post

হিজরি নববর্ষ ও হিজরত ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আলি ওসমান শেফায়েত

১৫ মে ২০২৪

বর্ষপঞ্জি কী ও কেন

নতুন বছরে পদার্পণকে বলা হয় নববর্ষ। এর সাথে জড়িয়ে থাকে বিগত বছরে রেখে আসা দিনগুলোর গ্লানিকে মুছে ফেলে ও দুঃখ-কষ্টকে ভুলে গিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। পৃথিবীর প্রতিটি জনপদের লোকজন আপন আপন কাজ সম্পাদনের জন্য ও স্মৃতিময় মুহূর্তগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য দিন-তারিখ-মাস ঠিক রাখতে কোনো না কোনো বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে থাকেন। যেমন : জুলীয় বর্ষপঞ্জি, হিব্রু বর্ষপঞ্জি, হিজরি বর্ষপঞ্জি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বর্ষপঞ্জি, পার্সি বর্ষপঞ্জি ইত্যাদি। এসব বর্ষপঞ্জি ধর্মীয় বা সামাজিক উদ্দেশ্যে আঞ্চলিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও কিছু আধুনিক বর্ষপঞ্জি রয়েছে, যেগুলোর সীমিত ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। নতুন কোনো ধর্মীয় আন্দোলন বা পুরোনো ধর্মীয় বর্ষপঞ্জিগুলোর সংস্কারে বা আঞ্চলিক বা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এসব আধুনিক বর্ষপঞ্জি দেখা যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- জাভান বর্ষপঞ্জি (১৬৩৩), জোক্যো বর্ষপঞ্জি (১৬৮৫), ফরাসি প্রজাতান্ত্রিক বর্ষপঞ্জি (১৭৯৩), বাহাই বর্ষপঞ্জি (১৮৭৩), সৌর হিজরি বর্ষপঞ্জি (১৯২৫), পাটাফিজিক্যাল বর্ষপঞ্জি (১৯৪৯), ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি (১৯৫৭), এরিসীয় বর্ষপঞ্জি (১৯৬৩), জুচে বর্ষপঞ্জি (১৯৯৭) ইত্যাদি। [উইকিপিডিয়া]

হিজরি বর্ষ :

মুসলমানদের স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জির নাম হিজরি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সাল। একমাত্র হিজরি সালই বর্তমান বিশ্বের সকল তাওহিদবাদী জনতার কাছে সমানভাবে সমাদৃত, অতি পবিত্র, মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ বর্ষপঞ্জি। আমি অতি জাঁকজমকপূর্ণভাবে হিজরি নববর্ষ উদযাপনের পক্ষাবলম্বন করি না। কিন্তু এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঐতিহ্য, এর পটভূমি, ইতিহাস, এর ব্যাপকতা লাভ ও তা প্রচারের পক্ষপাতী। আমাদের অনেকেই জানে না, মুসলিমদের নববর্ষ কোন মাসে শুরু হয়? আবার কেউ হয়তো-বা হিজরিবর্ষ গণনার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কেই বেখবর। হিজরি সালের তারিখের খবরও রাখেন না এবং তা রাখার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করে না। হিজরি সালকে গুরুত্ব না দেওয়ার এই বিষয়টি খুবই হতাশাজনক!

হিজরি সালের সম্পর্ক চন্দ্রের সঙ্গে। আমরা জানি, পৃথিবীতে বর্ষ গণনার দুটো ধারা প্রচলিত আছে। একটির সম্পর্ক সূর্যের গতির সঙ্গে, আর অন্যটির চাঁদের গতির সঙ্গে। প্রথমটির নাম সৌরবর্ষ আর দ্বিতীয়টি চন্দ্রবর্ষ নামে পরিচিত। এই দুটো সালের মধ্যে প্রতি বছর ব্যবধান হয় ১০ কিংবা ১১ দিনের। সৌর সালের বছর হয় মোটামুটি ৩৬৫ দিনে, আর চন্দ্র সালের হয় ৩৫৪ দিনে। কোনো বিশেষ ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখার মন-মানসিকতা, তারিখ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং দিন-মাস-বছর গণনার জোর তাগিদ থেকে মানব সভ্যতার শুরু থেকেই পঞ্জিকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উদ্ভব ঘটেছে সাল-এর। বাংলাদেশে বর্তমানে হিজরি সাল, ইংরেজি সাল ও বাংলা সালের প্রচলন লক্ষ করা যায়।

হিজরি সালের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :

হিজরি সাল ১৭ হিজরি সাল মোতাবেক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ হতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের শাসক উমর ফারুক (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। ঐতিহাসিকদের সুচিন্তিত অভিমত হলো, ওই বছর ১ম হিজরির ১লা মহররম পড়েছিল ১৬ জুলাই, ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ রোজ জুমাবার। এটাই হচ্ছে হিজরি সাল প্রবর্তনের সূচনাকাল। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৪/৫১৭)

বিশ্বের কোটি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনধারার সাথে মিশে আছে হিজরি সন। অতীতে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায় নানা উপলক্ষ্য ঘিরে সাল তারিখ গণনার সুবিধার্থে বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করে তা অনুসরণ করে আসছে। যেমন খ্রিষ্টাব্দ সম্প্রদায় তাদের ধর্মগুরু হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মবার্ষিকীর দিনক্ষণ ধরে ঈসায়ি বা খ্রিষ্টাব্দ সাল প্রবর্তন করে। তারা নিজেদের জীবনধারায় খ্রিষ্টাব্দ সাল মেনে চলে। একইভাবে বঙ্গাব্দ, শকাব্দ, মঘীসহ নানা সালের বর্ষপঞ্জি পৃথিবীতে বিদ্যমান। নানা ধর্ম সম্প্রদায়ের মাঝে তা আলাদা আলাদাভাবে চালু রয়েছে। মুসলমানরা ফরজ বিধান পালনে এবং বিভিন্ন আচার-উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে হিজরি সাল তথা চন্দ্রমাস অনুসরণ করে থাকে। চাঁদের উদয়ের ভিত্তিতে মুসলমানদের ইবাদত ও ধর্মীয় বিভিন্ন দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়। তাই হিজরি সালের উদ্ভব পটভূমি ও এর আবেদন বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

মুসলমানদের সোনালি যুগে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন উমর ফারুক (রা.)-এর বিশেষ আগ্রহ ও ভূমিকায় হিজরি সাল প্রবর্তিত হয়। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকালে মদিনাকেন্দ্রিক নগর রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন হলে অফিসিয়াল তথ্যাদি ও নথিপত্র আদান-প্রদানের দিনক্ষণের হিসাব রাখতে গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরগণ বিপাকে ও অসুবিধায় পড়েন। তখন ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ষপঞ্জি বা একক সাল চালু না থাকার কারণেই এমনটি ঘটে।

রাষ্ট্রীয় অফিসিয়াল কার্যাদি নির্বিঘ্নে ও যথানিয়মে সম্পন্ন করার প্রয়োজনে নতুন সাল প্রবর্তন অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্বশীল পদস্থ ব্যক্তিরা একের পর এক তাগাদা ও পরামর্শ দিতে থাকেন খলিফা উমর ফারুক (রা.)-কে। মদিনা রাষ্ট্রের পরিধি তখন ক্রমবর্ধমান। আরবের গণ্ডি পেরিয়ে মদিনাকেন্দ্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র তখন রোম ও পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। বিজিত প্রদেশসমূহের প্রশাসক ও পদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সাল-তারিখের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে থাকেন খলিফাকে। 

সে সময়ের ইরাক ও কুফার গভর্নর আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফা উমর ফারুক (রা.)-এর কাছে একটি চিঠিতে লিখলেন, ‘বিশ্বাসীদের নেতা, আপনার পক্ষ হতে আসা শাসনকার্যের সাথে, পরামর্শ এবং নির্দেশ সম্বলিত বিভিন্ন চিঠিপত্র ও দলিলে কোনো সন-তারিখ না থাকায় আমরা তার সময় ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হই। অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশনার সাথে পার্থক্য করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেক সময় আপনার নির্দেশ ও উপদেশ পালন করতে গিয়ে আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অথবা পত্রটি এমন ছিল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আমাদের কাছে বহু পত্র আসে। পত্রগুলোতে তারিখ লেখা থাকে শাবান। কিন্তু তা কি চলতি বছরের, নাকি আগের কোনো বছরের- তা আমরা বুঝতে পারি না।’ 

বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযোগ ও সমস্যার কথা শুনে খলিফা উমর (রা.) শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয়ে দ্রুততার সাথে এ জটিলতা দূরের উদ্যোগ নেন। (ফাতহুল বারি শারহু সহিহুল বুখারি-৩৯৩৪-এর আলোচনা; সিরাহ সহিহাহ, ১ম খণ্ড, পৃ.-২২৩; তারিখুর রুসূল ওয়াল মুলুক, আত ত্বাবারি, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৮১; ইবনুল আসির, আল-কামিল ফিত-তারিখ, ১ম খণ্ড, পৃ: ৮)।

আলাপ আলোচনায় একটি বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের ওপর সকলে মতৈক্যে পৌঁছলেও কখন থেকে কী নামে বর্ষপঞ্জি করা হবে তা নিয়ে নানা মত ব্যক্ত করেন সাহাবায়ে কেরাম। কেউ বললেন নবিজির জন্মসালকে ভিত্তি ধরা হোক। কেউ অভিমত দিলেন, নবিজির জন্মদিন থেকে ধার্য করা হোক আবার কেউ-বা বললেন নবুয়ত প্রকাশকে ভিত্তি ধরা হোক। কেউ বলেন নবিজির (সা.) ওফাতের দিন থেকে, আবার কেউ পরামর্শ দিলেন মহানবির মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের দিন থেকে বর্ষ গণনা শুরু করা হোক। 

গণতান্ত্রিক উপায়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে অবশেষে রাসূল (সা.)-এর হিজরতের ঘটনাকে মহিমান্বিত করার জন্য মহররম মাস থেকে হিজরি নামে একটি স্বতন্ত্র সাল চালু করার ঘোষণা দেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন উমর ফারুক (রা.)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর ধরে হিজরি সাল মুসলমানদের জীবনধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। বর্ষ গণনার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৭তম বছরের ১০ জুমাদাল উলা মাসে। মাস হিসেবে সমকালীন আরবে মহররম ছিল প্রথম মাস। পরিস্থিতি বিবেচনায় ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়। (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৪/৫১৭)

হিজরি সাল হয়ে উঠেছে আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীকরূপে। বাংলা ও খ্রিষ্টীয় সাল যেমন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনধারার বড় অনুষঙ্গ, তেমনি হিজরি সালকে আমরা অনুসরণ করে থাকি ইসলামী নানা দিবস ও আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে।

বর্ষপঞ্জি প্রণয়নে হিজরতের ঘটনা কেন উপলক্ষ্য

এখন প্রশ্ন হলো, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম, নবুওয়াত লাভ এবং ওফাত এ তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য থাকতেও দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.)-এর খেলাফত আমলে কেন ইসলামী সাল বা বর্ষপঞ্জি এ তিনটির কোনো একটির স্মরণে প্রবর্তন করা হলো না? প্রশ্নটি নতুন নয়। প্রশ্নটি সে আমলেই দেখা দিয়েছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছিল এবং প্রমাণ হিসেবে সামনে এসে যায়, খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় একাধিক ক্ষেত্রে হিজরি সাল ব্যবহার করেছিলেন, যা ছিল সাহাবায়ে কেরামের নিকট অকাট্য দলিল। ঐতিহাসিক দলিলের ভিত্তিতে বিষয়টি আরও খোলাসা করে বলা যেতে পারে।

প্রথমত, ঐতিহাসিকভাবে এই কথা সত্য, খ্রিষ্টানদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি লিপিবদ্ধ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) চুক্তিপত্রের নিচে হিজরতের ৫ম বর্ষ উল্লেখ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ চুক্তি রচনাকারী ছিলেন হযরত আলি (রা.)। সম্ভবত এ কারণেই ইবনে আসাকের বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে হিজরি সালের সূচনা হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আমলেই। এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য মত হলো, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে; হিজরি সাল প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে উমর (রা.) পরামর্শ সভার আহ্বান করেন। সভায় সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) উপস্থিত ছিলেন। তিনি নবিজি (সা.)-এর ইন্তেকালের বছর থেকে; তালহা (রা.) নবুয়তের বছর থেকে; আর আলি (রা.) হিজরতের বছর থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। পরে সবাই আলি (রা.)-এর প্রস্তাবকে যুক্তিযুক্ত মনে করে ঐকমত্য পোষণ করেন।’ (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি : ৭/২৬৮; আল-আইনি, উমদাতুল কারি: ১৭/৬৬)

দ্বিতীয়ত, হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে হিজরি সাল শুরু করার আরো একটি কারণ হলো, রাসূল (সা.)-এর মদিনায় হিজরত করার মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মুসলিমদের শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে দিন দিন। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী খেলাফত।

মুসলিম বিশ্বে চাঁদের হিসাবে অনেক ইবাদত-বন্দেগি, আমল-অনুশাসন পালিত হওয়ায় হিজরি সালের পবিত্র মাহাত্ম্য ও প্রাচুর্য প্রত্যেক মুসলিমের অন্তর জুড়ে সমানভাবে বিশেষ মর্যাদায় সমাসীন রয়েছে। মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আওয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ্জ- এই ১২ মাস নিয়েই হিজরি সাল।

মুসলিম মিল্লাতের বৃহত্তম ঐক্যের স্থায়ী প্রতীক চন্দ্রবর্ষপঞ্জি বা হিজরি সালের প্রবর্তক ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)। তাঁর ন্যায় দূরদর্শী অসাধারণ ব্যক্তিত্বের নামের সাথে ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় অধ্যায়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর বিস্ময়কর বিজয়মালা, শাসাল বৈশিষ্ট্য, সংস্কার , উদ্ভাবন, মানবসেবা, কল্যাণ তথা কীর্তিমালা তাঁকে বিশ্ব ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। শুধু ইসলামী ক্যালেন্ডার বা হিজরি সাল প্রবর্তন নয়; রাষ্ট্র পরিচালনাসহ সকল ক্ষেত্রে উমর (রা.)-এর অবদান-কীর্তিমালা মুসলিম জাতির ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করে রেখেছে। তারই প্রবর্তিত, চন্দ্রবর্ষ তথা হিজরি সাল ইসলামী মিল্লাতে অনুসৃত হয়ে আসছে প্রতি মুহূর্তে।

কুরআন ও হাদিসে মহররম মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

মহররম শব্দের অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। মহররম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। যেদিন থেকে তিনি আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)

উক্ত আয়াতে বর্ণিত চারটি মাস সম্পর্কে হাদিসে রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক বছরে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ রজব মাস।’-(সহিহ বুখারি- ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম-১৬৭৯)

‘একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের কতিপয় এমন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোজা রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন এটা কীসের রোজা? উত্তরে তারা বলল, এই দিনে আল্লাহ তাআলা হজরত মূসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরাউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন) এবং ফিরাউনকে দলবলসহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এই দিনেই হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এই দিনে নূহ (আ.) ও মূসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোজা রাখি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মূসা (আ.)-এর অনুসরণের ব্যাপারে এবং এই দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সেদিন (আশুরার দিন) রোজা রাখেন এবং সাহাবাদেরকেও রোজা রাখতে আদেশ করেন।’ (সহিহ বুখারি-২০০৪, সহিহ মুসলিম-১১৩০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। যেহেতু আশুরার দিন ইহুদিরাও রোজা রাখে। তাই তাদের ব্যতিক্রমস্বরূপ ১০ মহররমের সাথে আরও একদিন মিলিয়ে দুটি রোজা পালন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে মহররমের ৯ এবং ১০ দুদিনই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম : ১৯১৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১৯৭৬)

‘রাসূল (সা.) বলেছেন, রামাদানের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম হলো মহররম মাসের সিয়াম।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৬৩, ১৯৮২)

‘মহররম হলো আল্লাহ তাআলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (জামে তিরমিযী : ৭৪১)

রাসূলুল্লাহ সা.-এর হিজরতের গুরুত্ব :

১. বিশ্বাসগত মজবুত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিধান প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে সার্বিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যখন মক্কায় সেরূপ পরিবেশ তৈরি হয়নি, তখন ইয়াসরিবে পরিবেশ তৈরি হওয়ায় সেখানে হিজরতের নির্দেশ আসে। সে কারণেই হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী ঐতিহাসিক ঘটনা।

২. ঈমানি বন্ধন দুনিয়াবি বন্ধনের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। যেমন : রক্তের বন্ধন হিসেবে চাচা আবু তালিবের নেতৃত্বে বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সার্বিক সহযোগিতা করলেও তা টেকসই হয়নি। অবশেষে ঈমানি বন্ধনের আকর্ষণে রাসূল (সা.)-কে সুদূর ইয়াসরিবে হিজরত করতে হয় এবং সেখানে গিয়ে তিনি নতুন ঈমানি সমাজের গোড়াপত্তন করেন।

৩. জনমত গঠন হলো ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আবশ্যক পূর্বশর্ত। তাই মক্কার অধিকাংশ জনমত বিরুদ্ধে থাকায় আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মদিনায় হিজরত করতে হয়। অতঃপর অনুকূল জনমতের কারণে শত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মুনাফেকির মধ্য দিয়েও তিনি সেখানে ইসলামী খিলাফত কায়েমে সক্ষম হন। আজও তা সম্ভব, যদি মহানবির প্রদর্শিত পন্থায় আমরা পরিচালিত হই।

৪. হিজরত হয়েছিল বলেই ইসলামী বিধানসমূহের প্রতিষ্ঠা দান সম্ভব হয়েছিল। এমনকি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম, যাকাত ও হজ তিনটিই ফরজ হয়েছিল হিজরতের পর মদিনায়।

৫. ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিধানসমূহ মদিনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা হিজরতের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।

৬. উমর (রা.) হিজরতকে ‘হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন। মদিনায় হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবিদের হিজরত অব্যাহত রাখুন এবং তাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবেন না।’ (সহিহ বুখারি : ১২৯৫)। ফলে মুহাজিরগণ নতুন পরিবেশে নানা অসুবিধা সত্ত্বেও সেটাকে মেনে নেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের হেফাজত ও দাওয়াতের স্বার্থে মুমিনের জন্য হিজরত করা ওয়াজিব।

রাসূলুল্লাহ সা.-এর হিজরতের তাৎপর্য :

মদিনায় হিজরতের ফলে রাসূল (সা.) নতুন ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ রাষ্ট্রপতি হলেন । যে সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে (সা.) দিয়েছেন, তা শুধু মদিনাবাসীর জন্য নয়; সমগ্র মানবজাতির জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমার কাছে সত্যসহ কিতাব নাজিল করেছি, যাতে করে তুমি আল্লাহর দেখানো নিয়ম অনুযায়ী মানুষের মাঝে শাসন করতে পারো। আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।’ (সূরা আস-নিসা, আয়াত : ১০৫) ইসলামের ইতিহাসে মুহাম্মাদ (সা.)-এর মদিনায় হিজরত একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এ হিজরত পুরো মানবজাতির কাছে ইসলামকে নতুনভাবে উপস্থাপিত করে।

হিজরতের মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নতুন যে অধ্যায়ের সূচনা হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হলো- 

১. হিজরতকৃত স্থানের নতুন নামকরণ : রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং মুহাজিররা হিজরত করে যেই স্থানে যান, তার নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসূলুল্লাহ সেখানে হিজরতের ফলে প্রিয়নবির সম্মানে ইয়াসরিববাসী তাদের শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মদিনাতুন্নবি বা নবির শহর। আর আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মাধ্যমে আমাদের তা জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের একদল বলেছিল, হে ইয়াসরিববাসী, এটা টিকবার মতো জায়গা নয়, তোমরা ফিরে চলো। (সূরা আহযাব, আয়াত : ১৩) 

বর্ণিত আছে, ইয়াসরিবের নাম আল মদিনা আল মুনাওয়্যারা (আলোকোজ্জ্বল শহর) ও আল মদিনা আত তাইয়্যিবা (পবিত্র শহর) নামে অভিহিত হয়।  (আর রউদুল উনুফ, আবদুর রহমান সুহাইলী, ১ম খণ্ড, পৃ: ১৬; মুহাম্মাদ দ্য ফাইনাল মেসেঞ্জার, পৃ: ১২৮) 

২. নতুন রাষ্ট্র গঠন : রাসূল (সা.) মদিনায় হিজরতের ফলে মদিনাবাসী রাসূল (সা.)-কে সাদরে গ্রহণ করেন, নতুন ধর্মের সুন্দর বিধিবিধানে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। আর এভাবেই রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথমবারের মতো নতুন একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করেন।

৩. হিজরি সাল প্রবর্তন : রাসূল (সা.)-এর মদিনা হিজরতকে কেন্দ্র করে ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের জন্য নতুন একটি সালের প্রবর্তন হয়। যাকে বলা হয় হিজরি সন। উমর ফারুক (রা.) স্বীয় খিলাফতকালে (১৩-২৩ হিজরি) হিজরি সাল প্রবর্তন করেন এবং রবিউল আউয়াল মাসের পরিবর্তে মুহাররম মাসকে প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করেন। কারণ, হজ পালন শেষে মুহাররম মাসে সবাই দেশে ফিরে যায়। তা ছাড়া জিলহজ মাসে বাইয়াতে কুবরা সম্পন্ন হওয়ার পর মুহাররম মাসে হিজরতের সংকল্প করা হয়। 

ঘটনা ছিল এই, আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফা উমর (রা.)-কে লিখেন; আপনি আমাদের নিকটে যেসব চিঠি পাঠান, তাতে কোনো তারিখ থাকে না। এতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন উমর (রা.) পরামর্শসভা ডাকেন। সেখানে তিনি হিজরতকে হক্ব ও বাতিলের পার্থক্যকারী বলে আখ্যায়িত করেন এবং মুহাররম মাস থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব করেন। বিস্তারিত আলোচনার পর সকলের ঐকমত্যে তা অনুমোদিত হয়। ঘটনাটি ছিল ১৭ হিজরি সনে। (ফাতহুল বারী শারহু সহিহুল বুখারি-৩৯৩৪ এর আলোচনা; সিরাহ সহিহাহ, ১ম খণ্ড, পৃ.-২২৩; তারিখুর রুসূল ওয়াল মুলুক, আত ত্বাবারি, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৮১; ইবনুল আসির, আল-কামিল ফিত-তারিখ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৮)। ইসলামের ইতিহাসে এ হিজরি সাল অনেক গুরুত্ব বহন করে।

৪. নতুন সংবিধান প্রণয়ন : রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ফলে মদিনায় ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্রগঠনের পর সব শ্রেণি, সব ধর্মাবলম্বীর মধ্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশ্বনবি মুহাম্মদ (সা.) মদিনার সব নাগরিকের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত। আর এই মদিনা সনদই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত। রাসূলুল্লাহ (সা.) কতটা প্রাজ্ঞ, মেধাবী, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন, তা মদিনা সনদের মাধ্যমে মানবজাতি বুঝতে পারে। সব শ্রেণিপেশার মানুষের সবরকম অধিকার আদায়ে মদিনা সনদের কোনো বিকল্প নেই।

৫. অন্যসব রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক : মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ইসলামের সুমহান খ্যাতির কথা মক্কা-মদিনার বাইরে অন্যান্য দেশে পৌঁছে যায়। রাষ্ট্রগঠনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে সারা দুনিয়ার নজরে আসে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। সামরিক বাহিনী গঠন করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় নতুন বিধান সংযোজন করেন।

৬. আল্লাহর সাহায্য : যাবতীয় দুনিয়াবি কৌশল ও উপায়-উপাদান ব্যবহার করার পরেই কেবল আল্লাহর বিশেষ রহমত নেমে আসে, যদি উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা হয়। হিজরতের পথে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপরে যেসব গায়েবি মদদ এসেছিল, সেগুলো আল্লাহর সেই বিশেষ রহমতেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

পরিশেষে বলা যায়, মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পেছনের প্রেক্ষাপট, পটভূমি, গুরুত্ব ও তাৎপর্য যদি হিজরি নববর্ষে স্মরণ করা হয়, তাহলে মুসলিম ভাই-বোন এবং নবাগত প্রজন্ম ইসলামী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে। তখনই কেবল ইসলামী সংস্কৃতিবিমুখ হৃদয় পরিবর্তিত হয়ে ইসলামী হৃদয়ে পরিণত হবে। সকলের মাঝে তৈরি হবে নতুন প্রেরণা। এ ছাড়া ইসলামকে সামাজিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবিক সবদিক থেকে সমুন্নত করতেও হিজরতে গুরুত্ব অত্যধিক। আল্লাহর জমিনে তাঁরই বিধান কায়েমে মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে আদলে ইক্বামাতে দ্বীনের জন্য আমাদের জান-মাল দিয়ে সর্বাত্মক ও প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হিজরি নববর্ষে দীপ্ত শপথ নেওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির