নৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সত্যানুরাগী হওয়া জরুরি। জন্মলাভের পর শিশুকে নিয়ে অসৎ বাবা-মাও সত্যানুরাগী বানানোর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে এবং পরিবেশের মধ্যে নৈতিক বলয় না থাকলে এসব স্বপ্ন আর আলোর মুখ দেখে না। আমাদের দেশে সরকার ব্যবস্থার অনৈতিকতার প্রভাব বলয়ে সে রকমই সততার বিকাশ হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অধিকাংশ দেশে সরকারিভাবে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ দেশে কোনো ভাড়া ছাড়াই ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে পারে। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতেও হাফ ভাড়ার অধ্যাদেশ না মানলে পরিবহন কর্তৃপক্ষের জেল জরিমানার শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ সম্পূর্ণ উল্টো। হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে সরকারের মদদে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীবাহিনীর হামলার শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও যৌক্তিক দাবির এই যদি হয় পরিণতি, তাহলে শিক্ষার্থীরা যে দিন দিন অনৈতিকতাকে অবলম্বন করতে শিখবে এটাই তো স্বাভাবিক। একটি রাষ্ট্র বেড়ে উঠে এবং উন্নতি লাভ করে শিক্ষা-গবেষণার উন্নয়নের মাধ্যমে। এই চিন্তার বিপরীতে সরকার জিডিপি বাড়াতে তৎপর হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সকল ব্যবস্থার চাবিকাঠির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে কতিপয় অনৈতিক অশিক্ষিত ব্যক্তির কাছে। আমরা মনে করি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এবং ছাত্রসমাজের নৈতিক দাবি মেনে নেয়ার এখনোই সঠিক সময়। সরকারের উচিত হবে সারাদেশে কতজন শিক্ষার্থী গণপরিবহন ব্যবহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে, ডিজিটাল উপায়ে তার পূর্ণ হিসাব করে সারাদেশে তাদের সকলের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
আমাদের দেশে বহুমুখী শিক্ষাপদ্ধতির বিষয়টি একটি প্রহসন। নব্বইভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী নীতিপদ্ধতি অনুসারে শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন থাকবে, এটাই যৌক্তিক। কিন্তু ব্রিটিশ ভারতীয় যুগ থেকে বহুমুখী শিক্ষাপদ্ধতির আড়ালে জাতিকে পঙ্গু করার কাজ চলমান রয়েছে। আজ এতদিন পরে তার প্রমাণ মিলছে। দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলো গ্র্যাজুয়েটদের নৈতিকতাসম্পন্ন ডিগ্রিধারী হিসেবে বিদায় দিতে পারছে না। ফলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসৎ ক্রিয়াকলাপের ছড়াছড়ি। স্বয়ং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সাবেক) তার অবস্থান থেকে মিডিয়ায় বলেন, ‘আমরা চোর তৈরি করছি’; যা জাতি হিসেবে আমাদের মাথা নিচু করে দেয়। এই দুঃখজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ইসলামী নৈতিকতার চর্চা অত্যন্ত জরুরি। মাদরাসা শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে যার অনেকটাই উত্তরণ ঘটছে। এ বছর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেসকল বিশ^বিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, তাতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান অধিকার করাসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নম্বর পেয়ে চান্স পেয়েছে। কিন্তু কতিপয় জ্ঞানপাপী এই নৈতিক সাফল্যকে নিয়ে মর্মপীড়ায় ভুগছে এবং এর অযৌক্তিক বিরোধিতা করে মাদরাসা ছাত্রদের জন্য উচ্চশিক্ষা নয় মর্মে গলাবাজি করছে। আমরা মনে করছি এসব জ্ঞানপাপীর চোখ পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী সরকার কর্তৃক কানা করে দেয়া হয়েছে। তারা সব অনুভব করতে পারছে, কিন্তু সত্য দেখতে ব্যর্থ হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্যাসেট প্লেয়ারের মিথ্যা কথামালা বারবার শুনে সেগুলোকেই বিশ^াস করছে এবং আওড়াচ্ছে। এজন্য দেশের সচেতন শিক্ষকসমাজ, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অনুরোধ, ইসলামী শিক্ষার আদলে দেশের শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়নের লক্ষ্যে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিশ^বিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সমৃদ্ধকরণের প্রক্রিয়ায় সবাই একযোগে কাজ করুন এবং সমাজে তা প্রচার করে সকল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করুন।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। রক্ত দিয়ে কেনা বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করলো বিজয়ের রেশ নিয়ে। বিজয়ের উৎসব কেন যেন সবার হৃদয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের রেশ হিসেবে দোলা দিচ্ছে না। আবেগ উচ্ছ্বাসহীন দিবসে পরিণত হয়েছে আজ। কেননা, যে স্বপ্নময় বাংলাদেশ কল্পনায় বীর যোদ্ধারা জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করে আমাদেরকে লাল-সবুজের পতাকা উপহার দিয়েছিলেন, তার সম্মান রক্ষা করা লজ্জাজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে আজ। এখনো মানবাধিকারের বাণী পাতায় পাতায় লিখিত থাকছে, বাস্তব ময়দানে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। মানুষের জন্য মানুষকে ভাবতে হবে, এসব বক্তব্য অন্তর্জালের দুনিয়ায় সুন্দর সুন্দর ডকুমেন্টারি হিসেবেই শুধু দেখা যায়, মানুষ অনিরাপদ বাংলাদেশে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করে। তবুও আমরা যারা আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে অসীম স্বপ্ন দেখি, ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে পথ চলতে হবে তাদের। বিদায়ী বছরের গ্লানিকর অধ্যায়কে মুছে ফেলে নতুন বছরকে নতুন উদ্যমের সারথিদের জন্য গড়তে উদ্যোগী হতে হবে। তরুণ-যুবকদের নিকট এটাই প্রত্যাশা।
আপনার মন্তব্য লিখুন