post

২৮ অক্টোবরের ঘটনা এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তিকে আরোও দৃঢ় করেছে

১২ অক্টোবর ২০০৯

ছাত্রসংবাদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। আপনার বক্তব্য কী? ali-ahsan আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যে নারকীয় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আমার বিশ্বাস শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বা মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অত্যন্ত জঘন্য, মর্মান্তিক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে স্বাভাবিক কোন কারণই তখন ছিল না। নির্বাচিত একটি সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে তারা বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, বিদায়কালীন সময়টা যাতে সুন্দর হয় এবং পরবর্তী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু হয়, সে নির্বাচনে যাতে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তা যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় তার জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে সময়টা অতিক্রম করছিল। এই সময় এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে বা এই ধরনের ঘটনা সংঘটিত করার ব্যাপারে কেউ পরিকল্পনা করতে পারে এটা আমাদের চিন্তা-চেতনা ও ধারনার বাইরে ছিল। খোলামনে কোন ধরনের নেতিবাচক ধারনা ও চিন্তা ছাড়াই আমরা আমাদের ঘোষিত সমাবেশ সফলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনাগুলি যেভাবে ঘটে তাতে পরিষ্কার হয়েছে যে, এটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল এবং এটাও বোঝা যায় যে, নৃশংস ঘটনা ঘটানোর জন্য ঘাতকরা মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। কারণ এই ধরনের একটি নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া সম্ভবপর হতে পারে না। সেদিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যেভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে; মৃত্যু থেকে থেকে বাঁচার জন্য, নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য একেকজন যে ফরিয়াদ করেছে, ‘মা’ বলে ডেকেছে, আল্লাহকে ডেকেছে তারপরও তাদের ওপর ওইভাবে অত্যাচার সুস্থ কোনো মানুষ সহ্য করতে পারে না। আর মরার পরেও আঘাত করা, লাশের ওপর নাচানাচি করা ইহিতাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যারা নাস্তিক, পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে যারা কমিউনিস্ট বিপ্লব করেছে তাদের মধ্যে এই ধরনের নিষ্ঠুরতা আছে। শ্রেণীসংগ্রামের নামে, শোষণহীন সমাজের নামে যারা গলাকেটে রাজনীতি করেছে তাদের মধ্যে এ ধরনের নিষ্ঠুরতা দেখা যায়। কিন্তু গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা অতি সামান্য পরিমাণেও যাদের আছে বা যারা সামান্য মানবিক মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত হয় তাদের পক্ষ থেকে এই ধরনের আচরণ আজও কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে প্রকৃতপক্ষে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়, একটি ঘৃণিত অধ্যায় যে কলঙ্ক এবং ঘৃণার কালি কোনদিন মুছে যাবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। প্রতিটি বছর এদিনটি আসবে, ঘাতকদের ব্যাপারে ঘৃণা প্রদর্শিত হবে এবং মানুষ সেটাকে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করবে। ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবরের ফলশ্রুতিতেই ১/১১-এর সৃষ্টি বলে মনে করেন কি? আপনার দৃষ্টিতে নেপথ্যের কারণটি ব্যাখ্যা করুন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ফলশ্রুতিতেই ১/১১-এর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে আমি মনে করি না। বরং আমি মনে করি যারা ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা সংঘটিত করেছে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পেছনে তারাই ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এ ঘটনার ভিত্তিতে ১/১১ হয়নি। ১/১১-এর ঘটনা ঘটানোর একটি উপলক্ষ হিসেবে এটা মঞ্চস্থ করা হয়েছে পরবর্তীতে আমরা সেটাই দেখেছি। এবং এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লগি-বৈঠার রাজনীতি যারা করে তারাই এককভাবে এটা করেছে বলে আমার আজকের বিশ্লেষণে মনে হয় না। তারাও কারো দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। তাদেরকে ব্যবহার করে লগি-বৈঠার তাণ্ডব ঘটানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যারা ১/১১ সংঘটিত করে বাংলাদেশে ২২ জানুয়ারির সাংবিধানিক নির্বাচনকে ভণ্ডুল করেছে, দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছে, যে সরকার বিদেশী শক্তির পুতুল সরকার হিসেবে প্রচলিত হয়েছে এবং দেশের রাজনীতি শূন্য করা হয়েছে দেখা যায় তারাই এই ঘটনাকে ব্যবহার করেছে। আমার মনে তো এখনো প্রশ্ন আছে যে, দিনের বেলায় এই ঘটনা সংঘটিত হলো, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমি নিজে তখন কেবিনেট মিনিস্টার। আমাদের সমাবেশ পূর্ব ঘোষিত ছিল। সমাবেশের স্টেজ কোথায় হবে তাও পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২ জন কেবিনেট মিনিস্টারের নিরাপত্তার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের সাথে যে নিয়মিত গানম্যান ছিল সে গানম্যানই ছিল একমাত্র নিরাপত্তা রক্ষী। আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আমাদের সমাবেশের স্টেজের নিরাপত্তা কোনো কিছুই গ্রহণ করা হয়নি। এখানে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, সেদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করেছিল? পুলিশ প্রথমে নির্বিকার ছিল, পরবর্তীকালে তারা সেখান থেকে চলে গিয়েছিল। কার নির্দেশে গিয়েছিল? তদানীন্তন আইজি আজও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। বরং ১/১১-এর সরকার যখন গঠিত হলো তখন দেখা গেল তদানীস্তন আইজি একজন ক্ষমতাধর উপদেষ্টায় পরিণত হয়েছেন। এটাতো শুধু আমার প্রশ্ন না, জনগণেরও প্রশ্ন তিনি এভাবে পুরস্কৃত হলেন কেন? তিনি তো আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেন নি। কেন তিনি সেদিন পুলিশ তুলে নিলেন? বারবার আমার পক্ষ থেকে আইজিকে রিকোয়েস্ট করা সত্ত্বেও তিনি উপেক্ষা করলেন কার নির্দেশে সেটাও আজ পর্যন্ত বলেন নি। জনগণের সামনে এর ব্যাখ্যা একদিন তাকে দিতে হবে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তখন আমি ১২/১৩ বার অনুরোধ করেছি ঘটনা এভাবে ঘটছে, আপনি ব্যবস্থা নিন। আমি তার কাছ থেকে কোনো বস্তুনিষ্ঠ সাড়া পাইনি। ফলে এ বিষয়টাও আমার কাছে রহস্যজনক। তাহলে প্রশ্ন জাগে জামায়াত বা এদেশে ইসলামী রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করে না অথবা যারা বাংলাদেশকে তাবেদার বানাতে চায় অথবা যারা বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতিকে নির্মুল করতে চায় তারা সকলে মিলেই কি এ ঘটনা সংঘটিত করেছে? এ প্রশ্নের জবাব আমি এখনও পাইনি। তবে ইনশাআল্লাহ এক সময় পাওয়া যাবে। তাই আমি বলব, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য, কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য, ইসলামী নৈতিক-মূল্যবোধের রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশকে একটি পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করার জন্য যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের নেপথ্য ভূমিকাতেই এই নিষ্ঠুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তারাই এই ঘটনা সৃষ্টি করেছে অথবা তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ছাত্র সংবাদ : সারাবিশ্ব ২৮ অক্টোবরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও তার বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। আপনি কি মনে করেন না সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দোষীদের যথার্থ শাস্তি হওয়া উচিত? নাকি বিচারের বাণী চিরকালই নিভৃতে কেঁদে যাবে? আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ : আমি ব্যক্তি হিসেবে আমার যে ঈমান (যদিও ঈমান আমার জীবনে কতটুকু প্রতিফলিত হয় সেটাও আল্লাহ ভালো জানেন) তাতে আমি যে কোনো বিচারের রায়ের জন্য দুনিয়ার বিচারের ওপরই শুধু নির্ভরশীল না, আখেরাতের বিচার হচ্ছে আমার কাছে সবচাইতে বড় বিচার। সেজন্য এখানে আমার স্পষ্ট কথা, কোনো কারণে যদি দুনিয়ায় বিচার নাও হয়, আখেরাতে ঠিকই বিচার হবে; আমাদের সবাইকে এটা মনে রাখতে হবে। তবে এই ঘটনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা বুঝে বা না বুঝে যেভাবেই জড়িত হোক না কেন তারা যদি জীবিত থাকা অবস্থায় এই ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে তাওবা না করে তাহলে আল্লাহর কাছে তাদেরকে পাকড়াও হতে হবে। তাওবা পড়ে স্বীকৃতি দিলে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ততা মাফ হতে পারে। আর এই ক্ষতিগ্রস্ততা মাফ না হলে আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর দুনিয়ার বিচারের ক্ষেত্রে আমার কিছু পরিষ্কার কথা নীতি-নৈতিকতা, বিবেক, ন্যায়বোধের দাবিই হচ্ছে সঠিক বিচার করা। এটিকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। উচিত নয় দলীয় রাজনীতির একটা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা। এটা মানবতার ব্যাপার। এটা ন্যায়বোধের ব্যাপার। এটা সভ্যতার ব্যাপার। সেজন্য দল, রাজনীতি, গোষ্ঠীস্বার্থ ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা উচিত।

আজকে যদি ক্ষমতার মোহ অথবা প্রতিপক্ষের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষের কারণে এটার বিচার না হয় তাহলে আমি হতাশ নই। কারণ, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ইসলাম অনুসরণকারীদের দেশ, বাংলাদেশ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের দেশ, বাংলাদেশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দেশ, বাংলাদেশ মসজিদের দেশ। এদেশে অদূর ভবিষ্যতে বিবেকের রাজনীতি চালু হবে, ন্যায়বোধের রাজনীতি শুরু হবে, মূল্যবোধ আবার ফিরে আসবে এবং সেদিন এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঠিকই বিচার হবে। এ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে গণতন্ত্রের দাবিদার, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার দাবিদার, মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপারে যারা সোচ্চার, মানবাধিকার নিয়ে যারা বারবার কথা বলেন এবং যারা নিজেদেরকে নিষ্ঠাবান গণতান্ত্রিক বলে দাবি করেন তাদের এ ক্ষেত্রে নীরব থাকাটা মানায় না। তাদের এরূপ নীরবতার কারণ ধীরে ধীরে জনগণের কাছে ইনশাআল্লাহ উন্মোচন হচ্ছে, উন্মোচন হবে। ছাত্র সংবাদ : বর্তমান সরকার সেদিনের পল্টনের ঘটনার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিষয়টাকে আপনি বা আপনার দল কোন্ দৃষ্টিতে দেখছেন? আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ : এখানে প্রথমে আমি একটি কথা বলে নিই সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ এই ঘটনা ঘটানোর পর নিজেকে খুব বিচলিত বলে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। ১/১১-এর ঘটনা ঘটানোর পর তিনি একাধিকবার ব্যাপারটা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি অত্যন্ত জঘন্য কাজ করেছেন। সেটা হলো তিনি নেপথ্যে থেকে আমাদের বিরুদ্ধে যে সাজানো নাটক অর্থাৎ মামলা দেয়া হয়েছিল সেই ব্যাপারে পুলিশকে দিয়ে চার্জশিট প্রদান করার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যে মামলাটা শহীদদের পক্ষ থেকে বা আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে সে মামলার চার্জশিট দেয়ার পরেও সাবেক সেনাপ্রধান (অনেকের ধারণা) নেপথ্যে থেকে সেটাকে (চার্জশিট) অধিকতর তদন্তের জন্য আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যে মামলা ব্যবহার করা হলো ঐ মামলায় বাদী পক্ষের তরফ থেকে শেখ হাসিনাকে আসামী করা হয়নি কিন্তু যারা চার্জশিট প্রাথমিকভাবে আদালতে দাখিল করেছিল তারা তাকে আসামী করেছে। মাননীয় উচ্চ আদালত অবশ্য এই দু’টি মামলা একত্রে চলবে বলেছে। যদি দু’টি মামলা একসাথে চলার মতো প্রস্তুত না হয়, তবে কোনো মামলাই চলবে না। এই পর্যায়ে মামলা দু’টি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ঝুলে আছে। এ অবস্থায় সরকার তাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রেহাই দেয়ার জন্য মামলা প্রত্যাহারের যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে এটা আমার কাছে আইনসম্মত মনে হয় না। এটা বিধিসম্মতও নয়। এটাকে জোর-জবরদস্তিমূলক একটি পদক্ষেপ বলে মনে হয়। এ ক্ষেত্রে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই ‘আপনি বিষয়টা ভালো করে দেখুন। এবং এভাবে মামলা প্রত্যাহার না করে প্রয়োজনে দক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটার নিরপেক্ষ তদন্ত করুন এবং সেই তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করুন।’ এখানে আমার স্পষ্ট কথা, আমাদের কোনো দলের প্রতি, কোনো ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ নেই আবার কোনো ব্যক্তি বা কোনো মহলের প্রতি অন্ধ ধারণাও নেই। আমরা এ নারকীয় নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড যাদের দ্বারা সংঘটিত সেই প্রকৃত দোষীদেরই আইনের অধীনে এনে বিচার করার পক্ষপাতী। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা বিবেচনা করে দেখবেন। ছাত্রসংবাদ : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য ২৮ অক্টোবরের শিক্ষা সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য ২৮ অক্টোবরের প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য হলো, ওইদিন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা অনেকগুলো অনুসরণীয় ও ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারমধ্যে : ১.    এত নিষ্ঠুর আক্রমণের পরেও আইন কেউ হাতে তুলে নেননি। শুধু বাঁচার চেষ্টা করেছেন মাত্র। যেটা তাদের সাংবিধানিক এবং নৈতিক অধিকার। ২.    পাহাড় পরিমাণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। যাদেরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের পরেও তারা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। ৩.    ঐতিহাসিক বলিষ্ঠতা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ৪.    মানব দেয়াল রচনা করে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বকে হেফাজত করার জন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নজিরবিহীন। ইসলামী আন্দোলনের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে আমি কর্মীদের কাছে চিরঋণী। দুনিয়ার কোনো বস্তু দিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। শুধু দিতে পারব তাদেরকে ভালোবাসা আর পারব হৃদয় দিয়ে আল্লাহার কাছে তাদের জন্য দোয়া করতে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তিকে আরোও দৃঢ় করেছে। সেদিন প্রমাণ হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে কচুর পাতার পানি নয় এ আন্দোলন অসংখ্য মানুষের শ্রম, ঘাম, ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে। এ আন্দোলনের শিকড় অত্যন্ত গভীরে এবং তা ততটাই মজবুত ও দৃঢ়। আল্লাহর রহমতে আন্দোলন টিকে থাকবে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাবে এবং মন্জিলে পৌঁছবে ইনশাআল্লাহ।

আজকে যে নিষ্ঠুর মিথ্যাচার দিয়ে এ আন্দোলনের ওপর নির্মম আঘাত করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং করছে, তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন বালির পাহাড়ের মতো তাদেরও ধস নামবে। ইনশাআল্লাহ আন্দোলনের গায়ে সামান্যতম আঁচড়ও তারা দিতে পারবে না। বরং এ নিষ্ঠুর মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের মধ্যে আন্দোলন আরও বেগবান এবং শক্তিশালী হচ্ছে এবং আরও গতিশীল হবে ইনশাআল্লাহ।

অতএব, তোমারা আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা, বিশ্বাস এবং আন্দোলনের প্রতি গভীর ভালোবাসা, নিষ্ঠা ও নির্ভরশীলতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। সকল অবস্থায় ধৈর্য, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা এবং চারিত্রিক দক্ষতা প্রদর্শন করে চলো। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির