post

স্বপ্নচারী কাফেলার অবিরাম পথচলা

রাশেদুল ইসলাম

১৬ জানুয়ারি ২০২১

চির সবুজের সমারোহে তারুণ্যের উচ্ছল প্রাণবন্যায় ভরপুর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। হৃদয়াবেগের প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে জড়িত স্বপ্নসমেত প্রিয় জন্মভূমি যখনই আক্রান্ত হয়েছে তখনই অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছে সেই তারুণ্য। আর তরুণদের মূল অংশই হলো ছাত্রসমাজ। স্বৈরশাসনের কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছিলো ছাত্রসমাজের দুঃসাহসিক অদম্য ভূমিকার মাধ্যমে। সোনালি অতীত বহনকারী এ ছাত্রসমাজের ইতিহাসের পাতায় যখন কলঙ্কের কালিমা লেপন করছিলো ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী শাসক মহল, আলোর মশাল হাতে অন্ধকার জয় করতে তখনই যাত্রা শুরু করে হেরার রাজ তোরণের আলোর আকাক্সক্ষায় পথ চেয়ে থাকা লাখো তরুণের প্রিয় ঠিকানা, মুক্তির কাফেলা খ্যাত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। একটি দেশে তরুণ ছাত্রসমাজ হলো জাতি, সমাজ ও সভ্যতা-সংস্কৃতি বিনির্মাণের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এজন্য ছাত্রসমাজের মূূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও নৈতিক মানদণ্ড অর্জনের ওপর দেশ ও জাতির অগ্রগতি নির্ভর করে; ক্ষেত্রবিশেষে অধোগতিও। তাই জাতির প্রত্যাশা পূরণে নৈতিকতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক তরুণের প্রয়োজন অপরিসীম। নানান সমস্যায় জর্জরিত বাংলা ভূখণ্ডের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বারবার স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সকল আন্দোলন ও সংগ্রামের লক্ষ্য ছিলো বাংলার সাধারণ মানুষের মুক্তির স্বাধীনতা। বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) ও বঙ্গভঙ্গ রদ (১৯১১) এবং ভারত-পাকিস্তান নামে পৃথক রাষ্ট্রগঠনও (১৯৪৭) এ দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তি এবং প্রকৃত স্বাধীনতা দিতে পারেনি, এ কথা সবাই জানি। প্রেক্ষাপটের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয় এ দেশের সাধারণ জনগণ। কিন্তু যে প্রত্যাশায় এসব আন্দোলন সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও তা পূরণ হয়নি। দারিদ্র্য, দুর্নীতি, শোষণ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি আজও। ভোটে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা থাকলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখনও অধরাই রয়ে গেছে। প্রচলিত গণতন্ত্র রয়ে গেছে কার্যত তাত্ত্বিক পর্যায়ে। সুশাসন তো দূরের কথা, সাংবিধানিক আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। মানবাধিকার আজ ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে; যার লঙ্ঘন মামুলি ব্যাপার। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, জবর দখলসহ নানান সব নেতিবাচক দিক আজ প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করেছে যেন। বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন শৃঙ্খলিত। পরমত সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের একটি মৌলিক শর্ত হলেও তার বিকাশ রুদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা রাখছে না, বরং সেগুলো গণমানুষের প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে বিশেষ দলের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রমী কৃষক তাদের উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা চালুর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার কবলে পড়ে মেধাবীদের মেধার যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে না বরং দলীয় লেজুড়বৃত্তি বেড়ে চলেছে ক্রমশ। মাদকদ্রব্য ও নেশাজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণের ফলে মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার সর্বগ্রাসী অবক্ষয় সমগ্র তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে। যার ধ্বংসাত্মক ফলাফল হিসেবে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ-গণধর্ষণ প্রত্যক্ষ করছে জাতি। বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতির সামনে। এই চ্যালেঞ্জ তারাই মোকাবেলা করতে পারবে যাদের ইচ্ছাশক্তি সূর্যের মতো প্রখর, বিশ্বাস যাদের পাহাড়ের মতো অটল। বহু গুণে গুণান্বিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অগ্রসেনানী। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সৎ ও যোগ্য লোক তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। ছিলো না দেশ পরিচালনার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য। ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ হলেও তাদেরকে দেশগঠনের উপযোগী করে তোলার কোনো পথ তখন ছিলো না। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা ছিলো তৎকালীন সময়ের এক অনিবার্য দাবি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এ ধরনের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনিবার্য করে তোলে। এমতাবস্থায় দেশগঠনের জন্য সৎ, যোগ্য, মেধাবী, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের বিকাশ এবং ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মহান ও পবিত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শুরু হয় এক ঐতিহাসিক পথ পরিক্রমার। আল্লাহর এ জমিনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল কুরআন ও আল হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের ওপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার মহান ও পবিত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম অর্থ শান্তি আর শিবির অর্থ তাঁবু; প্রকৃত অর্থে ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ছাত্রদের তাঁবু বা ঘাঁটি হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার এক অপ্রতিরোধ্য কাফেলার নাম। সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের উৎসস্থল হচ্ছে ছাত্রশিবির। অন্যায়, অসত্য ও জীর্ণতার বিরুদ্ধে শিবির হচ্ছে একটি চলমান সাইক্লোন। বিজয়ের জয়গান গায় ছাত্রশিবির। মেধাবী ছাত্রদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান এ সংগঠন। নতুন আবিষ্কারের উৎসাহে উদ্বেল ছাত্রশিবির। যেখানে মেধা, মননশীলতা আর মূল্যবোধের জয়গান সেখানেই ছাত্রশিবির। যাত্রার শুরু থেকেই ছাত্রশিবিরকে থামিয়ে দেয়ার জন্য চক্রান্ত শুরু হয়। দুর্নীতিবাজ, দেশ ও ইসলামবিরোধী শক্তি ছাত্রশিবিরের এ আত্মপ্রকাশকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। এজন্য তারা ছাত্রশিবিরের ওপর চালিয়েছে অত্যাচার, অবিচার, জেল, জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, অপপ্রচার ও হত্যাযজ্ঞ। কোনোভাবেই তারা ছাত্রশিবিরকে এগোতে দিতে চায়নি। বাতিল শক্তির রক্তচক্ষু ও সন্ত্রাসের কারণে ২৩৪ জন নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে; আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে শত শত নেতাকর্মীর। সকল ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে গাঢ় তমসার পথ পাড়ি দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্রশিবির আজ এক বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ছাত্রশিবির আজ একটি আন্দোলনের নাম। অসংখ্য মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা, প্রত্যাশা ও স্বপ্ন আজ শুধুই ছাত্রশিবিরকে কেন্দ্র করে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি জনপদ, নদী-খাল-বিল, উপত্যকায় আজ ছাত্রশিবিরের জয়গান- ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি’। বাংলাদেশের বৃহত্তম সুসংগঠিত ছাত্রসংগঠন- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ৪৪ বছরের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিবির আজ একটি আলোকিত ও বিকশিত সংগঠন। ইসলামবিরোধী শক্তির হাজারো বাধা-বিপত্তি, ক্ষমতাসীনদের ক্রমাগত নির্যাতন নিষ্পেষণ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্রিয়াশীল, সৃজনশীল ও জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। ছাত্ররাজনীতিতে শিবির ইতিবাচক, গঠনমূলক ও সুষ্ঠু ধারার ছাত্ররাজনীতির প্রবর্তক। সর্বোপরি ইসলামী ছাত্রশিবির একটি একক ও অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো প্রতিক্রিয়াশীল, ষড়যন্ত্রকারী ও দমনমূলক কার্যক্রম এই সংগঠনের অগ্রগতিকে রুখতে পারেনি এবং পারবেও না ইনশা-আল্লাহ। ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্র-জনতার মনের গহিনে স্থান করে নিয়েছে আন্তরিক ভালোবাসায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে কুরআনের পতাকাবাহী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি অন্যতম মানবসম্পদ সংগঠন (Human Resource Organization), একটি অন্যতম ক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠী (Proactive Human Group), একটি গতিশীল ছাত্রসংগঠন (Enviable Progressive Student Organization), একটি ব্যতিক্রমী নৈতিক যুবগোষ্ঠী (Special Kind of Moral Force) এবং সর্বোপরি উন্নত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুত নেতৃত্ব সরবরাহের কারখানা (Leadership Supply Chain for a Developed Bangladesh) তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে স্ব-মহিমায়। প্রতি বছর ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে ১৫ আগস্টকে “ইসলামী শিক্ষা দিবস” হিসেবে পালন করে থাকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ২০০২ সালে দেশব্যাপী শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা হয় শিবিরের উদ্যোগে। এ উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় বিজ্ঞানমেলা, জাতীয় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, মেধাবী ছাত্রদের সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি প্রশ্নোত্তর, শিক্ষাসামগ্রী প্রদর্শন,  প্রদর্শনী এবং “আমাদের শিক্ষাসঙ্কট : উত্তরণের উপায়” শীর্ষক বুকলেট প্রকাশসহ বহুবিধ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। শিক্ষা নিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করেছে ছাত্রশিবির। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। শিক্ষাখাতে যে ব্যয়-বরাদ্দ দেয়া উচিত অনেক সময়ই তা দেয়া হয়নি। পাঠ্যপুস্তকে অনৈসলামিক উপাদানের অন্তর্ভুক্তিকরণ, দেরিতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, দলীয়করণ, ইতিহাস বিকৃতি ও জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ ধুয়া তুলে বিভক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিবির সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। মিছিল, মিটিং, ছাত্রধর্মঘট, সমাবেশ বিক্ষোভ, ঘেরাও, লিফলেট, প্রচারপত্র বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভূমিকা পালন করেছে এ সংগঠন। বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষা বরাবরই অবহেলিত। সাধারণ প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার মধ্যে বিরাট ব্যবধান করে রাখা হয়েছে সবসময়। শিবির তার জন্মলগ্ন থেকেই মাদরাসা শিক্ষার এ বৈষম্য দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতি বছর এর ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমৃদ্ধ প্রকাশনা বিভাগ আধুনিক রুচিসম্মত এবং সামাজিক চাহিদানির্ভর বিভিন্ন প্রকাশনা সামগ্রী প্রকাশ করে থাকে নিয়মিত। সৃজনশীল প্রকাশনায় শিবির সবসময়ই অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। তথ্যবহুল দাওয়াতি কার্যক্রম, উপহার আদান-প্রদান এবং সুস্থ বিনোদন চর্চায় শিবিরের প্রকাশনা সামগ্রী অনন্য। এই প্রকাশনা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- নববর্ষের চার প্রকারের তথ্যবহুল, গবেষণালব্ধ ও বৈচিত্র্যময় ক্যালেন্ডার; চার প্রকার ডায়েরি; বিভিন্ন বিষয়ে বহু রকমের কার্ড, ভিউকার্ড, স্টিকার, মনোগ্রাম, চাবির রিং ইত্যাদি প্রকাশনা সামগ্রী ছাত্রসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে একটি অকৃত্রিম সৌন্দর্যের প্রতীক। শিবিরের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি দেশ ও বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বিজ্ঞানসামগ্রী প্রকাশনায়ও ছাত্রশিবির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিতভাবে। দেশে বিজ্ঞানশিক্ষার পশ্চাৎপদতা দূর করার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির প্রকাশ করেছে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যার ওপর রেফারেন্স বই ও চার্ট পেপার। এ বইগুলো এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম ও ডিগ্রির প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনন্য ও অপরিহার্য শিক্ষাসহযোগী উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ, প্রয়োজন এবং একাডেমিক শিক্ষার যথার্থ তথ্য উপকরণ দিয়েই এই টহফবৎংঃধহফরহম ঝপরবহপব ঝবৎরবং প্রকাশিত হয়েছে। অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে ছাত্র ও যুবসমাজকে রক্ষা করে তাদেরকে ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে হলেও প্রয়োজন পরিশীলিত সংস্কৃতির আয়োজন। এ প্রয়োজনীয়তা থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্রশিবিরের রয়েছে জোরালো পদচারণা। একটি দেশের রাজনৈতিক বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এ দেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে শিবিরের রয়েছে নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। জ্ঞানার্জন ও মেধা বিকাশের পাশাপাশি একজন ছাত্রকে মানসিক বিকাশের জন্য এবং তার মধ্যে সহজভাবে ইসলামের জীবনপদ্ধতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সাহিত্য-সংস্কৃতি মানেই অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, পাশ্চাত্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদের অন্ধ অনুকরণ- এই ধারণার পরিবর্তন করতে শিবির বদ্ধপরিকর। ইসলামী ছাত্রশিবির সে জন্যই ইসলামী সংস্কৃতির এক বিরাট জগত গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে ইসলামী সংস্কৃতির প্রতীকে পরিণত হয়েছে এবং ইসলামী সংস্কৃতির একটি নতুন ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় শিবির সদা তৎপর। ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম ছাত্রশিবিরের মৌলিক কর্মসূচির অংশ। ছাত্রশিবির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা; গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা; দেশ-জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা; সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য রাহবার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রশিবির মেধাবী ছাত্রদেরকে সত্য ও সুন্দরের সহযাত্রী হতে অনুপ্রাণিত করতে মেধাবী সংবর্ধনা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম, গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য স্টাইপেন্ড চালুর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর সপ্তাহ ও পক্ষকালব্যাপী ‘পরীক্ষায় নকল’, মাদক ও ইভটিজিং বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এ ছাড়াও বাড়ি থেকে দূরে অবস্থানকারী ছাত্রদেরকে লজিংয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া, বেতন দিতে অক্ষম ছাত্রদেরকে বেতন প্রদান, বই ক্রয়ে সহযোগিতা, ফ্রি কোচিং, বিনামূল্যে প্রশ্নপত্র বিলি, কর্জে হাসানা প্রদান, বিনামূল্যে গরিব-মেধাবী ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ, ঈদসামগ্রী বিতরণ, ব্লাড ডোনেশন, ব্লাড গ্রুপিং, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, পথশিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ শিক্ষাকার্যক্রম চালু, কুরআন প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। ছাত্রদের একাডেমিক বইয়ের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য শিবির প্রতিষ্ঠা করে থাকে ল্যান্ডিং লাইব্রেরি। শিবির তার কর্মীদেরকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই তার বই শিবির পরিচালিত ল্যান্ডিং লাইব্রেরিতে বিনামূল্যে প্রদান করতে উৎসাহিত করে। এছাড়াও শিবির বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্লাসের বই ল্যান্ডিং লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করে থাকে। ফেরত দেয়ার শর্তে বই গরিব ও উপযুক্ত ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমাজের অধিকার ও দাবি-দাওয়া আদায়ে সোচ্চার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কাগজ-কলম- খাতাসহ শিক্ষা উপকরণের দাবিতে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে বহু কর্মসূচি পালন করে শিবির। শিবির প্রতিনিয়ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেখানে ছাত্রসমাজের কল্যাণমুখী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য ছাত্রশিবির এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে। যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে সেখানেই শিবির আরো বেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সৃজনশীল ও গঠনমূলক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয় ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী ছাত্রসংগঠনগুলো। তাই প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রসমাজের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে ছাত্রশিবির। এরই প্রতিফলন ঘটে দেশের খ্যাতনামা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে। ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ছাত্রশিবির ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ১৯৮০ সালে খুলনা আজম খান কমার্স কলেজে ভিপি, জিএস, এজিএস পদে, ১৯৮১ সালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজে এবং একই বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়। ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ১৭টি পদের মধ্যে ১২টিতে বিজয়ী হয়। এরপর থেকে রাকসু, চাকসুসহ বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে অনুষ্ঠিত ছাত্রসংসদ নির্বাচনে শিবির অংশ নিয়েছে এবং আল্লাহর রহমতে পূর্ণ বা আংশিক প্যানেলে বিজয় অর্জন করেছে এবং ছাত্রসমাজের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমানতদারিতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সদা তৎপর থেকেছে ছাত্রশিবির প্রত্যেক জনশক্তি। সঙ্কট ও দুর্যোগ মুহূর্তে ত্রাণ বিতরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধারকাজ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, উন্মুক্ত জলাশয় ও নদী-নালায় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বাঁধ নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, রক্ত দান ও ব্লাড গ্রুপিংসহ নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্র-জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে সমাজসচেতন করে গড়ে তোলা, সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ছাত্রশিবির সে কাজটি প্রতিনিয়তই করে থাকে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে সকল স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিবিরের সাংগঠনিক পরিবেশ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং সুসাংগঠনিকভাবে কাঠামোবদ্ধ। এ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সন্ত্রাস, ছিনতাই, সংঘাত, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অশ্লীলতা, বেহায়াপনার সয়লাবে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছাত্রসমাজ। ফেনসিডিল, হেরোইন ইত্যাদি নেশাজাত দ্রব্য নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একজন ছাত্র আর একজন ছাত্রকে আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। আল্লাহর মেহেরবানিতে নৈতিক অবক্ষয়ের এ প্রচণ্ড ধাক্কা শিবিরকে স্পর্শ করতে পারেনি কখনও। শিবিরের একজন কর্মী নিজেদের হাতে নিহত হয়েছে এমন কোনো ঘটনা কল্পনাও করা যায় না; কোনো কর্মী অন্য কর্মীর গায়ে হাত দিয়েছে এমন কোনো ঘটনাও নেই। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মাঝে রয়েছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস, প্রেরণা ও উৎসাহ, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, শুভাকাক্সক্ষা ও ভালোবাসা। তদুপরি নিঃস্বার্থভাবে অপরের জন্য ত্যাগী মনোভাব ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক পরিবেশকে উচ্চ শিখরে উন্নীত করেছে। ছাত্রশিবিরে প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহির চেতনা থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও দায়িত্ব পালনে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের কাছে জবাবদিহি করার ব্যবস্থা আছে। সংগঠনের জনশক্তি, সম্পদ, সংগঠনের মর্যাদা ইত্যাদি আমানত। সে আমানতের খেয়ানত যেন না হয় সে জন্য দায়িত্বশীলগণও জবাবদিহির চেতনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যে কোনো সংগঠন, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতার জন্য ঈযধরহ ড়ভ ষবধফবৎংযরঢ় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মলগ্ন থেকেই শিবির এ ক্ষেত্রে যথাযথ নজর দিয়ে আসছে। প্রতি বছরই নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন সম্পন্ন হয়। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের ইউনিটগুলোতেও এসময় প্রতি বছর কমিটি গঠন হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ইসলামী ছাত্রশিবির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নেতৃত্ব ও আনুগত্যের ভারসাম্য ইসলামী সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি ইসলামী ছাত্রশিবির অনুসরণ করে থাকে। অন্ধ আনুগত্য নয় বরং সৎকর্মের ক্ষেত্রে আনুগত্য। ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন এখানে হয় না। নেতৃত্বের ও জনশক্তির প্রতি কর্মীদের রহমদিল ভালোবাসা বিরাজিত থাকবে। নেতৃত্ব ও আনুগত্যের সমন্বয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের রয়েছে। তরুণ ছাত্রসমাজের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে ছাত্রশিবিরের রয়েছে নিয়মিত কার্যক্রম। যুবসমাজের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশে ও সাহিত্যমোদী ছাত্রদেরকে সংগঠিত করে লেখক শিবির গঠন করা হয়। সাহিত্য আসর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাময়িকী, দেয়ালিকা, পত্রিকা, স্মরণিকা ও সঙ্কলন প্রকাশের মাধ্যমে লেখার যোগ্যতা বৃদ্ধিতে শিবিরের কর্মসূচি রয়েছে। জনশক্তির উন্নত নৈতিক মান নিশ্চিত করা শিবিরের অন্যতম কার্যক্রম। শিবিরকর্মীদের নৈতিক ও গুণগত দিক থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন করার জন্য রয়েছে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ, পাঠচক্র, আলোচনা চক্র, সামষ্টিক অধ্যয়ন, শিক্ষাশিবির, শিক্ষাবৈঠক, শববেদারি বা নৈশ ইবাদাত, ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ, দোয়া ও নফল ইবাদাত, গঠনমূলক সমালোচনা, আত্মসমালোচনা, কুরআন তালিম, কুরআন ক্লাস ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক সভা, সম্মেলন, সেমিনারে অন্যতম বৃহৎ ইসলামী ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সভা-সমাবেশে শিবিরের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডঅগণ, ওওঋঝঙ, অঋগণ, ওণঋঙ সহ আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহে ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে যে ছাত্রশিবির বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ছাত্রসংগঠন। তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে ইসলামী ছাত্রশিবির দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ছাত্রশিবিরের রয়েছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ছাত্রশিবির সত্য ও ন্যায়ের নীতি ধারণ করে মজলুমের পক্ষ নিয়েছে এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে শিবির থেকেছে প্রতিবাদমুখর। ১৯৭৯ সালে রাশিয়া তার পুতুল সরকার বারবাক কারমালের সহযোগিতায় স্বাধীনচেতা আফগানের মানুষের স্বাধিকার কেড়ে নিয়ে সেখানে নগ্ন হামলা চালালে ছাত্রশিবির ঢাকায় ২০ হাজার তরুণের বিশাল মিছিল করে তার প্রতিবাদ জানায়। ছাত্রশিবির ফিলিস্তিনি বীর যোদ্ধাদের প্রতি সর্বদা সহানুভূতি প্রকাশ করে এসেছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আয়োজিত ১৯৯১-এর তেহরান কনফারেন্স-এ শিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি যোগদান করেন। সেখানে আন্দোলন, সংগ্রাম ও পুনর্গঠনে শিবির ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে সমর্থন ও সহমর্মিতা ব্যক্ত করেছে। কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, জাতিসংঘ প্রস্তাবিত গণভোট ও অন্যান্য প্রসঙ্গে শিবির বরাবরই কাশ্মিরি জনগণের পক্ষ নিয়েছে। অধিকৃত কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিবির ১৯৮৯ সাল থেকেই কর্মসূচি পালন করে আসছে। বসনিয়া হার্জেগোভিনায় মুসলিম জনপদের ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ ও দমননীতির প্রতিবাদে শিবির আয়োজন করে র‌্যালি, সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভা। সার্ব শাসক ও সেনাগোষ্ঠীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ছিলো এসব কর্মসূচির লক্ষ্য। ১৯৯১ সালে ইরাকের কুয়েত আক্রমণের ব্যাপারে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিবাদকারী ছাত্রসংগঠন ছিলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। পরবর্তীতে আফগানিস্তান ও ইরাকে বৃহৎশক্তির নির্লজ্জ হামলা, সাধারণ মানুষকে হত্যা করা, শিশুদের নির্বিচারে খুন করার প্রতিবাদে শিবির ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। জনমত তৈরি, মিছিল, সমাবেশ, পোস্টারিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে কাপুরুষোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানকার নিহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে। ভারতের অযোধ্যায় অবস্থিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে (১৯৯১) উগ্রবাদী হিন্দুরা সে স্থানে রামমন্দির নির্মাণের অন্যায় আবদার করলে ছাত্রশিবির তার তীব্র প্রতিবাদ জানায় ও ব্যাপক জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখে। একইভাবে আহমেদাবাদে দাঙ্গা সৃষ্টি ও নির্বিচারে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদ করে শিবির। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনী ও সহিংস বৌদ্ধদের নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধেও ছাত্রশিবির ছিল প্রতিবাদমুখর। সর্বশেষ ফ্রান্সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ ও প্রচারের প্রতিবাদে রাজপথে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এভাবেই শিবির প্রতিটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দেশের সচেতন তরুণদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাহাড়সম ষড়যন্ত্র, জুলুম নির্যাতন ও নানামুখী অপপ্রচারের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কোনো আদর্শবাদী দল ষড়যন্ত্র, নির্মম নির্যাতন ও ঘৃণ্য অপপ্রচারে সাময়িক অসুবিধায় থাকলেও চূড়ান্তভাবে এর যাত্রা অব্যাহত থাকে মঞ্জিলের দিকে। ছাত্রশিবিরকে তার যাত্রাপথে এ পর্যন্ত হাজারও বাধা মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। ছাত্রশিবির যখন দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আদর্শিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে দেশের জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে চলছিল ঠিক তখনই আদর্শিক লড়াইয়ে পরাজিতরা ঘৃণ্য পথে শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নানামুখী নির্যাতন চালিয়ে তাদের বুলন্দ আওয়াজকে স্তিমিত করতে উদ্যত হয়। যখন খুন, গুম ও নির্যাতন করে এর গতি পথ শ্লথ করা যাচ্ছে না ঠিক তখন অপপ্রচারকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে অবলম্বন করে নিয়েছে পরাজিতরা। শিবিরকে বলা হয়েছে চেতনায় রাজাকার, রগকাটা, মৌলবাদী, অনাধুনিক ও স্বাধীনতাবিরোধী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী ইত্যাদি! এসব অপপ্রচার চালাতে গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার করেছে সরকার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ছাত্রশিবিরের দুর্দমনীয় উত্থানে ভীত হয়ে ছাত্রশিবিরের নিরপরাধ নেতাকর্মীদেরকে নাশকতার অভিযোগে অহরহ গ্রেফতার করে বোমা নাটক, অস্ত্র উদ্ধার নাটক সাজানো হয়েছে, যা ইতিহাসের এক জঘন্যতম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। এমন অপপ্রচার অভিযুক্ত দলের পক্ষে প্রচারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কারণ এমন ঘটনা যখন সাজানো হয় তখন ভুক্তভোগীদের আদর্শিক দৃঢ়তা আরও বেড়ে যায়, তারা তাদের যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে আরও তীব্র শক্তি অনুভব করে। যারা এমন হটটক নিউজ পায় তারা উৎসুকের সাথে এমন খবরের আসল সত্য জানতে চেষ্টা করে, এ ক্ষেত্রে যুবকরাই উৎসুক হয়ে থাকে বেশি। শিবিরের বিরুদ্ধে প্রচারিত ঘৃণ্য ঘটনার অন্তরালে ডুবে আসল সত্য জানতে গিয়ে উৎসুকরা নিজেরা ছাত্রশিবিরের সমর্থক হয়ে যায়, তারা বুঝতে পারে এমন অসত্য প্রচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আর যারা অসত্য ঘটনাকে রঙ রস মিশিয়ে প্রচার করার কাজে ব্যস্ত তারাও জানে এটি মিথ্যা, এ কাজ করা তাদের জন্য ঠিক নয়। কিন্তু তাদের বিবেকবোধ লোপ পেয়েছে, তাই তারা মিথ্যাকে সত্যের প্রলেপে প্রচার চালাতে মোটেও দ্বিধা বোধ করে না। এসব মিথ্যা অভিযোগে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা মোকদ্দমায় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে পুরেছে। শহীদ করা হয়েছে সংগঠনের প্রথম দুই কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলী ও কামারুজ্জামানসহ শত শত নেতাকর্মীকে। ছাত্রশিবির কর্মীদেরকে গ্রেফতার করতে গিয়ে অসংখ্য সন্দেহভাজন সাধারণ ছাত্রকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা কখনোই ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিল না। তারা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করে। সময়ের ব্যবধানে ভিন্নমতের ছাত্ররাও ছাত্রশিবির সম্পর্কে অবগত হয় এবং অনেকে শিবিরে যোগ দিতেও দেখা গেছে। আলহামদুলিল্লাহ! ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বাতিল শক্তি যে সকল অভিযোগ এনেছে তা বারবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্রশিবিরের দৃঢ়প্রত্যয়ী পথ পরিক্রমায় সরকার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের নির্মম আঘাতে শহীদ হয়েছেন অগণিত তাজা প্রাণ। যারা ছিল তাদের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। মিথ্যার কাছে পরাস্ত হতে এরা শিখেনি। এমন দৃঢ়পদে পথ চলতে গিয়ে শত শত তরুণ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কারও পা নেই, কারও হাত নেই, কারওবা নেই চোখ। কেউ কেউ হারিয়েছেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। যারা হক-বাতিলের লড়াইয়ে জ্বলন্ত সাক্ষী। যারা আমৃত্যু সামনে এগিয়ে যেতে সাহস জোগাবে এ পথের যাত্রীদেরকে- তারা এই কাফেলার জীবন্ত শহীদ। যেখানে মজলুমদের শরীরের রক্তে ক্যাম্পাস, জনপদ ও রাজপথ, রঞ্জিত হয়েছে সেখান থেকেই নারায়ে তাকবিরের আওয়াজ বুলন্দ হয়েছে। যারা ছাত্রশিবিরকে নিঃশেষ করতে চেয়েছে তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মজলুমদের পক্ষে লাখো বনিআদম তাদের জীবনসম্পদ স্বপ্ন-সাধ বিলিয়ে দেয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি আল্লাহর অশেষ করুণা ছাড়া আর কিছু নয়। সে কারণেই আল্লাহর অশেষ রহমতে ইসলামী ছাত্রশিবির ৪৪ বছরে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে শহর, নগর, বন্দর পেরিয়ে এখন এর অবস্থান পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে। আগামীর সম্ভাবনাময়ী তরুণ সমাজকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়তে ছাত্রশিবির প্রতিটি জনপদে কাজ করে চলছে নিরলসভাবে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা এই সমাজে দিগভ্রান্ত যুবকদের পথের সন্ধান দিতে ছাত্রশিবির একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দুনিয়াবি দক্ষতার পাশাপাশি ওহির জ্ঞানে আলোকিত মানুষ হিসেবে তৈরি করাই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম কাজ। মাদকাসক্ত, নৈতিক অবক্ষয়সহ নানা অপরাধে জড়িত যুবকদের মাঝে সাহস, মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার দৃঢ়তা তৈরিতে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা আপন বন্ধু হিসেবে কাজ করার অতুলনীয় মানসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। এমন কাফেলার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে যারা সঙ্কল্পবদ্ধ তারা মূলত এর দ্বারা নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারে। এ সংগঠন একজন ছাত্রকে যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে ঠিক সংগঠনের প্রতিটি পর্যায়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কর্মীগঠন, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আদর্শ সংগঠন পরিচালনা পদ্ধতি ও শিক্ষণ কর্মসূচিগুলো একটি আদর্শ সংগঠক প্রতিষ্ঠা তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামী ছাত্রশিবির তার সর্বস্তরের জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহুমুখী সন্ত্রাসের শিকার ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিটি সরকার তাদের ইসলামবিদ্বেষী চেতনা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে বারবার আঘাত করেছে ছাত্র সংগঠনটির ওপর। ইসলামবিদ্বেষী দলগুলো আদর্শিক লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে অপপ্রচার, গুম, খুন ও জুলুম নির্যাতনকে পুঁজি করে এর যাত্রাকে নিঃশেষ করতে মরিয়া হয়ে লড়াই করছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের চেতনাবোধ ইসলামের পক্ষে থাকলেও গুটিকয়েক আবু লাহাবের ষড়যন্ত্রে সকল প্রচারমাধ্যম ও সরকার সম্মিলিতভাবে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘৃণ্য সম্মিলিত হামলার ভয়াবহ অক্টোপাসে আবদ্ধ হয়ে সত্য-মিথ্যার আসল স্বরূপ নিরূপণ করা আমজনতার জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রশিবির এমন বৈরী হাওয়ায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও সমাজব্যবস্থার প্রকৃত স্বরূপ নিশ্চিত করার প্রয়াসে এক বুক আশা নিয়ে নির্ঘুম পথ চলছে। আল্লাহ চাইলে ছাত্রশিবির তার প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে। নিজেকে সৎ, দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার এমন কাজটি একজন মুমিনের জন্য কৃত্রিম কোনো বিষয় নয় বরং এটি তার অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব। দক্ষতা অর্জন, কর্মনিষ্ঠ হওয়া এসব শারীরিকভাবে সুস্থ মুমিনের জীবনের অন্যতম গুণাবলি বলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের নসিহত করেছেন ঠিক সেভাবেই এগিয়ে যাওয়ার জন্য, যাত্রাকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য হিতাকাক্সক্ষীদের যৌক্তিক দিকনির্দেশনা দেয়ার পথ খোলা রেখেছে ছাত্রশিবির। ইসলামী ছাত্রশিবির যুবক ও তরুণদের ঘুণে ধরা এই সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। আজকের সমাজকে পরিবর্তন করে প্রত্যাশিত সোনালি সমাজ তৈরির জন্য প্রয়োজন সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। যারা সমাজের সকল অন্ধকারকে পরিবর্তন করে উম্মাহকে মুক্ত করবে। ৪৪ বছরের পথপরিক্রমায় ইসলামী ছাত্রশিবির এ জাতিকে উপহার দিয়েছে একদল সৎ, যোগ্য, মেধাবী, দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। শিবির পরিণত হয়েছে তৌহিদী ছাত্র-জনতার আস্থা, কোটি মানুষের ভালোবাসা, স্বস্তি ও মুক্তির এক প্রিয় ঠিকানায়। শিবিরের এ অগ্রযাত্রা এবং জাতির প্রতি এর ভূমিকা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবিরের এ পথচলা আল্লাহ যেন কবুল করেন, তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি। ছাত্রশিবির যেন প্রত্যাশিত মঞ্জিলে এগিয়ে যেতে পারে, সে তৌফিক আল্লাহর কাছে কামনা করছি। আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকে লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ছাত্রশিবির। এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য শিবিরের রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত পাঁচ দফা কর্মসূচি। অন্যতম কর্মসূচি হলো তরুণ ছাত্রসমাজের মাঝে ইসলামের সুমহান আহবান পৌঁছে দেয়া। যেসব ছাত্র এ আহবানে ঐকমত্য পোষণ করে তাদেরকে সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা। সংগঠনের আওতাধীন ছাত্রদেরকে তানজিম ও তরবিয়াতের মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে দৃঢ় করা। ইসলামী ছাত্রশিবির ৪৪ বছরের পথ পরিক্রমায় তাদের কথা রেখেছে। সত্য ও সুন্দরের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করেছে তার নেতাকর্মীরা। দুনিয়ার লোভ-লালসার কাছে তারা নিজেদের জলাঞ্জলি না দিয়ে পাহাড়সম বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে তারা এখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা শুধুমাত্র দুনিয়ার ভোগের সাগরে নিজেদের ভাসিয়ে না দিয়ে দুনিয়াকে আখেরাতের পরীক্ষালয় হিসেবে গ্রহণ করে সকল রক্তচক্ষুকে মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। সরকার ও ইসলামবিদ্বেষীরা যদি বুঝতে সক্ষম হতো ইসলামী ছাত্রশিবিরের অন্তরালের অভাবনীয় দ্যুতিময় কল্যাণ ও সমৃদ্ধি- তাহলে তারা তাদের ঘৃণ্যতম পথ পরিহার করে এর পৃষ্ঠপোষণ করত। কিন্তু যারা অন্ধ, বধির, যারা ক্ষমতার স্পর্শে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য তাদের কাছে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনই আসল জীবন। এরা পুঁজিবাদী ভোগের সাগরে ভাসতে পারলেই জীবনকে সফল ও সার্থক করা যায় বলে ধারণা করে। তাদের জন্য এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের চাইতে প্রিয় আর কী হতে পারে? তাই তারা পৃথিবীতে মৃত্যুশঙ্কায় মরার আগে বহুবার মরে। এককথায় এরা যেন জীবন্ত লাশ। তারা জীবনকে ভোগ করার চেষ্টা করলেও প্রকৃতপক্ষে এরা জীবনকে উপভোগ করতে পারে না। প্রকৃত উপভোগ্য জীবন হলো প্রশান্তিময় আত্মার জীবন, যা শুধু বস্তু দিয়ে উপভোগ করা যায় না। দেশকে যখন ফেইল স্টেট, ধর্ষণের রাজ্য, তলাবিহীন ঝুড়ি, মাঝিবিহীন তরী, দুর্নীতি এবং জুয়া ও ক্যাসিনোর আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে উন্নত দেশের কর্তাব্যক্তিরা আক্ষেপ করেন; আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরাও হীনমন্যতায় ভোগেন; তখন আমরা বলতে পারি, এমন নিরাশার করালগ্রাস থেকে উম্মাহকে রক্ষার তাগিদে কিছু সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ছাত্রশিবির। যারা দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়ার কাছে পরাস্ত হওয়ার নয়, বরং দুনিয়া তাদের কাছে পরাস্ত হবে ইনশাআল্লাহ। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ধরে সম্মুখে এগিয়ে চলছে সফলতার পথে। লেখক : সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির