয়- তার ধরন ও পলিসি বুঝে আপনি আপনার লেখার বিষয় নির্ধারণ করুন। যেমন- ধরুন আপনি ক্যাম্পাস পাতায় ফিচার লেখার চিন্তা করেছেন। এখন প্রতিটি পত্রিকাতেই ভিন্ন ভিন্ন নামে ক্যাম্পাস পাতা নির্দিষ্ট একেকদিন ছাপা হয়। আপনি যদি এসব পাতাগুলোর সব লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েন- তাহলে পাতাগুলোতে ছাপানো লেখার স্টাইল ফলো করতে পারবেন। সে অনুযায়ী আপনার মতো করে আপনি লেখাটি লিখে সংশ্লিষ্ট ফিচার পাতার ই-মেইলে পাঠান। সাথে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ছবি এবং আপনার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিবেন। অনেকে এমএস ওয়ার্ড ফাইলের মধ্যে ছবি পেস্ট করে পাঠান। এমন কাজ করবেন না। লেখাটির ফাইল হবে ‘এমএস ওয়ার্ড’ ফরম্যাট এবং ছবির ফাইল হবে ‘জেপিজি’ ফরম্যাটে। মেইল পাঠানোর সময় দুই ফরম্যাটের দুটি ফাইল একসাথে অ্যাটাচ করে পত্রিকার নির্দিষ্ট ফিচার বিভাগের ই-মেইলে সেন্ড করবেন। ‘ফিচার লেখার কৌশল’ নিয়ে আগামী সংখ্যায় বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ। ক্যাম্পাস পাতা ছাড়াও পত্রিকাগুলোতে সাহিত্য, ধর্ম, লাইফ স্টাইল, তরুণ প্রজন্ম, মহিলা বিভাগ, স্বাস্থ্য, আইটি, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, পড়ালেখা, বিনোদন, খেলাধুলাসহ অসংখ্য বিষয়ে নিয়মিত ফিচার পাতা প্রকাশিত হয়। মনে রাখবেন আপনি যে পত্রিকায় লিখতে চান- সে পত্রিকাটি নিয়মিত ভালোভাবে পড়বেন, পলিসি বুঝবেন- তারপর লিখবেন। ডিফারেন্ট আইডিয়ার মানসম্মত মৌলিক লেখাগুলো ফিচার পাতায় ছাপানোর জন্য গুরুত্ব পায়। প্রথম শ্রেণির পত্রিকাগুলো ফিচার পাতায় প্রকাশিত লেখা ও ছবির জন্য সম্মানী প্রদান করে থাকে। তবে আপনি সম্মানী পাওয়ার প্রত্যাশায় না লিখে প্রথমে শুধু এটুকু ভাববেন যে- আপনার লেখাটি হাজার হাজার পাঠক পড়বে, লেখার মাধ্যমে আপনি আপনার মনের অব্যক্ত মেসেজ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। একসময় আপনি পেশাদার লেখক হয়ে উঠলে সম্মানীর চিন্তা করতে হবে না, সেটা অটোমেটিক পেয়ে যাবেন। ফিচার পাতার লেখাগুলো ৫০০ শব্দের মধ্যে থাকাই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরা হয়।
তিন. উপ-সম্পাদকীয় প্রতিটি পত্রিকাতেই সম্পাদকীয় পাতার সাথে যুক্ত থাকে উপ-সম্পাদকীয় পাতা। এসব উপসম্পাদকীয় বা কলামগুলো সাধারণত পত্রিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এডিটোরিয়াল বিভাগে কর্মরত সাংবাদিক ও কলামিস্টরা লিখে থাকেন। তবে এসব পাতায় অনেক সময় পাঠকের কলামও ছাপা হয়। আপনি যদি সংশ্লিষ্ট পত্রিকাটির পলিসি বুঝে সমসাময়িক কোনো বিষয়ে যুক্তি ও তথ্যনির্ভর কলাম লিখেন এবং তা এডিটোরিয়াল বিভাগের ই-মেইলে প্রেরণ করেন তাহলে তা ছাপা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখবেন মিডিয়ায় যে কোনো লেখা পাঠানোর সময় পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখতে ভুল করবেন না। অনেকে মনে করেন- আগে প্রেরণ করা লেখার সাথে তো ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়েছি, এখন আবার দেয়ার প্রয়োজন আছে কি? হ্যাঁ- অবশ্যই প্রতিটি লেখার সাথে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। এডিটোরিয়াল পাতায় ঐতিহাসিক কোনো প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্য কিংবা বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ও মনীষীদের জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবসে তাদের স্মরণ করে লেখা যায়। তবে সেই লেখাটি নির্দিষ্ট দিবসের অন্তত এক সপ্তাহ আগে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার এডিটোরিয়াল বিভাগে পাঠাতে হবে। এডিটোরিয়াল পাতায় প্রকাশিত লেখার শব্দসংখ্যা সর্বোচ্চ ৭০০-৮০০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম।
লেখক : বরিশাল ব্যুরো চিফ, দৈনিক নয়া দিগন্ত
আপনার মন্তব্য লিখুন