post

আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার

১৩ অক্টোবর ২০১১
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা। তিনি বলেন, একাত্তরে আমি কোনো অপরাধ করিনি। কোনো রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার তো দূরের কথা পদেও আমি ছিলাম না। মানবতাবিরোধী নয়, মানবতার পক্ষে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে বক্তব্য দিয়েছি। আমাকে অন্য কেউ রাজাকার বলে না। কেবল ভারতের রাজাকাররাই আমাকে রাজাকার বলে। আর বলে কিছু কলামিস্ট। যারা মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যাচার। ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগের আদেশ ঘোষণার পর তাকে এজলাসে হাজির করা হয়। এ সময় চেয়ারম্যান তাকে বলেন, আমি অর্ডার ইংরেজিতে দিয়েছি এখন আপনার সুবিধার্থে বাংলায় বলব। আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, আপনি (সাঈদী) যদি দোষী বা নির্দোষ হন তা হলে বলবেন। জবাবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, বাংলায় দেয়ার দরকার নেই আপনার ইংরেজি অর্ডার আমি বুঝতে পেরেছি। এ সময় তিনি তার আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তখন বলেন, এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এর জবাবে তিনি বলেন, সুযোগ না থাকলে আমি দু-তিন কথায় এর জবাব দেবো। এরপর মাওলানা সাঈদী প্রথমেই সবাইকে সালাম দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, আপনি তখন হজ করে এসেছিলেন। হজের নূরানি আভা চেহারায় তখনো নষ্ট হয়নি। আমাকে এখানে আনার পর একজন প্রসিকিউটর আমার নাম বিকৃত করে বলেছিলেন। আমি আশা করেছিলাম, আপনি জিজ্ঞেস করবেন, এইটা কোথায় পেয়েছেন? উনার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট বা অন্য কোনো দলিলপত্র থেকে পেয়েছেন কি না? কিন্তু আপনি তা করলেন না। বরং অর্ডারে ওই নামে আমাকে উল্লেখ করলেন। আপনি একদিন বলেছিলেন, আল্লাহ আপনাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনি সেই দায়িত্ব পালন করতে চান। আসলেই বিচারকের দায়িত্ব অনেক বড়। হাশরের দিন সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবেন। এর প্রথম হচ্ছেন ন্যায়বিচারক। তাই আমি আশা করি আপনি ন্যায়বিচার করবেন। বিচারকের দায়বদ্ধতা আল্লাহ ও বিবেকের কাছে। তৃতীয় কোনো স্থানে দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায়বিচার করা যায় না। বরং যেটা করা হয়, সেটা জুলুম হয়ে যায়। আর জুলুমের পরিণাম জাহান্নাম। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো অভিযোগ আসেনি। ১৯৮০ সালে জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য হওয়ার পর এটা আসতে শুরু করে। যখনই এ ধরনের অভিযোগ এসেছে, আমি প্রতিবাদ করেছি, সংসদে বলেছি, মামলা দায়ের করেছি, যার অনেকগুলো এখনো বিচারাধীন রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ করা তো দূরে থাক, বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে দেশে-বিদেশে মানবতা রক্ষায় কাজ করেছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চার সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটি রচনা তৈরি করা হয়েছে। যারা এটা রচনা করেছেন, তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিল না। তাই তারা এটা করতে পেরেছেন। রাজাকারের কমান্ডার হওয়া তো দূরে থাক, তাদের সাথে আমার কোনোই সম্পর্ক ছিল না। আমি শান্তি বাহিনীর সদস্য ছিলাম না, রাজাকার ছিলাম না। পাকবাহিনীর সাথে আমি এক মিনিটের জন্যও বৈঠক করিনি। তিনি বলেন, আমি চাই, আপনি আমাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেবেন। দিতে পারবেন। আমি একজন নিরীহ মানুষ। এই অবিচার করা হলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আল্লাহর লানত পড়বে। সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। মাওলানা সাঈদী বলেন, আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সহস্রাধিক রচনা লেখা হয়েছে। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন মিথ্যা। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে যারা এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। আমি সেই লানত দেখার অপেক্ষায় আছি। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, তিনি কখনোই শান্তি কমিটিতে বা রাজাকার-আলবদর ছিলেন না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে এক দিনের বা এক মিনিটের জন্যও আমার সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। সূরা হুজুরাতের ১১ নম্বর আয়াতের কথা উল্লেখ করে মাওলানা সাঈদী বলেন, ওই সূরাতে নামের বিষয়ে বলা আছে- কোনো মানুষকে বিকৃত করে ডেকো না। হজরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহর আরশের নিচে সাত শ্রেণীর মানুষ ছায়া পাবে। তার মধ্যে ন্যায়বিচারকেরা প্রথমেই রয়েছেন। আপনাদের (ট্রাইব্যুনাল) কাছ থেকে সেই ন্যায়বিচার আশা করি। তাই আপনি ন্যায়বিচার করবেন। তিনি বলেন, বিচারকদের নিরপেক্ষতা, বিবেক, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা না থাকলে সুবিচার নিশ্চিত হয় না। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয়, সেই সময় সংসদে আমি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলাম, আমি রাজাকার নই। সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও এক্সপাঞ্জ করা হয়নি। তার বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির বলেন, সাঈদী সাহেব তারা (রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর) যদি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে আপনি মুক্তি পাবেন। তখন সাঈদী আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ এই বলে তার বক্তব্য শেষ করেন। মাওলানা সাঈদীর বক্তব্যের সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছিল পিনপতন নীরবতা। প্রসিকিউটর কিংবা সরকার পক্ষে নিযুক্ত কেউই এ বক্তব্যের বিরোধিতা কিংবা দ্বিমত পোষণ করেননি। সবাই সম্মোহিতের মতো এই খ্যাতনামা আলেমে দ্বীনের বক্তব্য শোনেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির